মাই নেম ইজ শীলা ওরফে শীতলা শিকদার। পেশায় জুনিয়র আর্টিস্ট। নেশায় নায়িকা। সারাদিনরাত ‘নায়িকা নং ১’ হওয়ার নেশায় বুঁদ হয়ে থাকে সে। জুনিয়র আর্টিস্ট হয়েও একটু হটকে শীলা। ইউনিক একটি চরিত্র। ভাগ্যের দোহাই দিয়ে কপাল চাপড়ানো যার স্বভাববিরুদ্ধ। নেগেটিভ ভাবনাকে আসকারা দিতে নারাজ সে। প্রতিটি মুহূর্ত একটা স্বপ্নেই সে বাঁচে— একদিন জুনিয়র আর্টিস্ট থেকে নায়িকা হবে। সেই স্বপ্নে কখনও জল ঢেলে দেয় তার মা, বোন কখনও-বা অন্য কেউ। ভাতের ফ্যান গালতে নয় ফ্যান ফলোয়িংয়েই তার আগ্রহ। প্রোমো রিলিজের পরেই সাড়া ফেলে দিয়েছিল শীলা শিকদারের ওপেন চ্যালেঞ্জ। ‘কাননদেবী, সুচিত্রা, সুপ্রিয়া, দেবশ্রী, ঋতুপর্ণা, কোয়েলের পর নাম হবে কার— এই শীলা শিকদার…’। জুনিয়র আর্টিস্ট থেকে নায়িকা হওয়ার দৌড়ে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী শীলা। তাই অভিনয়ের সময় আসল নায়িকাদেরও ছাপিয়ে যায় অনায়াসে।
আরও পড়ুন-মুঘল ইতিহাস আর পড়ানো হবে না!
এহেন নায়িকা হওয়ার স্বপ্নে মশগুল শীলা শিকদারের জীবনে আসে হঠাৎই এক ট্যুইস্ট। বাস্তবের এক নায়কের রিয়েল লাইফের প্রেমিকার রোলে নামতে হবে তাকে। নায়ক শুদ্ধ সেন সদ্য বিদেশ থেকে ফিরেছে। বাড়ির সবাই ছেলের বিয়ে দেবেনই। এখন উপায়। শুদ্ধ চায় না বিয়েটা করতে তাই তার চাই আনকোরা একটি নকল গার্লফ্রেন্ড। বিয়ে বন্ধ করতে মুশকিল আসান হল শীলা শিকদার। গড়গড়িয়ে কথা বলা, চনমনে, ছটফটে চঞ্চল শীলাই তো এমন অভিনয়ে তো পারফেক্ট। সত্যি কি সে একদিন হয়ে উঠবে ‘নায়িকা নং ১’।
আরও পড়ুন-মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে বর্ধিত পার্কিং ফি প্রত্যাহার পুরসভার
শাশুড়ি-বউমার কচকচানি, গরিবের মেয়ের বড়লোক শ্বশুরবাড়িতে বেঁচে থাকার জন্য যুদ্ধ, বোনে-বোনে ঈর্ষার লড়াই— সেই একঘেয়ে গল্পের দৌড়ে একেবারে নতুন বাস্তব-ঘেঁষা প্লট নিয়ে তৈরি ধারাবাহিক ‘নায়িকা নং ১’ হল একটি স্বপ্নপূরণের গল্প। এক জুনিয়র আর্টিস্টের লক্ষ্যে পৌঁছনোর গল্প। কফিশপে হিরোর পিছনের বা সামনের চেয়ারে বসে যারা কফি পান করে, পুরুষ বা মহিলা কনস্টেবল, নায়িকার কলেজের বন্ধু-গ্রুপ, বাসে ওঠা হিরোইনের সহযাত্রী, নাচের সঙ্গে সমান দক্ষতায় তাল মেলানো স্টাইলিশ হিরোর বন্ধুরা বা পাবের ইয়ং ছেলেমেয়ের দল সবই জুনিয়র আর্টির্স্ট। সামান্য পারিশ্রমিকে যারা টিকে থাকে ইন্ডাস্ট্রিতে। ওদেরও স্বপ্ন আছে প্রতিভা আছে। যাদের ছাড়া সিনেমা, সিরিয়াল অচল সেই জুনিয়র আর্টিস্টদের স্ট্রাগল ক’জনেরই বা জানা। তারা অবহেলিত। কত শিল্পীই অভিনেতা বা অভিনেত্রী হওয়ার আশা নিয়ে প্রোডাকশন হাউসের দরজায়-দরজায় ঘুরে ঘুরে সারাজীবনের মতো জুনিয়র আর্টিস্ট হয়ে রয়ে গেছে। তাদের এই স্ট্রাগলকে কুর্নিশ জানাতেই কালার্স বাংলা এবং প্রযোজক স্নেহাশিস চক্রবর্তী ও তাঁর ব্লুজ প্রোডাকশনের এই প্রচেষ্টা।
