শিবনাথ দত্ত: পুজোর সময় শহরের ভিড় থেকে সহজেই নিজেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়। আর সেই জায়গা যদি হয় সুন্দরবন তাহলে তো কোনও কথাই নেই। জল আর জঙ্গলের শান্তি মনকে টানে বারবার। তবে এই অঞ্চল পুজোর সময় উৎসব থেকে বঞ্চিত নয়। আলোর জৌলুস, শব্দের বাহার, জনস্রোত, উল্লাস—এইসব কিছুকে পিছনে ফেলে সুন্দরবন দুর্গাকে ঘরে আনে একদম ঘরের মেয়ে করেই। পুরোটাই আটপৌরে ব্যবস্থা।
আরও পড়ুন-উৎসব সংখ্যা, নেত্রীর বই কিনতে উপচে পড়া ভিড়
পাখিরালয়, কুমিরমারি, ঝড়খালি ইত্যাদির মতো পর্যটক-প্রধান অঞ্চলগুলোও সাদামাঠা পুজোয় বিশ্বাসী। এ ছাড়াও প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে ঘরোয়া ব্যবস্থায় সাধ্যমতো দেবী পুজোর আয়োজন করা হয়।
এখানে বড় প্যান্ডেল করে ঠাকুর পুজো খুব কম। মূলত তিন রাস্তার মোড়ে, বাজার লাগোয়া অঞ্চলে বা মন্দির সংলগ্ন অঞ্চলে মণ্ডপ তৈরি করে পুজো হয়। ঠাকুর পুজোর জায়গাতেই তৈরি হয় দু-তিনমাস আগে থেকে। নদী পার করে ঠাকুর কিনে আনা সম্ভব হয় না সব সময়। তাই আগে থেকে বায়না দিয়ে শিল্পীকে নিয়ে আসা হয়। বাজার সংলগ্ন পুজোগুলোয় একটু আলোর বাহার দেখা যায়। আবার অনেক সময় এখানে মেলাও বসে ছোট করে। গ্রামের মানুষের সরল জীবনে চাহিদাগুলোও সহজ ও সরল। তাই অল্প আয়োজনেই এরা সহজে আনন্দে মেতে ওঠে।
সুন্দরবনের বনদেবী এঁদের রক্ষাকর্ত্রী। মা দুর্গার মতো তিনিও দুষ্টের দমন করেন। বিপদের হাত থেকে গ্রামবাসীকে আগলে রাখেন বনদেবী। বাঘে মানুষে যে অঞ্চলে একসঙ্গে বাস সেখানে বনদেবীই একমাত্র ভরসা গ্রামবাসীর।
আরও পড়ুন-সংশোধনাগারে রাজ্য পুলিশের মানবিক উদ্যোগের সুফল, অপরাধ অতীত, ওদের প্রতিমা বাঙ্ময়
পুজোর সময় দর্জিপাড়া, কুলতলি অঞ্চলগুলোতে দেখা যায় দুর্গার সঙ্গে বনদেবীর পুজো। গ্রামবাসী মনে করে বনদেবীকে পুজো না করলে উনি রেগে যাবেন। মন্দির সংলগ্ন এলাকায় বাঘ ঘুরলেও মানুষের ক্ষতি করতে পারে না, জেলেরা মাছ ধরতে গেলে তাদের ওপর হামলা করতে পারে না কারণ বনদেবী তাঁদের রক্ষা করেন। সে-কারণে এই পুজো না দিতে পারলে গ্রামের লোক ভয় পেয়ে যায়।
আরও পড়ুন-দলের স্বার্থে আবার বসতে রাজি : শামি
তাই চৈত্র মাসে বনদেবীর পুজো হলেও কিছু কিছু গ্রামে দুর্গাপুজোর সঙ্গে একই রকম আড়ম্বরে বনদেবীর পুজো হয়। সুন্দরবন অঞ্চলে দুর্গাপুজো এইভাবে অন্য অঞ্চলের থেকে অনেকটাই আলাদা। পুজোর সময় সুন্দরবন ভ্রমণ ও এইসব গ্রামের পুজো দেখার অভিজ্ঞতা অনন্য। এখনকার আতিথেয়তা ও পুজোর নিষ্ঠা মনকে বিশেষ আনন্দে ও শান্তিতে পরিপূর্ণ করে।