প্রতিবেদন : মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee- Rally) হাত ধরে বিশ্বায়ায়ন হল বাংলার দুর্গাপুজোর। একই সঙ্গে বৃহস্পতিবার বাংলা দেখল ঐতিহাসিক সমাবেশ ও বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা (Mamata Banerjee- Rally)। মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে এদিন জোড়াসাঁকো থেকে রেড রোড পর্যন্ত এই শোভাযাত্রার মধ্যে দিয়েই সূচনা হল বাংলার দুর্গোৎসবের। মুখ্যমন্ত্রীর কথায় আজ থেকেই পুজো শুরু হল। রেড রোডের ঐতিহাসিক সমাবেশ মঞ্চে উপস্থিত ইউনেস্কোর দুই প্রতিনিধিকে স্ট্যান্ডিং ওভেশন দিল কলকাতা। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বললেন, বাংলার দুর্গাপুজো পৃথিবীর সেরা উৎসব। ইউনেস্কোর দুই প্রতিনিধি জানালেন, বৃহস্পতিবার তাঁরা যা দেখলেন তাতে তাঁরা বিস্মিত ও অভিভূত। এতটা তাঁরা আশা করেননি। এদিন মঞ্চে উপস্থিত গবেষক তপতী গুহ ঠাকুরতাকে সংবর্ধনা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তপতী জানান, রাজ্য সরকার তাঁর কাছ থেকে স্বীকৃতি কেড়ে নেয়নি। অযথা ভুলভাবে বিতর্ক তৈরি করা হচ্ছে। এই মঞ্চ আসলে ইউনাইটেড ওয়ার্ল্ড স্টেজ, মন্তব্য মুখ্যমন্ত্রীর। একই সঙ্গে তাঁর উক্তি— ধর্ম যার যার, উৎসব সবার।
ইউনেস্কোকে ধন্যবাদ : বাংলার দুর্গাপুজোকে ইনট্যানজেবল হেরিটেজের স্বীকৃতি দেওয়ায় ইউনেস্কোকে বিশেষ ধন্যবাদ জানিয়ে বৃহস্পতিবারের ঐতিহাসিক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ও সমাবেশ করল রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বাংলায় আজ থেকেই পুজো শুরু হয়ে গেল। দুর্গাপুজো সবার। একই সঙ্গে তাঁর সংযোজন, আমরা শান্তি ও মানবিকতা চাই। ঐক্যই আমাদের সম্পদ। এরপর তথ্য দিয়ে বলেন, রাজ্য সরকার ব্রিটিশ কাউন্সিল ও খড়্গপুর আইআইটিকে দিয়ে একটা সমীক্ষা করিয়েছিল। তাতে দেখা গিয়েছে দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে বাংলায় ৪০ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হয়।
শহর জুড়ে উৎসাহ-উদ্দীপনা : জোড়াসাঁকো থেকে মিছিল শুরু হবে দুপুর দু’টোয় কিন্তু তার অনেক আগে থেকেই টালা থেকে টালিগঞ্জের পুজো কমিটিগুলি আসতে শুরু করেছে জোড়াসাঁকোয়। আসার পথেই শুরু হয়েছে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় নাচ-গান। এদিন সকাল থেকেই কলকাতার রাজপথ হয়েছে রঙিন। বিশেষ করে নানা পোশাকে মহিলাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠান চোখ টেনেছে সকলের। বিভিন্ন রঙের পাঞ্জাবিতে পুরুষেরাও কম যায়নি। পুজোর আগেই কলকাতা দেখল পুজোর কার্নিভাল। দক্ষতার সঙ্গে সবটা সামলেছে কলকাতা পুলিশ।
আরও পড়ুন: বাঙালির ফুটবল আর দুর্গাপুজো দুটোই তুলনাহীন, অকপট সৌরভ
মেঘ-রোদ্দুরের খেলা : বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ঠা-ঠা রোদে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা নিতান্তই কষ্টকর হয়ে উঠছিল। পুজো কমিটি থেকে পুলিশ-সাংবাদিক সকলেই ঘেমে-নেয়ে একশা।
কিন্তু বেলা গড়াতেই শুরু হল বৃষ্টি। প্রথমে ঝিরঝিরে তারপর বেশ কয়েক পশলা। দু’টো বাজার খানিক আগেই যখন মুখ্যমন্ত্রী জোড়াসাঁকোয় পৌঁছলেন তখনও বৃষ্টি চলছে। ঘড়ির কাঁটায় ঠিক বেলা ১.৫৫। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে শুরু হল শোভাযাত্রা।
জোড়াসাঁকো থেকে রেড রোড : জোড়াসাঁকো থেকে রেড রোড প্রায় চার কিলোমিটার রাস্তা। মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে ইউনেস্কোকে ধন্যবাদ জানিয়ে হাঁটল গোটা শহর। সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ জুড়ে যেদিকে দু’চোখ যায় দেখে মনে হচ্ছে শহরের রাজপথে কেউ রঙিন পটচিত্র এঁকেছে। ঠাকুর, নানারঙের পোশাক, ধুনুচি, ঢাক, মহিলাদের নৃত্যানুষ্ঠান, পুজোর গান— সব মিলিয়ে কলকাতার ভেতর এ-যেন আর-এক কলকাতা। শহরের বড় পুজো কমিটিগুলো তো বটেই— ছোট-মেজো-সেজো কোনও কমিটি বাদ নেই এই মিছিলে। শোভাযাত্রা যত এগিয়েছে রাস্তার দু’পাশে তত ভিড় বেড়েছে। মিছিলে-মিছিলে হয়েছে কোলাকুলি।
তারকা সমাবেশ : এদিন জোড়াসাঁকো থেকে মিছিল শুরুর মুখেই টেলি-তারকাদের সামনে এগিয়ে দেন। সঙ্গে ছিলেন মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী। ছিলেন অন্যান্য সরকারি আধিকারিকেরাও। রেড রোডের মঞ্চে ছিল তারকা সমাবেশ। রেড রোডের মূল মঞ্চের সামনে নৃত্যানুষ্ঠান পরিবেশন করেন অভিনেত্রী শুভশ্রী, সায়ন্তিকা, কৌশানী-সহ একঝাঁক শিল্পী।