মানুষের পরিষেবায় কড়া বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর, স্বচ্ছ, সক্রিয় পুর–প্রশাসন

দলীয় প্রার্থীদের উদ্দেশ্যে সরাসরি নেত্রীর বার্তা— মানুষের জন্য কাজ করতে হবে না হলে বাদ পড়তে হবে। মানুষকে পরিষেবা দিতে হবে

Must read

প্রতিবেদন : স্বচ্ছ ও সক্রিয় পুর-প্রশাসন। কাজ না করলেই এবার বাদ! দুর্নীতিকে প্রশ্রয় নয়। মুখ দেখে কাজ নয়। মানুষের পাশে থাকা। চুম্বকে এই হল বুধবার ফুলবাগানে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রচারসভার নির্যাস। উত্তর কলকাতার ষাটটি ওয়ার্ডের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থীদের সমর্থনে ফুলবাগান মেট্রোর সামনের জনসভা থেকে নেত্রী ভাবী কাউন্সিলরদের আলাদা করে কার্যত নির্দেশ দিলেন। বললেন, মানুষকে সঙ্গে নিয়ে মানুষের পাশে থেকে কাজ করতে হবে। জল, আলো, রাস্তা, নিকাশির মতো মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় ও প্রথম চাহিদাগুলি পূরণ করতেই হবে৷ পুর-পরিষেবার ক্ষেত্রে কোনও খামতি রাখা চলবে না।

আরও পড়ুন-ইউনেস্কোর হেরিটেজ সম্মান বাংলার দুর্গাপুজোকে মুখ্যমন্ত্রীর দীর্ঘদিনের দাবি, শাহকে কটাক্ষ অভিষেকের

১৯ ডিসেম্বর পুরভোট। তার আগে এদিন দলীয় প্রার্থীদের সমর্থনে প্রথম প্রচার সভা করলেন। দুপুর থেকেই সভায় আসতে শুরু করেন ষাটটি ওয়ার্ড থেকে কর্মী-সমর্থকরা।
গোয়া সফর সেরে কলকাতায় ফিরে সোজা নবান্নে চলে যান মুখ্যমন্ত্রী। নবান্ন হয়ে যখন ফুলবাগানের সভায় ঢুকছেন ঘড়িতে তখন চারটে বেজে চল্লিশ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তখনও মঞ্চে ওঠেননি সবে গাড়ি থেকে নেমেছেন। সভায় সমুদ্রগর্জন। ঢেউয়ের মতো আছড়ে পড়ছে স্লোগান।
ঠিক চারটে পঞ্চাশ মিনিটে বক্তৃতা শুরু করলেন। শুরু থেকেই এদিন নেত্রী ছিলেন কার্যত টি-টোয়েন্টি মেজাজে। কোনওরকম ভূমিকায় না গিয়ে সরাসরি তিনি একহাত নিলেন বিজেপিকে। বললেন, ২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি এমন একটা ঢক্কনিনাদ শুরু করেছিল যাতে বাংলার মানুষ ভয় পেয়ে গিয়েছিল। বিজেপি এলে এলাকায় সম্প্রীতি বজায় থাকবে তো? সম্পত্তি রক্ষা করা যাবে তো? কিন্তু বাংলার মানুষ এই অশুভ শক্তিকে রুখে দিয়েছেন। বাংলার পাশাপাশি উত্তর কলকাতার মানুষকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান দলনেত্রী।

আরও পড়ুন-ত্রিপুরার আইনশৃঙ্খলার অবনতি নিয়ে এবার সরব মোদির মন্ত্রীই

এরপরই দলীয় প্রার্থীদের উদ্দেশ্যে সরাসরি নেত্রীর বার্তা— মানুষের জন্য কাজ করতে হবে না হলে বাদ পড়তে হবে। মানুষকে পরিষেবা দিতে হবে। সকলের জন্যই কাজ করতে হবে। মনে রাখতে হবে যিনি ভোট দিয়েছে আপনি তাঁরও কাউন্সিলর আর যিনি ভোট দেননি আপনি তাঁরও কাউন্সিলর। এতে কোনও ভেদাভেদ রাখা চলবে না। মুখ দেখে কাজ করা চলবে না। একজন কাউন্সিলর যা কাজ করতে পারেন একজন বিধায়কও তা পারেন না। নেত্রীর নিজের বিধানসভা কেন্দ্রের ৭৩ নং ওয়ার্ডের উদাহরণ দিয়ে বলেন, এখানকার কাউন্সিলরকে এলাকায় জলের সমস্যার কথা বলেও কাজ হয়নি। শেষ পর্যন্ত আমায় হস্তক্ষেপ করতে হয়। এটা কেন হবে। এ জিনিস বরদাস্ত করা হবে না।

