সিক্যুয়েলে মাত সিনে দুনিয়া

গদর টু। ওএমজি টু। সুপারহিট দুই ছবির সিক্যুয়েল মুক্তি পেয়েছে গত ১১ অগাস্ট। দুটি ছবিই মন ভরিয়েছে দর্শকের। আর দর্শক ভরিয়েছেন হল। ব্যবসার নিরিখে সানি দেওল অনেকটা এগিয়ে থাকলেও অক্ষয়কুমার-পঙ্কজ ত্রিপাঠী জুটি এগিয়ে বিষয়-বিন্যাসে। কিন্তু প্রতিযোগিতা দুটি ছবির মধ্যে নয়। মূলধারার বাণিজ্যিক ছবির দিন শেষ বলে যাঁরা দাগিয়ে দিয়েছিলেন ছবিদুটির সাফল্য তাঁদের উদ্দেশ্যে অর্পিত। আর একটি জরুরি বার্তাও আছে। দর্শক-আবেগকে ছুঁতে পারলে দর্শক আপনিই হল-মুখী হবে। এর জন্য পাশে থাকার কাতর আবেদন-নিবেদনের প্রয়োজন পড়ে না! জানাচ্ছেন প্রীতিকণা পালরায়

Must read

বাইশ বছর আগের একটি ছবি। সানি দেওল-আমিশা প্যাটেল জুটির প্রেম-কাহিনি হৃদয় জিতে নিয়েছিল আপামর ভারতের। সামান্য ভুল বলা হল, প্রেমকাহিনির সঙ্গে ছিল দেশভক্তির পারফেক্ট পাঞ্চ, যাতে মাত হয়েছিল দর্শক। ‘গদর’-এর পর এবার ‘গদর টু’ (Gadar 2 -OMG 2)। হুবহু এক ফর্মুলা। কুশীলবেরা এক থাকলেও বদলেছে সময়। পাল্টেছে ভাবনা। ভারতীয় দর্শকের একমাত্র বিনোদন আর বলিউড নয়। পৃথিবীটা সত্যিই ছোট হতে হতে মুঠোফোনে বন্দি। তবু, তবু, আবেগের কোনও দিন-কাল-সীমানা হয় না। ভালবাসার কাছে হেরে ভূত হয় টেকনোলজির বাড়-বাড়ন্ত। তাই বাইশ বছর আগের তুলে রাখা ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ এমন বাঁধভাঙা হয়। সানি দেওল ওরফে তারা সিং-এর ঢাই কিলোর হাতের জাদু দেখতে প্রথম দিন থেকেই হল ভরিয়ে তোলেন বলিউড মেনস্ট্রিম ছবির দর্শক। এ গেল আবেগের কথা। হৃদয়ের কথা।
এবার আসি মেধা ও মননের কথায়। সময়, সমাজ যা দাবি করে চিরকালীন শিল্পকলার সব মাধ্যমের কাছে। ‘ওএমজি টু’ (Gadar 2 -OMG 2) ঠিক তেমনই। সমসাময়িকতার প্রেক্ষিতে ভীষণ জরুরি বিষয়ভিত্তিক একটি ছবি। এর প্রথম ভাগ অর্থাৎ ‘ওএমজি’ ‘গদর’-এর মতো অতটা আগের না হলেও, নয়-নয় করে এগারো বছর পার। অর্থাৎ এ-ছবির সিক্যুয়েলেও প্রভাব ফেলতে পারত আনুষঙ্গিক যা কিছু। পারেনি। ‘সেক্স এডুকেশন’-এর মতো সাহসী বিষয় বেছে নিয়েও, সেন্সরের রক্তচক্ষুর মুখোমুখি পড়ে মোট ২৭টি কাটাকুটির নির্দেশিকা মেনে নিয়েও স্বমহিমায় মন জিতেছে দর্শককুলের। অর্থাৎ চাইলে পারা যায়। কোণঠাসা বলিউডকে ভরসা জুগিয়েছিল ‘পাঠান’-এর চওড়া ব্যাট, এরপর ‘রকি অউর রানি কি প্রেম কাহানি’র চালিয়ে খেলা এবং এখন ‘গদর টু’ ও ‘ওএমজি টু’র ঝোড়ো ইনিংস। আগামী ৯ সেপ্টেম্বর মুক্তি পাবে শাহরুখ খানের ‘জওয়ান’। ভক্তরা অধীর অপেক্ষায়। আপাতত সিক্যুয়েলে মাত সিনে দুনিয়া!

