সন্তান ধারণ মৌলিক অধিকার
প্রকৃতিগতভাবে নারীর সন্তান লাভের মৌলিক অধিকার রয়েছে। শুধুমাত্র আইন দেখিয়ে তাঁকে প্রাকৃতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা উচিত নয়। জোর করে সন্তান গর্ভপাত করানো যাবে না। ২১ অনুচ্ছেদের অধীনে ভারতের সংবিধানে ব্যক্তিগত স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে সন্তান ধারণ করা এবং জন্ম দেওয়ার স্বাধীনতা অন্তর্ভুক্ত। একই সময়ে অন্যান্য আইনের বিভিন্ন বিধানের অধীনে প্রজনন, গর্ভপাত এবং বন্ধ্যাকরণের মতো বিষয়ে নারীকে যথেষ্ট স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। তবু সারা পৃথিবীতে ঘটছে গর্ভপাতের মতো অমানবিক ঘটনা। তার পিছনে রয়েছে নানা কারণ। উদ্দেশ্য যদি সৎ হয়, তাহলে কিছু বলার নেই। তবে অসৎ উদ্দেশ্যে হলে সেটা অন্যায়। শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। বাড়াতে হবে সচেতনতা। গর্ভপাতের পর বহু নারী লুকিয়ে চোখের জল ফেলেন। কারণে-অকারণে যাঁদের গর্ভপাত ঘটানো হয়েছে। শুরুতে তিনটি ঘটনার উপর আলোকপাত করা যাক।
আরও পড়ুন-চন্দ্রনাথের বাড়িতে ইডি, নেত্রীর ফোন
চাপের কাছে নতিস্বীকার
বেশ কয়েকবছর আগের কথা। একটা খবর আলোড়ন তুলেছিল। বিত্তশালী পরিবারের গৃহবধূ রুমকি স্বপ্ন দেখেছিলেন মা হবেন। যেদিন তিনি মা হওয়ার কথা জানতে পারেন, আনন্দে ভেসে গিয়েছিলেন। তাঁর গর্ভে তিলেতিলে গড়ে উঠছিল ছোট্ট শিশু। ভ্রূণ থেকে পাচ্ছিল অবয়ব। কিন্তু বাস্তবের নির্মম আঘাতে সব তছনছ হয়ে যায়। প্রতিপত্তিশালী বিত্তবান স্বামী, শ্বশুর চাননি রুমকির স্বপ্ন সফল হোক। উপড়ে ফেলা হয়েছিল তাঁর গর্ভের ভ্রূণ। কারণ গোপনে রফা করে অনেক টাকার বিনিময় রুমকির পরিবার জেনেছিল তাঁর গর্ভে বাড়ছে কন্যাভ্রূণ। কিন্তু ভ্রূণের লিঙ্গ নির্ধারণ যে অবৈধ। শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাহলে? তাহলে আর কী? টাকায় কী না হয়। এক মুহূর্ত দেরি করেনি বিত্তশালী পরিবার। মুছে ফেলা হয়েছিল সদ্য তৈরি হওয়া প্রাণকে। রুমকি চেয়েছিলেন তাঁর প্রথম সন্তানকে এই পৃথিবীর আলো দেখাতে। কিন্তু পরিবারের চাপের কাছে নতিস্বীকার করতে হয় তাঁকে।
আরও পড়ুন-চন্দ্রনাথের বাড়িতে ইডি, নেত্রীর ফোন
দ্বিতীয় ঘটনা। এক মধ্যবিত্ত পরিবারের। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে জানা যায়, পরিবারের গর্ভবতী মহিলা যে ভ্রূণটি ধারণ করছেন, সেটা অস্বাভাবিক। অসুস্থতা নিয়েই জন্মাবে। বিষয়টি জানান ডাক্তারবাবু। পরিবার দ্রুত ভ্রূণ নষ্টের সিদ্ধান্ত নেয়। কারণ ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর সন্তানটি স্বল্পায়ু হত। শারীরিক সমস্যা নিয়ে ভুগতে হত সারাজীবন।
