দ্য আর্চিস

নেটফ্লিক্সে সদ্য মুক্তি পেয়েছে জোয়া আখতারের বহুল প্রত্যাশিত ডিরেক্টরিয়াল ডেবিউ ‘দ্য আর্চিস’। এই ছবির মাধ্যমে বলিউডে পা রাখলেন একঝাঁক তরুণ তুর্কি। যাঁদের মধ্যে অন্যতম সুহানা খান, অগ্যস্ত নন্দা, খুশি কাপুর প্রমুখ। ছবিটি ঘিরে বিতর্ক এবং প্রত্যাশা দুই-ই তুঙ্গে। লিখছেন শর্মিষ্ঠা ঘোষ চক্রবর্তী

Must read

‘দ্য আর্চিস’ ছবিটা দেখতে বসলে মনেই হবে না এটা কোনও ভারতীয় ছবি দেখছি। যেন বিদেশি ছবির প্রতিফলন। চল্লিশের দশকের গোড়ায় আমেরিকায় প্রকাশিত হয় আর্চি কমিকস। সেই সময়ের চিত্র ষাটের দশকে ভারতের পটভূমিতে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। সেই ফ্লেভারটা ছবিতে দারুণভাবে ধরেছেন পরিচালক। এই ছবির অসাধারণ সেট এবং চমৎকার দৃশ্যায়ন। যেন স্বপ্নেরা ডানা মেলে। সব কিছু খুব ঝলমলে। ষাটের দশকে নিয়ে এসে ফেলা গল্পের ব্যাকগ্রাউন্ড গড়তে কোনও খামতি রাখেননি ছবির নির্মাতারা।
আর্চির দুনিয়া। সেই বিখ্যাত লাভ ট্রায়াঙ্গেল যার তিন কোণে আর্চি, বেটি, ভেরোনিকা। আর্চি অ্যান্ড্রুস, বেটি কুপার, ভেরোনিকা লজ, জাগহেড জোন্স, এথেল মাগস, রেজি ম্যান্টল, ডিলটন ডয়লিরা হল আর্চির বেস্টফ্রেন্ড গ্যাং। যাদের পরিচয় আলাদা করে দেবার দরকার পড়ে না। তাই জোয়া আখতার, রিমা কাগতি জুটি যখন ঘোষণা করেছিলেন এই বিখ্যাত কমিক সিরিজটিকে নিয়ে ভারতীয় ভাষায় ছবি করতে চলেছেন তখন থেকেই আর্চি ফ্যানসদের উৎসাহ তুঙ্গে ছিল। কিন্তু বিতর্কও ছিল শুরু থেকেই। তারকাদের পুত্র-কন্যাদের এই ছবিতে অভিনয়ের কারণে বারবার উঠে এসেছে নেপোটিজম শব্দটা। তবুও ‘দ্য আর্চিস’ ভাল লাগার ছবি।
একটি মিউজিক্যাল ড্রামা। ওয়েস্টার্ন মিউজিক্যাল সিনেমা যেমন হয় ঠিক তেমনই ট্রিটমেন্টে নির্মিত এই ছবির গল্পের পটভূমি ষাটের দশকের উত্তর ভারতের পাহাড়ি ছোট্ট শহর রিভারডেলে। ১৯১৪ সালে রিভারডেল সাহেব এই শহরটি তৈরি করেন। এখানে যাঁরা থাকতেন দেশ স্বাধীন হবার পর অনেকেই নিজের দেশে ফিরে যান আবার বেশির ভাগই রয়ে যান তাঁদের প্রিয় শহরে। তখন থেকে এটি হয়ে ওঠে অ্যাংলো ইন্ডিয়ানদের বাসস্থান। যাঁরা ভীষণ আনন্দে, শান্তিতে থাকেন। রিভারডেল শহরের ছেলেমেয়েরাও খুব হাসিখুশি। তারাও সারাদিন গানবাজনা, আনন্দ নিয়েই থাকে। এখানেই রয়েছে একটি পার্ক। শহরের প্রতিটি শিশুর বয়স ৫ বছর হলেই, তাদের প্রত্যেকে একটি করে গাছ লাগায় এই পার্কে। ফলে এই পার্কের সঙ্গে শহরের বেশিরভাগের আবেগ জড়িয়ে রয়েছে।
