প্রতিবেদন : সংবিধান অনুযায়ী ভারত ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হলেও নিজেদের হিন্দুত্ববাদের অ্যাজেন্ডাকেই সবক্ষেত্রে চাপিয়ে দিতে চায় কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। পাঁজি দেখে মঙ্গলবার গণেশ চতুর্থীর দিনে পুরনো সংসদ ভবন থেকে নতুন সংসদ ভবনে স্থানান্তর হল ধর্মনিরপেক্ষ দেশের আইনসভা। ত্রিভুজাকৃতি চারতলা বাড়িটি বাস্তুশাস্ত্র মেনে তৈরি হয়েছে। নতুন সংসদ ভবনের মোট আয়তন ৬৪,৫০০ বর্গমিটার।
আরও পড়ুন-কাপ-যুদ্ধে বিরাটরাই ফেভারিট : পিটারসেন
সেন্ট্রাল ভিস্তা পুনর্নির্মাণ প্রকল্পের অংশ হিসাবে নতুন সংসদ ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে। ২০২৩-এর ২৮ মে ভবনের দ্বারোদ্ঘাটন হয়। তার আগে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নতুন সংসদ ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। সেই অনুষ্ঠানে দেশের প্রথম জনজাতিভুক্ত মহিলা রাষ্ট্রপতিকে আমন্ত্রণই জানায়নি কেন্দ্রীয় সরকার। তা নিয়ে প্রচুর বিতর্ক হয়েছিল। ৮৬১ কোটি টাকা ব্যয়ে এই নয়া সংসদ ভবন তৈরির বরাত দেওয়া হয়েছিল টাটা প্রজেক্টস লিমিটেডকে। সংসদের দুই কক্ষে লোকসভা ও রাজ্যসভা মিলিয়ে মোট ১২৭২টি আসন রয়েছে। পুরনো সংসদ ভবনটি নতুন ভবনের ঠিক বিপরীতে অবস্থিত। নতুন সংসদের নিম্নকক্ষের নকশা ভারতের জাতীয় পাখি ময়ূর থিমের ভিত্তিতে এবং উচ্চকক্ষ রাজ্যসভার অন্দরের নকশা তৈরি হয়েছে জাতীয় ফুল পদ্মের থিমে। রাজ্যসভা এবং লোকসভা কক্ষকে সাজানো হয়েছে দুটি ভিন্ন রঙে। রাজ্যসভার থিমের রঙ লাল এবং লোকসভার সবুজ। দুটি কক্ষেরই আসন সংখ্যা পুরনো ভবনের তুলনায় অনেকটা বেশি রাখা হয়েছে। নতুন ভবনে অবলুপ্ত সংসদের ঐতিহাসিক সেন্ট্রাল হলও।
আরও পড়ুন-শুরুতেই পাঁচ গোল খেল ভারত
নতুন সংসদ ভবনে একটি ‘অখণ্ড ভারত’-এর মানচিত্র রাখা হয়েছে। আফগানিস্তান থেকে শুরু করে পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশ, মায়ানমার, শ্রীলঙ্কা-সহ অবিভক্ত ভারতীয় উপমহাদেশকে বোঝানো হয়েছে। উল্লেখ্য, প্রাচীন কালে ইরান থেকে বর্তমানের মায়ানমার, উত্তরে তিব্বত, নেপাল, ভুটান আর দক্ষিণে বর্তমানের শ্রীলঙ্কা— সবই ছিল অখণ্ড ভারতের অন্তর্ভুক্ত।
আরও পড়ুন-‘এই মুহূর্তে বাংলা গোটা ভারতকে নেতৃত্ব দিচ্ছে’, স্পেনে শিল্প সম্মেলনে বার্তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের
দেশের বিভিন্ন রাজ্যের বিখ্যাত উপকরণ নিয়ে তৈরি হয়েছে নতুন সংসদ ভবনের নানা অলঙ্করণ সামগ্রী। কার্পেট থেকে শুরু করে সূক্ষ্ম কাঠের কাজ, বিভিন্ন রাজ্যের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরার চেষ্টা হয়েছে। গজদ্বার, অশ্বদ্বার, গরুড়দ্বার, মকরদ্বার, শার্দূলদ্বার এবং হংসদ্বার-সহ মোট ছ’টি প্রবেশদ্বার রয়েছে নতুন সংসদ ভবনে। নাম অনুযায়ী প্রতিটি দ্বারের প্রবেশপথেই বসানো হয়েছে সংশ্লিষ্ট প্রাণীদের মূর্তি। সংসদ ভবনে শারীরিক প্রতিবন্ধীরা যাতে অবাধে চলাফেরা করতে পারেন, সেই ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সংসদের কেন্দ্রীয় হল বা ‘লাউঞ্জ’টি হল উন্মুক্ত প্রাঙ্গণ। যা তৈরি হয়েছে জাতীয় গাছ বটবৃক্ষের থিমে।
আরও পড়ুন-এশিয়াডে আজ ভারত বনাম চিন
নতুন সংসদ ভবন তৈরিতে ব্যবহৃত কেশরিয়া মার্বেল উদয়পুর, লাল গ্রানাইট পাথর আজমেরের লাখা এবং সাদা মার্বেল পাথর রাজস্থানের আমবাজি থেকে আনা হয়েছে। সংসদ ভবনের অন্দরসজ্জায় ভারতের তিনটি জাতীয় প্রতীক পদ্ম, ময়ূর এবং বটবৃক্ষকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
উভয় কক্ষেই একটি বেঞ্চে পাশাপাশি দু’জন সাংসদের বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিটি আসনে থাকছে ডিজিটাল সিস্টেম এবং টাচস্ক্রিন। লোকসভা এবং রাজ্যসভার ওয়েল থাকছে প্রথম সারির আসনের থেকে অন্তত একফুট নিচে। দুই কক্ষেই অধ্যক্ষদের আসনগুলি আগের তুলনায় অনেকটাই উঁচুতে রাখা হয়েছে। দুই কক্ষেই অধ্যক্ষদের আসনের পিছনে অশোকচক্র রয়েছে। বৃষ্টির জল ধরে রাখা এবং পুনর্ব্যবহারের ব্যবস্থাও থাকছে। গালিচা এবং সিলিংয়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ময়ূরপুচ্ছর নকশা। এ-ছাড়া নতুন সংসদ ভবনে একটি কক্ষ রয়েছে, যেখানে ভারতীয় সংবিধানের পাণ্ডুলিপি রাখা হয়েছে এবং এই কক্ষ অত্যাধুনিক ভাবে সাজানো হয়েছে। দুই কক্ষের সাংসদদের জন্য একটি লাউঞ্জ, একটি লাইব্রেরি, একাধিক কমিটি রুম, খাওয়ার জায়গা, পার্কিংয়ের জায়গা এবং সাংসদদের ব্যক্তিগত কক্ষ রয়েছে।