রক্তাক্ত ত্রিপুরা। হিংসার উৎসব চলছে সেখানে। গেরুয়া পার্টির হার্মাদরা পুলিশ-প্রশাসনের নাকের ডগায় রক্ত ঝরাচ্ছে, আগুন ধরাচ্ছে। নৈরাজ্যের প্রহরেও অনির্বাণ প্রত্যাশার প্রদীপ। তার শিখায় দ্যোতিত হচ্ছে একটাই ইশারা। বিগ ফ্লপ দেবের পতন আসন্ন। লিখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও শিক্ষক বিজন সরকার।
আরও পড়ুন-প্লাস্টিক দূষণ রুখতে
রক্তের হোলি খেলা চলছে ত্রিপুরায়। আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়ছে। স্বেচ্ছাচারিতার চূড়ান্ত পর্যায়ে গেরুয়া হার্মাদদের মাঠে নামিয়ে সন্ত্রাসের আবহ তৈরি করতে চাইছে বিগ ফ্লপ দেব ও তাঁর সাঙ্গপাঙ্গরা। শেষ সময় ঘনিয়ে এসেছে, এটা টের পেয়েই তাদের শিরদাঁড়ায় হিমেল স্রোতের স্পন্দন আর তার জেরেই এত লম্ফঝম্পের আয়োজন।
আরও পড়ুন-Agartala: ভয় পাবেন না, পাশে আছি: আক্রান্তদের আশ্বাস অভিষেকের
কে এই বিগ ফ্লপ দেব?
পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় জয়ের হ্যাটট্রিক করার আগে থেকেই বাংলার মুখ্যমন্ত্রী জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাধারণ গরিব মানুষের স্বার্থে একের পর এক প্রতিশ্রুতি পালন করেছেন, করে চলেছেন। এরাজ্যের আকাশে বাতাসে তাই ‘দিদি’ ‘দিদি’ রব ধ্বনিত, প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। এরই বিপ্রতীপে বঙ্গভাষাভাষী অধ্যুষিত পার্শ্ববর্তী রাজ্য ত্রিপুরায় কেবলই প্রতিশ্রুতিভঙ্গের প্রকোপে সাধারণের দীর্ঘশ্বাস। ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব সে-রাজ্যের জনসাধারণের কোনও প্রত্যাশাই পূরণ করতে পারেননি। সর্বার্থে তিনি বিগ ফ্লপ। ঢাক-ঢোল পিটিয়ে ৫৬ ইঞ্চি ছাতিওয়ালা প্রধানমন্ত্রী ত্রিপুরায় এসে বলেছিলেন, কাজের মানুষকে মুখ্যমন্ত্রী করবেন। চেয়ারে বসার লোক ঠিক হল। কিন্তু দেখা গেল, মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে যাঁকে বাছা হয়েছে তিনি গদিতে আসীন হতে পারেন, কিন্তু তিনি আর যাই হোক, কাজের মানুষ নন। তাঁর হাবভাব চলন, সবকিছুই মুখ্যমন্ত্রীসুলভ। কিন্তু মানুষের জন্য কাজটুকু ছাড়া তিনি আর সবকিছুই করতে পারেন।
আরও পড়ুন-Agartala: ভয় পাবেন না, পাশে আছি: আক্রান্তদের আশ্বাস অভিষেকের
সাধারণ মানুষের কথা তো ছেড়েই দিলাম, ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দায়িত্বে থাকা পুলিশকর্মীরা পর্যন্ত কাজ করতে চান না। যাঁর নিরাপত্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা তাঁর সঙ্গে কাজ করতে অনিচ্ছুক তিনি যে ত্রিপুরা রাজ্যের নিরাপত্তার দায়িত্ব ভালভাবে পালন করবেন, এমন আশা করাটাও বাতুলতা মাত্র।
পশ্চিমবঙ্গে একের পর এক জনমুখী প্রকল্প রূপায়িত হয়েছে এবং হচ্ছে। এরাজ্যের ছাত্রছাত্রীরা সবুজসাথীর সাইকেল পায়, বিনামূল্যে পাঠ্য বই তো বটেই, টেস্ট পেপারও পায়, মেয়েরা পায় কন্যাশ্রী, রূপশ্রীর অর্থ, ২৫ থেকে ৬০ বছরের মহিলারা পান লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের সাহায্য, গণস্বাস্থ্যের দিকে নজর রেখে চালু হয়েছে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প, ছাত্রছাত্রীদের উচ্চশিক্ষায় সহায়ক হতে চালু হয়েছে স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড ইত্যাদি। অন্যদিকে ত্রিপুরা এক নেই- রাজ্যের দেশ। ত্রিপুরার মেয়েরা ও মায়েরা না পান কোনও ভাতা, না পান স্বনির্ভর হওয়ার জন্য কোনও আর্থিক সাহায্য। সেখানে সরকারি হাসপাতালে গেলে বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা পাওয়া তো দূর অস্ত, সিরিঞ্জ কিংবা তুলোটুকুও কিনে দিতে হয় রোগীকে। বিগ ফ্লপ দেবদের একটাই চালু প্রকল্প — ফেলো কড়ি, মাখো তেল।
