বাংলায় তো বটেই, দেশের মধ্যেও দীর্ঘতম কুকারি শো হতে চলেছে জি বাংলার ‘রান্নাঘর’। পূর্ণ করেছে তার পাঁচ হাজার পর্ব। আর তারই উদযাপন দেখা যাবে বাংলার শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গোৎসবের শুরুতেই। দুর্গাপুজো মানেই হইচই। দুর্গাপুজো মানেই দেদার আড্ডা। আর সবচেয়ে বেশি যেটা, ডায়েট ভুলে, শাসন-বারণকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে কবজি ডুবিয়ে জমিয়ে খাওয়াদাওয়া। স্ট্রিট ফুডের হাতছানি, বিখ্যাত রেস্তরাঁয় ঢুঁ যতই থাকুক, বাড়ির হেঁশেলের স্পেশ্যাল রেসিপি দৌড়ে এগিয়ে থাকে সবচেয়ে বেশি আর এ-ব্যাপারে বাংলার বড় এক অংশের মহিলাদের ভরসা ‘রান্নাঘর’। কারণ ঘড়ির কাঁটায় সাড়ে চারটে বাজতে না বাজতেই টিভির রিমোট হাতে একটাই চ্যানেল খুলে বসে পড়েন মা-মাসি-কাকি-জেঠি থেকে রন্ধন-পিয়াসী সকলেই। আর তাই ‘রান্নাঘর’ এখন এক অভ্যাসের নাম! যাত্রা শুরু ২০০৫-এ। এখন ২০২২। সময়ই বলে দেয় এই শো-এর গ্রহণযোগ্যতা। যখন শুরু হয়েছিল, চ্যানেলের নামও ছিল আলাদা। জি বাংলা তখন ছিল আলফা বাংলা। ফলে, ৫০০০ পর্বের সেলিব্রেশন যে জাঁকজমকপূর্ণ হবে তাতে আর আশ্চর্য কী! আজ আর আগামিকাল দু’দিনই দেখা যাবে এই স্পেশ্যাল-উদযাপন পর্ব।
আরও পড়ুন-ডায়েটিশিয়ান পেশার দিশা
জমাটি আড্ডা, বাহারি পদ আর পছন্দের অতিথিদের নিয়ে সবটা সামাল দেবেন এক ও অদ্বিতীয় ‘রান্নাঘর’-কর্ত্রী সুদীপা চট্টোপাধ্যায়। হাজার বিতর্কে জড়িয়েও যিনি ঠান্ডা মাথায় সামলে চলেছেন হেঁশেল। আপ্যায়ন করেন অতিথিদের এবং অপেক্ষায় থাকা দর্শকদের উপহার দেন নিত্যনতুন রেসিপি। পাঁচ হাজার পর্ব উদযাপনের জন্য রান্নাঘরের সেট সাজানো হয়েছে দারুণভাবে। রঙিন বেলুনে মুড়ে দেওয়া হয়েছে চারদিক। আনা হয়েছে পাঁচতলা কেক। নজরকাড়া উপস্থিতিতে মন কেড়েছেন সোনালি চৌধুরি, শ্রীপর্ণা রায়, শিঞ্জিনী চক্রবর্তী, শ্রীতমা মিত্ররা। সোনালি ‘রান্নাঘর’-এর উইক-এন্ড পর্বগুলি দীর্ঘদিন হোস্টও করেছেন তাই আনন্দ তাঁরও কম কিছু নয়। লালপাড় সাদা শাড়ির ট্র্যাডিশনাল সাজে এসে হাতা-খুন্তি ধরে রান্নাও করেছেন তিনি।
আরও পড়ুন-ফের ভয়াবহ বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল কাবুল, নিহত বহু
