‘সির্ফ এক বান্দা কাফি হ্যায়’ থুড়ি সির্ফ এক মনোজ বাজপেয়ী কাফি হ্যায় বললেই বোধহয় ঠিক বলা হবে! আবার এক নতুন সাড়া জাগানো চরিত্রে তিনি। ছবিতে তাঁর পরিচয় অ্যাডভোকেট পি সি সোলাঙ্কি। অপূর্ব সিং কারকি পরিচালিত ছবিটি এক লড়াইয়ের গল্প নিয়ে তৈরি। এই ছবির সংলাপটাই অস্ত্র। আদালতের আইনের ভাষা যা ধারে এবং ভারে কাটবে হলফ করে বলা যায়। সঙ্গে অভিনেতা মনোজ বাজপেয়ী যাঁর মুখে যে-কোনও সংলাপই হয়ে ওঠে জীবন্ত। ছবিতে মনোজের দুর্দান্ত পারফর্ম্যান্স খুব স্বাভাবিকভাবেই ঝড় তুলেছে ওটিটিতে। যা এই মুহূর্তে চর্চার বিষয়।
এক সাধারণ আইনজীবীর অসাধারণ লড়াইয়ের গল্প ‘সির্ফ এক বান্দা কাফি হ্যায়’। ২৩ মে মুক্তি পেয়েছে জি ফাইভে। সত্যঘটনা অবলম্বনে এই ছবির গল্প, চিত্রনাট্য দীপক কিংগ্রানির। পরিচালক অপূর্ব সিং কারকি। ক্রিয়েটিভ প্রডিউসর সুপর্ণ ভার্মা, ছবিটির প্রযোজক বিনোদ ভানুশালী। ছবির গল্প অতুলনীয় যা ঠিকমতো বলতে না পারলে এত সুন্দর একটা সিনেমা হত না। অনবদ্য সেই গল্পের চলন, চিত্রনাট্য, সংলাপ, পরিচালন, সর্বোপরি অভিনয়। শুধু মনোজ বাজপেয়ী নন ‘সির্ফ এক বান্দা কাফি হ্যায়’-এ সবার অভিনয় মনে রাখার মতো। ছবির একটি গান গেয়েছেন সোনু নিগম।
আরও পড়ুন-খাদ্যশস্য বিক্রির নিয়ম বদল কেন্দ্রের, নতুন সিদ্ধান্তে কোপ পড়তে চলেছে রাজ্যগুলির
বাস্তব, সত্য ঘটনাকে অবলম্বন করে ইদানীং বলিউডে একাধিক ছবি তৈরি হচ্ছে। ‘সির্ফ এক বান্দা কাফি হ্যায়’ও একটি সত্য ঘটনার উপরেই আধারিত। সমাজের এক প্রভাবশালী ধর্মগুরুর বিরুদ্ধে যৌননিগ্রহের অভিযোগ এবং তার বিরুদ্ধে চলা মামলা নিয়ে তৈরি। সেই আখ্যানকে পর্দায় ফুটিয়ে তুলেছেন পরিচালক অপূর্ব সিং কারকি। বিতর্কিত বিষয়, ফলে ছবির ট্রেলার লঞ্চের ঠিক পরেই বিতর্ক শুরু হয় ছবিটি নিয়ে। যদিও খুব বেশিদূর গড়ায়নি। সামলে নিয়েছে ছবিটির প্রযোজনা সংস্থা।
আরও পড়ুন-মণিপুরে এবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বাড়িতে আগুন, আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে, স্বীকার বিজেপি নেতার
কিন্তু কেন এই বিতর্ক? আসলে ছবিটি দেখলে অনেকেই হয়তো বুঝে যাবেন গল্পটি নেওয়া হয়েছে ধর্মগুরু আশারাম বাপুর জীবন থেকে। যিনি ছিলেন গডম্যান বা সাধু বা বলা যেতে পারে ভণ্ড সাধু। ধর্ষণের দায় জেলে যেতে হয়েছিল আশারামকে এবং পাঁচ বছর ধরে সেশন কোর্টে চলেছিল সেই আইনি লড়াই। ছবির সব নাম কল্পিত কিন্তু সোলাঙ্কির নামটা নয়। যোধপুরের যে আইনজীবী এই মামলাটি লড়েছিলেন সেই সোলাঙ্কি নামটা ব্যবহারের স্বত্ব কিনেছিলেন এই সিনেমার প্রযোজকেরা। তাই মনোজের চরিত্রের নাম তাই সোলাঙ্কি রাখা হয়েছে। বলাই বাহুল্য এই ছবির ট্রেলার দেখে আঁচ পেয়েই আশারাম-অনুগামীরা চটে লাল।
