প্রশ্ন, নিজেকে তৃণমূল সাংসদ দাবি করে শিশির অধিকারীর মতো একজন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ কিভাবে বিজেপির হয়ে ভোট চাইলেন ? রাত পোহালেই রাজ্যে পৌরসভা নির্বাচন। রাজ্যের ১০৭টি পুরসভার সঙ্গে পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথিতেও ভোটগ্রহণ রবিবার। এবার সকলের নজর কাঁথির দিকে। বিজেপি প্রার্থীদের জেতাতে সেখানে কার্যত মাটি কামড়ে পড়ে রয়েছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। কাঁথিতে নড়বড়ে বিজেপি। অধিকারী মিথ সেখানে আগেই ভেঙেছে। কাঁথি পৌরসভা বিজেপি দখল নিতে না পারলে, এবার অধিকারীদের রাজনৈতিক অস্তিত্ব মহাসংকটে পড়বে।
তাই কাঁথির মাটিতে অধিকারীদের সম্মান রক্ষা করতে ময়দানে নেমেছেন খোদ সাংসদ শিশির অধিকারী (Sisir Adhikari)। যিনি এখনও খাতায়-কলমে নিজেকে তৃণমূলের সাংসদ বলে পরিচয় দিয়ে থাকেন। এবং পুরভোটের ঠিক আগের দিন অর্থাৎ শনিবার একটি অডিও টেপ ভাইরাল হওয়াকে কেন্দ্র করে তুমুল বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
এই অডিও টেপ প্রসঙ্গে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমকে শিশিরবাবু বলেছেন, ভোট চাওয়া অন্যায় নয়। কিন্তু প্রশ্ন, শিশির অধিকারীর মতো একজন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ নিজেকে তৃণমূল সাংসদ দাবি করে কিভাবে বিজেপির হয়ে ভোট চাইলেন? এবং তৃণমূলে সবাই “চোর-ডাকাত” বলে দাবি করলেন?
যে অডিও টেপ প্রকাশ্যে এসেছে সেখানে শোনা গিয়েছে দু’জনের কণ্ঠস্বর। একজন শিশির অধিকারী (Sisir Adhikari) বলে মনে করা হচ্ছে। এবং যার সঙ্গে ফোনে কথা হচ্ছিল, সেই নিত্যানন্দ মাইতি নিজে স্বীকার করে দিয়েছেন, এই অডিও টেপ ফেক নয়, আসল। এবং শিশিরবাবু সবাইকে এভাবে শুভেন্দুর কথায় বিজেপিকে ভোট দেওয়ার কথা বলছেন।
আরও পড়ুন :- যে কারণে তৃণমূলকে ভোট দেবেন
ভাইরাল হওয়া অডিও টেপে এক বয়স্ক কণ্ঠস্বরের ব্যক্তি বলছেন, ‘‘আমি শিশির অধিকারী বলছি বাবা।’’ অন্যদিকে, অপেক্ষাকৃত তরুণ কণ্ঠের ব্যক্তি উত্তর দেন, ‘‘হ্যাঁ, স্যার, বলুন স্যার।’’ এর পর সেই বয়স্ক কণ্ঠের ব্যক্তি অন্য জনের পরিচয় জানতে চান। তখন তরুণ কণ্ঠের ব্যক্তি বলেন, ‘‘আমি ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের নিত্যানন্দ।’’ এর পর নিজেকে শিশির অধিকারী পরিচয় দেওয়া ওই ব্যক্তি বলেন, ‘‘আমার ছেলে বলেছিল, আপনাকে ফোন করে একবার বলতে। একটু দেখে দেবেন বাবা।’’ তখন নিত্যানন্দ পরিচয়ের ব্যক্তি পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘‘কাকে দেখব স্যার?’’ উত্তরে বয়স্ক কণ্ঠ বলেন, ‘‘শুভেন্দুর প্রার্থীকে।’’
নিত্যানন্দ পরিচয় দেওয়া ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করেন, ‘‘শুভেন্দুর প্রার্থী মানে কে স্যার বলুন?’’ তখন নিজেকে শিশির অধিকারী হিসাবে পরিচয় দেওয়া ব্যক্তি উত্তর দেন, ‘‘সে আপনাকে দেখে নিতে হবে। আমি বলতে পারব না।’’ নিত্যানন্দ পরিচয় দেওয়া ব্যক্তি প্রশ্ন করেন, ‘‘শুভেন্দু তো বিজেপি করেন। আপনিও তা হলে বিজেপিকে ভোট দিতে বলছেন?’’ তখন শিশির অধিকারী পরিচয় দেওয়া ব্যক্তি জবাব দেন, ‘‘আমি বলব, ভদ্রলোককে দেবেন। চোর-ডাকাতকে দেবেন না। তৃণমূল পার্টিতে কারা আছেন সেটা আপনি আমার থেকে বেশি জানেন। আপনি বুদ্ধিমান লোক। চোর-ডাকাত চেনেন না? আমি খুব বিনীত ভাবে বলছি।’’
এর পর নিত্যানন্দ পরিচয় দেওয়া ব্যক্তি পাল্টা খোঁচা দেন, ‘‘আপনি যদি সাংসদ পদ ছেড়ে নেমে পড়তেন, তা হলে স্যার, সব জিতে যেত। আর তৃণমূল মাঠে থাকত না। আপনি সাংসদ পদ ছাড়লেন না কেন?’’
নিজেকে শিশির হিসাবে পরিচয় দেওয়া ওই ব্যক্তি বলেন, ‘‘আমি কেন নামব? আপনি তো পাকা জিনিস। আপনি না করলে ছেড়ে দিন। অত বক্তৃতার কী আছে! না পারলে আপনার বাড়িতে কে যাবে?’’
নিত্যানন্দ পরিচয় দেওয়া ব্যক্তি ফোনে পাল্টা খোঁচা দেন, ‘‘জয় বাংলা, জয় বাংলা। বুড়ো বয়সে ভীমরতি।’’
প্রসঙ্গত, কাঁথির ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপির প্রার্থী নির্মাল্য দাস। তৃণমূলের প্রার্থী রাজ্যের মন্ত্রী অখিল গিরির ছেলে সুপ্রকাশ গিরি। নির্মাল্য দাস বিজেপি নেতা শুভেন্দুর ঘনিষ্ঠ। শুভেন্দুই তাঁকে পদ্ম প্রতীকে প্রার্থী করেছেন। এবং সেই প্রার্থীকেই ভোট দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন এখনও নিজেকে তৃণমূল সাংসদ হিসেবে দাবি করা শিশির অধিকারী।