কিছুদিন আগেই প্রোমো লঞ্চ হয়েছিল স্টার জলসার আসন্ন ধারাবাহিক ‘সন্ধ্যাতারা’র। প্রোমো দেখে মনে হচ্ছিল নতুন এক ত্রিকোণ প্রেমের রসায়ন নিয়ে বুঝি উপস্থিত হচ্ছে নতুন ধারাবাহিকটি। কিন্তু পরে বোঝা গেল আসলে এই গল্প দুই বোনের তাঁদের ভালবাসা, স্বার্থত্যাগ এবং আত্মত্যাগের। এমন বোন যাঁরা একে অপরের জন্য প্রাণও দিতে পারে।
আরও পড়ুন-খুনের দায় এড়াতে গল্প ফাঁদছে মনোজ?
ধারাবাহিকের পরিচালক কৃষ বোস। প্রযোজনায় এবং সৃজনে সাহানা দত্ত এবং মিসিং স্ক্রিউ প্রোডাকশন। প্রোমো লঞ্চের পরপরই দক্ষিণ কলকাতার কালার ফিউশন স্টুডিওতে আয়োজিত হয়ে গেল এই ধারাবাহিকের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা পর্ব। স্টুডিও সেটআপটি একঝলকেই পছন্দ হওয়ার মতো। সাজানো, গোছানো এক অভিজাত বনেদি বাড়ি। এখানে ধারাবাহিকের একটি পার্টের শ্যুটিং হচ্ছে। এখানেই প্রেস মিটে হাজির ছিলেন পরিচালক কৃষ বোস এবং অভিনেত্রী অন্বেষা হাজরা, অমৃতা দেবনাথ এবং অভিনেতা সৌরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন-আবার রক্তাক্ত মণিপুর, আরও মৃত্যু, এবার রাজ্যভাগের দাবি তুলল বিজেপি বিধায়করা
‘সন্ধ্যাতারা’র গল্পটি এই রকম, পরিবারের মেজো মেয়ে সন্ধ্যা ছোট মেয়ে তারা। তাদের একটি বড় বোনও রয়েছে। বড় বোন থাকলেও পরিবারের স্তম্ভ হল সন্ধ্যা। একজন নারী হয়েও সেই যেন বাড়ির পুরুষটি। বাবা চলে যাবার পর সংসারের সব দায়িত্বই সে নিজের কাঁধে তুলে নেয়। সন্ধ্যা মনপ্রাণ দিয়ে ভালবাসে তার পরিবারকে, সবার জন্য হাজার পরিশ্রম করেও তাঁর মুখে হাসি কখনও ম্লান হয়ে যায় না। সবার সুখেই সুখ তাঁর। আর বোন তারাকে চোখে হারায় সে। তারাও দিদি-অন্ত প্রাণ। তারার কাছে সে মা, বাবা, বোন, বন্ধু সব।
হাসিখুশিতে উচ্ছল দুই বোনের জীবনে হঠাৎ এক স্বপ্নের পুরুষের প্রবেশ। গল্পের নায়ক আকাশনীল। ভাগ্যের ফেরে তারা দুজনেই ভালবেসে ফেলে একজন মানুষকেই। মুহূর্তে বদলে যায় দুই বোনের জীবন। আকাশনীল ভালবাসবে কাকে? তারপর কী হবে? কে কার খুশির জন্য করবে আত্মত্যাগ সেই উত্তরই মিলবে ধারাবাহিকে গল্পের বাঁকে বাঁকে।
আরও পড়ুন-আজ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনাল, ত্রিমুকুটের হাতছানি ম্যান সিটির সামনে
ত্রিকোণ প্রেম নয়, সম্পর্কই এখানে প্রধান। মিষ্টি প্রেম পাশাপাশি প্রিয়জনের খুশির জন্য স্বার্থত্যাগ এটাই মূল উপজীব্য, তাই দুই নারী এবং এক পুরুষের এক সম্পর্কের এক নতুন সমীকরণের দেখা মিলবে ধারাবাহিকটিতে। সবচেয়ে উল্লেখনীয় হল এই ধারবাহিকে তথাকথিত কোনও নেগেটিভ রোল বা ভিলেন নেই। বরং পরিস্থিতিকেই কখনও কখনও ভিলেনে পরিণত হতে দেখা যাবে এই গল্পে।
ধারাবাহিকে সন্ধ্যার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন ‘চূনী পান্না’, ‘এই পথ যদি না শেষ হয়’ ধারাবাহিকের জনপ্রিয় অভিনেত্রী অন্বেষা হাজরা। আবার তাঁকে দেখা যাবে এই ধারাবাহিকে। এর আগে তাঁর সাবলীল অভিনয় মন কেড়েছে দর্শকদের। তারার ভূমিকায় রয়েছেন ‘বকুল কথা’ এবং ‘মন ফাগুন’ ধারাবাহিক খ্যাত অভিনেত্রী অমৃতা দেবনাথ। আকাশনীলের চরিত্রে নবাগত সৌরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। সাংবাদিক সম্মেলনে মিডিয়াকে অন্বেষা নিজের শ্যুটিং-এর অভিজ্ঞতা নিয়ে বললেন, ‘‘ভীষণ ভাল লাগছে শ্যুটিং করতে, কারণ এর আগে আমি যতগুলো চরিত্রে অভিনয় করেছি এটা তার চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। যেভাবে সাহানাদি এবং চ্যানেলের সবাই গাইড করেছেন সর্বোপরি পরিচালক কৃষদা যেভাবে সাহায্য করেছে তাতে আমি ভীষণ খুশি। দর্শকের ভালবাসা আমি সবসময় পেয়েছি তাই চাইব এবারও দর্শক ততটাই ভালবেসে আমাদের অভিনয় দেখুন।”
