পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে ব্যবসা বাড়ছে দেশি-বিদেশি, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন বিমান সংস্থায়। স্বাভাবিক ভাবেই বেড়ে গিয়েছে এয়ার হোস্টেস, এয়ার স্টুয়ার্ড, এয়ার স্টুয়ার্ডেস বা এককথায় কেবিন ক্রু পদে চাকরির সুযোগ।
এই পেশার জন্য নিজেকে পরখ করুন: ঘুরে বেড়াতে আপনি ক্লান্তিহীন? কোনও অতিথি আগন্তুককে প্রয়োজনীয় আপ্যায়নের কাজে হাঁপিয়ে ওঠেন না তো? কম কথা বলতেই বেশি ভালবাসেন? খেয়াল রাখতে হবে সেই অচেনা অপরিচিতদের সুবিধা-অসুবিধার দিকে। বিপদে পড়লে বাড়িয়ে দিতে হবে সাহায্যের হাত। কেবিন ক্রু পেশার এগুলিই মূল শর্ত।
আরও পড়ুন-সোনার হ্যাটট্রিক ব্যাডমিন্টনে, বাজিমাত সিন্ধু ও লক্ষ্যর, খেতাব সাত্ত্বিক-চিরাগেরও
গুরুত্বপূর্ণ পেশা: বিমানযাত্রীদের আকাশযাত্রাকে স্বাচ্ছন্দ্যময় করে তোলা, বিমানের পক্ষ থেকে আতিথেয়তাদান একজন কেবিন ক্রুর প্রধান কর্তব্য। যাত্রাপথের নানা টুকিটাকি খবরাখবরও এঁরা পরিবেশন করেন। বিমান যখনই কোনও নদী, সমুদ্র, পাহাড়-পর্বতের ওপর দিয়ে উড়ে যায় বা তাপমাত্রার বড় পরিবর্তন ঘটে, কেবিন ক্রু সঙ্গে সঙ্গে তা জানিয়ে দিতে ভুল করেন না। সময়মতো খাবার-দাবার তো আছেই। হাত বাড়ালেই নানা ধরনের পত্র-পত্রিকা।
মনে রাখবেন, পেশাটি দূর থেকে যতই শৌখিন মনে হোক না কেন, বাস্তবে বরং উল্টোটাই। ঘরবাড়ি ছেড়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ওড়া, রুটিন পরিষেবাদান। সজাগ দৃষ্টি যাত্রী আপ্যায়নে। বিমানে যাত্রীদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা, কোনও ভাবেই উত্তেজিত হওয়া চলবে না। চাকরির প্রথম শর্ত— প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও মাথা ঠান্ডা রাখা।
আরও পড়ুন-পাকাপাকি দায়িত্ব পেলে খুশিই হব, দাবি হার্দিকের
কাজের সময় কোনও ধরাবাঁধা ছক থাকে না। বিদেশের উড়ানে গেলে একটানা লম্বা সময়ের জন্যও ক্লান্তিহীন ভাবে কাজ করতে হয়। জরুরি পরিস্থিতিতে যে কোনও সময়ে কর্মস্থলে ডাক পড়তে পারে। কোনও অজুহাতেই সেই ডাক উপেক্ষা করা যাবে না। জরুরিকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য বিশেষ কিছু প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। উড়ান বাতিল হলে বা জরুরিকালীন অবতরণের সময় ধৈর্যের সঙ্গে যাত্রীদের সামলাতে হয়। বিমান থেকে নিরাপদে যাত্রীদের বার করে আনতে হয়। আবার আকাশপথে আচমকাই কোনও যাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁর শুশ্রূষার দায়িত্বও নিতে হয় হাসিমুখে। তাই প্রাথমিক চিকিৎসার কিছু জরুরি পাঠও শেখানো হয়।
