আশা পূরণের গল্প তিনি আঁকেননি। স্বপ্ন বোনার উল কাঁটা ধরা ছিল না তাঁর হাতে। রান্নাঘরের কাজ সারতে সারতে আঁচলে হাত মোছার মতো স্বাভাবিকতায় তিনিই লিখে গিয়েছেন মেয়ে মনের ছবি। গরাদের ফাঁক দিয়ে অবহেলার চাদরে উজ্জ্বল রোদ পড়ার কথা। আর তাতেই, ভাজার পাতে কাসুন্দি ঢালার মতো করে সহজ প্যাটার্নে জমে উঠেছে সাহিত্যের বুনোট।
এটাই আশাপূর্ণা দেবী (Ashapurna Devi)।
মায়েদের মেয়ে-মন বুঝতে, চাল ধোয়া হাতে হলুদ বাটার রং আর গন্ধ পেতে, আজও তাই বারবার দাঁড়াতে হয় তাঁর উপন্যাসের চৌকাঠে।
বৃন্দাবন বসু লেনের ভাড়াবাড়ি। রক্ষণশীল যৌথ পরিবারের পুরুষতান্ত্রিক দাপট। সেখানে ‘স্কুলে পড়লেই… মেয়েরা ফ্যাশনি আর বাচাল হয়ে উঠবে’, এমন বিশ্বাসের অটল অবস্থান। সেই আবহের ঘেরাটোপ থেকে বেরিয়ে যখন বাবা হরেন্দ্রনাথ গুপ্ত ১৬৬, আপার সার্কুলার রোডের বাড়িতে এলেন, তখন আশাপূর্ণার বয়স মোটে পাঁচ। সে বাড়িতে এসেই আশাপূর্ণা আর তাঁর দিদি সোজা ছাদে উঠে গিয়ে চেঁচিয়ে উঠেছিলেন, ‘‘এ বাড়ির আকাশটা কী নীল!’’
আকাশ যতই আসমানি আকর্ষণ নিয়ে উড়তে ডাকুক, এতদিন ধরে খাঁচাবন্দি পাখির জড়তা সহজে কাটে না। তার ছোট্ট ডানার স্থিতি জাড্যের মোচন হয় না সহজে। তাই, প্রথম প্রথম, আশাপূর্ণার (Ashapurna Devi) প্রাপ্তবয়স্কদের উপযোগী সাহিত্য রচনা নিয়ে দ্বিধা ছিল বিস্তর। তাঁর ধারণা ছিল “বড়দের জন্য লেখা মানেই তো- প্রেমট্রেম, অর্থাৎ নরনারী ঘটিত ব্যাপার। তার মানেই তো আবেগ অস্থিরতা রোমান্টিক সিন-ফিন এসে যাওয়া।’’ এই ধারণা থেকে উদ্ভূত আশঙ্কা, ‘সেই বন্ধু গুরুজনদের চোখে পড়বে’। অতএব সিদ্ধান্ত, ‘না বাবা, কাজ নেই’। প্রাথমিক সিদ্ধান্তে নিজেকে বেঁধে রাখার চিন্তা।
এসব শঙ্কা সংকোচ পেরিয়ে বাইরের জগতে পা রাখতেই লেগে গিয়েছিল অনেকদিন। ‘গৃহ গণ্ডির বাইরে, পারিবারিক আত্মীয় সমাজের বাইরে’ পা রাখলেন যখন, তখন ‘সরস্বতীর স্টেনোগ্রাফারে’র বয়স ৩৮।
অবরোধবাসিনী অন্তঃপুরিকাকে নিয়ে ততদিনে সাহিত্যের উঠোনে বিস্তর অনুমান আর বিভ্রান্তি। ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’র ‘রবিবাসরীয়’ বিভাগের সম্পাদনা করতেন তখন নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। ১৪০২ বঙ্গাব্দের ভাদ্র সংখ্যা, ‘নবকল্লোল’ পত্রিকার ৩৬তম বর্ষের ৫ম সংখ্যা। সেখানে নীরেন্দ্রনাথ জানিয়েছেন আপন অভিজ্ঞতার কথা।
