নয়াদিল্লি : খোদ সুপ্রিম কোর্ট যখন দেশদ্রোহ আইন পর্যালোচনার কথা বলছে, তখন কেন্দ্রীয় সরকারের সমর্থনপুষ্ট জাতীয় ল’ কমিশন চায় শতাব্দীপ্রাচীন দেশদ্রোহ আইন দেশে বহাল থাকুক। একইসঙ্গে কমিশন এই আইনে সাজার সর্বোচ্চ মেয়াদও সাত বছর পর্যন্ত বাড়িয়ে দেওয়ার সুপারিশ করেছে। বর্তমান আইনে সাজা যাবজ্জীবন অথবা ন্যূনতম তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড। কমিশনের প্রস্তাব, তিন বছরের সাজার মেয়াদ সাত বছর করা উচিত। আইন কমিশনের ২৭৯ তম প্রতিবেদনে এই সুপারিশের সঙ্গে বলা হয়েছে, ব্রিটিশ সরকারের তৈরি বলেই দেশদ্রোহ আইন বাতিল করা অযৌক্তিক।
আরও পড়ুন-ভরাডুবির সতর্কতা সংঘের, মোদি–ম্যাজিক আর হিন্দুত্বের ভরসায় থাকলে লোকসভার যুদ্ধজয় সম্ভব নয়
এই আইন অবশ্যই থাকা উচিত, তবে সুপ্রিম কোর্টের ভাবনা অনুযায়ী, বেশ কিছু সংশোধন আনা প্রয়োজন। তাছাড়া কোন কোন ক্ষেত্রে এই আইন কার্যকর করা যায়, তার স্পষ্ট উল্লেখ থাকা উচিত। ল’ কমিশন মনে করে, দেশের অখণ্ডতা, একতা ও সংহতির স্বার্থে এবং মৌলবাদের মোকাবিলায় দেশদ্রোহ আইন বহাল থাকা জরুরি। কেন্দ্রে বিজেপির সরকার কায়েম হওয়ার পর দেশদ্রোহ আইনে গ্রেফতারি ও মামলার বহর বহুগুণ বেড়ে গিয়েছে। গত বছরের মে মাসে সুপ্রিম কোর্ট এই আইন নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলে কেন্দ্রীয় সরকারকে কড়া ভাষায় বলেছে, ১৮৬০ সালে তৈরি এই আইন অবিলম্বে পর্যালোচনা করা হোক। সেই নির্দেশ অনুযায়ী কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রণালয় ল’ কমিশনের পরামর্শ চায়। এখন চাপে পড়ে ল’ কমিশনের অভিমত প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়াল ব্যাখ্যা দিয়েছেন, এই সুপারিশ একান্তই কমিশনের নিজস্ব। সুপারিশ মানা সরকারের পক্ষে বাধ্যতামূলক নয়। সবার সঙ্গে আলোচনার পরই কেন্দ্রীয় সরকার তার মতামত জানাবে।
আরও পড়ুন-কটক হাসপাতাল পরিদর্শন করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মেডিক্যাল টিমকে ধন্যবাদ মুখ্যমন্ত্রীর
যদিও ল’ কমিশনের সুপারিশ প্রকাশ্যে আসার সঙ্গে সঙ্গেই বিরোধীরা সমালোচনায় সরব হয়েছেন। কংগ্রেস মুখপাত্র অভিষেক সিংভি বলেন, এই সুপারিশ বুঝিয়ে দিচ্ছে, সরকারপন্থীদের মনোভাব কী। সুপ্রিম কোর্ট চাইলেও বিজেপি সরকার কোনওভাবে এই কালা আইন রদ করতে চায় না। ল’ কমিশনের সুপারিশই তার প্রমাণ। কংগ্রেসের অভিযোগ, কমিশনের সুপারিশের ফলে সমস্যা বেড়ে যাবে। প্রতিবাদ আন্দোলন দমনের নামে বিজেপি সরকার এই আইনের আরও অপব্যবহার করবে। পাকিস্তানের মতো দেশেও লাহোর হাইকোর্ট এই আইন ‘অসাংবিধানিক’ বলে রায় দিয়েছে। সেখানে তা বাতিল হতে চলেছে। অথচ ভারতে বিজেপি সরকার গড়িমসি করছে। মোদি সরকারের আমলে ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সারা দেশে ৩৫৬টি রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা হয়। এসব মামলায় গ্রেফতার হন ৫৪৮ জন। অথচ এ পর্যন্ত দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন মাত্র ১২ জন।
আরও পড়ুন-ট্রাক্টরে রোড শো করলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, জনজোয়ার হরিপাল-তারকেশ্বরে
প্রসঙ্গত, ল’ কমিশনের চেয়ারম্যান কর্নাটক হাইকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি ঋতুরাজ অবস্থি। ২০২২ সালের ২ জুলাই তিনি অবসরে যান। কিন্তু তার আগে ১৫ মার্চ তাঁর নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ হিজাব মামলায় কর্নাটকে তৎকালীন বিজেপি সরকারের পক্ষে রায় দেয়। সেই রায়ের বিরুদ্ধে মুসলমান ছাত্রীরা সুপ্রিম কোর্টে যান। সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের দুই বিচারপতির একজন হিজাবের পক্ষে অন্যজন বিপক্ষে রায় দেওয়ায় মামলাটি বৃহত্তর বেঞ্চে যায়। সেই রায় এখনও আসেনি। হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি হিসেবে জুলাইয়ে অবসর নেওয়ার পর ঋতুরাজ অবস্থি ওই বছরের নভেম্বর ল’ কমিশনের চেয়ারম্যান হন। পদটি ২০১৮ সাল থেকে খালি ছিল।