নিখাদ রোম্যান্টিক কমেডির উপর ভিত্তি করে কালার্স বাংলায় শুরু হয়েছে নতুন ধারাবাহিক ‘নায়িকা নং ১’। সবচেয়ে লক্ষণীয় হল— ধারাবাহিকে নেই কোনও লড়াই, ঝগড়া, নেই তেমন কোনও নেগেটিভ চরিত্র যে কিনা আগুন জ্বালায়, পোড়ায়, কষ্ট দেয়। স্নেহাশিসের গল্প এবং তাঁর তৈরি চিত্রনাট্যের মজাদার সংলাপে না হেসে থাকা যায় না। আসলে রোম্যান্টিক কমেডির মোড়কে এক বাস্তব জীবনের কঠিন লড়াইয়ের গল্প শুনিয়েছেন স্নেহাশিস তাঁর ধারাবাহিক ‘নায়িকা নং ১’-এ। এমন একটি মেয়ের গল্প যে নিজের স্বপ্নকে সফল করতে দৃঢ় সংকল্প।
আরও পড়ুন-অভিষেকের সভা ঘিরে উন্মাদনা আলিপুরদুয়ারে
নায়িকা নং ১-এর শীতলা বা শীলা শিকদারের চরিত্রে রয়েছেন অভিনেত্রী ঋতব্রতা দে। ‘কন্যাদান’ ধারাবাহিকের জন্য ইতিমধ্যেই বেশ পরিচিত মুখ তিনি। পলিটিকাল সায়েন্স নিয়ে পড়াশুনো করছেন ঋতব্রতা। তাঁর বিপরীতে রয়েছে ‘আয় তবে সহচরী’-খ্যাত টিপু ওরফে অভিনেতা ইন্দ্রনীল চট্টোপাধ্যায়। ধারাবাহিক প্রসঙ্গে ঋতব্রতা বলেন, ‘‘কন্যাদান’ করতে-করতে একটা কমফোর্ট জোনে চলে গিয়েছিলাম। এই নতুন চরিত্রটি কমফোর্ট জোনের বাইরে একটা চ্যালেঞ্জ ছিল আমার কাছে। যদিও শীতলা শিকদারের সঙ্গে আমার চরিত্রগত মিল নেই। আমি অমন ছটফটে চঞ্চল, কথা-বলা মেয়ে নই। খুব শান্ত, চুপচাপ, নিজের মতো থাকতেই ভালবাসি। তবে আমার লক্ষ্য এবং পজিটিভিটি ওরই মতোন।”
ব্লুজ প্রোডাকশন এতদিন দর্শকদের ভিন্ন স্বাদের ধারাবাহিক উপহার দিয়েছে। এবারেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। এই প্রসঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে এই প্রোডাকশন হাউসের কর্ণধার স্নেহাশিস চক্রবর্তী জানান, ‘আমার ধারাবাহিকে কখনও একই গল্পের পুনরাবৃত্তি হয় না। জুনিয়র আর্টিস্টদের কথা কেউ বলে না। যারা প্রতি মুহূর্তে লড়ে, প্রতি মুহূর্তে জীবনের বিষপান করে, তারপরও এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখে। এদের আমি খুব কাছে থেকে চিনি। দেখেছি। অনেক আশা নিয়ে বহু ছেলেমেয়ে আসে, প্রোডাকশন হাউসের সামনে ঘোরে কিন্তু জুনিয়র আর্টিস্ট হয়ে রয়ে যায়। এমন প্রচুর ছেলেমেয়েকে আমি নিজে লঞ্চ করেছি। তাই এবার এদের নিয়ে গল্প।’
আরও পড়ুন-গিরিরাজকে বিস্ফোরক চিঠি তৃণমূল কংগ্রেসের
এই ধারাবাহিকের অন্যান্য চরিত্রে রয়েছেন অভিনেত্রী সোমা দে, সুপ্রিয়া দত্ত, সুতপা তালুকদার, দেবারতি পাল, যুধাজিৎ এবং সোমাশ্রী চাকী। ধারাবাহিকের পর্ব পরিচালনায় রয়েছেন রূপম। কালার্সের বিজনেস হেড সাগ্নিক ঘোষ বলেন, মৌলিক গল্প এবং ইন্টারেস্টিং চরিত্রগুলোকে তুলে আনতে আমরা বাংলা টেলিভিশনের দর্শকদের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ‘নায়িকা নং ১’ তেমনই একটি হৃদয়-ছুঁয়ে-যাওয়া গল্প যেখানে একজন জুনিয়র আর্টিস্ট প্রতিকূল পরিস্থিতির বিরুদ্ধে হার না মেনে লড়াই করার স্বপ্ন দেখাবে।