“শুনেছিলুম আশাপূর্ণা একেবারে ষোলোআনা অন্তঃপুরিকা, পত্রিকা আফিসে আসা তো দূরের কথা, বাড়ির বাইরে এক পা বাড়াবার অভ্যাস নাকি তার নেই। এই শেষের কথা বিশ্বাস হতো না। সত্যি বলতে কি এমনও সন্দেহ হয় যে লেখাগুলি আসলে ওই (নেপথ্যচারিণী লেখিকার রচনাগুলো তখন প্রকাশক/সম্পাদকের দপ্তরে পৌঁছাত তাঁর স্বামী কালিদাস গুপ্তের মাধ্যমে) ভদ্রলোকেরই, ছদ্মনামে তাবৎ গল্প তিনিই লিখে যাচ্ছেন।’’
অপরিচিতির সেই আগল ভেঙে আশাপূর্ণাকে (Ashapurna Devi) বহির্বিশ্বে টেনে আনল ‘প্রথম প্রতিশ্রুতি’। প্রকাশকাল ১৯৬৪। এর বছর কয়েক বাদে তিনি লিখলেন ‘সুবর্ণলতা’। ১৯৬৭-তে প্রকাশিত হল তা। এর ঠিক সাত বছর পর, ১৯৭৪-এ এল ‘বকুলকথা’। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে বৈষম্যের শিকার নারী সমাজের অধিকারহীনতার যে প্রশ্নটি আশাপূর্ণা দেবীকে অহরহ উৎকণ্ঠিত করত, সেগুলোকেই তিনি চূড়ান্ত রূপ দিলেন এই ট্রিলজিতে। সত্যবতী, সুবর্ণলতা আর বকুল, এই ত্রয়ীর প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতাই অবরোধবাসিনীর মুক্তি চেতনাকে বাচিক অবয়ব দান করেছে।
সত্যি কথা বলতে কী, ‘প্রথম প্রতিশ্রুতি’ কিংবা ‘বকুলকথা’ নয়, ‘সুবর্ণলতা’র সুবাদেই আমার প্রথম আশাপূর্ণা দেবীর পাঠক হওয়া। ‘বারান্দার ধারে চমৎকার সুন্দর একখানি ঘর। বড় বড় জানলা, লাল টুকটুকে মেঝে, সেই ঘরটিকে মনের মতো সাজাবে সুবর্ণ।’ এই স্বপ্ন জড়ানো লাইনগুলো পড়েই আমি সুবর্ণলতাকে প্রথম চিনেছিলাম। তিনপেড়ে ডুরে শাড়ি আর কাঁচপোকার টিপ পরা সুবর্ণ। তাদের নতুন তৈরি হওয়া দর্জিপাড়ার বাড়িটিতে। আমাদেরও তখন বেলেঘাটায় বড় বড় জানলা আর লাল টুকটুকে মেঝেওয়ালা এক তলা বাড়ি।
নতুন বাড়ির গৃহপ্রবেশের দিন। সোনার কাঠির জাদুছোঁয়ায় স্বপ্নপুরীর রোমাঞ্চ ছুঁয়েছে সুবর্ণর কিশোরী মন। বারান্দা দেওয়া ঘরের খোঁজে সে একছুটে চলে যায় ওপরতলায়। তারপর কেবল এঘর ওঘর ঘুরে দিশাহারা। ঘুরপাক খেতে খেতে এ দরজা আর ও দরজা পেরোনো। শেষে একই ঘরে ঘুরে ঘুরে ফিরে আসা। বিমূঢ় ক্লান্তিতে সুবর্ণ বুঝে পায় না, কোন দরজা দিয়ে বেরোতে পারলে সে তার পরম চাওয়ার চৌকাঠে পৌঁছাতে পারবে। স্বামী প্রবোধের কাছে সে তো আর কিছু চায়নি। চেয়েছিল স্রেফ একটা বারান্দা দেওয়া ঘর। আবদেরে গলায় ওইটুকু প্রতিশ্রুতি আদায় করেছিল সে। কিন্তু বারান্দার খোঁজ মেলে না গৃহপ্রবেশের দিনটাতেই। সদ্য নির্মিত ঘরগুলোতে উগ্র চুনের