প্রতিবেদন : গত কয়েকদিন ধরেই দেশের বিদ্যুৎ সরবরাহ অনিয়মিত হয়ে পড়েছিল। বেশিরভাগ এলাকাতেই দীর্ঘক্ষণ বিদ্যুৎ ছিল না। এরই মধ্যে বুধবার শ্রীলঙ্কা সরকার জানিয়ে দিল, বুধবার থেকে রাজধানী কলম্বো-সহ দেশের সর্বত্র ১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকবে। এখন থেকে রোজই। সরকারের এদিনের ঘোষণায় দেশবাসীর মনে একদিকে ক্ষোভ, অন্যদিকে আতঙ্ক। বিধ্বস্ত অর্থনীতির ঘেরাটোপে চরম দুর্দশায় এই দ্বীপরাষ্ট্র।
আরও পড়ুন-সভাপতি নিয়োগে ধীরে চলো নীতি
১৯৪৮ সালে ব্রিটিশদের হাত থেকে স্বাধীনতা লাভের পর দক্ষিণ এশিয়ার এই দ্বীপরাষ্ট্রের অর্থনীতি কখনও এধরনের মন্দার মধ্যে পড়েনি। দীর্ঘ সাড়ে তিন দশক ধরে শ্রীলঙ্কা গৃহযুদ্ধের সম্মুখীন হয়েছিল। সেই গৃহযুদ্ধ দমন করতে সামরিক খাতে বিপুল ব্যয় করেছিল সরকার। অনিয়ন্ত্রিত সেই ব্যয়ের ফলে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি রীতিমতো বিপাকে পড়ে। এরপর করোনার কারণে গত দুই বছর ধরে পর্যটনশিল্প প্রায় বন্ধ। ফলে বিদেশি মুদ্রা আসেনি। দেশের বিদেশি মুদ্রার ভাণ্ডার প্রায় শেষ। দেশের আর্থিক পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, কলম্বো বন্দরে দুটি জাহাজ তেল নিয়ে দঁড়িয়ে থাকলেও ডলারের অভাবে সেই তেল নামানো যাচ্ছে না। অর্থের অভাবে কাগজ ও কালি আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। ফলে বাতিল হয়েছে দেশের সমস্ত পরীক্ষা। এমনকী, সংবাদপত্র ছাপাও বন্ধ। হাসপাতালগুলিতে নেই ওষুধ, চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র।
আরও পড়ুন-পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে তৃণমূল
ফলে প্রায় সব হাসপাতাল থেকেই রোগীদের ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। এই অবস্থায় শ্রীলঙ্কার হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসা পরিষেবা চালু রাখতে সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছে ভারত। বেশ কিছুদিন ধরেই শ্রীলঙ্কায় বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম কয়েকগুণ বেড়েছে। সামান্য পাউরুটি কিনতে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠছে মানুষের। পেট্রোল পাম্পের সামনে মানুষ দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও পেট্রোল-ডিজেল পাচ্ছেন না। তাই দেশের সর্বত্রই অশান্তি ও সংঘর্ষের ঘটনা লেগেই রয়েছে। এদিন প্রতিদিন ১০ ঘণ্টা লোডশেডিং থাকার খবর জানার পর অনেকেই মনে করছেন, কাগজে-কলমে সরকার দশ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকবে না বললেও এই সময়সীমা আরও অনেক বাড়বে। কারণ জ্বালানির অভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
আরও পড়ুন-মডেল পুরসভা তৈরি মূল লক্ষ্য কার্তিকের
বিদ্যুৎ না থাকার ফলে হাসপাতালগুলিকে নতুন করে এক সমস্যার মুখোমুখি পড়তে হবে। কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই মুহূর্তে একমাত্র আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তা ছাড়া গোতাবায়া রাজাপক্ষে সরকারের পক্ষে পরিস্থিতির মোকাবিলা করা কার্যত অসম্ভব। আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার যদি এই দ্বীপরাষ্ট্রকে সহায়তা না করে তবে তাদের পক্ষে ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন।