ঘুরে আসুন আমলাশোল

বাংলা-ঝাড়খণ্ড সীমানায় অবস্থিত আমলাশোল। অসাধারণ প্রাকৃতিক পরিবেশ। প্রত্যন্ত গ্রামটি একটা সময় অনুন্নয়নের কারণে ছিল খবরের শিরোনামে।

Must read

বাংলা-ঝাড়খণ্ড সীমানায় অবস্থিত আমলাশোল। অসাধারণ প্রাকৃতিক পরিবেশ। প্রত্যন্ত গ্রামটি একটা সময় অনুন্নয়নের কারণে ছিল খবরের শিরোনামে। এখন বদলেছে পরিস্থিতি। লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া। পাহাড়-জঙ্গলে ঘেরা অঞ্চলটি যুক্ত হয়েছে রাজ্যের পর্যটন মানচিত্রে। সারা বছর আসা-যাওয়া করেন বহু পর্যটক। বসন্তদিনে ঘুরে আসতে পারেন। লিখলেন অংশুমান চক্রবর্তী

চিরসবুজ এক গ্রাম। একটা সময় ছিল অনালোকিত। অবহেলিত। তুমুল আলোচিত। উঠেছিল খবরের শিরোনামে। মূলত অনুন্নয়নের কারণে। থাবা বসিয়েছিল তীব্র অনাহার। জনজীবনের দুর্দশার ভয়ঙ্কর ছবি শিউরে দিয়েছিল তথাকথিত সভ্য সমাজকে। দূরের কেউ পা ফেলতেন না। ভয়ে। অজানা আতঙ্কে। জায়গাটা আমলাশোল। বাংলা-ঝাড়খণ্ড সীমানায় জঙ্গলমহলে অবস্থিত। বর্তমানে ঝাড়গ্রাম জেলার অন্তর্গত।
তবে এখন আগের পরিস্থিতি আর নেই। বিগত এক যুগে বদলেছে অনেকটাই। আঁধার সরিয়ে লেগেছে আলো। আমলাশোল যুক্ত হয়েছে রাজ্যের পর্যটন মানচিত্রে। সারা বছর আসা যাওয়া করেন বহু পর্যটক। মূল কারণ এখানকার অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। পাহাড়-জঙ্গলে ঘেরা নির্জন নিরিবিলি পরিবেশ। ঋতু বদলের সঙ্গে সঙ্গে বদলে যায় রূপ। বসন্তে রঙিন হয়ে ওঠে। ফোটে পলাশ, ফোটে শিমুল। মাদকতা ছড়ায় মহুয়া। চাইলে সপরিবারে ঘুরে আসতে পারেন।

আরও পড়ুন-শেয়ার বাজারে বিরাট পতন, ১৪ লক্ষ কোটি ক্ষতি বিনিয়োগকারীদের

আমলাশোল এমন একটা জায়গা যেখানে অনায়াসে দুই-তিন দিন কাটিয়ে দেওয়া যায়। পাখির ডাকে ভোর হয়। মিঠে নরম রোদ ছড়িয়ে পড়ে গাছের পাতায়, সবুজ ঘাসে। সরু আঁকাবাঁকা লালমাটির পথ। দুধারে কাঁচাপাকা ধানখেত। কোথাও ফলে সবজি। দিঘির পাড়ে তালগাছের সারি। সবমিলিয়ে ছবির মতো।
গ্রামে মূলত আদিবাসী সম্প্রদায়ের বাস। পাওয়া যায় তাঁদের সংস্কৃতির ছোঁয়া। মানুষগুলো বড় বেশি সহজ, সরল, আন্তরিক। বেশিরভাগটাই মাটির ঘর। নিকোনো উঠোন। চারদিক পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। ঘরের দেওয়ালে বহুবর্ণ আলপনা। দেখলেই মন হয়ে যায় ভাল। কেউ করেন চাষের কাজ। কেউ শ্রমিক। কেউ জঙ্গলে যান কাঠ-পাতা কুড়োতে। কেউ কেউ পিঁপড়ে সংগ্রহ করেন। পিঁপড়ের ডিমের চাটনির নাকি কোনও তুলনাই হয় না। আশেপাশে গজিয়ে উঠেছে ছোটখাটো দোকানপাট। পাওয়া যায় রকমারি জিনিসপত্র। দেখেই বোঝা যায়, সুদিন ফিরেছে। লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া। লক্ষ্মী এসেছে ঘরে। উনুনে হাঁড়ি চড়ছে দু-বেলা। ছোটরা স্কুলে যাচ্ছে। পাকা রাস্তা দিয়ে ছুটছে বাস। স্থানীয়দের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছে প্রশাসন।

