মালবাজারের ঘটনার প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্টে উঠে এল তথ্য

দুর্ভাগ্যজনক হল, এক শ্রেণির মানুষ একটি প্রাকৃতিক বিপর্যয়কে সামনে রেখে স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের কালিমালিপ্ত করার ন্যক্কারজনক খেলায় নেমেছে।

Must read

প্রতিবেদন : মালবাজারের মর্মান্তিক ঘটনা নিয়ে অন্তর্তদন্ত করতে গিয়ে ক্রমশ আসল তথ্য উঠে আসছে। প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট বাংলার নয়, হঠাৎ ছাড়া বাইরের জলেই ঘটেছে বিসর্জনের সর্বনাশ। সেই ঘটনাকেই সামনে রেখে প্রশাসন তদন্ত করতে শুরু করেছে। দুর্ভাগ্যজনক হল, এক শ্রেণির মানুষ একটি প্রাকৃতিক বিপর্যয়কে সামনে রেখে স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের কালিমালিপ্ত করার ন্যক্কারজনক খেলায় নেমেছে। বলা হচ্ছে দুর্ঘটনা এড়াতে প্রশাসনিক ব্যবস্থা ছিল না। অথচ বাস্তব ঘটনা ঠিক কী ছিল, তা প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্টে স্পষ্ট।

আরও পড়ুন-পুলিশের প্রশ্নে চুপসে গেলেন সৌমেন্দু

এক, বিসর্জনের জন্য রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে যাবতীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। নদী পাড়ে বহু মানুষের ভিড় হতে পারে জেনেই যথাযথ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। দুই, বোল্ডারের গল্প ছাড়া হয়েছে বিরোধীদের পক্ষ থেকে। নদীতে বোল্ডার বহু আগে থেকেই ছিল। নদীর গতিপথ পরিবর্তন করার প্রশ্ন আসে না। তার কারণ, নদী কার্যত শুকনো ছিল। তাহলে হঠাৎ বোল্ডার দেওয়ার প্রশ্ন আসে কোথা থেকে? তিন, নদীতে হাঁটু জল ছিল। হড়পা বানের আগাম কোনও সম্ভাবনাও ছিল না। তাহলে এই জল এল কোথা থেকে? এই জল বাংলার নয়। মাল নদী ও তার শাখা-প্রশাখার ক্যাচমেন্ট এরিয়া সিকিম-ভূটান ও দার্জিলিং মিলিয়ে এক বিস্তীর্ণ এলাকা।

আরও পড়ুন-প্রস্তুতি তুঙ্গে, আজ শোভাযাত্রা কলকাতার রাজপথে

ঘটনার দিন উত্তরে কোনও অস্বাভাবিক বৃষ্টি হয়নি। সম্ভবত রাজ্যের বাইরে মাল নদীর ক্যাচমেন্ট এরিয়াতে বৃষ্টি হয়েছিল। কিংবা মেঘভাঙা বৃষ্টি হয়। সেই জলই নেমে আসে। তদন্ত চলছে। ফলে জলচ্ছ্বাসের আগাম খবরের কোনও সম্ভাবনাই ছিল না। চার, আবহাওয়ার আগাম কোনও সতর্কতা ছিল না। আর ছিল না বলেই জলে পে লোডার নামানো হয়েছিল। পাঁচ, হঠাৎ জল বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই সিভিল ডিফেন্স এবং পুলিশের পক্ষ থেকে মাইকিং করা শুরু হয়। বলা হয় নদী থেকে দ্রুত সরে আসার জন্য। পুলিশ, সিভিল ডিফেন্স ও মাল পুরসভার চেষ্টায় সেই ঘোষণায় সাড়া দিয়ে প্রায় ৪৫০ মানুষকে নিরাপদে সরানো গিয়েছিল। যে কয়েক জন অনুরোধ সত্ত্বেও সরে আসেননি, তাঁরা দুর্ভাগ্যজনক ঘটনার মুখোমুখি হন। ছয়, বিরোধীদের ন্যক্কারজনক কুৎসা। মৃতদেহ নিয়ে রাজনীতি। পাল্টা প্রশ্ন উঠেছে বিজেপির রাজ্য অসমে বন্যা হয়েছে। মন্ত্রীরা তখন নির্বাচনী প্রচার করছেন। শতাধিক মানুষের মৃত্যু হল। তখন কোথায় ছিল এইসব নীতিকথা? ফরাক্কার জলের কারণে বারবার বন্যা হয়। পশ্চিমবঙ্গ সরকার বহুবার নদীগুলিকে ড্রেজিং করার অর্থাৎ পলিমাটি তোলার দাবি জানিয়েছে। কিন্তু সে তো দূরস্ত। তিস্তা প্রকল্পে কেন্দ্র অর্থ বরাদ্দ করে না। ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানে টাকা দেয় না। বিজেপির অসম বন্যায় ডোবে ভূটানের জলে।

আরও পড়ুন-বলি থেকে টলি বয়কট ট্রেন্ডে নাকাল সবাই

আকস্মিক এই জলের উদ্ভবের কারণেই দুর্ঘটনা। সে নিয়ে গল্প ফাঁদছে বিরোধীরা। যুক্তির মাথা খেয়ে মৃতদেহের রাজনীতি করতে গিয়ে বিরোধীরা বলছে নদীতে কেন বিসর্জন হল? তাহলে বিসর্জন কোথায় হবে? এতদিন কোথায় হতো? কেউ কেউ আবার বলছেন পুলিশ কেন লাঠিচার্জ করল না? প্রশ্ন হচ্ছে মাইকে বারবার বলা হয়েছে পাড়ে উঠে আসার জন্য। ৯০ শতাংশ মানুষ সরে আসেন। বহু মানুষকে উদ্ধার করা হয়। বাকিরা দুর্ভাগ্যজনকভাবে উঠে আসতে পারেননি। দ্রুততার সঙ্গে পদক্ষেপ করায় অধিকাংশকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। ১৪ জন আহত হন। যাদের মধ্যে আবার ৮ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী, আদিবাসী উন্নয়নমন্ত্রী, শিলিগুড়ি কর্পোরেশনের মেয়র ও চেয়ারম্যান-সহ সরকারি আধিকারিকরা ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের পাশে দাঁড়ান। উদ্ধারের তদারকি করেন। রাজ্য সরকার মৃতের পরিবারকে এককালীন ২ লক্ষ টাকা ও আহতদের এককালীন ৫০ হাজার টাকা দিয়েছে। বন্ধ রাখা হয়েছে কার্নিভাল। নবান্ন রিপোর্ট চেয়েছে।

Latest article