সামনেই পুজো। লম্বা ছুটি। এই সময় মনের ডানা উড়ান চায়। বেরিয়ে পড়তে ইচ্ছে করে। একা অথবা দলবেঁধে। কাছেপিঠে অথবা দূরে কোথাও। কোথায় যাওয়া যায় সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না? নির্জন নিরিবিলিতে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে চাইলে নিশ্চিন্তে ঘুরে আসতে পারেন উত্তরবঙ্গের সাঙ্গসের।
আরও পড়ুন-বাংলার তৈরি ই-রিকশা যাচ্ছে পশ্চিম আফ্রিকায়
অত্যন্ত সুন্দর একটি গ্রাম সাঙ্গসের। ডেলো পাহাড় দিয়ে ঘেরা। তবে দার্জিলিংয়ে নয়। গ্রামটি কালিম্পংয়ে অবস্থিত। কালিম্পং-এর ৩৯টি গ্রামের মধ্যে একটি। কালিম্পং শহর থেকে মাত্র ১৪ কিমি দূরে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা প্রায় পাঁচ হাজার ফুট।
পাহাড়ের কোলে, চা-বাগানের মাঝে চিরসবুজ একটি গ্রাম। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। যেখান থেকে ঘুমন্ত বুদ্ধকে চাক্ষুষ করতে পারবেন পর্যটকরা।
শুধুমাত্র প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নয়, সাঙ্গসের গ্রামের দারুণ আবহাওয়াও মন কাড়বে পর্যটকদের। অপরূপ চা-বাগানে চলে পাতা তোলার কাজ। স্থানীয় মহিলারা যুক্ত থাকেন এই কাজে। পিঠে বাঁধা থাকে ঝুড়ি। সেখানেই রাখা হয় পাতা। মাঝেমধ্যে তাঁরা গেয়ে ওঠেন চা-পাতা তোলার গান।
রয়েছে পাহাড়ি রাস্তায় ট্রেকিংয়ের সুযোগ। আপনমনে হেঁটে আসা যায়। তবে পাহাড়ি এলাকায় একা একা না বেরনোই ভাল। দলবেঁধে হাঁটা উচিত। বনের পশু বেরিয়ে এলে সমস্যা হতে পারে।
আরও পড়ুন-শেষ বিশ্বকাপ, রোহিতেরই ট্রফি, ঘোষণা করে দিলেন সৌরভ
চোখে পড়বে পাইন গাছে ঘেরা জঙ্গল। এছাড়াও আছে রকমারি গাছ। গাছে গাছে ফুটে থাকে নানা রঙের ফুল। তার ঠোঁটে লাগে কুয়াশার নরম ছোঁয়া। মৃদু হাওয়ায় মাথা দোলায়। ফুল এবং পাতা।
সাঙ্গসের গ্রামে ভোর হয় পাখির ডাকের মধ্যে দিয়ে। কত রকমের পাখি। চেনা অচেনা। সারাদিন চলে কিচিরমিচির। যেন পাঠশালায় নামতা পড়া। পাখিদের ক্যামেরাবন্দি করেন বহু পর্যটক।
স্বপ্নের নদী তিস্তা। প্রবাহিত হয়েছে এই অঞ্চলের উপর দিয়ে। খরস্রোতা। উপর থেকে দেখলে চলনটা খুব ভাল বোঝা যায়। যুবতী নারীর মতো লাগে। বহু মানুষ তিস্তার পাশে বসে সময় কাটান। উপভোগ করেন পাহাড়ি ঝরনার দৃশ্য৷
সাঙ্গসের এমন একটি জায়গা, যেখানে রোজকার জীবনযাত্রার সামাজিক, মানসিক টানাপোড়েন আর দুশ্চিন্তা ভুলে প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যাওয়া যায়।
আরও পড়ুন-এশিয়ান গেমসেও জ্যাভলিনে সোনা পেলেন নীরজ চোপড়া
