চাঁদ-নারী

চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণের সঙ্গে সঙ্গে ইতিহাস গড়েছে ভারতের চন্দ্রযান-৩। অগ্নিপরীক্ষায় সফল ইসরো। সাফল্যের নেপথ্যে রয়েছেন একদল মহাকাশবিজ্ঞানী ও প্রকৌশলী নারী। এই মিশনের পাশাপাশি তাঁরা অংশ নিয়েছেন বিভিন্ন মিশনে। পালন করেছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। চন্দ্রযানের পাশাপাশি নারীদের উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে আদিত্য এল-১ মিশনেও। কয়েকজন সফল মহাকাশবিজ্ঞানী ও প্রকৌশলী নারীর কথায় অংশুমান চক্রবর্তী

Must read

ঋতু কারিধাল শ্রীবাস্তব
ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো-র অভিজ্ঞ বিজ্ঞানী ঋতু কারিধাল শ্রীবাস্তব। চাঁদের বুকে যে নতুন অধ্যয়ের সূচনা করেছে ভারত, তার নেপথ্যনায়িকা তিনি। কারণ চন্দ্রযান-৩ (chandrayaan-3) অভিযান সাফল্য পেয়েছে তাঁর নেতৃত্বে। এই মুহূর্তে তাঁকে বলা হচ্ছে ভারতের ‘রকেট উওম্যান’। এর আগে মিশন মঙ্গলযানেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল তাঁর।
ঋতু কারিধাল শ্রীবাস্তবের জন্ম উত্তরপ্রদেশের লখনউয়ে। ১৯৯৬ সালে পদার্থবিদ্যায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন লখনউ ইউনিভার্সিটি থেকে। এর পর বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্সের ডিপার্টমেন্ট অফ অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে এমটেক করেন।
ছোট থেকেই ছিলেন মেধাবী ছাত্রী। অল্পবয়স থেকেই মহাকাশের প্রতি অমোঘ আকর্ষণ ছিল তাঁর। স্কুলে পড়ার সময় ইসরো এবং আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা-র গবেষণা এবং সেই নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন সংগ্রহ করতেন।
১৯৯৭ সালের নভেম্বর মাসে ইসরো-য় যোগ দেন। ইসরো-র একাধিক গুরুত্বপূর্ণ অভিযানে শামিল থেকেছেন। অপারেশনস ডিরেক্টরের দায়িত্ব সামলেছেন। মঙ্গলযান অভিযানের সময় ইসরো-র ডেপুটি অপারেশনস ডিরেক্টরের দায়িত্ব পান। শামিল ছিলেন ‘চন্দ্রযান-১’, ‘চন্দ্রযান-২’ অভিযানেও। দেশ-বিদেশের ২০টিরও বেশি পত্র-পত্রিকায় গবেষণাপত্র লিখেছেন।
২০০৭ সালে ইয়ং সায়েন্টিস্ট অ্যাওয়ার্ড পান। তাঁর হাতে পুরস্কার তুলে দেন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি ড. এপিজে আবদুল কালাম। ২০১৫ সালে মঙ্গলযান অভিযানের জন্য ইসরো টিম অ্যাওয়ার্ড তাঁর হাতে ওঠে। ২০১৭ সালে উওম্যান অ্যাচিভার্স ইন অ্যারোস্পেস সম্মানে ভূষিত হন। স্বামী অবিনাশ শ্রীবাস্তব এবং দুই সন্তান আদিত্য এবং আনিশাকে নিয়ে সংসারজীবন ৪৮ বছর বয়সি ঋতুর।