আর এহেন পার্কটিকেই কেড়ে নিয়ে হোটেল বানাতে চায় এক ব্যবসায়ী। ভেরোনিকার বাবা হিরাম লজ। যার ফলে বেটির বাবা নিজের বইয়ের দোকান হারায়। এরপর তাদের দলটিতেও ভাঙন ধরে। বেটি জানতে পারে আর্চির প্রতি ভেরোনিকার ভালবাসার কথা। ফলে সে ক্রাশ এবং নিজের প্রিয় বন্ধুর মধ্যে কোনটা বাছবে, সেটা নিয়ে টানাপোড়েনে ভুগতে থাকে। যদিও পরবর্তীতে আলাদা না হয়ে আর্চিস দলটি একসঙ্গে থাকার গুরুত্ব অনুভব করে। তা হলে আর্চি, ভেরোনিকা, রেগি, বেটি, জাগহেট এবং শহরের বাকিরা কি পারবে নিজেদের পার্ককে বাঁচাতে? এই নিয়েই গল্প দ্য আর্চিস-এর। যদিও ক্লাইম্যাক্স ইতিমধ্যেই অনেকের জানা হয়ে গেছে। নেটফ্লিক্সে মুক্তি পেয়েছে ছবিটি, ফলে অনেকের দেখা হয়ে গেছে তবুও যাঁরা দেখেননি শেষটুকু তোলা থাক তাঁদের জন্য।
এই সিনেমার চরিত্রগুলির নাম এক রেখেছেন পরিচালক আর এখানেই ছবিটাকে ভীষণভাবে রিলেট করতে পারছেন দর্শক। পরিচালক জোয়া আখতার ‘দ্য আর্চিস’ ছবির মাধ্যমে যুব সম্প্রদায়কে একগুচ্ছ বার্তা দিতে চেয়েছেন, তাতে সফল হয়েছেন। আয়েশা দেবিত্রী ধিলোঁ এবং রিমা কাগতির চিত্রনাট্য বেশ হালকা এবং মনোরঞ্জক। এই ছবির মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে মেয়েদের মধ্যে বন্ধুত্বের প্রয়োজনীয়তাকেও। চেয়েছিলেন সেই পুরনো ফ্লেভারটা থাকুক যা ছবিটির ছত্রে ছত্রে রয়েছে।
‘দ্য আর্চিস’ মিউজিক্যাল ড্রামা— যার পরতে পরতে নস্টালজিয়া উসকে দেওয়ার মতো উপাদান রয়েছে। ফলে যাঁরা টাইমমেশিনে কিছুটা পিছিয়ে যেতে ভালবাসেন, তাঁদের জন্য এটি আদর্শ ছবি। একই সঙ্গে এটি গোটা পরিবারের উপভোগ করার মতো ক্রিসমাস মুভিও বটে। মন ভাল করার মতো আবহসঙ্গীত এবং সুর দিয়েছেন শঙ্কর, এহসান, লয় এবং জিম সত্য। ষাটের দশকে যখন রক-এন রোলের সুরে সারা পৃথিবী মজেছে, তখন টিনএজাররা কোন ধরনের গানবাজনা পছন্দ করতে পারে এবং নিজেরা কোন ধরনের গানবাজনা তৈরি করতে পারে, তার একটা স্পষ্ট ছবি দিয়েছেন সঙ্গীত পরিচালকরা।
‘দ্য আর্চিস’-এর কোর টিম মেম্বার অর্থাৎ কেন্দ্রীয় চরিত্রেরা এই ছবির আসল আকর্ষণ। অগস্ত্য নন্দা, সুহানা খান, খুশি কাপুর, অদিতি সায়গল, বেদাঙ্গ রায়না, যুবরাজ মেন্ডা, মিহির আহুজা প্রমুখ। এঁদের মধ্যে অমিতাভ বচ্চন-কন্যা শ্বেতা বচ্চন নন্দার পুত্র অগ্যস্ত নন্দা, শাহরুখ-কন্যা সুহানা, শ্রীদেবী-কন্যা খুশি কাপুর, প্রয়াত সঙ্গীত শিল্পী অমিত সায়গলের কন্যা হলেন অদিতি। এই স্টারকিডসদের প্রথম বড় ছবি এবং বড় ব্রেক। বেদাঙ্গ এবং মিহির আগেই এসেছেন অভিনয় জগতে। একটি সাক্ষাৎকারে, কাস্টিং নিয়ে জোয়া আখতার জানিয়েছিলেন যে, অগস্ত্য নন্দা প্রথমে অভিনয় করতে আগ্রহী ছিলেন না। অমিতাভের নাতি অভিনয়ের চাইতে ব্যবসায় বেশি আগ্রহী। ছবিটিতে সাতটি চরিত্র আছে। পরিচালক কম বয়সি অভিনেতা খুঁজছিলেন। অগস্ত্য, সুহানা, খুশি সকলকেই এই ছবিতে সুযোগ পাওয়ার জন্য রীতিমতো অডিশন দিতে হয়েছিল। এই সব নবাগত স্টারকিডসদের প্রথম অভিনয়, কাজেই খোলস ভেঙে নিজের বেস্টটা দিতে একটু তো সময় লাগবেই। সেটাই হয়েছে। প্রত্যেক অভিনেতাই নিজেদের চরিত্রকে ফুটিয়ে তুলতে সেরাটাই দিয়েছেন তবু কোথাও কোথাও খামতি রয়েছে। কিন্তু সব মিলিয়ে দ্য আর্চিস এন্টারটেইনিং। যা মন কেড়েছে দর্শকদের।

Latest article