আরও পড়ুন-ডাবগ্রাম ফুলবাড়িতে এখনই উড়ছে আবির
এক নিগৃহীতার জন্য ন্যায়বিচারের লড়াইয়ের কাহিনির জাল বোনা হয়েছে রাজস্থানের যোধপুরের পটভূমিতে। হাইপ্রোফাইল মামলা। যেখানে বিপরীতে দুর্বল প্রতিপক্ষ। নিজের কাছে আশ্রয়, আশীর্বাদ দেবার নামে এক নাবালিকাকে ধর্মগুরুর যৌন-হেনস্থা। নির্যাতিতা নাবালিকা নু যার বাবা-মা খুব দরিদ্র। মামলা লড়ার সামর্থ্য নেই। কিন্তু মেয়ের জন্য ন্যায়বিচার চাইতে পিছপা নন তাঁরা। পুলিশের পরামর্শেই দ্বারস্থ হন আইনজীবী পি সি সোলাঙ্কির কাছে। ঘটনা শুনে সেই লড়াইয়ে শামিল হন সোলাঙ্কি। বিনা পারিশ্রমিকেই তিনি মামলাটি লড়েন। ধাপে ধাপে সেই মামলা এগোয়। খুন হতে থাকে সাক্ষীরা, আসে খুনের হুমকি তা সত্ত্বেও প্রবল মনোবলকে সম্বল করে আইনজীবীর এগিয়ে যাওয়া। পি সি সোলাঙ্কির চরিত্রের দুটো সমান্তরাল দিক এখানে তুলে ধরেছেন পরিচালক। একদিকে তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন আইনজীবী। অন্যদিকে, আদালত চত্বরের বাইরে ছাপোষা, ভীতু প্রকৃতির পিতা এবং পুত্র যার ছোট্ট জগতে রয়েছে বৃদ্ধা মা আর ছেলে। চরিত্রের দুটো দিককেই খুব নিপুণভাবে তুলে ধরেছেন মনোজ। ছবিটি রিলিজ করার পর পরিচালক অপূর্ব কারকি বলেন, ‘প্রায় দেড় বছর ধরে কঠিন পরিশ্রম করেছি। হৃদয় এবং সততা দিয়ে পুরো কাজটা করেছি। দর্শকেরা এই ছবি পছন্দ করেছেন। আমরা সবাই ভীষণ খুশি।’ ছবি সম্পর্কে অভিনেতা মনোজ বাজপেয়ী বলেন, ‘গল্পটা অসাধারণ ছিল, ছবির কিছু বিষয় নির্বাচন আমার ওপরই সম্পূর্ণ ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল ফলে অনেক বেশি ইনভলভ হয়ে কাজটা করতে পেরেছি।’
আরও পড়ুন-ঠাকুরবাড়ির এক স্বশিক্ষিত চিত্রশিল্পী
ছবিতে বিরোধী আইনজীবীর চরিত্রে বিপিন শর্মা দারুণ। ধর্মগুরুর চরিত্রে সূর্যমোহন কুলশ্রেষ্ঠর খুব বেশি সংলাপ নেই অথচ চরিত্রটিকে প্রতিষ্ঠা করতে হয়নি। নজর কেড়েছেন নিগৃহীতা নু-এর চরিত্রে অদ্রিজা। ওড়নার আড়ালে তাঁর ধ্বস্ত হয়ে যাওয়া মন, লজ্জায় নিশ্চুপতা অনবদ্য। নু-এর বাবা এবং মায়ের চরিত্রে যথাক্রমে জয়হিন্দ কুমার এবং দুর্গা শর্মার অভিনয় যথেষ্ট বাস্তবসম্মত।
আরও পড়ুন-নবজোয়ার যাত্রা থেকে অভিষেকের উপলব্ধি
ছবির সম্পাদনা বেশ ভাল। মামলার সময়কাল ৫ বছর। একটি ষোল বছরের নাবালিকা কন্যাকে যৌনহেনস্থা যিনি করেছেন সেই ধর্মগুরুর লক্ষ লক্ষ ভক্ত এবং গুরুদেবের শিষ্যরা সবদিক থেকে হেভিওয়েট। এক অর্থে যাকে বলে বিত্তশালী গুন্ডা। টাকার জোরে তারা যা খুশি করতে পারে। বিপক্ষের লড়াইটা তাই ভীষণ কঠিন। সেই লড়াইটা লড়বেন এক সাধারণ উকিল। কী হবে শেষটায়? যারা এখনও দেখেননি তাঁদের জন্য ক্লাইম্যাক্সটা তোলা থাক।