কল্পনা কালাহাস্তি
ভারতের চন্দ্রযানের সাফল্যের পিছনে যে ৩০ শতাংশ মহিলা বিজ্ঞানী কাজ করেছেন, সেই দলের নেতৃত্বে ছিলেন মুথাইয়া বনিতা। জন্মসূত্রে চেন্নাইয়ের মেয়ে। ইসরোর সঙ্গে কাজ করছেন গত ৩২ বছর ধরে। শুরুতে যোগ দিয়েছিলেন জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে। সেই সময় হার্ডওয়্যার বানাতেন। ডেভেলপিংয়ের কাজ দেখতেন। তারপর উন্নীত হন ম্যানেজারের পদে।
প্রথমদিকে অবশ্য প্রোজেক্ট ডিরেক্টরের দায়িত্ব নিতে খানিকটা দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন। চন্দ্রযান-১-এর প্রোজেক্ট ডিরেক্টর এম আন্নাদুরাই তাঁকে রাজি করান। মুথাইয়া বনিতা যখন অ্যাসোসিয়েট ডিরেক্টর পদে ছিলেন, সেই সময় তাঁর সঙ্গে কাজ করেছিলেন আন্নাদুরাই। সিস্টেমস ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে মুথাইয়া বনিতার গভীর জ্ঞান আর দক্ষতা যে অপরিহার্য, সেই কথা ভাল করেই বুঝেছিলেন আন্নাদুরাই। তার সঙ্গে এ-ও বুঝেছিলেন, চন্দ্রযান-২-এর সাফল্যের জন্য বনিতার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানো দরকার।
ভারতের রিমোট সেন্সিং স্যাটেলাইটের ডেটা অপারেশন নিয়েও কাজ করেছেন মুথাইয়া বনিতা। ২০০৬ সালে অ্যাস্ট্রোনটিকাল সোসাইটি অফ ইন্ডিয়ার পক্ষ থেকে সেরা মহিলা বিজ্ঞানীর পুরস্কার পেয়েছেন। ২০১৩-এর নভেম্বরে মঙ্গলযান উৎক্ষেপণ ও তার সাফল্যেও বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিলেন ৫৯ বছর বয়সি এই বিজ্ঞানী।

মুথাইয়া বনিতা
চন্দ্রযান-৩ (chandrayaan-3) অভিযানে সাফল্যের পিছনে যে ক’জন মহিলার অবদান রয়েছে, তাঁদের মধ্যে অন্যতমা ভি আর ললিথম্বিকা। তিনি ইসরোর অ্যাডভান্সড লঞ্চার টেকনোলজির বিশেষজ্ঞ। অংশ নিয়েছেন ইসরো পরিচালিত ১০০টিরও বেশি অভিযানে। ইসরোর ‘গগনযান’ অভিযানেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। যে অভিযানের উদ্দেশ্য ২০২৪ সালে ভারতীয় মহাকাশচারীদের মহাকাশের গভীরে পাঠানো।
জন্ম কেরলের তিরুঅনন্তপুরমে। ছোট থেকেই ছিলেন অসম্ভব মেধাবী, ক্ষুরধার বুদ্ধিসম্পন্না। চাইতেন অন্যভাবে নিজেকে প্রকাশ করতে। ইসরোয় কাজ করার আগে দায়িত্ব পালন করেছেন বিক্রম সারাভাই স্পেস সেন্টারে। ডেপুটি ডিরেক্টরের পদে।
৬১ বছর বয়সি এই প্রকৌশলী অ্যাডভান্সড লঞ্চার টেকনোলজির একজন বিশেষজ্ঞ। তিনি অগমেন্টেড স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকল (এএসএলভি), পোলার স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকল (পিএসএলভি) এবং জিওসিঙ্ক্রোনাস স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকল (জিএসএলভি) এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্য লঞ্চ ভেহিকল (আরএলভি)-সহ বিভিন্ন ইসরো রকেটের সঙ্গে কাজ করেছেন।
লঞ্চ ভেহিকল টেকনোলজিতে তুমুল প্রজ্ঞার কারণে তাঁকে ‘অ্যাস্ট্রোনটিক্যাল সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া অ্যাওয়ার্ড অফ এক্সিলেন্স’ সম্মানে ভূষিত করা হয়েছে। সেইসঙ্গে তাঁর অর্জিত পুরস্কারের তালিকায় আছে স্পেস গোল্ড মেডেল, ইসরো ইন্ডিভিজুয়াল মেরিট, ইসরো পারফরম্যান্স এক্সিলেন্স পুরস্কার ও অ্যাস্ট্রোনটিক্যাল সোসাইটি অব ইন্ডিয়া পুরস্কার।