আরও পড়ুন-শোয়েবের অস্ত্রোপচার
ভর্তির যোগ্যতা: শতকরা ৪৫ নম্বর পেয়ে উচ্চমাধ্যমিক পাশ হলে এয়ার হোস্টেস-এর স্বল্পমেয়াদি সার্টিফিকেট, ডিপ্লোমা অথবা ডিগ্রি কোর্সে ভর্তি হতে পারেন। সার্টিফিকেট কোর্সের মেয়াদ মাত্র আট মাস। স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তি হতে গেলে যে কোনও বিষয়ে স্নাতক হওয়া চাই। ডিপ্লোমা ছাড়াও আছে বিএসসি ডিগ্রি কোর্স। সবক্ষেত্রেই, আঞ্চলিক ভাষা ছাড়াও ইংরেজি-সহ এক বা একাধিক ভাষা জানা থাকলে সুবিধা। হোটেল ম্যানেজমেন্ট অথবা ট্যুরিজম-এর স্নাতক হলে অগ্রাধিকার।
মহিলাদের ক্ষেত্রে বয়সসীমা সর্বাধিক ২৫, পুরুষদের ২৬। লম্বায় মেয়েদের কমপক্ষে (১৫৭.৫ সেমি) ৫ ফুট ২ ইঞ্চি, পুরুষদের (১৬৩ সেমি) ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি হওয়া জরুরি। ওজন হতে হবে মানানসই। চোখের দৃষ্টি (আনকারেক্টেড ভিশন) হতে হবে ৬/৬। তবে এই পেশায় যে জিনিসটি সমধিক জরুরি তা হল সুন্দর ব্যক্তিত্ব।
আরও পড়ুন-শোয়েবের অস্ত্রোপচার
বাজারে কেবিন ক্রুর চাহিদা বেড়ে চলার কারণে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পেশাদারি কোর্স চালু করেছে। প্রতিষ্ঠানভেদে কোর্সের মেয়াদ, পড়াশোনার বিষয় এবং খরচের তারতম্য আছে।
ভর্তির পরীক্ষা: প্রথমেই লিখিত পরীক্ষা। উত্তীর্ণ হলে ‘গ্রুপ ডিসকাশন’ এবং তারপরেই পার্সোনাল ইন্টারভিউ। এই তিনটি ধাপ পেরোলে তিন মাসের প্রশিক্ষণ শিবিরে ডাক পাবেন। স্বল্পমেয়াদি ও অন্যান্য কোর্সগুলিতে ভর্তির নিয়ম প্রায় একইরকম।
যেসব বিষয়ে প্রশিক্ষণ: যাত্রী নিরাপত্তা, ফার্স্ট এড ট্রেনিং, গ্রুমিং, স্পিকিং ইংলিশ, বিজনেস ইংলিশ, এয়ারপোর্ট অ্যান্ড ইন-ফ্লাইট প্র্যাক্টিক্যাল ওরিয়েন্টেশন, সুইমিং ইত্যাদি।
আরও পড়ুন-সিরিজ জিতে ড্রেসিংরুমে ভাষণ অধিনায়ক রোহিতের মানসিকতায় বদল ঘটেছে বিশ্বকাপের পর
এ ছাড়াও আছে বিশেষ কিছু বিষয়: গ্রাউন্ড অপারেশনস, এয়ারলাইন ম্যানেজমেন্ট, এয়ারলাইন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, এয়ারলাইন চেকিং, কেবিন ক্রু ট্রেনিং। এই বিষয়গুলি নিয়েও পড়াশোনা করা যায়।
কোথায় প্রশিক্ষণ: কলকাতায় পড়াশোনা করতে হলে ফ্লাইং ক্যাটস (মিন্টো পার্ক), ফ্র্যাঙ্কলিন ইনস্টিটিউট (সল্টলেক বিধাননগর), ফ্র্যাঙ্কফিন অ্যাভিয়েশন (গড়িয়াহাট, ক্যামাক স্ট্রিট, বারাকপুর), অ্যাভালন অ্যাকাডেমি (ক্যামাক স্ট্রিট), হরাইজন অ্যাভিয়েশন (গড়িয়াহাট) প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।
আরও পড়ুন-ভিক্টোরিয়ায় টাকা তছরুপ