দীর্ঘ সতেরো বছরের জার্নি। শুরু থেকেই সঙ্গী তিনি। সুদীপার স্মৃতি তাই অসংখ্য। সংবাদমাধ্যমের সামনে ঝুলি উপুড় করে দিলেন তিনি, “শো যখন শুরু হয়েছিল, তখন ছোট্ট একফালি বাথরুমের সাইজের ঘর, এসি তো ছিলই না, কতদিন বাড়ি থেকে রান্নার সরঞ্জাম এনে রান্না করেছি! ধীরে ধীরে শ্রীবৃদ্ধি হয়েছে। দর্শক পছন্দ করেছেন আমাদের আর আমরাও পায়ের নিচে জমি পেয়েছি”— বলছিলেন সুদীপা। তিনি স্মৃতিমেদুর আরও এই কারণে যে, আজ অপ্রতিরোধ্য হলেও প্রথম অনেকগুলো বছর কড়া কম্পিটিশনের মুখোমুখি হতে হয়েছিল ‘রান্নাঘর’কে। সে-সময় সিনিয়র দুই হোস্ট ছিলেন যাঁরা অন্য দুই নামী কুকারি শো চালাতেন। একজন প্রয়াত সুপ্রিয়াদেবী, অন্যজন নন্দিনী পাল, প্রয়াত অভিনেতা তাপস পালের স্ত্রী। কাজেই রান্নাঘরকে বেশ লড়াই করেই নিজের জায়গা পেতে হয়েছে। শুরুর দিন থেকে থাকলেও এই দীর্ঘ যাত্রায় সুদীপাকেও একটা বড় ব্রেক নিতে হয়েছিল মাতৃত্বকালীন সময়ে। কিন্তু দু বছর বাদে ফের ফিরে এসেছেন তিনি। কারণ ‘রান্নাঘর’ ও সুদীপা যেন সমার্থক। সে-প্রসঙ্গেও মুখ খুললেন তিনি, “আসলে আমি ঠিক তারকাদের মতো নই। আমার মধ্যে একটা পাশের বাড়ির মেয়েসুলভ ব্যাপার ছিল যেটা দর্শকদের ভাল লাগে। আর ‘রান্নাঘর’ শুরুর সময়েই ঠিক হয়েছিল, এই শো-তে সাধারণ মানুষ তাঁদের নিজস্ব ইউনিক রেসিপিগুলো ক্যামেরার সামনে এসে বলবেন ও নিজে হাতে রেঁধে দেখাবেন। আমাকে তাঁদের চেয়ে খুব একটা আলাদা কিছু মনে হত না। এ কারণেই হয়তো সাধারণ দর্শকদের মনে নিজের স্থায়ী একটা জায়গা করে নিতে পেরেছি।”
আরও পড়ুন-আজ পঞ্চমী, শুভেচ্ছাবার্তা মুখ্যমন্ত্রীর
শুধু সুদীপা নন, ওঁর সঙ্গে সঙ্গে ‘রান্নাঘর’ও দর্শক মনে স্থায়ী একটা জায়গা করে নিতে পেরেছে। নিজের ব্যক্তিগত জীবনে যেমন অনেক পরিবর্তন এসেছে তেমনই পরিবর্তন এসেছে দর্শকদের খাওয়াদাওয়া, রুচিতেও। সুদীপার গুণ হল সময়ের সঙ্গে আপডেট করা। ‘রান্নাঘর’ দর্শক-মন বুঝে নানা ধরনের রেসিপি এনেছে নানা আঙ্গিকে। “শুধু যে সাধারণ দর্শকেরাই আসেন তা নয়, প্রচুর নামী-দামি-মানী অতিথিরাও এসে তাঁদের সিক্রেট রেসিপি শেয়ার করেছেন আমাদের। আর একটা মজার বিষয় হল, একটা সময় ছিল, যখন চট করে কোনও অতিথি আমাদের শো-তে আসতে রাজিই হতেন না, আর এখন সিনেমার প্রমোশনের জন্য বড় বড় তারকা থেকে প্রোডাকশন হাউস আমাদের কথা নিজেরাই ভাবেন”— সুদীপার খুশি উপচে পড়ছিল। সব মিলিয়ে ষষ্ঠী-সপ্তমী দু’দিনই ইলিশ, চিংড়ি-চিকেন-মাটন কিংবা নিরামিষের হরেক পদের ইউনিক রেসিপি জানতে চাইলে অভ্যেসমতো চ্যানেল খুলে বসে পড়ুন। পুজো বলে বাদ দিলে নিজেরাই মিস করবেন। সম্প্রচার হবে আজ, ১ অক্টোবর, সাড়ে চারটে আর ২ অক্টোবর সাড়ে পাঁচটায়।