ঘটনা তিন। ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগেই নষ্ট করা হয় এক মহিলার গর্ভের সন্তানকে। কয়েক মাস ধরে মহিলা পেটের মধ্যে লালন করছিলেন একটি পুরুষ-ভ্রূণ। শেষবার শারীরিক পরীক্ষার পর চিকিৎসকরা বুঝতে পারেন, অবস্থা ক্রিটিক্যাল। গর্ভপাতের পর মহিলার জীবন সঙ্কটের মুখে পড়তে পারে। হতে পারে মৃত্যু পর্যন্ত। তাঁরা বিষয়টি জানান মহিলার পরিবারকে। তখন গর্ভবতী মহিলার শরীরের কথা ভেবে পরিবারটি ভ্রূণ নষ্টের সিদ্ধান্ত নেয়।
অনাগত শিশুর বাঁচার অধিকার
তিনটি তিনরকমের গর্ভপাতের ঘটনা। কোনটা বৈধ এবং কোনটা অবৈধ তার উত্তর পাওয়া যাবে পরে। তবে এটা জোর গলায় বলা যায়, পৃথিবীতে প্রতিটি অনাগত শিশুর বাঁচার অধিকার আছে। আসলে নানা কারণে ভ্রূণ নষ্টের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কখনও ইচ্ছাকৃত ভাবে, কখনও বাধ্য হয়ে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘হু’র মতে, বিশ্বে প্রতি বছর আনুমানিক ৪০-৫০ মিলিয়ন গর্ভপাত ঘটে। প্রতিদিনের সংখ্যা হিসাবে আনুমানিক ১,২৫,০০০টি। এই গর্ভধারণের অর্ধেকেরও বেশি অপরিকল্পিত। যেগুলো পরিকল্পিত, সেখানেও রয়েছে নানারকমের সমস্যা। পৃথিবীর প্রতিটি দেশে রয়েছে গর্ভপাত সংক্রান্ত আলাদা আইন। কিছু দেশে গর্ভপাত সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। আবার কিছু কিছু দেশে নির্দিষ্ট শর্তে গর্ভপাতের অনুমতি দেওয়া হয়। কখনও কখনও দেখা যায় পরস্পরবিরোধী মতামত। ধর্মীয় বিশ্বাস, মানবাধিকার ইস্যু, নারীর অধিকার, জীবনের অধিকার-সহ আরও কিছু নৈতিক বিষয় বিতর্কিত করে তোলে পুরো বিষয়টিকে।
আরও পড়ুন-দিনের কবিতা
থাকতে হবে উপযুক্ত কারণ
বিশিষ্ট স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ অর্ঘ্য মৈত্র-র সঙ্গে কথা হল। তিনি জানালেন, ‘‘প্রতিটি ভ্রূণের আলোকিত হওয়ার অধিকার রয়েছে। ভ্রূণহত্যা অপরাধ। তবে সেটা ২৪ সপ্তাহ পেরিয়ে যাওয়ার পরে। ২৪ সপ্তাহের মধ্যে ভ্রূণ নষ্ট করা যায়। তবে তার জন্য উপযুক্ত কারণ দেখাতে হবে। যদি সেই ভ্রূণ অস্বাভাবিক হয়, তাহলে অনায়াসে নষ্ট করা যায়। যদি দেখা যায় মায়ের শারীরিক ক্ষতির বিরাট সম্ভাবনা রয়েছে, তাহলেও ভ্রূণ নষ্ট করা যায়। দুটি ক্ষেত্রেই পরিবারের সদস্যদের সম্মতি প্রয়োজন। নিতে হবে দু’জন চিকিৎসকের পরামর্শ। এর বাইরে কিছু হলে অবশ্যই অন্যায়। আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে প্রতিটি ভ্রূণ মাতৃগর্ভে সুরক্ষিত থাকে এবং স্বাভাবিক ভাবে জন্মলাভ করতে পারে।’’
বিশিষ্ট স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ বিশ্বরঞ্জন রায় বললেন, ‘‘গর্ভস্থ ভ্রূণকে সুরক্ষিত রাখা আমাদের কর্তব্য। আছে আইন। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আইন পরিবর্তিত হয়। অন্যায়ভাবে ভ্রূণহত্যা করলে কঠোর শাস্তি হতে পারে। তবে অনেকেই অপুষ্ট ভ্রূণ নষ্ট করে দেন। যাই হোক, ভ্রূণ যাতে পরিপুষ্ট হয়ে ভূমিষ্ঠ হতে পারে, তার জন্য সবাইকে সচেষ্ট হতে হবে।’’
মা ও শিশুর জন্য নিরাপদ হতে পারে
এই বক্তব্য আমাদের দেশের প্রেক্ষিতে। ভারতে, মেডিক্যাল টার্মিনেশন অ্যাক্ট-এর অধীনে গর্ভপাত বৈধ। যা মহিলাদের প্রজনন অধিকার এবং লিঙ্গ ন্যায়বিচারের অংশ হিসাবে গর্ভপাত করার অনুমতি দেয়। একজন পেশাদার চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে ২৪ সপ্তাহের কম সময়ের মধ্যে যেমন এটা বন্ধ করা যায়, তেমন কিছু ক্ষেত্রে ২৪ সপ্তাহের পরেও অনুমোদিত হতে পারে। যদি আদালত অনুমোদন করে। অনুমান করা হয়, আমাদের দেশে প্রতি বছর ১৫ মিলিয়নেরও বেশি গর্ভপাত ঘটে। যার মধ্যে একটি বিশাল অংশ চিকিৎসাগতভাবে অনিরাপদ বলে মনে করা হয়। পাশাপাশি অ্যাকাউন্টিং মাতৃমৃত্যুও অন্যতম বড় কারণ। স্বাস্থ্য এবং মাতৃমৃত্যুর ঝুঁকি কমাতে নিরাপদ গর্ভপাতের পদ্ধতির পরামর্শ দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ করা পদ্ধতি ব্যবহার করে গর্ভপাত করানো মা ও শিশুর জন্য নিরাপদ হতে পারে।
আরও পড়ুন-ক্লাসেনকে থামিয়ে রুদ্ধশ্বাস জয়
গর্ভপাত আইন পরিবর্তিত হয়েছে
সচরাচর পরামর্শ দেওয়া হয় যে, মহিলারা নিজেরাই গর্ভপাত করা থেকে বিরত থাকুন। যদি একান্তই প্রয়োজন হয় সেক্ষেত্রে গর্ভপাত অবশ্যই একজন দক্ষ বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে, নির্ধারিত নির্দেশিকা মেনে করতে হবে।
তবে সারা বিশ্বে খুব কম দেশই আছে যেখানে নারীদের অনুরোধের ভিত্তিতে গর্ভপাতের সুবিধা দেয়। কানাডা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চিন এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশে মহিলারা কোনও পূর্বশর্ত ছাড়াই গর্ভপাত করতে পারেন। আসলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গর্ভপাত আইন ক্রমাগত পরিবর্তিত হয়েছে। বিকশিত হয়েছে। কিছু আইন অবাধে চাহিদা অনুযায়ী গর্ভপাত করার অনুমতি দেয়। কিছু শর্ত আরোপ করে এবং অন্যরা সব পরিস্থিতিতে এটি নিষিদ্ধ করে। বৈধতার বিষয়ে তাদের অবস্থান নির্বিশেষে, গর্ভপাত ঘটতে থাকে। অনিরাপদ বলে বিবেচিত হতে পারে এমন বিকল্পগুলি অবলম্বন করতে মহিলাদের বাধ্য করা হয়।
পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি অনেক ভাল
সমাজতাত্ত্বিক অধ্যাপক রামানুজ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা হল। তিনি বললেন, ‘‘ভ্রূণহত্যাকে সমাজ ‘হত্যা’ বলেই দেখে না। এটাই হল সমস্যা। ভ্রূণহত্যাকে হত্যা বলে দেখলে কিন্তু এমনটা হত না। সমাজের কুসংস্কার এবং আর্থ সামাজিক চাপ এর জন্য কিছুটা হলেও দায়ী। কোনও একটা স্তরে নয়, সমাজের সব স্তরেই ভ্রূণহত্যা দেখতে পাওয়া যায়। বর্তমানে টেকনোলজির যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। এর উপকারিতা প্রচুর। পাশাপাশি আছে কিছু অপকারিতাও। এই টেকনোলজির ফলে আগাম জানা যায় ভ্রূণটি কন্যার না পুত্রের। কন্যাভ্রূণ হলেই মেরে দেওয়ার একটা প্রবণতা দেখা যায়।’’ তিনি আরও বলেন,‘‘আগে অনেক জায়গায় বাচ্চা জন্মানোর পর মেরে ফেলা হত। এখন আগেই মেরে দেওয়া হয়। আশা করা গিয়েছিল, সমাজ শিক্ষিত, অর্থনৈতিকভাবে উন্নত হলে বিষয়টা কমবে। কিন্তু সেটা হল না। সেই কারণেই কন্যা সন্তানের সংখ্যা তুলনায় কম দেখতে পাওয়া যায়। স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরেও রেশিওটা আমরা ১ : ১ করতে পারিনি। সমাজে যাঁরা এলিট, যাঁরা মোটিভেট করতে পারেন, সেইরকম ব্যক্তিত্বদের মধ্যে কাউকেই এই বিষয়ে তেমনভাবে ভাবনাচিন্তা করতে দেখি না। এখন সোশ্যাল লিডারের বড় অভাব। অথচ একমাত্র তাঁরাই পারেন মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে। কিন্তু কেউই এগিয়ে আসছেন না।’’ পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘‘অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি অনেকটাই ভাল। পুত্র-কন্যার রেশিও মোটামুটি কাছাকাছি এসেছে। এর অন্যতম কারণ, শিক্ষাক্ষেত্রে মেয়েদের এগিয়ে আসা। তারা নিজের ভাল বোঝার চেষ্টা করছে। পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে আরও কিছুটা সময় লাগবে। সারা দেশের দিকে তাকালে বোঝা যাবে, গ্রামের দিকে নজরদারি কম। শিক্ষার হার কম। বিভিন্ন নার্সিংহোমে নির্বিচারে ভ্রূণহত্যা করা হয়ে থাকে। তবে এখন মানুষ আগের তুলনায় সচেতন হয়েছে। বেড়েছে ডাক্তারি পড়ার প্রবণতা। এর সুফল পেতে আরও কিছুটা অপেক্ষা করতে হবে। কারণ এটা সময়সাপেক্ষ। মনে রাখতে হবে জেন্ডারের পার্থক্যে কোনওভাবেই ম্যাটার করে না। সমাজের বিশেষ দায়িত্ব রয়েছে। দূর করতে হবে পার্থক্যকরণ। সবাইকে সচেতন হতে হবে। তবেই পুত্র ও কন্যার রেশিও অনেকটা কমবে। বন্ধ হবে শিশুভ্রূণ হত্যা।’
আরও পড়ুন-মৌলেদের রক্ষায় নদী, খাঁড়িতে বাড়তি নজরদারি
মানুষ অনেকটাই সচেতন হয়েছে
সমাজতাত্ত্বিক অধ্যাপক ড. অনিরুদ্ধ চৌধুরী জানালেন,‘‘ভ্রূণহত্যা আইনত অপরাধ। পুরোপুরি নিষিদ্ধ। তবে যাঁদের টাকা আছে তাঁরা আইনকে বুড়ো আঙুল দেখান। ডায়াগোনস্টিক সেন্টারে বড় বড় হরফে লেখা থাকে লিঙ্গ নির্ধারণ হয় না। কিন্তু আড়ালে সেটা যথেষ্ট পরিমাণে হয়। এর ফলে ঘটে থাকে কন্যাভ্রূণ হত্যার মতো নির্মম ঘটনা। দরিদ্র পরিবারে তো বটেই, এটা দেখা যায় এলিট ক্লাসের মধ্যেও। ফলে নারী-পুরুষ পার্থক্য অনেকটাই বেড়েছে।’’ তিনি আরও বলেন,‘‘আগে লিঙ্গ নির্ধারণের সুব্যবস্থা ছিল না। তখন গ্রামাঞ্চলে ধাইমারা প্রসব করাতেন। বাড়ির পুরুষরা তাঁদের কন্যা সন্তান হলে মেরে ফেলার নির্দেশ দিতেন। সেই ধারা আজও চলছে। যদিও পদ্ধতিগত বদল এসেছে। সঠিক পরিসংখ্যান হাতে এলে দেখা যাবে অনেকেই জন্মগ্রহণ করে। কিন্তু প্রথম জন্মদিন দেখার সুযোগ পায় না। তার আগেই মৃত্যু হয়ে যায়। এই ক্ষেত্রে দেখা যায় ছেলেদের সারভাইভাল রেট মেয়েদের তুলনায় বেশি। তবে কোথাও কোথাও মানুষের ভাবনাচিন্তার বদল হয়েছে। যদিও সেটা বৃহত্তর অংশে নয়, ছোট অংশের মধ্যে। রাজস্থানেরই কোনও এক গ্রামে কন্যাসন্তান জন্ম নিলে রীতিমতো উদযাপন করা হয়। লাগানো হয় গাছের চারা। আইন দিয়ে সবকিছু বন্ধ করা যাবে না। হতে হবে মানবিক।’