হাতছানি দেয় পাঞ্জাবের প্যারিস

বিভিন্ন সময় হয়েছে হাত বদল। অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। পাশাপাশি দেখতে পাওয়া যায় ফরাসি শৈলী স্থাপত্য সহ অনেক স্মৃতিস্তম্ভ, ভবন।

Must read

পাঞ্জাবের কপুরথালা। রাজার শহর। বিভিন্ন সময় হয়েছে হাত বদল। অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। পাশাপাশি দেখতে পাওয়া যায় ফরাসি শৈলী স্থাপত্য সহ অনেক স্মৃতিস্তম্ভ, ভবন। তাই বলা হয় পাঞ্জাবের প্যারিস। কয়েকদিনের জন্য ঘুরে আসতে পারেন। মন ভাল হয়ে যাবে। লিখলেন অংশুমান চক্রবর্তী

বেড়াতে ভালবাসেন প্রায় সকলেই। কেউ ঘোরেন কাছাকাছি, কেউ যান দূরে। সবকিছু নির্ভর করে সময় এবং অর্থের উপর। বিদেশে বেড়াতে যান বহু মানুষ। অথচ আমাদের দেশেই আছে বেশকিছু অসাধারণ বেড়ানোর জায়গা। কোনও জায়গা বিখ্যাত স্থাপত্য শিল্পের জন্য, কোনও জায়গার মূল আকর্ষণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। পাঞ্জাবের কপুরথালায় গেলে পাবেন দুটিই। হাতে কয়েকদিন থাকলে ব্যাগপত্তর গুছিয়ে বেরিয়ে পড়তে পারেন। মন ভাল হয়ে যাবে। পর্যটকদের দেখার জন্য আছে অনেক জায়গা। ফরাসি শৈলী স্থাপত্য সহ অনেক স্মৃতিস্তম্ভ এবং ভবন দেখতে পাবেন। জানা যায়, এই শহরের প্যারিসীয় সংযোগ এসেছে এখানকার রাজা জগৎজিৎ সিংয়ের সৌজন্যে। মহারাজা জগৎজিৎ এতটাই ফরাসি আদব-কায়দায় উদ্বুদ্ধ ছিলেন যে ভারতের মধ্যেও তৈরি করে ফেলেছিলেন ছোট্ট একটা প্যারিস। তাই জায়গাটিকে পাঞ্জাবের প্যারিস বলা হয়। যদিও এই শহরটির সূচনা হয়েছিল ১১ শতকে রাজস্থানের জয়সলমেরের ভাটি রাজপুত বংশের হাত ধরে। কপুরথালা শহরজুড়ে আছে অনেক বাগান। বহু মানুষ আসেন শুধুমাত্র বাগান দেখার জন্য। কী কী দর্শনীয় স্থান আছে?

আরও পড়ুন-জামাইষষ্ঠীর মিষ্টিতে নজরকাড়া থিম

জগৎজিৎ প্যালেস
১৯০৮ সালে তৈরি হয়েছিল এই প্যালেস। এই প্যালেসের স্থাপত্য দেখবার মতো। রয়েছে ফরাসি প্রভাব। জানা যায়, একটা সময় এখানেই থাকতেন কপুরথালার মহারাজা জগৎজিৎ সিংহ। ১৯৬১ সাল থেকে এটাই হয়েছে ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যাকাডেমির ছাত্রদের থাকার জায়গা। সারা বছর বহু পর্যটক আসেন। প্যালেসটি ঘুরে দেখেন। স্থাপত্যশৈলী দেখে মুগ্ধ হন। এই প্যালেস না দেখলে কপুরথালা ভ্রমণ অসম্পূর্ণ।
পাঞ্জ মন্দির
এই মন্দিরের শুধু পৌরাণিক গুরুত্বই নেই, এখানে অনেক ঐতিহাসিক মূর্তিও সংরক্ষিত আছে। মন্দিরটি সর্দার ফতেহ সিং-এর আমলে নির্মিত হয়েছিল। ব্রহ্মার বিরল মূর্তি বিশেষ আকর্ষণ।

