একলা চলো রে

মেয়েদের সোলো ট্রিপ এখন ইন। তারা কাটিয়ে উঠছে ভয়, এগিয়ে যাচ্ছে সাহস ভরে, হয়ে উঠছে স্বাবলম্বী। তাই এটা ট্রেন্ডিং হতে দেরি নেই খুব। আগামী পরশু ওয়ার্ল্ড ট্যুরিজ্যম ডে-র প্রাক্কালে একলা বেড়ানোর নানা অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করলেন বেশ কিছু সেলিব্রিটি। সঙ্গে রইল ছোট্ট গাইডলাইন।লিখেছেন শর্মিষ্ঠা ঘোষ চক্রবর্তী

Must read

টই টই করতে এক পায়ে খাড়া আজকের মেয়েরা। সামনেই ওয়ার্ল্ড ট্যুরিজম ডে। মেয়েদের সোলো ট্রিপ ট্রেন্ডিং হতে খুব দেরি নেই। অফিস, বাড়ির মাঝে কিছুদিনের রিফ্রেশিং ব্রেক। বেড়াতে গিয়ে নো ঝক্কি ঝামেলা। তাই একলা চলো রে। এ নিয়ে তাঁরা যথেষ্ঠই আত্মবিশ্বাসী। সোলো ট্রিপ নিয়ে কী বললেন সেলেবরা।
সোলো ট্রিপে গেলে কোন কোন বিষয় মাথায় রাখবেন।

আরও পড়ুন-স্বনির্ভর হওয়ার ডাক দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী

রিসার্চ ওয়ার্ক করে নিন
একা বেড়ানোর প্রথম শর্ত হল ডেস্টিনেশন ঠিক করার পর সেই জায়গাটা সম্পর্কে খুব ভাল করে রিসার্চ ওয়ার্ক। যে সময় যাচ্ছেন সেখানকার আবহাওয়া কেমন। মোবাইল নেটওয়ার্ক সেখানে পৌঁছয় কি না ইত্যাদি জেনে নিন।
ট্যুর প্রোভাইডার
যাঁদের একটু পরিচিতি আছে এমন ট্যুর প্রোভাইডার বাছুন। ভাল করে জেনে নিন তাঁদের থেকে কী কী সুবিধা পাচ্ছেন। আপনার রুচি-পছন্দকেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে কি না দেখুন।
বাজেট করে নিন
বাজেট করে নিন আগে থেকে। কারণ একা বেড়াতে গেলে হঠাৎ সমস্যায় পড়লে কেউ নেই আর্থিক সাহায্য করার। কাজেই কোনও রিস্ক নেবেন না৷
একা গেলে
ট্রাভেল এজেন্সি ছাড়া একা ঘুরলে দায়িত্ব আরও বেশি। সেক্ষেত্রে একটা গাড়ি বুক করে রাখতে পারেন যে গাড়ি গোটা ট্যুরে আপনার সঙ্গেই থাকবে। তাহলে চাপ অনেকটা হালকা। খরচ বেশি হলেও একটু কস্টলি হোটেল নিন নিরাপত্তার কথা ভেবে। অজানা জায়গায় এক্সপ্লোর করতে একা চলে যাবেন না। জেনে নিয়ে তবে যান।

আরও পড়ুন-স্বাধীন ব্যবসার প্রতি অনাগ্রহ অযৌক্তিক আত্মঘাতী প্রবণতা

কোথায় থাকছেন
যে হোটেলে থাকবেন সেটা কেমন একটু নেট ঘেঁটে দেখে নিন। কোর এরিয়া যদি আপনার ডেস্টিনেশন না হয় তবে চেষ্টা করুন এমন হোটেলে থাকতে যেটি শহরের মধ্যে অর্থাৎ পরিবহণের সুবিধা রয়েছে।
ব্যাগপ্যাক করুন বুঝেশুনে
অযথা বোঝা বাড়াবেন না, একাই বইতে হবে। যেখানে যাচ্ছেন সেখানকার পরিবেশ এবং ক’দিন থাকছেন সেই অনুযায়ী জামাকাপড় নিন। সানগ্লাস, স্কার্ফ, সানস্ক্রিন, মোবাইল চার্জার, ওষুধের ব্যাগ, ঠান্ডার জায়গা হলে দু’একটা শীত পোশাক রাখুন।
নিরাপত্তা