আরও পড়ুন-বিরোধী নেতাকে তোপ ফিরহাদের
১০ হাজার ৩৩৩ জন শিক্ষকের চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়ছিল। চাকরি তো ফিরিয়ে দেয়ইনি বিগ ফ্লপ দেবের সরকার, উল্টে প্রায় ৫০০ শিক্ষককে আত্মহত্যার পথে ঠেলে দিয়েছে। ২০১৭-র বিধানসভা নির্বাচনের সময় স্বয়ং অমিত শাহ এসে বলে গিয়েছেন, ত্রিপুরায় সপ্তম পে কমিশন চালু হবে। চার বছর পরেও ত্রিপুরার মানুষ ষষ্ঠ পে কমিশনের আধীনে। এত মিথ্যা প্রতিশ্রুতির পর কোন ভরসায় এই গেরুয়া পার্টিকে ক্ষমতায় ফেরাবে ত্রিপুরাবাসী? তারা এই পার্টি ও তার সরকারের প্রতি চরম বীতশ্রদ্ধ। ২০১৭ থেকে অদ্যাবধি ত্রিপুরার সরকারি কর্মচারীরা কোনও ডিএ পাননি। এসবের ফল যে ভুগতে হবে বিজেপিকে, সেটা তারা ভালমতোই বুঝতে পারছে।
আরও পড়ুন-পৌষমেলা হবেই, তৎপর পুরসভা
আসন্ন পুরসভা নির্বাচনে সরকারি কর্মচারীদের পোস্টাল ব্যালটে দেওয়া ভোটের ৭৫-৮০ শতাংশ যে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষে যাবে, সে দেওয়াল লিখন তারা পড়ে ফেলেছে। সরকারি কর্মচারী মহল, প্রশাসনিক কর্তারা, পুলিশ মহল, সবাই বিগ ফ্লপ দেবের সরকারের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
ত্রিপুরার যুব সমাজের জন্য কোন সুবিধা দিয়েছে বিগ ফ্লপ দেবের সরকার? তাদের জন্য কেবল রচনা করেছে নেশার মায়াজাল।
রমরমিয়ে চলছে মদ, গাঁজা, ইয়াবা ট্যাবলেট, ব্রাউন সুগারের ব্যবসা। মনে হচ্ছে, কারা যেন ত্রিপুরার যুব সমাজের চোখে কালো কাপড় বেঁধে তাদের নেশার জগতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। বাইক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণকর্ত্রী হয়ে উঠেছেন সাংসদ প্রতিমা ভৌমিক। তাদের দিয়ে আক্রমণ নামিয়ে আনা হচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা-কর্মীদের উপর। এই আক্রমণ, অত্যাচার, দমন-পীড়ন, সন্ত্রাসের নীল নকশা তৈরি করছেন যিনি, তিনি হলেন বনমালীপুরের মণ্ডল সভাপতি দীপক কর ও তাঁর শাগরেদ শ্যাম।
আরও পড়ুন-BREAKING : রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অন্ধকারে ডুবে দিল্লির সাউথ এভিনিউ
কে এই দীপক কর?
অতীতে বামপন্থী। বর্তমানে তিনি নব্য বিজেপি। নেশার কারবারে অর্থলগ্নি করছেন কারা?
অভিযোগ, বিজেপির কর্মী থেকে রাজ্যের মন্ত্রীদের অনেকেই। সিধাই মোহনপুরে ১২ লক্ষ ৮০ হাজার গাঁজা গাছের মালিক এমনই এক মন্ত্রী, সে কথা আগরতলায় কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে। খাস জমিতে রমরমিয়ে চলছে গাঁজা চাষ খোদ মন্ত্রীর তত্ত্বাবধানে। এক মন্ত্রীপুত্র পশ্চিমবঙ্গের রাজারহাটে ২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে নার্সিংহোম করছেন। সে টাকা আসছে কোন পথে? সাধারণ মানুষের টাকাতে লুঠপাট চালাচ্ছেন বিজেপির নেতারা।
আরও পড়ুন-মিড ডে মিলে মিলবে আরও পুষ্টিকর খাবার
এরকম আবহে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ওই রাজ্যে পদার্পণ করলে টলমলে গদি যে গোমতীর জল ভেসে যাবে, সেটা ওরা জানে। তাই নির্লজ্জ কাপুরুষের দল ভয় পেয়েছে।
ওরা জানে, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং যদি ত্রিপুরেশ্বরীর পুণ্য তীর্থে আসেন, তবে জনজোয়ারে ভেসে যাবে অত্যাচারীর সন্ত্রাসের নিশান। তাই দমন পীড়ন নির্যাতন, নির্লজ্জ নোংরামির আশ্রয়ে পিঠ বাঁচানোর শেষ চেষ্টা করছে ওরা।
২০২৩-এ রাজ্যে পালাবদল হলেও এই অত্যাচারী দুর্বৃত্ত পদ্ম ঝান্ডাধারীদের ত্রিপুরাতেই থাকতে হবে। তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকরা ওদের চিনে রাখছেন। বিজেপি সরকারের গদি উল্টে যাওয়ার পর এইসব অত্যাচারী দুর্বৃত্তদের কী হাল হবে, সেটা এই মিথ্যাচারী অত্যাচারীরা জানে তো!