কানপুর, ২৬ নভেম্বর : গ্রিন পার্কে প্রথম দিনটা যদি ভারতের হয়, তাহলে দ্বিতীয় দিন অবশ্যই নিউজিল্যান্ডের। ভারতকে ৩৪৫ রানে শেষ করে দেওয়ার পর দিনের শেষে তাদের রান বিনা উইকেটে ১২৯। দুই ওপেনার টম লাথাম ও উইল ইয়ং মিলে ভারতীয় বোলিংকে শুধু চরম পরীক্ষার সামনে ফেলে দেননি, দলকে শক্ত জমির উপর দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন। কিউয়িরা এখনও ২১৬ রানে পিছিয়ে। কিন্তু তাদের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইন-আপের কাছে এটা তেমন কোনও বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে হচ্ছে না। শনিবার সকালে ভারতীয় বোলাররা দ্রুত উইকেট তুলে নিতে পারলে ম্যাচে ছড়ি ঘোরানোর জায়গায় থাকবেন রাহানেরা। না হলে উল্টোটাও হতে পারে! গ্রিন পার্কের এই উইকেটে প্রথম দিন থেকেই বল অল্পবিস্তর ঘুরেছে। সুইং করেছে। রিভার্সও হয়েছে। কিন্তু তাতে লাথাম বা ইয়ংকে কোনও সমস্যায় পড়তে হয়নি। একবার শুধু অশ্বিনের বলে ডিআরএসের হাত ধরে বেঁচেছেন ইয়ং। আম্পায়ার কট বিহাইন্ড দিয়ে দিলেও সিদ্ধান্ত বদলাতে হয়েছে। তিন ভারতীয় স্পিনার অশ্বিন, জাদেজা ও অক্ষর মিলে ৪১ ওভার হাত ঘুরিয়েও সাফল্যের মুখ দেখতে পাননি। একইভাবে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে ইশান্ত শর্মা ও উমেশ যাদবকেও।
লাথাম বা ইয়ংকে এদিন একবারও অস্বস্তিতে পড়তে হয়নি। এখানে দুই পেসার ও তিন স্পিনারে খেলছে ভারত। কিন্তু কোথাও যেন ভারতীয় বোলিংয়ে সেই ভেদশক্তি খুঁজে পাওয়া গেল না। সবথেকে বেশি প্রত্যাশা ছিল টেস্টে চারশোর বেশি উইকেট নেওয়া অশ্বিনকে ঘিরে। তিনি ১৭ ওভারে ৩৮ রান দিয়ে কোনও উইকেট পাননি। জাদেজা ও অক্ষরও যথাক্রমে ১৪ ও ১০ ওভার হাত ঘুরিয়েছেন। তবে কোনও প্রভাব ফেলতে পারেননি। বরং টিম সাউদি এই উইকেটের ভরপুর ফয়দা তুলে ৬৯ রানে পাঁচ উইকেট নিয়েছেন। তিন উইকেট নেন জেমিসন। দুই উইকেট স্পিনার আজাজের। শুক্রবার প্রথম সেশনে চার ও দুপুরে দুই উইকেট হারিয়েছে ভারত। দুই সেশনেই ভারতীয় ব্যাটিংয়ের উপর চাপ সৃষ্টি করেছিলেন সাউদি। ট্রেন্ট বোল্টের অনুপস্থিতিতে কিউয়ি বোলিংয়ের দায়িত্ব নিজের হাতে তুলে নেন সাউদি। কিন্তু সেটাই বুমরা ও শামির অনুপস্থিতিতে করতে পারেননি ইশান্ত-উমেশ। কোনও ছাপ ফেলতে পারেননি তিন স্পিনারও। দিনের শেষে লাথাম ৫০ ও ইয়ং ৭৫ রানে ব্যাট করছেন। এরপর উইলিয়ামসন ও রস টেলরের মতো ব্যাটসম্যানরা রয়েছেন। শনিবার প্রথম সেশনে কিউয়িদের কয়েকটি উইকেট দ্রুত তুলে নিতে না পারলে মুশকিল রাহানের দলের।
আরও পড়ুন :মর্যাদার ডার্বিতে লড়াই আবেগ ও মগজাস্ত্রের, বাগানকেই এগিয়ে রাখছেন ব্যারেটো
সকালে নিজের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি পেয়ে যাওয়ার পর শ্রেয়স অবশ্য ফিরে গেলেন ১০৫ রানে। তাঁর এই ১৭১ বলের ইনিংসে তেরোটি চার ও দুটি ছক্কা রয়েছে। দেশের ১৬তম ক্রিকেটার হিসাবে অভিষেকে সেঞ্চুরি করলেন মুম্বইয়ের ব্যাটসম্যান। চার বছর অপেক্ষার পর সুযোগ পেয়ে সেটা কাজে লাগালেন তিনি। শ্রেয়স জানালেন টেনশনে সারা রাত ঘুমোতে পারেননি! শেষমেশ ভোর পাঁচটায় বিছানা ছেড়ে উঠে পড়েন তিনি।
