অসীম চট্টোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: শ্যামরূপে আবির্ভূতা তাই তিনি শ্যামরূপা। কাঁকসার (Kaksa) গড় জঙ্গলের গা-ছমছমে নিভৃত পরিবেশে এই দেবীর পুজো হয়। ইতিহাসের ধুলো পড়া পাতায় আজও রয়ে গেছে রাঢ় বাংলার এই মহাশক্তিপীঠের অজানা উপাখ্যান। কথিত, রাজা লক্ষ্মণ সেন গৌড় ত্যাগ করে গড় জঙ্গলে আত্মগোপন করেন। তিনিই শুরু করেন শ্যামরূপার পুজো। তিনি চলে যাওয়ার পর সামন্তরাজ ইছাই ঘোষ পুজোর দায়িত্ব নেন। শোনা যায়, তাঁকে দেবী স্বপ্নাদেশ দেন অষ্টমীর দিন যুদ্ধে যেতে। তাঁর সঙ্গে শৈব উপাসক সামন্তরাজা লাউ সেনের ঘোর যুদ্ধ বাধে। দেবীর নির্দেশ লঙ্ঘন করে সপ্তমীর দিনই যুদ্ধ শুরু করেন ইছাই। সেই যুদ্ধে তাঁর পরাজয় হয়, প্রাণও যায়। মনসামঙ্গলে লেখা আছে, ‘শনিবার বারবেলা/যুদ্ধে যেও না ইছাই গোয়ালা।’ ইছাই ঘোষের অনুচরেরা শ্যামরূপার মূর্তি মন্দিরের অদূরে দ্বীপসায়রের জঙ্গলে ভাসিয়ে দেন। পরে অষ্টধাতুর মূর্তি বসিয়ে শুরু হয় পুজো। শোনা যায়, এক সময় কাপালিকের বাস ছিল এখানে, হত নরবলি। বন্ধ করেন ভক্তকবি জয়দেব। বাংলার সর্বপ্রাচীন পুজোর অন্যতম হল কাঁকসার (Kaksa) ঘন জঙ্গলে শ্যামরূপার পুজো। গভীর জঙ্গলের মাঝেই হয় পুজো। ভক্ত সমাগম হয় রোজই। সন্ধিপুজার আগে আজও তোপধ্বনি শোনা যায় বলে স্থানীয়দের বিশ্বাস। নিত্যদিন এই মন্দিরে আগে শ্যামরূপার অন্নভোগ নিবেদন হওয়ার পর আসানসোলে দেবী কল্যাণেশ্বরী মায়ের ভোগ নিবেদন হয়। ষষ্ঠী থেকে মহানবমী চারদিন হাজার হাজার ভক্ত মন্দিরে অন্নপ্রসাদ গ্রহণ করেন।