প্রতিষ্ঠাদিবসে শপথ নিলাম, বুক চিতিয়ে লড়াই জারি থাকবে

বছরখানেক আগে বহিরাগত বর্গিরা বাংলা দখল করতে এসেছিল। মানুষ তাদের মুখের মতো জবাব দিয়েছেন। এখন তারা রাজ্যের প্রাপ্য অর্থ না দিয়ে মানুষকে পেটে মারার আয়োজন করছেন। গোপনে আঁটছেন বাংলা ভাগের ফন্দি। ষড়যন্ত্রী শিবিরে লাল সবুজ গেরুয়া— অনেক রঙের সমাহার। কিন্তু এই বিবাক জোটও তৃণ-জন মহাজোটের সামনে বেবাক উধাও হয়ে যাবে। আগামী পঞ্চায়েত ভোটেই এই দেওয়াললিখন স্পষ্টতর হবে। লিখছেন সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়

Must read

২৬ বছরে পা দিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৈরি দল তৃণমূল কংগ্রেস। ৬টি সর্বভারতীয় দলের মধ্যে বহুদিন আগেই জায়গা করে নিয়েছে মা-মাটি-মানুষের দল, তৃণমূল কংগ্রেস। সর্বাধিনায়িকা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপসহীন সংগ্রাম, ত্যাগ, তিতিক্ষা ও জনদরদি নেতৃত্বে আকৃষ্ট হয়ে লক্ষকোটি মানুষ এই দলের ভিত থেকে ইমারত গড়ে তুলেছেন। নিজেদের ঘাম, রক্ত, নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে। তাই তৃণমূল কংগ্রেসই সর্বস্তরের জনতার একমাত্র নিজস্ব দল।

আরও পড়ুন-রেফার রুখতে কড়া পদক্ষেপ রাজ্যের

এর আগেও বাংলায় অনেক আঞ্চলিক দল গড়ে উঠেছিল। যেমন, স্বরাজ্য পার্টি, কৃষক প্রজা পার্টি, আধ ডজন সোশ্যালিস্ট পার্টি, বাংলা কংগ্রেস, ওয়ার্কার্স পার্টি ইত্যাদি। এই দলগুলি সাময়িক বা সীমিত সাফল্য পেলেও ক্ষণস্থায়ী ছিল। আর প্রণব মুখোপাধ্যায়ের তৈরি রাষ্ট্রীয় সমাজবাদী কংগ্রেস কিংবা সোমেন মিত্রের দল প্রগতিশীল ইন্দিরা কংগ্রেস রাজ্যবাসীর মনে কোনও রেখাপাত করতে পারেনি। সেক্ষেত্রে অনেক ঝড়-ঝাপটা সহ্য করেও তৃণমূলের অগ্রগমন কোনও শক্তি রোধ করতে পারেনি। এমনও সময় গিয়েছে যখন মমতাদিদি লোকসভায় তৃণমূল কংগ্রেসের একমাত্র সদস্যা ছিলেন। তবু ইতিহাস সাক্ষী আছে, তিনি ছিলেন একাই একশো। নিপীড়িত জনগণের নিজস্ব কণ্ঠস্বর। তাই অচিরে ফিনিক্স পাখির মতো তিনি আবার জেগে ওঠেন। মানুষও পরম যত্নে বাড়িয়ে দেয় সহযোগিতার হাত। তাঁর হাত ধরে শুরু হয় জনতার জয়যাত্রা। এবার অবিরত মরণপণ লড়াই বাংলার মানুষের, দিদির নেতৃত্বে। হার্মাদ বাহিনীও হিংস্র নেকড়ের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে। সূচপুর, নানুর, কেশপুর, গড়বেতা, সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম, নেতাইয়ে বিভীষিকার মাইলফলক গেঁথে দেয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বে গণ-প্রতিরোধের ঝড়ে সিপিআই (এম) তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে। অন্য দেশ হলে হার্মাদদের দেশ ছেড়ে পালাতে হত। অন্যথায় ৫৫ হাজার রাজনৈতিক কর্মী হত্যার অপরাধে মৃত্যুদণ্ড এড়াতে পারত না। কিন্তু দিদি বলেছিলেন, বদলা নয়— বদল চাই। কথা রাখলেন। তাঁর নির্দেশে দল একটা ছোট বিজয় মিছিলও বের করেনি। দ্রুত পাহাড় ও জঙ্গলে শান্তি ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু করলেন। তিনি ঘোষণা করলেন, শান্তিই বেঁচে থাকার অন্যতম শর্ত। উন্নয়নের হাতিয়ার। মানুষও বহুযুগ পরে ফিরে পেলেন শান্তির পরিবেশ, মানবাধিকার। তার বড় প্রমাণ, ২০০৯ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত প্রতিটি লোকসভা নির্বাচনে কিংবা ২০১১ থেকে ২০২১ পর্যন্ত উপর্যুপরি তিনবার বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল জনসমর্থন পেয়ে সরকার গঠন করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। আর বামফ্রন্ট, কংগ্রেস শূন্যে বিলীন হওয়ার নজির গড়েছে।

আরও পড়ুন-বর্ষশেষে অভিষেক, সততার জয় অবশ্যম্ভাবী

সামনে পঞ্চায়েত নির্বাচন। জেলায় জেলায়, গ্রামে-গঞ্জে তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকদের ঐতিহাসিক সমাবেশ দেখে ভীত, সন্ত্রস্ত যাত্রাদলের বিকারগ্রস্ত অধিকারীরা ভাঙা-কলসির মতো আওয়াজ তুলছে। কিন্তু বহিরাগত বর্গিরা যারা বাংলা ‘দখল’ করতে এসেছিল, বাংলার দশ কোটি নরনারী সেই অনুপ্রবেশ বুক চিতিয়ে লড়াই করে রুখে দিয়েছে। এর প্রতিশোধ নিতেই একদিকে ১০০ দিনের কাজের পাওনা টাকা না দিয়ে বাংলার গরিব মানুষকে ভাতে মারার চেষ্টা চালাচ্ছে। অন্যদিকে, বাংলা ভাগেরও জিগির তুলেছে। তৃণমূল কর্মী-সমর্থক তো বটেই, রাজ্যের আপামর জনসাধারণ এই বাংলা- বিরোধী ষড়যন্ত্রকে গুঁড়িয়ে দিতে মমতা-অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে প্রস্তুত আছেন। বিবাক (বিজেপি-বাম-কংগ্রেস) বিপাকে পড়ে এখন তলে তলে হাত মেলাচ্ছে। এবার তাই বিবাক বনাম তৃণ-জনজোটের লড়াই। বলা বাহুল্য, তৃণ-জনজোটের হড়পা বানের তোড়ে এবারেও ওরা ভেসে যাবে।

Latest article