ভারতের অন্যান্য প্রায় প্রতিটি শহরেই এয়ার হোস্টেস নিয়ে পড়াশোনার প্রতিষ্ঠান আছে। এরকমই কয়েকটি হল নয়াদিল্লির এয়ার হোস্টেস অ্যাকাডেমি, ইনফ্লাইট এয়ার হোস্টেস ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, ইনস্টিটিউট ফর কেরিয়ার স্টাডিজ, বেঙ্গালুরুর এয়ার হোস্টেস অ্যাকাডেমি, মু্ম্বইয়ের ফ্র্যাঙ্কলিন ইনস্টিটিউট অফ এয়ার হোস্টেস ট্রেনিং প্রভৃতি।
চাকরির বাজার: পেশার প্রতি মুহূর্তেই চ্যালেঞ্জ। দেশি-বিদেশি সংস্থায় চাকরির সুযোগ। বেতনও ভাল। পঁচিশ-ত্রিশ হাজার টাকা বেতন পান এয়ার হোস্টেস/ ফ্লাইট স্টুয়ার্ডরা। এছাড়া আছে বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ইত্যাদি সংক্রান্ত কিছু ভাতা। বাইরে গেলে অতিরিক্ত ভাতা। পরিবারের লোকজনের জন্য সস্তাদরে অথবা বিনাপয়সায় বিমানযাত্রার সুযোগ। তবে এসব ব্যাপারে একেকটি বিমান সংস্থার একেকরকম নিয়ম।
দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতার নিরিখে এয়ার হোস্টেস/ ফ্লাইট স্টুয়ার্ডরা পদোন্নতি পেয়ে সিনিয়র ফ্লাইট অ্যাটেন্ড্যান্ট থেকে নিয়ে হেড অ্যাটেন্ড্যান্টও হতে পারেন।
আরও পড়ুন-দিঘাগামী বাস উল্টে জখম ৪০ যাত্রী
পার্সার/ চিফ পার্সার: এয়ার হোস্টেসের চাকরির কিছু অভিজ্ঞতা এবং বিশেষ প্রশিক্ষণ। তাহলেই পদোন্নতি পার্সার পদে। এয়ার হোস্টেস থেকে পার্সার হলেই দায়িত্ব বাড়ার পাশাপাশি বেতন বেড়ে ষাট-সত্তর হাজার টাকাও হতে পারে। বিদেশি সংস্থায় কাজ মিললে টাকার অঙ্ক আরও লোভনীয়।
কোথায় চাকরি পেতে পারেন: জাতীয় স্তরের সংবাদপত্রগুলিতে বিভিন্ন বিমান সংস্থা এয়ার হোস্টেস চেয়ে বিজ্ঞপ্তি দেয়। আবেদনকারীদের সঙ্গে সংস্থার নির্বাচনকারীরা সরাসরি মুখোমুখি হয়ে প্রথম দফার কাজটি সেরে ফেলেন। এরপর যোগ্য প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষায় বসতে হয়। অবজেক্টিভ টাইপের ওই পরীক্ষায় বিভিন্ন বিষয়ে সাধারণ জ্ঞান যাচাই হয়। তৃতীয় দফায় থাকে গ্রুপ ডিসকাশন। আবেদনকারীদের নিজেদের মধ্যে কতাবার্তা বলার সূত্র ধরে তাঁদের মানসিকতা বিচার করা হয়। চূড়ান্ত পর্বে ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকার।
আরও পড়ুন-সম্পাদক হয়ে আমি সম্মানিত
নির্বাচিত প্রার্থীদের জন্য সংস্থাগুলি দু-তিন মাসের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে। সাধারণ কিছু প্রশিক্ষণের পাশাপাশি প্রযুক্তিগত কিছু শিক্ষাও দেওয়া হয়। এরপর কিছুদিনের জন্য তাঁরা শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করেন। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে তাঁদের বাণিজ্যিক ফ্লাইটে পাঠানো হয়।