ভোটে হার নিশ্চিত জেনে মানুষ মারার ভয়ানক রাজনীতি বিরোধীদের

বাহিনীর অভাবে কিছু অনভিপ্রেত ঘটনা আটকানো যায়নি। তবে দিনের শেষে হিসেব বলছে, ৬১ হাজার ৪৭৯ বুথে নির্বিঘ্নে ভোট-উৎসব হয়েছে

Must read

প্রতিবেদন : বিরোধীদের চক্রান্ত, প্ররোচনা এবং আক্রমণকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে শনিবার শেষ হল রাজ্যের পঞ্চায়েত ভোট। ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাত অবধি পরিসংখ্যান বলছে, ৬৬.২৮ শতাংশ ভোট পড়েছে। যেহেতু ত্রিস্তর পঞ্চায়েত সেহেতু ভোটপর্ব ছিল সময়সাপেক্ষ। তাই সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত অবধি বহু জায়গায় ভোটের লাইন দেখা গিয়েছে। মানুষ কার্যত উৎসবের মেজাজে ভোট দিয়েছেন। ৫৯-৬০টি বুথে পরিকল্পনা করে হিংসার পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে এবং তার জন্য অনভিপ্রেত হলেও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। যার মধ্যে অধিকাংশই তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী। ভোটে এক শ্রেণির মিডিয়া উদ্দেশ্যপ্রণোদিত একপেশে নেতিবাচক প্রচার করছিল।

আরও পড়ুন-হার নিশ্চিত জেনে গেটে লাথি অক্ষমের

পাশাপাশি রাজ্যপাল রাজভবনের বাইরে বেরিয়ে এসে বিজেপি নেতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। যদিও তাঁর এই লোক দেখানো রাজনৈতিক -শো ফ্লপ হয়েছে। নির্বাচন কমিশন ভোটের পর স্পষ্ট ভাষায় বলেছে, বারবার বলা সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় বাহিনী পাওয়া যায়নি। বাহিনীর অভাবে কিছু অনভিপ্রেত ঘটনা আটকানো যায়নি। তবে দিনের শেষে হিসেব বলছে, ৬১ হাজার ৪৭৯ বুথে নির্বিঘ্নে ভোট-উৎসব হয়েছে।

আরও পড়ুন-দিনের কবিতা

চক্রান্তের হিংসা : নির্বাচনের আগে থেকেই অনুমান করা যাচ্ছিল বিজেপি-কংগ্রেস-সিপিএম জোট বেঁধে চক্রান্ত করে হিংসার পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছিল। ভোটের দিন তার প্রমাণ পাওয়া গেল হাতেনাতে। রাজ্য জুড়ে সব মিলিয়ে ৬০টির মতো বুথে সংঘর্ষের ঘটনা চোখে পড়েছে। মূলত কোচবিহার, মুর্শিদাবাদ এবং মালদহ জেলার কয়েকটি বুথ জুড়ে এই ঘটনা ঘটেছে। বিজেপি এতটাই হিংসাত্মক ছিল যে ঘটনায় ১০ জন তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। আসলে একদিকে যেমন নির্বাচনকে হিংসাত্মক দেখাতে এই চিত্রনাট্যগুলি প্রয়োজন ছিল, পাশাপাশি বিরোধীদের ন্যক্কারজনক হারের কিছু ছবি ও ঘটনার দরকার ছিল। যে চিত্রনাট্য সাজানোর জন্য এই লাশ দরকার ছিল। তৃণমূল কংগ্রেস চেয়েছে নির্বিঘ্নে ভোট করতে। ভোটকে কেন্দ্র করে কোনও মৃত্যুই কাম্য নয়। তবু যে ঘটনা ঘটেছে তাতে তৃণমূল পরিবারের মানুষেরই বেশি প্রাণ গিয়েছে। আহত হয়েছে। নির্বাচন ঘোষণা হওয়ার পর থেকে শেষ হওয়া পর্যন্ত ২০ জনের বেশি তৃণমূলকর্মীর মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনাই প্রমাণ করছে আক্রমণকারী আসলে কারা ছিল। বিরোধীরা টার্গেট করে তৃণমূলকর্মীদের খুন করেছে। জখম করেছে।

আরও পড়ুন-অতি-সক্রিয়তায় গুজব শুনে খোঁজ না নিয়েই ছুটে গিয়ে সমালোচিত, জীবিতকে বেমালুম মৃত বানালেন রাজ্যপাল

বিজেপির সন্ত্রাস : বাংলার মানুষের কাছে বিজেপির কী কী ছবি দেখাল? খাতরার বিজেপির জেলা পরিষদ প্রার্থী শান্তনু সিং তরোয়াল হাতে ঘুরছে। বিজেপি কর্মীরা ব্যালট বক্স উপড়ে ফেলছে। কোচবিহারে বিজেপি ব্যালট পেপারে আগুন ধরাল। তাদের দোসর সিপিএম ব্যালট তুলে নিয়ে গিয়ে ছাপ্পা মারল। ভাঙড়ে আইএসএফ লাঠি-কাটারি নিয়ে তৃণমূলকর্মীদের আক্রমণ করল। কেন এই আক্রমণ? হারের ভ্রুকুটি থেকেই অক্ষমের ব্যর্থ আস্ফালন।

আরও পড়ুন-অতি-সক্রিয়তায় গুজব শুনে খোঁজ না নিয়েই ছুটে গিয়ে সমালোচিত, জীবিতকে বেমালুম মৃত বানালেন রাজ্যপাল

