২২,৮৪২ কোটি টাকার ব্যাঙ্ক ঋণ জালিয়াতির অভিযোগে বেসরকারী শিপিং সংস্থা এবিজি শিপইয়ার্ড(ABG Shipyeard) এবং এর প্রোমোটারদের বিরুদ্ধে শুরু হয়েছে তদন্ত। অভিযোগ, ব্যাঙ্কের থেকে নেওয়া ঋণের টাকা অন্তত ৯৮টি সংস্থায় সরিয়ে বিপুল আর্থিক তছরুপ চালিয়েছে এবিজি শিপইয়ার্ড। বিপুল অঙ্কের এই আর্থিক দুর্নীতির ঘটনাতেই এবার সরব হল তৃণমূল। শনিবার সাংবাদিক বৈঠক করে এই দুর্নীতির পিছনে ‘গভীর ষড়যন্ত্র রয়েছে’ বলে দাবি করে দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির (Narendra Modi) পদত্যাগ দাবি করলেন তৃণমূল (Trinamool Congress) সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় (Sukhendu Sekhar Roy)। পাশাপাশি এই ঘটনাকে তুলে ধরে রাষ্ট্রায়াত্ব বিমা সংস্থা এলআইসি-র বেসরকারিকরণ নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করলেন তিনি।
এবিজি শিপইয়ার্ডের ব্যাঙ্ক-দুর্নীতি নিয়ে এদিন সাংবাদিক বৈঠক করে তৃণমূল (Trinamool Congress) সাংসদ সুখেন্দু শেখর রায় বলেন, “ভারতের প্রায় সমস্ত ব্যাঙ্ক থেকে সাধারণ মানুষের টাকা নিয়েছে এই সংস্থা। ২০১৪ সালে বিশ্বব্যাপী মন্দার কারণ দেখিয়ে এরা সুদের পরিমাণ কামানো ও টাকা শোধের সময়সীমা বাড়ানোর আবেদন করে। ২০১৬-র জুলাই মাসে এবিজি শিপইয়ার্ডকে এনপিএ ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় সরকার। জানানো হয়, সংস্থা টাকা শোধ দেওয়ার অবস্থায় নেই। একবছর পর ২০১৭ সালে কোম্পানিকে ল’ ট্রাইবুনালে পাঠায় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। গভীর ষড়যন্ত্র না থাকলে এভাবে টাকা আত্মসাৎ করতে পারত না”। পাশাপাশি তিনি আরও বলেন, “এতদিনের মধ্যেও সরকারের তরফে সংস্থার বিরুদ্ধে কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে ব্যঙ্ক কর্তৃপক্ষের তরফে অভিযোগ দায়ের হয়। কিন্তু কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। সংবাদমাধ্যমে হইচই শুরু হওয়ার পর এখন লোক দেখাতে পদক্ষেপ শুরু হয়েছে। যখন পাখি উড়ে গিয়েছে।”
আরও পড়ুন – বিরোধী নেতার বিরুদ্ধে জামিন-অযোগ্য মামলা
ক্ষোভ উগরে সুখেন্দুশেখর আরও বলেন, “একদিকে মানুষ টাকা জমা করছে অন্যদিকে সরকারি বাদান্যতায় তা কেউ লুঠ করে নিয়ে যাচ্ছে। অথচ তদন্তকারী সংস্থাগুলি অদ্ভুতভাবে নিরব। এই অবস্থায় আমানতকারীরা কতখানি টাকা পাবেন তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এই ব্যর্থতার দায় নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ চাইছি আমরা। পাশাপাশি দোষীদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে অবিলম্বে তাদের গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছে তৃণমূল।” এর পাশাপাশি বেসরকারিকরণের পথে এগিয়ে যাওয়া এলআইসি নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করে সুখেন্দু শেখর রায় বলেন, “রাষ্ট্রায়াত্ব বিমা সংস্থা এলআইসি শেষ আর্থিক বছরে ১৫০০০ কোটি টাকা মুনাফা এনে দিয়েছে। তাকে বিক্রি করতে উদ্যোগী হয়েছে সরকার। আসছে আইপিও। কে বলতে পারে এখানেও এই ধরনের দুর্নীতি হবে না।” বেঙ্গল কেমিকেলের বেসরকারিকরণ নিয়েও এদিন তোপ দাগেন সুখেন্দুশেখর।
উল্লেখ্য, এবিজি গ্রুপের এবিজি শিপইয়ার্ড লিমিটেড কোম্পানি জাহাজ নির্মাণ ও মেরামতির কাজ করে। এই সমস্যার বিরুদ্ধে অভিযোগ বিভিন্ন ব্যাংক থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা ঋণ নিলেও সেই ধার শোধ করেনি সংস্থা। জানা গিয়েছে স্টেট ব্যাংক থেকে এই সংস্থা দিন নিয়েছে ২ হাজার ৯২৫ কোটি টাকা। আইসিআইসিআই (ICICI) ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়েছে ৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা, আইডিবিআই (IDBI) ব্যাঙ্ক থেকে জাহাজ নির্মাণ সংস্থাটি ঋণ নিয়েছে ৩ হাজার ৬৩৪ কোটি টাকা। ১ হাজার ৬১৪ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে ব্যাঙ্ক অফ বরোদা থেকে, ১ হাজার ২৪৪ কোটি নিয়েছে পাঞ্জাব ন্যাশানাল ব্যাঙ্ক থেকে এবং ইন্ডিয়ান ওভারসিজ ব্যাঙ্ক থেকে নিয়েছে ১ হাজার ২২৮ কোটি টাকা। বিপুল পরিমাণ এই ঋণের কোনও টাকায় শোধ দেওয়া হয়নি। যার জেরে সংস্থার কর্ণধারের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছে সিবিআই।