গন্ধ। সেগুলোর মধ্যেই ঘুরপাক খায় সুবর্ণলতা। খোঁজ চালায় তার গোপন রহস্যে ভরা পরম ঐশ্বর্যলোকের। যত খোঁজে তত এক খাঁ খাঁ করা শূন্যতা গিলে খায় তাকে। শূন্যতার দেওয়ালে সুবর্ণর সব চাওয়াগুলো ঠোক্কর খেয়ে ফিরে আসে। স্বামীর কপটতার ছুরিতে স্বপ্নের অপ্রত্যাশিত অপমৃত্যু ভেঙে চুরমার করে দেয় সুবর্ণকে। শেষে দুহাতে মুখ ঢেকে বসে পড়ে সুবর্ণ। বলে, “তুমি আমায় ঠকালে কেন?” সেই জানতে চাওয়ায় আমি আমার মায়ের গলা শুনতে পাই। বাবা সেবার কথা দিয়েও মাকে কামাখ্যা কিংবা রাজগীরে নিয়ে যায়নি। আমার মায়ের ওই দুটো জায়গায় যাওয়ার ইচ্ছে ছিল খুব।
আরও পড়ুন- নতুন দুইয়ে বছর শুরু
সুবর্ণর চাওয়া, না-পাওয়া, এসব ভাবায়নি প্রবোধকে। এসব কোনওদিনই ভাবায় না প্রবোধদের। প্রবোধের কাছে সুবর্ণর বারান্দা চাওয়ার অর্থ ‘কেবল বিকেলবেলা বাহার দিয়ে দাঁড়ানো’। তাই সুবর্ণ যখন প্রবল অভিমানে নতুন বাড়ির পিছন দিককার উত্তর-পশ্চিম কোণের সবচেয়ে নিকৃষ্ট প্রায়-অন্ধকার ঘরটাকে নিজের জন্য বেছে নেয়, তখন প্রবোধ সেই মূক প্রতিবাদকে বুঝতে পারে না। ক্ষুব্ধ হয়। আর রাতে জৈবিক সুখে তৃপ্ত হয়ে নাক ডাকে। ঘরের বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। আর সেই দমবন্ধ করা আবহেই সুবর্ণর কল্পনারা ডানা মেলে।
“যদি রাত পোহালেই দেখতে পেত সুবর্ণ, ন-বছরের সুবর্ণ, তাদের সেই মুক্তারাম স্ট্রিটের বাড়ি থেকে স্কুলে যাচ্ছে বই খাতা নিয়ে।’’
এই স্কুলে না-যাওয়াটা আশাপূর্ণা দেবীকে তাড়িয়ে নিয়ে বেরিয়েছে স্থগিত অসম্পূর্ণ স্বপ্নের মতো। আশাপূর্ণা (Ashapurna Devi) কেবল তাঁর মাতৃভাষাতেই পড়তে লিখতে পারতেন। বিদ্যালয়ে প্রথাগত শিক্ষা লাভের সুযোগ তিনি কোনওদিনই পাননি। তাই বিদেশি সাহিত্যের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগের সুতো ছিল কেবল বাংলা অনুবাদ। তাতেই তিনি তাঁর রচনার মূল উপজীব্য খুঁজে নিয়েছিলেন। উপলব্ধি করেছিলেন, পরিবেশ-দেশ-কাল-পাত্র-পাত্রী যাই হোক না কেন, ভেতর ভেতর সকলেই এক। তবু, তবুও, অন্তঃসলিলা ছিল একটা আক্ষেপ। আমৃত্যু।
“ইসকুল-কলেজে পড়লে আমি অন্তত এতদিনে বিদূষী হয়ে যেতাম। কত বিষয়ে পড়তে পারতাম, অভিজ্ঞতার ঝুলি এত ফাঁকা থাকত না। এই দুঃখ ঘোচবার নয়।’’
এই আক্ষেপটাও আমার চেনা। আমার গ্র্যাজুয়েট মায়ের সঙ্গে তুলনা করতে বসে এই অতৃপ্তিটাই বারবার উঠে আসত আমার বই-পাগল, রবীন্দ্রপ্রেমী মেজ জেঠিমার কথায়। যৌথ একান্নবর্তিতা ভেঙে তিনিই প্রথম মেজ জ্যাঠাকে নিয়ে তাঁর কর্মস্থল বাটানগরে আলাদা সংসার পেতেছিলেন।