অন্তত ১১ জেলা সংঘর্ষহীন : একটিও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি হুগলি, পশ্চিম বর্ধমান, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম, জলপাইগুড়ি, হাওড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর, বীরভূমে। আরও কয়েকটি জেলায় নামমাত্র সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সেই নির্বিঘ্নে ভোটের ঘটনার কথা ঢাকতেই এই সংঘর্ষের চিত্রনাট্য।

আরও পড়ুন-আরামবাগে আক্রান্ত কর্মীদের পাশে সাংসদ

মিডিয়ার নেতিবাচক প্রচার : ভোটের শুরু থেকে কার্যত শনিবার সারাদিন ধরে এক শ্রেণির মিডিয়া ভোটে বাংলা কত অশান্ত ছিল তা দেখাতে মরিয়া ছিল। বারবার তাদের খবরে ফিরে এসেছে ৭ থেকে ১০ বুথ কিংবা ঘটনার ছবি। দুর্ভাগ্যের বিষয়, রাজ্য জুড়ে যে ৯৯ শতাংশ বুথে অবাধ ভোট হল তার ছবি ভুল করেও দেখায়নি এক শ্রেণির মিডিয়া। আসলে বিজেপির মতো এক শ্রেণির মিডিয়ারও গোপন এজেন্ডা প্রকাশ্যে এসে গিয়েছে। বাকিটা বিচার করবেন রাজ্যের মানুষ।

আরও পড়ুন-বিজেপির মিথ্যাকে প্রকাশ্যে নিয়ে এলেন দেবাংশু

রাজ্যপালের উসকানি : রাজভবনকে বিজেপির রাজ্য কমিটির অফিস বানিয়েছিলেন আগের রাজ্যপাল। সেই ট্র্যাডিশনকে আর এক কদম এগিয়ে দিলেন আনন্দ বোস। যেদিন ভোটের প্রচার নিষিদ্ধ সেদিন তিনি শুধু এলাকায় এলাকায় ঘুরে এলেন তাই নয়, সাংবাদিক সম্মেলনের নামে তৃণমূল কংগ্রেস বিরোধী বক্তব্য রাখলেন। এমনকী ভোটের দিন পর্যন্ত তাঁর ফ্লপ নাটকের অন্তিমপর্ব মঞ্চস্থ করতে গেলেন। রাজভবনের গরিমাকে ধুলোয় মিশিয়ে দিয়ে এই রাজ্যপাল আসলে বিজেপির রাজ্য সভাপতির কাজটিই করতে এসেছেন রাজ্যপালের মুখোশ পরে। ভোটের পর আওয়াজ উঠতেই পারে গো-ব্যাক গভর্নর।

আরও পড়ুন-অগ্নিগর্ভ মণিপুরে ২৪ ঘণ্টায় এক পুলিশ কর্মী-সহ মৃত ৪

অপদার্থ কেন্দ্রীয় বাহিনী : ভোট ঘোষণা হওয়ার পর থেকে বিরোধীরা একের পর এক দাবিদাওয়া জানিয়ে গিয়েছে। কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবি থেকে প্রশাসনিক, নানা দাবি-দাওয়া। কমিশন ও রাজ্য সেসব দাবি মিটিয়েছে। এক শ্রেণির মিডিয়া একপেশে ভঙ্গিমায় সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসকে প্রশ্ন করছে। কেন? তাদের তো প্রশ্ন করা উচিত ছিল কেন্দ্রীয় বাহিনীকে। যারা ভোটে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য ভিন রাজ্য থেকে এসেছে।
বহু সীমান্ত এলাকায় বিএসএফ বিজেপিকে ভোট দেওয়ার জন্য প্রভাব খাটিয়েছে। যা খুবই দুঃখজনক। শুধু তাই নয়, যাদের কাজ সীমান্ত পাহারা দেওয়া তারা বিজেপির হয়ে তৃণমূল প্রার্থীদের, এজেন্টদের ও সীমান্তবর্তী এলাকার ভোটারদের ধমকেছে, চমকেছে। বহু জায়গা থেকে আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছে। এটাই কি কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা?

আরও পড়ুন-বহিরাগতদের দিয়ে অশান্তির চেষ্টা ব্যর্থ পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় ভোট শান্তিতেই

কমিশনের তোপ : আদালতকে কথা দিয়েও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠাতে ব্যর্থ হয়েছে। ভোটের আগের দিন সীমান্ত লেহ-কে অরক্ষিত করে নাটকে সাসপেন্স তৈরি করার জন্য প্যারাট্রুপার করে বাহিনী পাঠিয়েছে। তা সত্ত্বেও যে বাহিনী দেওয়া হয়েছিল তা চাহিদার তুলনায় নামমাত্র। ভোট শেষে যে কারণে নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক বাহিনী না পাঠানোয় সমস্যা তৈরি হয়েছে। বিরোধীরা কেন্দ্রীয় বাহিনী থেকে শুরু করে যা যা দাবি করেছিল তার কোনওটাতেই কমিশন বা রাজ্যের তরফে খামতি ছিল না। কিন্তু কেন্দ্র কোর্টের নির্দেশ মেনে বাহিনী পাঠাতে ব্যর্থ হয়েছে। এবং সেই বাহিনীও প্রকাশ্যেই বিজেপির হয়ে প্রচার করেছে। পঞ্চায়েতে যে চিত্রনাট্য বিরোধীরা তৈরি করল তা মানুষ দেখলেন। ২০২৪-এ জবাব দেবেন ইভিএমেই।

Latest article