আরও পড়ুন-দুর্গাপুজোর প্রহর গুনছে বাংলাদেশ

একা বেড়ানোর দায়িত্ব অনেক। কেউ ভুলত্রুটি ধরিয়ে দেবার নেই। বিপদে পড়লে আপনাকে একাই সামাল দিতে হবে। তাই নিজের নিরাপত্তা নিজের কাছে। পরিচয়পত্র সবসময় সঙ্গে রাখুন, একটা জেরক্স করে আলাদা সরিয়ে রেখে দিন। যে যে হোটেলে থাকছেন সেই সব হোটেলের ফোন নম্বর পরিবারের কাছেও দিয়ে রাখুন। মোবাইল হচ্ছে সবচেয়ে জরুরি তাই যে নেটওয়ার্ক ওই এলাকায় ভাল সেই সিম একটা নিয়ে নিন। গাড়ির ড্রাইভারের পরিচয়পত্র, ফোন নম্বর সব রেখে দিন। বেশি ক্যাশ টাকা রাখবেন না।
গাড়িতে
যদি একা গাড়ি করে রোড ট্রিপে যান তাহলে জ্বালানির দিকে অতি অবশ্যই নজর দিতে হবে। ঠিকভাবে তেল ভরে নিন গাড়িতে। রাস্তায় যেন তেলের ঘাটতি না হয়। গাড়ির কাগজপত্র রাখুন সঙ্গে।

আরও পড়ুন-নিয়োগ দুর্নীতিতে জড়িত শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ চঞ্চল নন্দী হাইকোর্টে হার, আদালতে পুলিশি তদন্তের অনুমতি

ওষুধপত্র ও খাওয়াদাওয়া
প্রেশার, সুগার থাকলে সেই অনুযায়ী ওষুধ, জ্বরের ওষুধ, পেটব্যথা বা ডায়েরিয়া, হজমের ওষুধ, ওআরএস-এর প্যাকেট, পেন রিলিফ স্প্রে, তুলো ইত্যাদি সঙ্গে রাখতে ভুলবেন না। খাবার বিষয় সতর্ক থাকুন এক্সপেরিমেন্ট না করাই ভাল।

নিজেকে নতুন করে খুঁজে পাওয়া

অপরাজিতা আঢ্য

আমার প্রথম একা বেড়ানো বার্সেলোনা থেকে ক্রুজে গোটা ফ্রান্স। চোদ্দোদিনের ট্যুর ছিল সেটা। একটা গ্রুপ আমাকে স্পনসর করেছিল। সেই ক্রুজের সৌজন্যে তখন ফ্রান্সের বিভিন্ন গ্রাম চষে বেড়িয়েছি। নিস, মার্শেইল, কার্শি, মোনাকো সবটা একা ঘুরেছি। ছবির মতো সুন্দর সেই সব জায়গা। ক্রুজের দায়িত্বে যাঁরা ছিলেন আমাকে গাইড করেছেন। ক্রুজে যাত্রী সবাই বিদেশি। একজন শুধু বাঙালি শেফ ছিলেন, সুদীপ। তিনি যখন জানলেন আমি ইন্ডিয়ান খাবার ছাড়া খেতে পারি না তখন আমি যে ক’দিন ছিলাম প্রচুর রান্না করে খাওয়াতেন। নিজেকে নতুন করে খুঁজে পাওয়া— সে এক অদ্ভুত অনুভূতি।

প্রচুর আড্ডা দিয়েছিলাম

আরও পড়ুন-ডিসেম্বরে টেট পরীক্ষা, চূড়ান্ত তালিকা নভেম্বরে

সোহিনী সরকার

প্রথম সোলো ট্রিপ ছিল সান্দাকফু ট্রেক। ওটার কোনও পারিপার্শ্বিক ছিল না আমার। হঠাৎ করে কয়েকঘণ্টার প্ল্যানিংয়ে শিলিগুড়ি যাওয়া, ওখান থেকে দার্জিলিং। ভেবেছিলাম কিছুদিন থেকে চলে আসব। কিন্তু একজন গাইডের সঙ্গে আলাপ হয়, ও আমাকে সান্দাকফু ট্রেকের কথা বলে। ব্যস, সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে যাই। তারপর একটা বড় সোলো ট্রিপ করি, সেটা আগে থেকে প্ল্যান করে অরুণাচল প্রদেশ। পনেরোদিনের ট্রিপ ছিল। এটা তেজপুর থেকে থেম্বাং তারপর আরও কিছু জায়গা হয়ে কাজিরাঙা, সেখান থেকে ব্যাক। গুয়াহাটি থেকে গোটা ট্রিপে শেষ অবধি গাড়ি ছিল আমার সঙ্গে। খুব এনজয় করেছি। তাওয়াং-এ ভীষণ ঠান্ডা পেয়েছিলাম। সন্ধ্যাবেলা শুধু হিটারের সামনে বসে থাকতাম। সোলো ট্রিপে গেলে আমি হোম-স্টে তে থাকতে পছন্দ করি যাতে সেই ফ্যামিলির লোকজনের সঙ্গে গল্প করে সময় কাটাতে পারি কিন্তু তাওয়াং-এ তা হয়নি। লুম্পোতে বলে একটা প্রত্যন্ত গ্রামে ছিলাম, যেখানে কোনও হোম-স্টে নেই। ফরেনার তো দূর অস্ত, ভারতীয়রাও যায় না। ওই গ্রামের মোড়লের বাড়ি ছিলাম। সেখানে আমার ড্রাইভার দাদার সঙ্গে সারা সন্ধে প্রচুর আড্ডা দিয়েছিলাম। সবার সঙ্গে দারুণ সম্পর্ক হয়ে গিয়েছিল৷ তারা আজও আমাকে ফোন করে৷ একা গেছিলাম বলেই এমন সুন্দর, অন্যরকম ভাবে সময় কাটানো সম্ভব হয়েছিল।