আরও পড়ুন- সুপার-ডিন থেকে নিরাপত্তারক্ষীকে জেরা পুলিশের

মুক্তির তিনদিনের মাথায় ১৩৫ কোটির ব্যবসা করেছে ‘গদর টু’। সানি দেওলের কেরিয়ারের সেরা হিট। আনন্দে আত্মহারা বছর ৬৫র অভিনেতা স্বয়ং জানিয়েছেন, এ তাঁর স্বপ্নেরও অতীত। সারাজীবন সিনেমার কাছে দায়বদ্ধ থাকার পুরস্কার ঈশ্বর নাকি ঝুলি উপচে দিয়েছেন! কখনও হাসছেন, কখনও কাঁদছেন নিজেই আর দর্শককুলকে জানিয়েছেন কৃতজ্ঞতা। ‘গদর টু’-এর প্রেক্ষাপট ১৯৭১-এর ভারত-পাক যুদ্ধ। প্রথম ভাগে যেমন স্ত্রী সাকিনাকে উদ্ধার করার জন্য ট্রাক ড্রাইভার তারা সিং পৌঁছে গিয়েছিলেন পাকিস্তান, মুখোমুখি হয়েছিলেন সাকিনার পরিবার ও পাক জেনারেল হামিদ ইকবালের এবং ছিনিয়ে এনেছিলেন স্ত্রীকে, এবার ছেলে চরণজিৎকে উদ্ধার করতে একই রকম অবৈধ ভাবে বর্ডার ক্রস করে পাকিস্তানে হাজির হয়েছেন তারা সিং। নস্টালজিয়া, ভরপুর অ্যাকশন এবং টানটান সংলাপে ‘গদর টু’ মাত করেছে। এমনকী আইকনিক হ্যান্ড পাম্পের দৃশ্যটিও পরিচালক রিপিট করেছেন। তারা সিং চায় না ছেলে তার মতোই ট্রাক ড্রাইভার হোক। সে এক শিক্ষিত, সুষ্ঠু জীবন পাক— এই তার আন্তরিক চাওয়া। স্নেহশীল পিতার ভূমিকায় সানি মন ছুঁয়েছেন সকলের। প্রসঙ্গত, ছেলে চরণজিতের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন পরিচালক অনিল শর্মার ছেলে উৎকর্ষ শর্মা, যিনি ‘গদর’ ছবিতেও ছিলেন সানি-আমিশার ছোট্ট ছেলের ভূমিকাতে।

অন্যদিকে, ‘ওএমজি টু’ সরাসরি সামাজিক বার্তা দেয়। সচেতনতার দায় ও দায়িত্ব নেয়। পরিচালক অমিত রাই মনে করেন আজকের দুনিয়ায় যখন আড়াল-আবডালের পাঁচিল ধসে প্রায় সবকিছুই হাতের মুঠোয় শিশু বয়স থেকেই, তাই লুকিয়ে রেখে লাভ নেই কিছু বরং জানিয়ে দেওয়া দরকার। শিখিয়ে ও বুঝিয়ে দেওয়া প্রয়োজন। এতে সুরক্ষা বাড়ে, বিপদ কমে। কিন্তু আমাদের সমাজ এই ভাবনার জন্য এখনও প্রস্তুত নয়। ঘাটতি আছে মানসিকতায়। আছে অস্বস্তি। যা পৌঁছে যায় চরম জায়গায়। যৌনশিক্ষা যে স্কুল লেভেল থেকে জরুরি এ-নিয়ে প্রচার চললেও ঢাকঢাক গুড়গুড় কাটেনি। ‘ওএমজি’-এর থেকে ‘ওএমজি টু’ তাই প্রাসঙ্গিকতায় কয়েক ধাপ এগিয়ে। যদিও চিত্রনাট্য ও কাহিনি-বিন্যাসে এগিয়ে ছিল প্রথমটিই। পরেশ রাওয়ালের জায়গা নিয়েছেন পঙ্কজ ত্রিপাঠী। দুজনেরই মামলার ধরন আশ্চর্যের। একজন করেছিলেন ঈশ্বরের বিরুদ্ধে মামলা (পরেশ রাওয়াল), একজন (পঙ্কজ ত্রিপাঠী) নিজের বিরুদ্ধে। চমক আছে, ভক্তিরস আছে, কোর্টরুম ড্রামা আছে, দুর্দান্ত অভিনয় আছে কিন্তু সবের ওপরে আছে সাহস যা আসলে মন ছুঁয়ে গেছে দর্শকের। অক্ষয়ের ছবি বলে প্রচার হলেও এ-ছবি আসলে পঙ্কজ ত্রিপাঠীর ছবি। অসাধারণ সাবলীল অভিনয়ে যিনি অনায়াস হারিয়েছেন অক্ষয়কে। সঙ্গত দিয়েছেন ইয়ামি গৌতমও। সব মিলিয়ে দুর্দান্ত দুই সিক্যুয়েলে এখন ভাসছে সিনেমোদী জনতা জনার্দন।

Latest article