ভি আর ললিথম্বিকা
বেঙ্গালুরুতে জন্ম ইসরোর মহাকাশ প্রকৌশলী কল্পনা কালাহাস্তির। তবে পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে আছে নিবিড় যোগ। তিনি পড়াশোনা করেছেন খড়্গপুর আইআইটি থেকে। তামিলনাড়ুর ম্যাড্রাস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইলেকট্রনিকে বি-টেক করেন।
ছোটবেলায় স্বপ্ন দেখতেন ইসরোয় যোগ দেবেন। স্বপ্ন সফল হয়েছে মেধাবী ছাত্রীটির। ২০০০ সালে কঠিন নির্বাচন পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে তিনি ইসরোয় যোগ দেন। সতীশ ধাওয়ান স্পেশ সেন্টারে রেডার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে। তাঁর দায়িত্ব ছিল স্যাটেলাইটের অবস্থান সুনির্দিষ্ট করার জন্য প্রপালশান সিস্টেম তৈরি করা। এ ছাড়াও তাঁর বিশেষত্ব ছিল পৃথিবীর পরিষ্কার ছবি তোলার জন্য উন্নত ইমেজিং সরঞ্জামের নকশা প্রণয়নে। ৪৩ বছর বয়সি এই মহাকাশ প্রকৌশলী ধীরে ধীরে মম এবং চন্দ্রযান-২-এর মতো যুগান্তকারী প্রকল্পগুলোর অংশ হয়ে ওঠেন। ২০১৯ সালে তাঁকে চন্দ্রযান-৩ (chandrayaan-3) মিশনের ডেপুটি প্রোজেক্ট ডিরেক্টর হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। তিনি বিক্রমের সিস্টেমের নকশা তৈরি এবং এর কর্মকাণ্ড সুস্পষ্ট করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। ২০১৯-এ পেয়েছেন ইসরো টিম এক্সেলেন্স অ্যাওয়ার্ড।

আরও পড়ুন- ড্রিম গার্ল টু

নন্দিনী হরিনাথ
একটি জনপ্রিয় টেলিভিশন ধারাবাহিক স্টার ট্রেক। ধারাবাহিকটি স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছিলেন অনেককেই। তাঁদের মধ্যে অন্যতম নন্দিনী হরিনাথ। জন্ম তামিলনাড়ুতে। মা একজন গণিতের শিক্ষক এবং বাবা একজন ইঞ্জিনিয়ার। মেধাবী ছাত্রী নন্দিনী বরাবরই পেয়েছেন পরিবারের সমর্থন।
দুই দশক আগে তিনি ইসরোয় যোগ দেন। ইসরোর স্যাটেলাইট সেন্টারের একজন রকেট বিজ্ঞানী হিসেবে প্রায় ১৪টি মিশনে অংশ নিয়েছেন। বিভিন্ন প্রকল্পের ব্যবস্থাপক ও মিশন ডিজাইনার হিসেবে কাজ করেছেন।
তাঁর সেরা অবদান ছিল মম মিশন। মঙ্গল অভিযান। তিনি ডেপুটি অপারেশন ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন। বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন হরিনাথ শর্মার সঙ্গে। দুই কন্যার জননী নন্দিনী। ভালবাসেন গান শুনতে, বই পড়তে।

অনুরাধা টি কে
অনুরাধা টি কে একজন গুরুত্বপূর্ণ ভারতীয় বিজ্ঞানী। ১৯৬১ সালে কর্নাটকের বেঙ্গালুরুতে জন্মগ্রহণ করেন। তড়িৎবিদ্যা বিষয়ে স্নাতক হন। ১৯৮২ সাল থেকে ইসরোর সঙ্গে যুক্ত। তিনি জিস্যাট-১০ এবং জিস্যাট-১২-এর মতো কৃত্রিম উপগ্রহ নিক্ষেপনের কাজে নিয়োজিত ছিলেন। ইসরোর প্রথম কোনও নারী হিসেবে কৃত্রিম উপগ্রহ প্রোজেক্টের পরিচালক হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন।
৬৩ বছর বয়সি অনুরাধা ইসরোর সব থেকে বায়োজ্যেষ্ঠ নারী-বিজ্ঞানী। তাঁর সেরা কাজ ছিল হাসান কন্ট্রোল ফ্যাসিলিটি থেকে সফলভাবে জিস্যাট-১২-কে চূড়ান্ত কক্ষপথে চালিত করা। এটি সম্ভব হয়েছিল তাঁর অসামান্য পারদর্শিতায়।
২০০৩ সালে মহাকাশ বিজ্ঞানে পরিষেবার জন্য ভারতের অ্যাস্ট্রোনটিক্যাল সোসাইটি (এএসআই) তাঁকে স্পেস গোল্ড মেডেল প্রদান করে। এ ছাড়া নিজের কর্মক্ষেত্রেও তাঁকে তাঁর অসামান্য অবদানের জন্য দু’বার পুরস্কৃত করা হয়।