গন্ডোলায় বসে গান গেয়েছি

আরও পড়ুন-ডিসেম্বরে টেট পরীক্ষা, চূড়ান্ত তালিকা নভেম্বরে

মনামি ঘোষ

ট্রাভেল এজেন্সির সঙ্গে বারোদিনের ইউরোপ ট্যুরে গেছি যাতে অসুবিধায় না পড়ি। সেখানে সবাই আমার অচেনা। একটি বাঙালি ফ্যামিলি গেছিল দিল্লি থেকে। সোলো ট্রিপে আমার সবটা আমাকে নিজেকে করতে হয়েছে। সবার সঙ্গে গেলে যেটা করতে হয় না। এটা আমার জন্য ভালই হয়েছিল কারণ কখনও বাড়িতে কিচ্ছু করিনি এমনকী ব্যাগপ্যাকও। ফলে ওই ট্যুরে গিয়ে এই অভ্যেসটা হয়ে গেছে। ভোরে ওঠার অভ্যেস ছিল না কিন্তু ইউরোপ ট্যুরে সকাল সকাল উঠে ব্রেকফাস্ট করে রেডি হয়ে যেতাম। প্রথমে লন্ডন থেকে শুরু হয়েছিল। তাই লন্ডন শহরটা একদিন দেখিয়ে দিয়েছিল ওরা। ট্রিপে সবাই আমরা বন্ধু হয়ে গিয়েছিলাম। সাইট সিনে শুট্যের জন্য একটা বড় ব্যাগ সবসময় আমার সঙ্গে থাকত। ইংলিশ চ্যানেল পার হয়েছি তারপর রোম, ভেনিস গেছি। ভেনিসে গন্ডোলায় বসে গান গেয়েছি৷ অপূর্ব স্মৃতি আমার।

খুব ভাল মানুষজন পেয়েছি

আরও পড়ুন-পুজোয় ২৪ ঘণ্টা কন্ট্রোল রুম খুলল বিদ্যুৎ দফতর, ছুটি বাতিল কর্মীদের

সন্দীপ্তা সেন

আমার প্রথম সোলো ট্রিপ বারোদিনের হিমাচল প্রদেশের স্পিতি ভ্যালি এবং দ্বিতীয় ট্রিপটা ছিল গুজরাতের রান অফ কচ্ছ, ধোরাভিলা এটা পাকিস্তান বর্ডারের কাছে, ভুজ। বাড়িতে যেন কেউ টেনশন না করে সে জন্য রিসার্চ করতে হয়েছে প্রচুর। ওখানে দেখলাম বিএসএনএল-এর নেটওয়ার্ক ভাল তখন সেই সিম কিনেছিলাম যাতে বাড়ির লোক আমাকে সহজে পায়। সব হোটেল ডিটেলস বাবা-মাকে দিয়ে গেছিলাম। দুটো ট্রিপেই সবসময়ের জন্য একটা গাড়ি আমার সঙ্গেই থাকত। আমার ড্রাইভাররা লাকিলি দারুণ ফটোগ্রাফার ছিল। আমার অসাধারণ সব ছবি তুলে দিয়েছিল। দারুণ এনজয় করেছি। খুব ভাল মানুষজন পেয়েছি, গ্রামে গ্রামে গিয়ে কথা বলেছি সবার সঙ্গে। আমার ডাল মাখনি আর বাটার নান খুব ফেভারিট। আমি হিমাচলপ্রদেশের সবরকম হোটেলে খেয়েছি ওই ডিশ।

Latest article