আরও পড়ুন-উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরের জয়জয়কার

কাঞ্জলি জলাভূমি
কপুরথালার অন্যতম জনপ্রিয় বেড়ানোর জায়গা কাঞ্জলি জলাভূমি। অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। নির্জন নিরিবিলি পরিবেশ। বিরাট জলাভূমি ঘিরে দেখা যায় সবুজের সমারোহ। বিভিন্ন রকমের গাছ। সারাদিন উড়ে বেড়ায় নানারকম পাখি। মানুষের তৈরি এই জলাভূমি পিকনিক এবং অবসর যাপনের জন্য আদর্শ জায়গা। সারা বছর বহু পর্যটক আসেন। সময় কাটিয়ে যান। ফটোগ্রাফাররা মন দিয়ে সবুজ প্রকৃতির ছবি তোলেন।
মুরিশ মসজিদ
কপুরথালার অন্যতম দর্শনীয় স্থান। মহারাজ জগৎজিৎ সিং মসজিদটি তৈরি করেন। তিনি ছিলেন শৌখিন মানুষ। তাঁর রাজ্যের মুসলমান ধর্মাবলম্বী মানুষদের কথা ভেবে এই অপূর্ব মসজিদটি তৈরি করা হয়। নির্মাণকাজ শুরু হয় ১৯২৭ সালে। কাজ শেষ হয় ১৯৩০ সালে। বলা হয়, এটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম সুন্দর একটি মসজিদ। স্থাপত্যে আছে ফরাসি ছোঁয়া। এই মসজিদে প্রচুর পেন্টিং আছে। যেগুলো লাহোরের মায়ো স্কুল অব আর্ট থেকে এসেছে। দেখলে চোখ ফেরাতেই পারবেন না।

আরও পড়ুন-বাজি কারখানা বন্ধে শিবকাশী মডেল

এলিসি প্যালেস
১৮৩৫ থেকে ১৮৮৭ সাল পর্যন্ত কপুরথালা শাসন করেছিলেন কানওয়ার বিক্রম সিংহ। কপুরথালার ইতিহাসে শিখ নেতা বিক্রম সিংহের গুরুত্ব অপরিসীম। ইন্দো-ফরাসি ধারায় ১৯৬২ সালে বিক্রম সিংহ তৈরি করেন এলিসি প্যালেস। এখন এটি একটি স্কুলে পরিণত হয়েছে। তবে পর্যটকরা এই স্থাপত্য দেখতে যান।
শালিমার গার্ডেন
শহরের একদম মাঝখানে অমৃতসর রোডের পাশে অবস্থিত শালিমার গার্ডেন। ১৮৮০ সালে তৈরি। কপুরথালার রাজপরিবারের প্রয়াত ব্যক্তিদের স্মরণে এখানে স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে। তাছাড়া লাল বেলেপাথরের চেম্বারে এখানে তাঁদের জন্য কয়েকটি শ্বেতপাথরের স্মারকস্তম্ভও তৈরি করা হয়েছে।

আরও পড়ুন-বাজি কারখানা বন্ধে শিবকাশী মডেল

জগৎজিৎ ক্লাব
শহরের মাঝখানে অবস্থিত জগৎজিৎ ক্লাব। ভবনটি একসময় কপুরথালার রাজপরিবারের সম্পত্তি ছিল। কখনও এই স্থাপত্যকে গির্জা হিসাবে, কখনও সিনেমা হল হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে। ১৯৪০ সাল থেকে এটিকে ক্লাব হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। জগতজিৎ ক্লাবের বৈশিষ্ট্য হল এর স্থাপত্যগত দিক থেকে অ্যাক্রোপলিস অব এথেন্সের সঙ্গে সাদৃশ্য। এটি তৈরি গ্রিক রিভাইভাল স্টাইলে।

Latest article