সিমন দ্য বোভেয়ারের লেখা পড়ার সুযোগ মেজ জেঠিমার কখনও ঘটেনি। তাই-ই বোধহয় তিনি কখনও বলেননি, “One is not born a woman, but rather becomes one.” আশাপূর্ণা (Ashapurna Devi) ‘The Second Sex’ অনুবাদে পড়ার সুযোগ পেয়েছিলেন কি না জানি না। তাই তাঁকেও কখনও সরাসরি লিখতে দেখিনি, কেউ মেয়েমানুষ হয়ে জন্মায় না, বরং মেয়েমানুষ হয়ে যায়।
তবে তাঁর তাবৎ সৃষ্টিতে অনুচ্চারিত হয়েও স্পষ্ট এই নারী নির্মাণের চিত্র, সমাজের লিঙ্গ গড়ার কেরামতি। সময় ও সমাজের যুগ্ম কলতানকে কেন আসন পেতে দিয়েছেন আপন সৃষ্টির উঠোনে? সে প্রশ্নের উত্তরেও আশাপূর্ণা নির্দ্বিধ ‘সুবর্ণলতা’র পাতায়। তিনি লিখেছেন, “কবিরা শিল্পীরা নিঃশব্দে আপন মনে অচলায়তন ভাঙার কাজ করে চলে… শিকল দেবীর পুজোর বেদীতে শাবল গাঁইতির ঘা পড়ে, তার মধ্যে দিয়ে সমাজের মন অবিরাম ভাঙাগড়ার পথে দ্রুত ধাবিত হতে থাকে।’’ গেরস্থালীর লেখিকা। তাই, তাঁর চরিত্র সুবর্ণলতা স্বামী সংসারের বিরুদ্ধে নারী শ্রমশক্তির নিজস্ব ক্ষোভটাকে অগোপন করে অনিবার্য উচ্চারণে। বলে, “সব চাকরিরই তো কিছু না কিছু ছুটি পাওনা হয়, তোমার সংসারে এই ছত্রিশ বছর দাসত্ব করছি আমি, দুটো মাসও কি ছুটি পাওনা হয়নি আমার?” আমার মায়ের মুখেও এই জিজ্ঞাসার প্রায় অভিন্ন উচ্চারণ শুনেছি আমি।
সুবর্ণলতার শাশুড়ি অহরহ আওড়েছেন এক চিরকেলে বুলি। “বেটাছেলের আবার কিছুতে দোষ আছে না কি? মেয়েমানুষকেই সব কিছু মেনে চলতে হয়।’’ তখন বড় নন্দাই কেদারনাথের কাছে সমুদ্র দর্শনের বাসনার কথা বলে ফেলার জন্য সুবর্ণকে তার স্বামী প্রবোধের প্রবল নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। প্রবোধ সুবর্ণর মাথাটা দেওয়ালে ঠুকে দিয়ে ফতোয়া জারি করেছে, “বল, আর তুই ওই বুড়োর সঙ্গে কথা কইবি না! প্রতিজ্ঞা কর।’’ সুবর্ণলতা প্রবোধকে আঁচড়েছে, কামড়েছে। অথচ সে রাতেও প্রবোধের জৈবিক চাহিদা মেটাতে বাধ্য হয়েছে সুবর্ণলতা। স্ত্রীর শরীরের ওপর নিজের দখলদারি ছাড়েনি প্রবোধ। আর সুবর্ণলতার চিন্তায় ঘুরপাক খেয়েছে একটাই কথা, “কী উপায় আছে এর থেকে নিষ্কৃতি পাবার, মরে হাড় জুড়ানো ছাড়া?” বেশি খরচ করে ফেলেছেন মুক্তকেশী। সুবর্ণলতার শাশুড়ি। প্রবোধের মা। মেয়ে জামাইয়ের আপ্যায়ন