মিনাল রোহিত
রাজস্থানের কন্যা মিনাল রোহিত। শৈশবে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। কিন্তু টিভিতে একটি স্পেস শো তাঁর মনের বদল ঘটায়। ছাত্রী হিসেবে ছিলেন মেধাবী। ১৯৯৯ সালে গুজরাত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হন।
ইসরোয় স্যাটেলাইট কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন। কাজ করতে যান স্পেস অ্যাপ্লিকেশন সেন্টারে। বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ মিশনে অংশ নিয়েছেন। মম মিশনে মঙ্গলযান স্পেস প্রোব মঙ্গলে পাঠাতে সাহায্য করেছিলেন। ৫০০ জন বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীর মধ্য থেকে ১০ জনকে বাছাই করা হয়েছিল মম মিশনের জন্য। মিনাল রোহিত ছিলেন সেই ১০ জনের একজন।
২০১৩ সালে ভারত প্রথম চেষ্টাতেই একটি উপগ্রহ দিয়ে মঙ্গলগ্রহ প্রদক্ষিণকারী প্রথম দেশ হওয়ার বিরল সম্মান অর্জন করে। এর নেপথ্যে ছিলেন এই মিনাল রোহিত। ইসরোর টেলিমেডিসিন প্রোগ্রামে অবদানের জন্য ২০০৭ সালে মিনাল রোহিত ইসরোর তরুণ বিজ্ঞানী মেরিট পুরস্কার পান। ২০১৩ সালে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল স্যাটেলাইট সিস্টেমে অবদানের জন্য জিতেছিলেন ইসরোর টিম এক্সিলেন্স পুরস্কার।

টেসি থমাস
কেরলের আলাপ্পুঝা শহরে জন্ম টেসি থমাসের। মাদার টেরেসার নামে তাঁর নাম রাখা হয়। বাবা ছিলেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। টেসি তাঁকে খুব কম বয়সে হারান। শিক্ষিকা মা তাঁদের বড় করেন।
টেসি থমাস ত্রিশূর শহরের গভর্নমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে প্রকৌশলবিদ্যায় স্নাতক হন। এরপর পুণে শহরের ইনস্টিটিউট অব আর্মামেন্ট টেকনোলজি থেকে ক্ষেপণাস্ত্র বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
তিনি অগ্নি-৩ ক্ষেপণাস্ত্র প্রকল্পের সহ-অধিকর্তা এবং অগ্নি-৪ ক্ষেপণাস্ত্র প্রকল্পের অধিকর্তা ছিলেন। ২০০৯ সালে তাঁকে অগ্নি-৫ ক্ষেপণাস্ত্র প্রকল্পের অধিকর্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়। এপিজে আবদুল কালাম অগ্নি প্রকল্পের জন্য নিযুক্ত করেছিলেন তাঁকে। এর মাধ্যমে তিনি প্রথম নারী হিসেবে ভারতে ক্ষেপণাস্ত্র প্রকল্পের নেতৃত্ব দেওয়ার মর্যাদা লাভ করেন। ২০১৮ সালে তিনি ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের অ্যারোনটিক্যাল সিস্টেমের মহাপরিচালক হন।
২০১২ সালে ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তিতে ভারতকে আত্ম-নির্ভরশীল করার ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখার জন্য তাঁকে লাল বাহাদুর শাস্ত্রী জাতীয় পুরস্কার প্রদান করা হয়। ৬০ বছর বয়সি এই বিজ্ঞানী গোটা ভারতবর্ষে ‘মিসাইল উওমেন’ নামে পরিচিত।