৭৫ নট আউট থেকে আগেরদিন মাঠ ছেড়েছিলেন। সেঞ্চুরি হবে কিনা এই চিন্তায় রাতের ঘুম উবে গিয়েছিল তাঁর। এদিন অবশ্য কাঙ্খিত সেঞ্চুরি পেলেন মুম্বইয়ের তরুণ। পেয়ে উচ্ছ্বসিত শ্রেয়স। বলছেন, টেস্টের প্রথম দিন থেকে সবকিছু ঠিকঠাক গেল। তিনি খুব খুশি। শ্রেয়স এদিন ভার্চুয়াল সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, ‘‘প্রথম দিন থেকে সবকিছু ঠিকঠাক চলায় আমি খুব খুশি। গতকাল রাতে ভাল করে ঘুমোতে পারিনি। আসলে নট আউট থাকলে এমন হয়। আমার মনে হয় প্রথম দিন ভালই ব্যাট করেছিলাম। কিন্তু আজ আবার ফোকাস করার ব্যাপার ছিল।
আরও পড়ুন : আফ্রিকায় করোনা বিরাটদের সফর অনিশ্চিত
প্রসঙ্গত নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে তাঁকে নিয়ে মোট তিনজন ভারতীয় ব্যাটসম্যান এই কৃতিত্ব অর্জন করলেন।
মুম্বই ব্যাটসম্যানের এই কৃতিত্বে তাঁকে যাঁরা অভিনন্দন জানিয়েছেন, তাদের মধ্যে আছেন কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান শচীন তেন্ডুলকরও। সোশ্যাল মিডিয়ায় শচীন শ্রেয়সকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, ‘‘টেস্ট কেরিয়ার দারুণভাবে শুরু করেছ। ভারতীয় দলের সদস্য হিসাবে সাদা পোশাকে তোমাকে দেখে ভাল লাগছে। গুড লাক।” গ্রিন পার্কে এদিন ১৫৭ বল খেলে তিন অঙ্কে পা রেখেছেন শ্রেয়স। শেষপর্যন্ত তিনি ১০৫ রানে আউট হয়ে যান। শ্রেয়সের আগে অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরি করেছেন লালা অমরনাথ, দীপক শোধন, কৃপাল সিং, আব্বাস আলি বেগ, হনুমন্ত সিং, গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথ, সুরিন্দর অমরনাথ, মহম্মদ আজহারউদ্দিন, প্রভিন আমরে, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, বীরেন্দ্র শেহবাগ, সুরেশ রায়না, শিখর ধাওয়ান, রোহিত শর্মা ও পৃথ্বী শ।
কানপুরে গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথ অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরি করেছিলেন। শ্রেয়স সেই পদাঙ্ক অনূসরণ করলেন। শুক্রবার শ্রেয়স সেঞ্চুরি করার পর তাঁকে অভিনন্দন জানিয়ে ভিভিএস লক্ষ্মণ টুইট করেছেন, ‘‘চাপের মধ্যে অসাধারণ ইনিংস। দারুণ ম্যাচুরিটি ও ক্লাস দেখিয়েছ এই ইনিংসে। ১৬তম ভারতীয় ক্রিকেটার হিসাবে অভিষেকে সেঞ্চুরি। ওয়েল প্লেড। তবে আরও সেঞ্চুরি আসছে।” একইভাবে অভিনন্দন জানিয়ে বিসিসিআই লিখেছ ‘‘স্বপ্নের শুরু! অভিষেকেই সেঞ্চুরি।” অভিনন্দন জানান ওয়াসিম জাফরও। সতীর্থ সুর্যকুমার যাদব টুইট করেছেন, ‘‘কী অসাধারণ শুরু! আমি দারুণ খুশি ও গর্বিত ব্রাদার।” শ্রেয়সের প্রশংসা করেছেন ভারতীয় ক্রিকেটের দুই মহীরুহ বিরাট কোহলি ও রোহিত শর্মাও। রোহিত লিখেছেন, ‘‘টেস্ট ক্রিকেটে দারুণ শুরু করেছ শ্রেয়স।” এই সিরিজে রোহিতের মতোই প্রথম দলের বেশ কয়েকজন তারকা ক্রিকেটার খেলছেন না। চোটের জন্য সিরিজ থেকে ছিটকে গিয়েছেন রাহুলও। সেই সুযোগ কাজে লাগালেন শ্রেয়স।