প্রতিবেদন : যুগান্তকারী রায়। শেষ পর্যন্ত দেহব্যবসা বা যৌন পেশাকে অন্যান্য কাজ বা পেশা হিসাবে স্বীকৃতি দিল দেশের শীর্ষ আদালত। বুধবার সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, যৌন পরিষেবা দেওয়া আর পাঁচটা কাজের মতো একটি সাধারণ পেশা। যাঁরা এই পেশার সঙ্গে যুক্ত, তাঁদের সম্মানজনক জীবনযাপনের পূর্ণ অধিকার রয়েছে। এজন্য এই পেশায় যুক্ত যৌনকর্মীদের কোনওভাবেই হেনস্তা করা যাবে না। যৌনকর্মীদের আইনি সুরক্ষা পাওয়ার পূর্ণ অধিকার আছে।
আরও পড়ুন-২৮শে সমাবেশের আগে অভিষেকের আগমনী বার্তা দিতে হলদিয়ায় কুণাল ঘোষ-ঋতব্রত
যদি কোন প্রাপ্তবয়স্ক যৌনকর্মী স্বেচ্ছায় কাউকে পরিষেবা দেন তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে অপরাধমূলক ব্যবস্থার অভিযোগ আনা যাবে না। শীর্ষ আদালতের এই নির্দেশের প্রেক্ষিতে বলা যায়, দীর্ঘদিনের লড়াইয়ের পর যৌনকর্মীরা তাঁদের পেশার আইনি স্বীকৃতি আদায় করে ছাড়লেন। শীর্ষ আদালতের বিচারপতি এল নাগেশ্বর রাও বিচারপতি এ এস বোপান্না এবং বিচারপতি বি আর গাভাইয়ের ডিভিশন বেঞ্চ এই নির্দেশ দিয়েছে। ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, কর্মক্ষেত্রে কোনও যৌনকর্মী হেনস্তার শিকার হলে তাঁকে সব ধরনের আইনি পরিষেবা দিতে হবে। পুলিশি অভিযানের সময় যৌনকর্মীদের পরিচয়ের গোপনীয়তা যাতে বজায় থাকে সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। যৌনকর্মীদের অধিকার সম্পর্কে তাঁদের সচেতন করতে হবে। কোনও যৌনকর্মীকে তাঁর সন্তানের থেকে আলাদা করা যাবে না।
আরও পড়ুন-‘সামনে মহিলারা থাকবে, পিছনে পুরুষরা’, রাজ্য পুলিশে মহিলা ক্ষমতায়নে জোর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের
কোনও শিশু যদি পতিতালয়ে থাকে তার মানে ওই শিশুটিকে পাচার করে আনা হয়েছে, এটা কখনওই ধরে নেওয়া যায় না। শীর্ষ আদালতের এদিনের নির্দেশে যৌনকর্মীরা কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবেন বলে মনে করা হচ্ছে। শীর্ষ আদালতের এই নির্দেশের ফলে দেশের প্রায় ৯ লক্ষ যৌনকর্মী স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন-প্রশংসার মধ্যেও পুলিশ আধিকারিকদের সতর্ক করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
সমস্ত রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের পুলিশকে কড়া নির্দেশ, প্রাপ্তবয়স্ক ও সম্মতিক্রমে যৌনকর্ম করা নারীদের বিরুদ্ধে পুলিশের ফৌজদারি ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না। যৌনকর্মীদের নিয়ে ছ’দফা নির্দেশিকাও জারি করেছে সুপ্রিম কোর্ট। আগামী ২৭ জুলাই এই বিষয়ে কেন্দ্রের মতামত জানানোরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, প্রাপ্তবয়স্ক এবং স্বেচ্ছায় যৌনকর্মীদের নিয়ে কোনও হস্তক্ষেপ করতে পারবে না পুলিশ। সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ, শুধুমাত্র কোনও নির্দিষ্ট পেশার ক্ষেত্রেই নয়, সমাজের প্রতিটি নাগরিকেরই সংবিধানের ২১ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সম্মানের সঙ্গে জীবনযাপন করার অধিকার আছে।
আরও পড়ুন-খালেদ এবাদুল্লার অকাল প্রয়াণ, শোকবার্তা নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের
শীর্ষ আদালত রায়ে আরও জানিয়েছে, কোনও যৌনপল্লিতে তল্লাশি চালানোর সময়ে তাঁদের হেনস্তা করা, জরিমানা করা যাবে না। বিচারপতিরা বলেন, যেহেতু স্বেচ্ছায় যৌন পেশা কোনও অপরাধ নয়, তাই তাঁদের বিরুদ্ধে এই ধরনের কোনও পদক্ষেপ করা যাবে না। আদালত স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, যৌন নিগ্রহের শিকার হলে সেই যৌনকর্মীকে সমানভাবে মেডিক্যাল এবং আইনি সুবিধা দিতে হবে। সংবাদমাধ্যমকেও যৌনকর্মীদের নাম, পরিচয় বা ছবি প্রকাশ না করার নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত। যৌনকর্মীদের পুনর্বাসনের জন্য গঠিত প্যানেলের সুপারিশে সুপ্রিম কোর্ট এই নির্দেশ দিয়েছে। অন্যান্য পেশার মতোই এক্ষেত্রেও পেশাগত নানা সুবিধা পাবেন যৌনকর্মীরা৷ বিচারপতিদের বেঞ্চ বলেছে, সংবিধানের ২১ অনুচ্ছেদের অধীনে এই দেশের সব নাগরিকেরই মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপনের অধিকার আছে।