হোম-স্টে অথবা হোটেলের ঘরে বসে সকালের গরম চায়ে চুমুক দিতে দিতে কাঞ্চনজঙ্ঘাকে দেখার দৃশ্য ভোলা মুশকিল। নিজেকে মনে হবে কোনও এক কল্পলোকের বাসিন্দা। আবহাওয়া ভাল থাকলে পাহাড়ের ওপারে কাঞ্চনজঙ্ঘার শিখর টুকি দেয়। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের রক্তিম আভা দিনে দু’বার ছড়িয়ে পড়ে সাঙ্গসেরের বুকে। সে এক অনন্য অভিজ্ঞতা। গ্রামটি দিনের বেলায় একরকম, রাতে আরেক রকম। সন্ধে নামলে মায়াময় হয়ে ওঠে। দূরের কালিম্পং শহর আবছা আলোয় জোনাকির মতো ঝিকমিক করে।
হাতে সময় থাকলে টুক করে ঘুরে আসতে পারেন কালিম্পং শহর। করতে পারেন কেনাকাটা। সুলভ মূল্যে পাওয়া যায় শীতের পোশাক। কালিম্পংয়ে আছে গলফ কোর্স। সেখানেও কাটানো যায় কিছুটা সময়। ঘুরে আসা যায় ডেলো পার্ক থেকেও। দূরত্ব খুব বেশি নয়। দুর্গাপুজোর মরশুমে সাঙ্গসের যাবেন, অথচ দুর্গা মন্দিরে যাবেন না, তা কি হয়? অবশ্যই যাবেন। দর্শন করবেন দেবীর। আছে হনুমান মন্দির। চাইলে ঘুরে আসতে পারেন। সাঙ্গসের থেকে রামধুরা ১০ কিলোমিটার, ইচ্ছেগাঁও ১২ কিলোমিটার। সফরসূচিতে এই দুটি গ্রাম রাখতেই পারেন। হাতে আরও কিছুদিন থাকলে ঘুরে আসতে পারেন রংপো, পেডং, কোলাখাম, লোলেগাঁও থেকে। সবমিলিয়ে জমজমাট ট্যুর হতে পারে। তাহলে? ভাবনা কীসের? ঘুরে আসুন সাঙ্গসের।
আরও পড়ুন-বলি অভিনেতা রণবীর কাপুরকে সমন ইডি-র
কীভাবে যাবেন?
ট্রেনে পৌঁছে যান নিউ জলপাইগুড়ি। সেখান থেকে ছোট গাড়ি রিজার্ভ কিংবা শেয়ার করে নিতে পারেন। শিলিগুড়ি জংশন থেকে কালিম্পংগামী সরকারি বাস অথবা ছোট চারচাকা গাড়ি ভাড়াতেও পাওয়া যায়৷ সরকারি বাসে অল্প খরচেই পৌঁছে যাওয়া যাবে কালিম্পংয়ে। কালিম্পং পৌঁছে, কালিম্পং মোটর স্ট্যান্ড থেকে আবার ছোট গাড়ি ভাড়া করতে হবে। তবে যাঁরা গাড়ি রিজার্ভ করে যাচ্ছেন, তাঁদের আলাদা করে আর গাড়ি নেওয়ার প্রশ্ন ওঠে না৷ মোটর স্ট্যান্ড থেকে ছোট গাড়ি বা টাটা সুমো ভাড়া করে গ্রামে যেতে খরচ হবে মাথাপিছু ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা৷ সবুজে ঘেরা মনোরম পাহাড়ের আঁকে-বাঁকে ঘুরতে ঘুরতে চড়াই-উতরাই পথ পেরিয়ে এক থেকে দেড় ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছে যাবেন সাঙ্গসের গ্রামে।
কোথায় থাকবেন?
সাঙ্গসের গ্রামে থাকা এবং খাওয়ার কোনও অসুবিধা হবে না। পাহাড়ের কোলে আছে এক ডজন হোম স্টে। সেখানে থাকা যায়। পাশাপাশি রয়েছে বেশ কয়েকটি ব্রিটিশ আমলের বাংলো। সেখানেও থাকতে পারবেন পর্যটকরা। তবে যাওয়ার আগে অবশ্যই বাংলো বা হোম স্টে বুক করে যাবেন৷ হোম স্টে-তে মাথাপিছু খরচ মোটামুটি ১৫০০ টাকা। তাতে সকালের টিফিন, দুপুর ও রাতের খাবারও থাকবে।