আরও পড়ুন-তমলুকে প্রচার শুরু করে গদ্দার, বিচারপতিকে কটাক্ষ দেবাংশুর

এমনিতে পরিবেশ শান্ত। তবে মাঝেমধ্যেই দলমার হাতি দলবেঁধে এসে দাপাদাপি করে। আতঙ্ক ছড়ায়। রাস্তার ধারে গাছের মাথায় চোখে পড়ে ছোট ছোট মাচাঘর। ধান পাকার সময় হাতির উৎপাত থেকে ফসল বাঁচানোর জন্য গ্রামবাসীরা রাতে মাচায় বসে পাহারা দেন। হাতি গ্রামে ঢুকলে পটকা ফাটিয়ে, কাঁসরঘণ্টা বাজিয়ে তাড়ান।
ঘুরে বেড়াতে মন চাইলে প্রথমেই যাওয়া যেতে পারে উত্তরের পথ ধরে। ধীর গতির ছন্দে বয়ে চলেছে কাঁকড়াঝোর নদী। প্রাচীন শাল জঙ্গলের মধ্যে সেকালের ভবানী থান। নদীর পাড়ে শিবমন্দির ও জামবাঁধ জলাধার। একে একে সবগুলোই দেখে নেওয়া যেতে পারে ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে। ওখান থেকে সবুজ পাহাড় দেখতে দেখতে কেটে যাবে দীর্ঘ সময়। ফেরার পথে ওদলচুয়া মোড় থেকে বামহাতি রাস্তা ধরে রঙিন পাহাড়ের সৌন্দর্যে মন ভরিয়ে চলে যাওয়া যেতে পারে জঙ্গলের গভীরে কেতকী লেকে। গোধূলির সূর্যাস্ত কবিতার মতো সুন্দর। সূর্য ডোবে ছায়া ছায়া পাহাড়ের কোলে। সন্ধেবেলায় দূর থেকে ভেসে আসে মাদলের শব্দ। শোনা যায় গান।

আরও পড়ুন-তমলুকে প্রচার শুরু করে গদ্দার, বিচারপতিকে কটাক্ষ দেবাংশুর

আশেপাশে আছে বেশ কিছু বেড়ানোর জায়গা। ঘুরে নেওয়া যায় ঘাটশিলার দ্রষ্টব্য স্থানগুলি। একদিনে চলে যাওয়া যায় জামশেদপুর, দলমা পাহাড়, চাণ্ডিল জলাধার। আর একদিন বেড়ানোর তালিকায় রাখা যায় কাঁকড়াঝোর এবং বেলপাহাড়ির আশেপাশের জায়গাগুলি। যেমন ঢাঙিকুসুম, খাণ্ডারানি হ্রদ, ঘাগড়া জলপ্রপাত, লালজল গুহা প্রভৃতি। সবমিলিয়ে আমলাশোল সফর আপনাকে আনন্দ দেবে।

কীভাবে যাবেন?
কলকাতা থেকে সড়ক পথে আমলাশোলের দূরত্ব ২২৫ কিলোমিটার। গাড়িতে ঝাড়গ্রাম-বেলপাহাড়ি হয়ে যেতে সময় লাগে ৫ থেকে সাড়ে ৫ ঘণ্টা। ঘাটশিলা থেকে আমলাশোলের দূরত্ব ২৪ কিলোমিটার। ট্রেনে গেলে ঘাটশিলায় নেমে অটো বা গাড়ি ভাড়া করে আমলাশোল পৌঁছতে সময় লাগে ১ ঘণ্টার মতো। অটো ভাড়া মোটামুটি ৫০০-৬০০ টাকা।

আরও পড়ুন-‘লোভীদের পছন্দ করি না’, বার্তা তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের

কোথায় থাকবেন?
আমলাশোলে থাকার জন্য রয়েছে ধিতাং হোমস্টে। এখানে রয়েছে তিনটে চারশয্যার কটেজ, যাদের নাম ‘ধামসা’, মাদল’ ও ‘ডাসাই’। কটেজের সামনে ও পিছনে দু’দিকেই বারান্দা। কটেজের পিছন দিকে নিচে দিয়ে বইছে স্থানীয় ঝোরা। কটেজে কিন্তু এসি বা টিভি নেই। তিনটে ঘর রয়েছে। ১২ থেকে ১৫ জন থাকতে পারেন। থাকা এবং চার বেলার খাওয়া নিয়ে জনপ্রতি খরচ মোটামুটি ১৬৫০ টাকা। গুগলে সার্চ করে ‘ধিতাং হোমস্টে’ খুঁজে নেওয়া যায়। এ-ছাড়াও আছে কোজাগর ইকো হোমস্টে। থাকার জন্য রয়েছে ২টি ঘর। প্রতিটি ৪-৫ জনের উপযোগী। আছে দুটো টেন্ট। প্রতিটি ৩-৪ জনের উপযোগী। আমলাশোলের ভিতরে আছে ছোট্ট একটি পাড়া। নাম কেন্দগোড়া। সেখানে রয়েছে কুর্চি বন আবাস। পাশের গ্রাম কাঁকড়াঝোরে তৈরি হয়েছে ৮-৯ টি হোমস্টে ও লজ। আরও কিছু হোমস্টে তৈরি হচ্ছে।

Latest article