সুমন করাতি, হুগলি : দীর্ঘ ৫১৫ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম বন্ধ হল হুগলির কৃষ্ণপুরের মাছের মেলা। কথিত আছে, শ্রীমৎ স্বামী রঘুনাথ দাস গোস্বামীর ঘরে ফেরাকে ঘিরে ৫১৫ বছর আগে হুগলির দেবানন্দপুরের কৃষ্ণপুরে ‘উত্তরায়ণ’ (Uttarayan) নামে উৎসবের সুচনা হয়। এই উৎসবকে ঘিরে দিনভর নামসংকীর্তনের পাশাপাশি এলাকা জুড়ে এক বিরাট মেলাও বসে। তবে এই মেলায় জিলিপি, পাপড় ভাজা, নাগরদোলার থেকে মাছের আকর্ষণই ছিল বেশি। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মাছ ব্যবসায়ীরা ১ মাঘ এখানে হরেকরকম মাছ নিয়ে হাজির হন। আশপাশের কয়েকটি গ্রাম থেকে কয়েকশো কেজির মাছ দেখতে ভিড় জমান বহু মানুষ।
মেলা দেখার পাশাপাশি রয়েছে কেনার সুযোগও। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, একদা এই এলাকার জমিদার ছিলেন গোবর্ধন মজুমদার। গোবর্ধনবাবুর একমাত্র সন্তান রঘুনাথ দাস পরবর্তীকালে উপাধি পেয়ে রঘুনাথ দাস গোস্বামী হয়ে ওঠেন। তিনি মাত্র ১৫ বছর বয়সে নিত্যানন্দ মহাপ্রভুর দর্শনের জন্য পুরীধামে যাত্রা করেন। ফেরার পথে উত্তর ২৪ পরগনার পানিহাটিতে উপস্থিত হন। সেখানে এত কম বয়সে সন্ন্যাস নেওয়ার জন্য রঘুনাথ দাসকে শাস্তি হিসাবে বাড়ি ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। পানিহাটিতে আজও সেই দণ্ড উৎসব পালিত হয়। যাই হোক, বহুদিন পর ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে আসায় কৃষ্ণপুরজুড়ে শুরু হয় উত্তরায়ণ (Uttarayan) উৎসব।
আরও পড়ুন – সংক্রমণ ৩ শতাংশের নীচে, ডায়মন্ড হারবারবাসীকে অভিনন্দন জানালেন অভিষেক
উৎসব উপলক্ষে আয়োজিত মেলায় বহু মৎস্য ব্যবসায়ী এখানে মাছ নিয়ে উপস্থিত হন। সেই থেকে প্রত্যেক বছর ১ মাঘ এখানে মাছের মেলা আয়োজিত হয়। গতবছরও করোনার দাপট এই মেলাকে ছুঁতে পারেনি। কিন্তু এবছর করোনার জন্য পুলিশের অনুমতি না মেলায় বন্ধ মাছের মেলা। তবে কৃষ্ণপুরের মঠে নিয়ম মেনে পুজো-পার্বণ অনুষ্ঠিত হয়। সকালে বহু মৎস্য ব্যবসায়ী এই মেলা উপলক্ষে জেলায় এলেও অদিসপ্তগ্রাম জিটি রোডে তাঁদের পথ আটকায় পুলিশ। এবছর কৃষ্ণপুর মাছের মেলা করা যাবে না বলে মৎস্য ব্যবসায়ীদের জানিয়ে দেয় পুলিশ। বাধ্য হয়েই সপ্তগ্রামে জিটি রোডের ধারে ব্যবসায়ীরা মাছ নিয়ে বসে পড়েন। দিনভর সেখানেই যা কেনাকাটা হয়। ব্যবসায়ীদের বক্তব্য মেলার মত কি আর বিক্রি হয়। তবে এত মাছ নিয়ে ফিরে যাওয়া যাবে না। তাই এখানেই বসে পড়লাম। যেটুকু বিক্রি করা যায় আর কি !