আরও পড়ুন-বিজ্ঞান থেকে খাদ্যশস্য , লোকসভায় সরব তৃণমূল কংগ্রেস

শহরে বাসিন্দাদের নির্মাণকাজ নিয়ে প্রচুর অভিযোগ গিয়েছে নেত্রীর কাছে। এ বিষয়ে কাউন্সিলরদের কড়া বার্তা দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, মানুষ ঘরবাড়ি বানাবেন তাঁর মতো করে। এর জন্য অনুমতি ও মালপত্র কেনা নিয়ে কোনওরকম দুর্নীতিকে দল প্রশ্রয় দেবে না। সাধারণ মানুষ অনলাইনে আবেদন করবেন এবং আবেদনের সাতদিনের মধ্যে তা মঞ্জুর করতে হবে।

মা-মাটি-মানুষের সরকারের আমলে কলকাতার উন্নয়নের খতিয়ান এদিনের সভায় তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। কলকাতার নিকাশির কথা বলতে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফিরহাদ হাকিম, অতীন ঘোষ-সহ বাকিদের বলেন, কলকাতায় এখন যা পাম্পিং স্টেশন আছে তা বাদ দিয়ে আরও দুশো পাম্পিং স্টেশন করতে হবে। যাতে যতই বৃষ্টি হোক না কেন কলকাতায় যেন জল না জমে। এরপরেই নেত্রীর সংযোজন, তৃণমূল কংগ্রেসের সরকার ক্ষমতায় আসার পর শহরে একাধিক উড়ালপুল হয়েছে৷ তাতে কলকাতার গতি অনেক বেড়েছে। সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ চালু হওয়ার পর ৪২% দুর্ঘটনা কমেছে কলকাতায়। গরিবদের বিদ্যুৎ বিলে ৭৫% ছাড় দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন-Mamata Banerjee: কলকাতার জন্য একগুচ্ছ প্রতিশ্রুতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের

মহিলাদের নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও কলকাতা বিশ্বের মধ্যে অন্যতম সেরা শহর। বস্তি উন্নয়নেও ছাপ রেখেছে কলকাতা কর্পোরেশন। কোভিডের টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলা দেশের মধ্যে এক নম্বর। যেসব পানীয় জল প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে তাতে ২০২৪-এর মধ্যে বাংলার প্রতিটি বাড়িতেই বিশুদ্ধ পানীয় জল পৌঁছে যাবে। ভাবী কাউন্সিলরদের নেত্রীর নির্দেশ, কলকাতার সব ওয়ার্ডে কমিউনিটি সেন্টার তৈরি করতে হবে। সাধারণ মানুষ যাতে অনলাইনে তা বুক করতে পারেন তার ব্যবস্থা করতে হবে। আর ভাড়ায় ৫০% ছাড়ও দিতে হবে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, কলকাতা আগে দুঃস্বপ্নের নগরী ছিল। এখন কলকাতা স্বপ্নের ফেরি করে। বাংলাই সেরা। আগামী দিনে বাংলাই আনবে বিশ্বের ভোর। এদিনের সভায় বলতে গিয়ে নেত্রী কিছুটা আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। এলাকা ও ওয়ার্ড ধরে ধরে খোঁজ নেন। তখন মঞ্চে উপস্থিত উত্তর কলকাতার সব নেতৃবৃন্দ ও মঞ্চের বাঁদিকে থাকা ষাটটি ওয়ার্ডের প্রার্থীরা বিহ্বল। টানটান হয়ে নেত্রীর কথা শুনছে সামনের জনতা।

আরও পড়ুন-শহর জুড়ে রঙিন প্রচার

নেত্রীর কথায়, এরকম প্রচুর আছে তার কয়েকটার মাত্র উল্লেখ করা হল। কলকাতার মানুষ যাতে আরও বেশি করে ভোটদানে উৎসাহিত হন সেই আবেদনও করেন নগরবাসীকে।

বৃহস্পতিবার, বেহালা চৌরাস্তা এবং বাঘাযতীনে দক্ষিণ কলকাতার প্রার্থীদের সমর্থনে সভা করবেন তিনি। বেহালা, টালিগঞ্জ ও যাদবপুরের বিস্তৃত এলাকার প্রার্থীর হয়ে প্রচার সারবেন মমতা। ৮৪ জন প্রার্থীর পাশাপাশি থাকবেন শীর্ষ নেতৃত্বও। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় উত্তর কলকাতার প্রার্থীদের সমর্থনে মহামিছিল করবেন। রাজাকাটরায় শুরু হবে এই মিছিল। উত্তর কলকাতার ষাট প্রার্থী-সহ দলের সমস্ত স্তরের পদাধিকারী ও কর্মী-সমর্থকেরা উপস্থিত থাকবেন মিছিলে।

Latest article