প্রতিবেদন : ব্যতিক্রমী এক মোহনবাগান দিবসের (Mohun Bagan Day) সাক্ষী থাকল ময়দান। মহরমের কারণে এই প্রথমবার প্রথা ভেঙে দু’দিন ধরে মোহনবাগান দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। মোহনবাগান রত্ন প্রদান-সহ মুল অনুষ্ঠান একদিন পিছিয়ে ৩০ জুলাই করা হয়েছিল। তবু অমর একাদশ স্মরণে ২৯ জুলাইয়ের মোহনবাগান দিবস সাড়ম্বরেই পালিত হল।
এবারও ক্লাব মাঠে প্রাক্তনদের প্রদর্শনী ম্যাচ দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। শিবদাস ভাদুড়ী একাদশ ও বিজয়দাস ভাদুড়ী একাদশের হয়ে খেলেন গৌতম সরকার, শ্যাম থাপা থেকে শুরু করে বাসুদেব মণ্ডল, অমিত ভদ্র, দীপেন্দু বিশ্বাসের মতো প্রাক্তন তারকারা। এবারের মোহনবাগান দিবসে রেকর্ড ১২৫ জন ক্লাবের প্রাক্তন ফুটবলার উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন অলোক মুখোপাধ্যায়, শিশির ঘোষ, বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্যদের মতো অনেকেই। এছাড়া ছিলেন গায়ক শিবাজি চট্টোপাধ্যায়ও। মোহনবাগানের ঘরের ছেলে সুব্রত ভট্টাচার্যের আত্মজীবনী প্রকাশিত হল এই বিশেষ দিনটিতে। ময়দানে বাবলুর সতীর্থদের পাশাপাশি তাঁর বিরুদ্ধে খেলা প্রাক্তনরাও এদিন এসেছিলেন মোহনবাগান দিবসের অনুষ্ঠানে।
আরও পড়ুন- সেমিফাইনালে হার লক্ষ্যের
তবে আত্মজীবনী প্রকাশ অনুষ্ঠানে সবুজ-মেরুন মঞ্চ আলো করে রইলেন ভারতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক সুনীল ছেত্রী (Sunil Chhetri)। এদিন তাঁর হাত দিয়েই প্রকাশিত হল সুব্রতর আত্মজীবনী ‘ষোলো আনা বাবলু’। সম্পর্কে তিনি সুব্রতর জামাই হলেও ২১ বছর আগে সুনীলের সবুজ-মেরুন জার্সিতে অভিষেক বাবলুর কোচিংয়েই। সুনীল মঞ্চে উঠতেই ‘ছেত্রী…ছেত্রী’ ধ্বনিতে গগনভেদী চিৎকার। মঞ্চে তখন মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল, আইএফএ কর্তাদের পাশাপাশি বাংলা তথা ভারতীয় ফুটবলের অতীত দিনের দিকপাল খেলোয়াড়দের উপস্থিতি। ছিলেন মন্ত্রী সুজিত বসু, ডাঃ শান্তনু সেন-সহ বিশিষ্ট অতিথিরা। তার মধ্যেই সুনীলের অটোগ্রাফ নিতে হুড়োহুড়িতে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। অনেকদিন পর শহরে। উন্মাদনাটা স্বাভাবিক।
মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য, শ্যাম থাপা, প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়, সমরেশ চৌধুরীরা বললেন, কেন নিজের সময়ে সেরা ডিফেন্ডার এবং টিম লিডার ছিলেন সুব্রত। সুনীলের কাছে জানতে চাওয়া হয়, শ্বশুর নাকি কোচ বাবলু— কে বেশি পছন্দের? সুনীল বলেন, ‘‘আমার প্রথম পছন্দ কোচ বাবলুদা। কেরিয়ারের শুরুতে এই মাঠেই উনি আমাকে সুযোগ দিয়েছিলেন। তাই কোচ বাবলুদা সবার আগে।’’
মঞ্চে উপস্থিত সুব্রতর স্ত্রী লতা ভট্টাচার্য কিছু না বললেও আত্মজীবনী প্রকাশের পর সুনীল ডায়াসে আসতেই ছেত্রী…ছেত্রী চিৎকারে কান পাতা দায়। সুনীল সমর্থকদের ধন্যবাদ দিয়ে বলেন, ‘‘জানতাম না, মোহনবাগানে খেলে কী হয়, জার্সির অনুভূতি কী, সুখ-দুঃখে ফুটবল, এসব কিছুই জানতাম না। একটা লোক আমাকে সব শিখিয়েছেন, তিনি হলেন এই মানুষটা।’’ সুনীল বলেন, ‘‘পৃথিবীতে কয়েকজন মানুষ হয়তো আছেন যাঁরা মোহনবাগানকে আলাদাভাবে অনুভব করেন, এই মানুষটা (সুব্রতর দিকে তাকিয়ে) তাঁদেরই একজন। এমনকী মোহনবাগান-বেঙ্গালুরু ম্যাচ থাকলে বাড়িতে অনেকেই আমাদের দলকে সমর্থন করেন। কিন্তু বাবলুদা চান, আমি গোল করি কিন্তু জিতুক মোহনবাগান।’’ উচ্ছ্বসিত সুব্রত বলেন, ‘‘লড়াই করে দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে উঠে এসেছি। পরিশ্রমের বিকল্প নেই। অনেক ক্লাবের প্রস্তাব ফিরিয়ে মোহনবাগানেই থেকেছি। ক্লাবও অনেক দিয়েছে। আমি আর কিছু চাই না।’’
সুব্রত ও সুনীলকে মঞ্চেই সংবর্ধনা দেওয়া হয় ক্লাবের (Mohun Bagan Day) তরফে। সচিব দেবাশিস দত্ত স্মারক, উত্তরীয়, মানপত্র তুলে দেন সুব্রতর হাতে। সহসভাপতি কুণাল ঘোষ মিষ্টির হাঁড়ি দেন সুব্রতকে। বিশেষ স্মারক হিসেবে এমিলিয়ানো মার্টিনেজের সই করা গ্লাভস দেওয়া হয় সুনীলকে। ইস্টবেঙ্গলের তরফেও ক্লাবের শতবর্ষের স্মারক দিয়ে সংবর্ধিত করা হয়। আইএফএ-ও সম্মানিত করে ভারত অধিনায়ককে। দুই প্রধানের রেষারেষি যেন এদিন ময়দানের মোহনায় মিশে গিয়েছিল। ইস্টবেঙ্গল কর্তা লাল-হলুদ উত্তরীয় পরিয়ে দেন মোহনবাগান সচিব দেবাশিস দত্তকে। উচ্ছ্বাসের হিল্লোল ওঠে সমর্থকদের মধ্যে। সুব্রতর এই আত্মজীবনীর অনুলেখক সুপ্রিয় মুখোপাধ্যায়।