লেখকের উপর হামলার নিন্দায় বিশ্ব

মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই রুশদির

Must read

প্রতিবেদন: হাসপাতালের শয্যায় কার্যত মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই চালাচ্ছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত লেখক সলমন রুশদি (Salman Rushdie)। শুক্রবার সন্ধ্যায় ইঠাৎই নিউইয়র্কে এক অনুষ্ঠানমঞ্চে আক্রান্ত হয়েছিলেন রুশদি। সঙ্গে সঙ্গেই তাঁকে কপ্টারে করে উড়িয়ে নিয়ে গিয়ে পেনসিলভেনিয়ার এক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এই প্রবীণ লেখক ওই হাসপাতালেই ভেন্টিলেশনে রয়েছেন। ভর্তি করার সঙ্গে সঙ্গেই বেশ কয়েক ঘণ্টা ধরে তাঁর অস্ত্রোপচার করা হয়। হাসপাতাল সূত্রে খবর, আপাতত প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন এই প্রবীণ লেখক। চিকিৎসায় সাড়া দিলেও তাঁর একটি চোখ নষ্ট হয়ে যাওয়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে। পাশাপাশি তাঁর যকৃত ও বাহুর স্নায়ুতন্ত্র গুরুতর জখম হয়েছে। শনিবার রাত পর্যন্ত কোনও কথা বলতে পারেননি তিনি। তাঁকে চিকিৎসকরা বিশেষ পর্যবেক্ষণে রেখেছেন।

রুশদির (Salman Rushdie) উপর এই হামলার ঘটনায় ইতিমধ্যে গোটা বিশ্ব জুড়ে বইছে নিন্দার ঝড়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, এই ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয়। আততায়ীর কঠোর সাজা হবে। পদত্যাগী ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, সলমন রুশদির উপর হামলার ঘটনায় তিনি মর্মাহত। বিশিষ্ট কবি ও গীতিকার জাভেদ আখতার বলেছেন, রুশদির উপর এই হামলা এক বর্বরোচিত ঘটনা। ব্রিটেনের লেখক নীল গাইমান ট্যুইট করেছেন, রুশদির উপর এই ভয়ঙ্কর হামলার তিনি তীব্র নিন্দা করছেন।

আরও পড়ুন: আক্রান্ত বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন পিটার্স, মেরে সমুদ্রে ছুঁড়ে ফেলা হল তাঁকে

বাংলাদেশের বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন এই হামলা প্রসঙ্গে বলেছেন, রুশদির সঙ্গে এ ধরনের কিছু ঘটতে পারে তিনি স্বপ্নেও ভাবেননি। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেছেন, রুশদির উপর কাপুরুষোচিত হামলা চালানো হয়েছে। ব্রিটিশ লেখক জেকে রাওলিং বলেছেন, এ এক ভয়ঙ্কর ঘটনা। ১৯৮৮ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী রুশদির বই স্যাটানিক ভার্সেস নিষিদ্ধ করেছিলেন। এ বিষয়ে শনিবার তৎকালীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নটবর সিং বলেছেন, ব্যক্তিগতভাবে তিনি কোনও বই নিষিদ্ধ করার পক্ষে নন। শুধুমাত্র দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে এই আশঙ্কায় প্রধানমন্ত্রীকে ওই বই নিষিদ্ধ করার পরামর্শ দিয়েছিলেন।


কে এই আততায়ী?

সামনের বছরই প্রকাশিত হবে সলমন রুশদির নতুন উপন্যাস ‘ভিকট্রি সিটি’। নিজের নতুন উপন্যাস এবং ‘আমেরিকায় শরণার্থী লেখকেরা’ এই দুই বিষয়ে আলোচনা করতেই পশ্চিম নিউইয়র্কের শুটোকোয়া ইনস্টিটিউটে রুশদিকে নিয়ে এক বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। শুক্রবার সন্ধ্যায় সেখানেই ছুরিকাহত হন প্রবীণ সাহিত্যিক রুশদি৷ কিন্তু সেই আলোচনা আর হল না। কারণ আততায়ী হাদি মাটারের ছুরির আঘাতে রক্তাক্ত হয়ে লুটিয়ে পড়েন রুশদি৷ জখম হন ওই অনুষ্ঠানের সঞ্চালক হেনরি রিসও৷

পুলিশ জানিয়েছে, আক্রমণকারীর নাম হাদি মাটার। ২৪ বছরের এই যুবক নিউ জার্সির ফেয়ারভিউ-এর বাসিন্দা৷ ঘটনাস্থলেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে৷ কী কারণে সে লেখকের উপর হামলা করেছে তা এখনও জানা যায়নি৷ প্রাথমিক তদন্তে নিউইয়র্ক পুলিশ জানতে পেরেছে, ইসলাম ধর্মাবলম্বী হাদি শিয়া সম্প্রদায়ের। জন্ম ক্যালিফোর্নিয়ায় হলেও সে আদতে ইরানি বংশোদ্ভূত। শিয়া কট্টরপন্থায় বিশ্বাসী হাদির আনুগত্য রয়েছে ইরানের ‘ইসলামিক রেভলিউশনারি গার্ড’-এর প্রতি। তবে সে সরাসরি কোনও কট্টরপন্থী সংগঠনের সদস্য কি না, তা এখনও জানা যায়নি। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশের ধারণা, হাদি ‘লোন উল‌্‌ফ’। অর্থাৎ, একাই রুশদিকে খুনের পরিকল্পনা করেছিল সে। রুশদির অনুষ্ঠানের প্রবেশপত্র সে কীভাবে জোগাড় করেছিল, তা স্পষ্ট নয়। উদ্ধার হওয়া প্রবেশপত্রটি ছিল ফেয়ারভিউয়ের ঠিকানায়। আততায়ীর জঙ্গি যোগের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। রুশদির লেখা ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ প্রকাশের পর লেখকের বিরুদ্ধে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেন ইরানের তৎকালীন শাসক আয়াতোল্লা খোমেইনি। ওই ঘটনাপ্রবাহের এক দশক পর ক্যালিফোর্নিয়ায় জন্ম হয় হাদির৷ সম্প্রতি সে নিউ জার্সিতে থাকত। ঘটনার পর শুক্রবার সন্ধ্যায় এফবিআই তার বাড়িতে ঢুকে তল্লাশি চালায়। পুলিশ জানিয়েছে, ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতেও কারচুপি করেছে হাদি। পুলিশকর্তা ইউজিন স্ট্যানিসজেউস্কি জানিয়েছেন, তাঁরা হাদির সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইলের উপর নজর রাখছেন৷ তাঁদের ধারণা, ইরানের বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে এই তরুণের যোগ রয়েছে। তবে এ বিষয়ে এখন কোনও নিশ্চিত প্রমাণ মেলেনি৷

Latest article