সংবাদদাতা, রাজনগর : হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির মিলনমেলা হিসাবে খ্যাত তিনশো বছরের বেশি পুরনো রাজনগরের মহরমের মেলার (Rajnagar- muharram mela) পিছনে রয়েছে আফগানি ইতিহাস। মেলার দিন সিউড়ির বিধায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী জানান, ‘এই সম্প্রীতির মেলা ঘিরে বাঙালির আবেগ আছে। ওঁরা আবেদন করেন এই ঐতিহ্যবাহী মেলার একটি তোরণদ্বার নির্মাণের। সেই আবেদন সত্বর পূরণ হবে। প্রসঙ্গত, মহরম উপলক্ষে এখানে পাঁচদিন চলে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান। হাজার হাজার মানুষের সমাবেশ ঘটে। আফগান রাজার বংশধর জনেদ খানের নাম পাওয়া যায় রাজনগরের ইতিহাসে। তাঁদের আমলেই গড়ে ওঠে এখানে বিখ্যাত ইমামবাড়া। যার সামনে বসে অর্ধদিবসের ঐতিহাসিক মেলা (Rajnagar- muharram mela)। এই রাজবংশের রাজা মহম্মদ রফিকুল আলম খান ওরফে রাজাসাহেব মাথায় পাগড়ি-সহ রাজবেশ পরে মেলার উদ্বোধন করতেন। তিনি প্রয়াত। তাঁর হাতেই প্রতিষ্ঠিত রাজনগর রাহে ইসলাম সমাজ কল্যাণ সমিতি। যারা প্রশাসনিক সহায়তায় মেলা-সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। বর্তমান রাজবংশের কনিষ্ঠ পুত্র মহম্মদ সফিউল আলম বলেন, ‘আরবি মহরম মাসের ছয় তারিখ থেকে মহরমকে ঘিয়ে এই সামাজিক উৎসব হয়। যার সবটার সঙ্গে ধর্মের সম্পর্ক নেই। রাজার আমলে এর প্রবর্তন হয়। যা আজও চলে আসছে। মহরম মাসের ৬ তারিখ সন্ধ্যায় রাজবাড়ি থেকে রাজ প্রতিনিধি শোভাযাত্রা করে কাছেই একটি বাড়ি যান। তারপর প্রতীকী কলাগাছ কাটা হয়। যাকে বলা হয় খুসকি। সেখান থেকে শোভাযাত্রা ইমামবাড়া প্রাঙ্গণে আসে। সপ্তম দিনে ধর্মীয় ফাতেহা হয়। অষ্টম দিনে মহিলারা স্থানীয় বিভিন্ন মাজারে সিন্নি চড়ান। নয় তারিখ জিয়ারত উপলক্ষে বিভিন্ন এলাকা থেকে তাজিয়া-সহ শোভাযাত্রা হয়। দশম মহরম বা আশুরা অর্থাৎ শনিবার ছিল মঞ্জিল। সকাল থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত মেলা হয়। একদিন বাদে হয় সামাজিক অনুষ্ঠান সৈয়ম ফাতেহা। যারা মহররম মাসের প্রথম দিন থেকে শাক-মাছ খাওয়া বন্ধ রাখেন তাঁরা এদিন থেকেই শাক-মাছ খাওয়া শুরু করেন। চলতে থাকে পরবর্তী মহরম মাসের সূচনা পর্যন্ত।’