করতে গিয়ে দেদার খরচ করেছেন দু’হাতে। তারপর সংসার সামলাতে সুবর্ণকে বাপের বাড়িতে পাঠানোর নিদান দিয়েছেন। প্রতিবাদে মুখর হয়েছে সুবর্ণলতা। বলেছে, “বাবা যখন উদ্দিশ করেছেন, তখন দূর দূর করে খেদিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর এখন নিজের সংসারে ভাতের আকাল হয়েছে বলে ঠেলে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’’ এমন ঠোঁটকাটা বউকে বাড়িতে রাখতে চায়নি মুক্তকেশী মাতৃভক্ত ছেলেরাও। সুবর্ণকে যেতে হয়েছে বাপের বাড়িতে। সেখানেও ঠোক্কর খেয়েছে তার ভাবনা। স্বামীর সংসার থেকে নির্বাসিত সুবর্ণলতা ‘খোলা ঘোমটায়’ ‘খোলা চুলে’ পিতৃগৃহের ছাদে ছুটে যেতে পেরেছে, সেই মেয়েবেলার মতো। কিন্তু ধাক্কা খেয়েছে তার বাপের বাড়িতে থাকার ইচ্ছে। কেবল মিষ্টি মুখ করিয়েই বাবা মা মেয়েকে বিদায় করতে চেয়েছেন। তখন নিজেই নিজের মাথাটা দেওয়ালে ঠুকতে ঠুকতে সুবর্ণ জানতে চেয়েছে, “কেন? কেন তোমরা সবাই মিলে আমাকে অপমান করবে? কেন? কেন?”
ফের দর্জিপাড়ার শ্বশুরবাড়িতেই ফিরতে হয়েছে সুবর্ণলতাকে। আফিম খেয়ে আত্মহত্যা করতে চায় সুবর্ণ। নুনজল খাইয়ে বমি করিয়ে তাকে প্রাণে বাঁচায় স্বামী-শাশুড়ি-সহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন। তবে এজন্য তাকে জীবনভর অনেক লাঞ্ছনা গঞ্জনা মুখ বুজে সইতে হয়। সুবর্ণ না-মরতে পেরে উপলব্ধি করে, “মরণ এত সহজ হলে মানবহৃদয় ইতিহাসের রক্তাক্ত অধ্যায়গুলো তো লেখাই হত না!”
জীবনের ঘাটে ঘাটে ঘুরে, নিস্তেজ আশা আর প্রতিবাদহীন যাপনকে নিজের করে নিয়ে, সুবর্ণলতা, আশাপূর্ণার (Ashapurna Devi) মানসকন্যা কিংবা তিনি নিজেই, ভাবে, তার মতো ‘মায়ে তাড়ানো বাপে খেদানো’ মেয়ের তেজ ফলানোর মতো কোনও পতাকা নেই।
‘সুবর্ণলতা’ উপন্যাসের শেষ অংশে সুবর্ণ কন্যা বকুল প্রতিজ্ঞা করে, “মা, মাগো! তোমার পুড়ে যাওয়া, হারিয়ে যাওয়া, লেখা না-লেখা সব আমি খুঁজে বার করবো। সব কথা আমি নতুন করে লিখবো। দিনের আলোর পৃথিবীকে জানিয়ে যাব অন্ধকারের বোবা যন্ত্রণার ইতিহাস।’’
আর সে কথা পড়তে পড়তে মনে পড়ে যায়, আশাপূর্ণা দেবী কোনওদিনই আমার ফেভারিট লেখক নন। আমার স্ত্রী-কন্যাদেরও নন।
কিন্তু তিনিই আমার মা-জেঠিমা-কাকিমাদের সবচেয়ে পছন্দের লেখিকা ছিলেন।
শুরুতে ভুল বলেছিলাম। আশা পূরণের গল্প তিনি না আঁকলেও স্বপ্ন বোনার উলকাঁটা তাঁর হাতেই ধরা ছিল। আজও আছে।