মিতা নন্দী, ঝাড়গ্রাম: গোপীবল্লভপুরের জানাঘাটি গ্রামে বনেদি হিসেবে খ্যাত বক্সীবাড়ি। এ বাড়ির পুজোয় প্রাচীন প্রথা মেনে লক্ষ্মী-সরস্বতীর মতো দুর্গার পাশে থাকেন জয়া-বিজয়া। দশমীর দিন স্বগোত্রীয় বংশধরদের হাতে অপরাজিতার লতা বালার মতো পরিয়ে দেওয়া হয়। জয়া-বিজয়ার পুজো, অঞ্জলি হয় আলাদাভাবে। পুজোর এবার ১৬০ বছর। বহু যুগ আগে এই পরিবার ছিল মহান্তি। এক সময় গোপীবল্লভপুর ছিল ময়ূরভঞ্জ রাজাদের অধীন।
আরও পড়ুন-ভোট পেল না বিরোধীরা
মহান্তি পরিবারের পূর্বসূরিদের সামজিক কাজে অবদান দেখে খুশি হয়ে রাজা বখশিশ দেন। সেই থেকে এঁরা বক্সি পরিবার নামে পরিচিত হন। নকশাল আন্দোলনের আঁতুড়ঘর হিসাবে পরিচিত গোপীবল্লভপুর পরবর্তী কালে মাওবাদী সন্ত্রাসও প্রত্যক্ষ করে। কিন্তু সেই পরিস্থিতিতেও বক্সীবাড়ির পুজো কখনও বন্ধ হয়নি। ঝাড়খণ্ড-ওড়িশা থেকেও মানুষ আসেন পুজো দেখতে। এক সময় রাস্তাঘাট না থাকলেও সুবর্ণরেখা নদী সাঁতরে, কাঁধে সাইকেল চাপিয়ে পুজো দেখতে আসতেন মানুষ। পুজোর প্রচলন শ্রীহরি বক্সীর হাতে। এলাকায় অত্যন্ত জনপ্রিয় আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক শ্রীহরি আর্তের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেন। যে কোনও বিপদে মানুষের পাশে দাঁড়াতেন।
আরও পড়ুন-১০০ দিনের টাকার দাবিতে হাইকোর্টে মামলা
স্বপ্নাদেশ পেয়ে তিনি বাড়িতে শুরু করেন দুর্গাপুজো। পুজো হয় কালিকা পুরাণ মতে। পশুবলি নয়, চালকুমড়ো বা আঁখবলির রীতি আছে। শ্রীহরির নাতিরা বর্তমানে পুজো পরিচালনা করেন। বহু আগে এটাই ছিল এলাকার একমাত্র দুর্গাপুজো। বাড়ির স্থায়ী মণ্ডপে প্রতিমা গড়ার কাজ প্রতি বছর নিয়ম করে হয়। আগে পুজোর কদিন যাত্রাপালার আসর বসত। সপ্তমী, অষ্টমী, নবমীতে খিচুড়ি ভোগ খাওয়ানো হয় পাত পেড়ে। গত দু’বছর করোনার কারণে আয়োজন ছিল কম। পরিবারের অন্যতম সদস্য তন্ময় বক্সি বলেন, ‘আমাদের পরিবারের দুর্গাপুজো ঘিরে মানুষজনের আলাদা আবেগ রয়েছে। প্রতি বছর পারিবারিক ঐতিহ্য বজায় রেখে পুজো হয়।’