আরও পড়ুন-রেল হকারদের নিয়ে লড়াইয়ে আইএনটিটিইউসি
অমৃতাও তার চরিত্র নিয়ে খুব পরিশ্রম করছেন, তিনি জানালেন, বোন তারাও সন্ধ্যারই মতোন। সেও তাঁর দিদি-অন্ত প্রাণ। দিদির যেমন একটা স্বপ্ন আছে তারাকে নিয়ে। তারারও একটা স্বপ্ন আছে তার দিদিকে নিয়ে। তিনি আরও, বলেন, ‘সৌরজিৎ, অন্বেষা আর কৃষদার সঙ্গে প্রথম অনস্ক্রিন কাজ আমার। সন্ধ্যা মানে অন্বেষার সঙ্গে আমার অফস্ক্রিন বন্ডিংও ভীষণ ভাল। আমি অনেকটাই তারার মতোই। সবাইকে নিয়ে চলতে ভালবাসি। সহ-অভিনেতা সৌরজিতের প্রসঙ্গেও অমৃতা বলেন সৌরজিৎ একটু নার্ভাস তবে খুব ট্যালেন্টেড, হার্ড ওয়র্কিং, আমরা সবাই হার্ড ওয়ার্ক করছি।’
আরও পড়ুন-প্রার্থী খুঁজতে নাজেহাল অবস্থা বিরোধী রাজনৈতিক দলের, পাহাড়ে ২২ বছর পর পঞ্চায়েত
‘সন্ধ্যাতারা’তে ডেবিউ করছেন অভিনেতা সৌরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। সৌরজিৎ ব্যাক ক্যামেরা কাজ করেছেন এবার ক্যামেরার সামনে আসছেন। ধারাবাহিকটিতে তাঁর চরিত্র প্রসঙ্গে বললেন, ‘‘ধারাবাহিকে আমার চরিত্রের নাম আকাশনীল কাঞ্জিলাল। মাকে নিয়েই জীবন আকাশনীলের, মা যা বলে সে তাই শোনে। পাশাপাশি আকাশনীল মানুষের পাশে দাঁড়াতে সবসময় প্রস্তুত। ব্যক্তিগতভাবেও আমি নিজেও তাই। খুব ভাল লাগছে। এটা আমার প্রথম কাজ নতুন অভিজ্ঞতা কিন্তু কেউ সেটা আমাকে ফিল করতে দেয়নি। কৃষদা, অন্বেষা, অমৃতা গোটা ইউনিট আমাকে খুব সাহায্য করেছে।”
আরও পড়ুন-৬৬তম ন্যাশনাল স্কুল গেমস: বাংলার সোনা-রুপো-ব্রোঞ্জ জয়ীদের শুভেচ্ছা মুখ্যমন্ত্রীর
‘সন্ধ্যাতারা’র পরিচালক কৃষ বোস ইন্ডাস্ট্রিতে রয়েছেন প্রায় তেরো বছর। এর আগে তিনি জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘এই পথ যদি না শেষ হয়’-এর এপিসোড ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করেছেন। পুরো ধারাবাহিকের পরিচালক হিসেবে কৃষের এটাই প্রথম কাজ। তাঁর ডেবিউ প্রজেক্ট। কথা হচ্ছিল পরিচালকের সঙ্গে তিনি জানালেন, সাহানা দত্তের সঙ্গে দীর্ঘদিনের পরিচয়। তিনি থাকলে যে কোনও প্রজেক্টই সফল হতে বাধ্য। এই ধারাবাহিকটি অন্যগুলোর চেয়ে আলাদা। অনেক গল্পেই দেখি একজন ভিলেন থাকে। এই ধারাবাহিকে ভিলেন বলে কেউ নেই। এমন-এমন পরিস্থিতি তৈরি হবে যে সেটাই ভিলেন হয়ে উঠবে। দুটি নারী এবং একজন পুরুষ হলেও এটা কোনও ত্রিকোণ প্রেমের গল্প নয়। নিখাদ মিষ্টি প্রেম আর আত্মত্যাগের সুন্দর চিত্ররূপ দেখতে পাবে দর্শক। অন্বেষার সঙ্গে আমি আগে কাজ করেছি এই মুহূর্তে বাংলা টেলিভিশনের অন্যতম সেরা অভিনেত্রী অন্বেষা। অমৃতার সঙ্গে এটা আমার প্রথম কাজ ও যথেষ্ট ট্যালেন্টেড। সৌরজিৎ নতুন, প্রথম ক্যামেরার সামনে কাজ করছে তাই টেকনিক্যাল কিছু ভুল-ত্রুটি থাকবেই কিন্তু নিউকামার হিসেবে ওর যে ডেডিকেশন দেখবার মতো।
‘সন্ধ্যাতারা’ও দর্শকমন কতটা জয় করে এখন শুধু সেই অপেক্ষা।