! নারী-পুরুষের রেসিও প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘একটা কথা ভুলে গেলে চলবে না, কন্যাসন্তান জন্ম না নিলে প্রজন্ম এগোবে না। ১ : ১ রেশিও রাখতেই হবে। আইন দিয়ে সবকিছু বন্ধ করা যাবে না। বুঝতে হবে, সমাজে পুত্রের যেমন প্রয়োজন আছে, তেমনই কন্যারও প্রয়োজন আছে। মানুষকে সচেতন হতে হবে। আশার কথা, গত কয়েক বছরে মানুষ অনেকটাই সচেতন হয়েছে। ভ্রূণহত্যা আগে তুলনায় কিছুটা হলেও কমেছে। বেড়েছে কন্যাসন্তান জন্মের হার। ২০১১-র জনগণনার তথ্য অনুযায়ী ১০০০ জন পুরুষ থাকলে নারীর সংখ্যা ৯২৩ জন। ২০১১-র পর জনগণনা হয়নি। ফলে প্রকৃত তথ্যটা সামনে নেই। তবু বলা যায়, পুত্র-কন্যা রেশিওটাও তুলনামূলকভাবে অনেকটাই ভাল হয়েছে। বিশেষত আমাদের রাজ্যে। তবে শুধুমাত্র কন্যা-ভ্রূণ হত্যাই যে হয়, তা কিন্তু নয়। পুরুষ-ভ্রূণ হত্যার ঘটনাও সমাজে ঘটে থাকে। তার অনেকগুলো কারণ আছে। অন্যতম কারণ হল ফ্রিমিক্সিং। অপুষ্ট ভ্রূণকেও অনেক সময় মেরে ফেলা হয়। আবারও বলি, ভ্রূণহত্যা অপরাধ। ভ্রূণকে সুরক্ষিত রাখার দায়িত্ব আমাদের। সেটা যেন ভুলে না যাই।’
আরও পড়ুন-থিয়েটারে আজও লোকশিক্ষা হয়!
গর্ভপাত বিরোধিতার দিন
অন্যায়ভাবে ভ্রূণহত্যার বিরুদ্ধে সচেতনতা বাড়াতে সারা পৃথিবীতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ২৫ মার্চ পালিত হয় অনাগত শিশুর আন্তর্জাতিক দিবস। এটা অনাগত ভ্রূণের একটি বার্ষিক স্মারক। গর্ভপাত বিরোধিতার দিন হিসাবে পালিত হয়। পোপ জন পল টু-র উদ্যোগে দিনটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তিনি দিনটিকে জীবনের পক্ষে একটি ইতিবাচক বিকল্প এবং প্রতিটি পরিস্থিতিতে মানব মর্যাদার প্রতি সম্মান নিশ্চিত করার জন্য জীবনের সংস্কৃতির বিস্তার হিসাবে দেখেছিলেন। ১৯৯৩ সালে এল সালভাদর প্রথম দেশ হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে এই দিনটি উদযাপন করে, যাকে জন্মের অধিকার দিবস বলা হয়। পরবর্তীকালে অন্যান্য দেশ অনাগতদের জন্য আনুষ্ঠানিক উদযাপন শুরু করেছে। যেমন ১৯৯৮ সালে অনাগতদের দিবসের সঙ্গে আর্জেন্টিনা এবং চিলিতে গর্ভধারণ ও অনাগত দিবস, গুয়াতেমালায় অজাতদের জাতীয় দিবস এবং কোস্টারিকা জাতীয় দিবসের সঙ্গে জন্মের আগে জীবন উদযাপন শুরু করে। এ ছাড়াও নিকারাগুয়া ২০০০ সালে অনাগত শিশু দিবস পালন শুরু করে, ২০০১ সালে ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্র, ২০০২ সালে পেরু, ২০০৩ সালে প্যারাগুয়ে, ২০০৪ সালে ফিলিপাইন, ২০০৫ সালে হন্ডুরাস, ২০০৬ সালে ইকুয়েডর এবং ২০১৮ সালে পুয়ের্তো রিকো দিনটি উদযাপন শুরু করে। চিলি ২০১৩ সালে অনাগত শিশু ও দত্তক দিবস পালন শুরু করে। অনাগত শিশুর আন্তর্জাতিক দিবসের প্রচার কলম্বাসের নাইটসের মাধ্যমে অনুমোদিত হয়েছিল। যেভাবেই হোক সুরক্ষা দিতে হবে গর্ভস্থ ভ্রূণকে। আইন আছে। থাকুক। চলুক নিজের মতো। এই ক্ষেত্রে শুনতে হবে মনের কথা। হতে হবে সচেতন। করতে হবে কাজ। বোঝাতে হবে সমাজকে। তবেই অনাগত ভ্রূণ রক্ষা করা সম্ভব হবে।