প্রতিবেদন : রাজনৈতিক লক্ষ্যপূরণে সংবিধান বদল করে এক দেশ, এক নির্বাচনের (One Nation- One Election) পথে হাঁটতে চায় মোদি সরকার। ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো ও বহুদলীয় গণতন্ত্রকে পদদলিত করে দেশজুড়ে হিন্দুত্ববাদী শাসনব্যবস্থার পথ মসৃণ করাই বিজেপির রাজনৈতিক অভিসন্ধি। অতীতে এক দেশ, এক ভোটের উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা হলেও তা ফলপ্রসূ হয়নি। কেন্দ্রীয় আইন কমিশন ২০১৮ সালের ৩০ অগাস্ট এক দেশ, এক ভোট নিয়ে রিপোর্ট জমা দেয়। তাতে স্পষ্ট বলা হয়েছে, বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী গোটা দেশে একসঙ্গে ভোট করা সম্ভব নয়। এজন্য জনপ্রতিনিধিত্ব আইন সংশোধন করতে হবে। পাশাপাশি সংবিধানের অন্তত পাঁচটি অনুচ্ছেদের পরিবর্তন প্রয়োজন।
সংবিধানের যেসব ধারা বা অনুচ্ছেদের পরিবর্তন প্রয়োজন তার মধ্যে প্রথমেই রয়েছে ৮৩(২)। এখানে বলা রয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকারের সময়সীমা পাঁচ বছরের বেশি হতে পারে না। তবে প্রয়োজনে কমানো যায়। এ ছাড়াও অনুচ্ছেদ ৮৫ (২) (বি), ১৭২ (১), ১৭৪ (২) (বি) বদলাতে হবে। এগুলির সবই রাজ্যের সরকার নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত ধারা। এছাড়া রাজ্যে সরকার ভেঙে দিয়ে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির ৩৫৬ ধারাতেও পরিবর্তন করা দরকার। এই পরিবর্তনের জন্য লোকসভা এবং রাজ্যসভায় সংবিধান সংশোধনী বিলে সমর্থন দরকার। সেই সঙ্গে চাই সব রাজ্য সরকার এবং রাজনৈতিক দলের ঐকমত্য। তার পরেও দেশের কমপক্ষে অর্ধেক রাজ্যের বিধানসভায় তা পাশ করিয়ে নিতে হবে। দেশের ৩০টি বিধানসভার মধ্যে অন্তত ১৫টির সমর্থন চাই। এই মুহূর্তে বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী রয়েছে দেশের ১০ রাজ্যে। এছাড়া বিজেপির জোটসঙ্গী বা সমর্থক দলগুলি ৫টি রাজ্যে ক্ষমতায়। তবে সংখ্যাতত্ত্বের হিসাব যাই হোক, বিজেপির পক্ষে এই পরিবর্তন খুব সহজ হবে না।
আরও পড়ুন-নির্বাচন এগিয়ে আনতেই বিশেষ অধিবেশন: নীতীশ
এর পাশাপাশি এক দেশ (One Nation- One Election), এক ভোট নীতিতে কিছু সমস্যা রয়েছে। একবার গোটা দেশে একসঙ্গে ভোট করালেই যে পরের ৫ বছরে কেন্দ্রীয় সরকার বা কোনও রাজ্যের সরকার মাঝপথে পড়ে যাবে না তা নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। আবার কোথাও ৩৫৬ ধারা জারির প্রয়োজন হলে সেক্ষেত্রে কী হবে? তেমন পরিস্থিতিতে ফের আলাদা আলাদা সময়ে নির্বাচন করতে হবে। তবে এত বাধার পরেও খরচের যুক্তি দিয়ে এই লক্ষ্য পূরণ করতে মরিয়া হচ্ছে মোদি সরকার। লোকসভা ভোটের হাওয়াতেই রাজ্যে রাজ্যে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়াই লক্ষ্য গেরুয়া শিবিরের। হিমাচল প্রদেশ ও কর্নাটক হাতছাড়া হওয়ার পর রাজ্যওয়াড়ি পরিস্থিতি অনুকূল নয়, বুঝতে পারছে মোদির দল।
এদিকে এক দেশ, এক ভোট নীতি লাগু করার জন্য গঠিত কমিটিতে কারা থাকবেন, শনিবার সেই তালিকা প্রকাশ করেছে কেন্দ্র। কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন দেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। এছাড়া, আরও সাতজন সদস্য থাকছেন। তাঁরা হলেন, অমিত শাহ, অধীররঞ্জন চৌধুরী, গুলাম নবি আজাদ, এন কে সিংহ, সুভাষ সি কাশ্যপ, হরিশ সালভে, সঞ্জয় কোঠারি।