মৌমিতা দত্ত
বঙ্গতনয়া মৌমিতা দত্ত। ইসরোর বিজ্ঞানী দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্যা। চন্দ্রযান-১ চন্দ্রযান-২ অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন।
কলকাতার মেয়ে। স্কুলজীবন কাটিয়েছেন হোলি চাইল্ড ইনস্টিটিউটে। রাজাবাজার সায়েন্স কলেজ থেকে অ্যাপ্লায়েড এফ ফিজিক্স নিয়ে পড়াশোনা করেন। ছোট থেকেই ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রে যোগদান করার স্বপ্ন দেখতেন।
এমটেক ডিগ্রি অর্জনের পর পা রাখেন আমেদাবাদের স্পেস অ্যাপ্লিকেশন সেন্টারে। পরে তাঁর কর্মজীবন শুরু হয় ইসরোতে। একাধিক স্যাটেলাইট মিশনের অন্যতম ভূমিকায় ছিলেন কলকাতার এই বিজ্ঞানী। অংশগ্রহণ করেন একাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রজেক্টে।
এরপরেই সুযোগ পান মঙ্গলযান মিশনে। অপটিকাল ইনস্ট্রুমেন্ট বা ইমেজিং স্পেকট্রোমিটার তৈরিতে তাঁর বিশেষ দক্ষতা রয়েছে। সেই মিশনের প্রজেক্ট ম্যানেজার হিসেবে মিথেন সেন্সরের অপটিক্যাল সিস্টেম তৈরিতে তাঁর কৃতিত্ব ছাপ রেখে যায়। মঙ্গলযান ‘মম’ দেখিয়েছে, মঙ্গলে দিন-রাত আছে, ঋতু পরিবর্তন আছে, আছে উত্তর ও দক্ষিণ মেরু, খুব উঁচু পাহাড়, বিরাট আগ্নেয়গিরি, বিশাল নদীখাত। যা একদা সেখানে জল থাকার প্রমাণ দেয়। এই মিথেন সেন্সর তৈরি করেছিল মৌমিতার টিম। মঙ্গলযানের পাঁচটি পেলোডের মধ্যে একটি তৈরি করেছিলেন তাঁরা।
মঙ্গলায়ন মিশন মৌমিতাকে এনে দেয় ইসরো টিম অফ এক্সেলেন্স-এর সম্মান। ইসরোর অন্যান্য মহিলা বিজ্ঞানীর মধ্যে এই গৌরবময় ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা হল তাঁর নামও।

নিগার শাজি
চন্দ্রযান (chandrayaan-3) মিশনের সাফল্যের পর ইসরো সূর্যের দিকে মহাকাশযান পাঠিয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে মহাকাশ বিজ্ঞানের দুটি দুর্দান্ত উদাহরণ বিশ্বের সামনে তুলে ধরেছে আমাদের দেশ।
ইসরোর সূর্য মিশনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ভারতীয় মহিলা বিজ্ঞানী নিগার শাজি। ৫৯ বছর বয়সি শাজির কাছে এটা একটা স্বপ্ন সত্যি হওয়ার মতো ঘটনা। তিনি আত্মবিশ্বাসী, আদিত্য-এল-১ সঠিক জায়গায় স্থাপন করতে সফল হবে। এই মিশন শুধু ভারতকেই নয়, বিশ্বকেও অনেক কিছু দিতে চলেছে বলে তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস।
নিগার শাজির উত্থান রূপকথার মতো। তামিলনাড়ুর টেনকাসি জেলার বাসিন্দা তিনি। জন্ম নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে। বাবা শেখ মিরান ছিলেন কৃষক। মা সাইতুন বিবি গৃহবধূ। অতি সাধারণ পরিবারে বেড়ে ওঠার ফলে আতিশয্যের আবরণ একেবারেই ছিল না। তবে শিক্ষার প্রতি ছোট থেকেই তাঁর আগ্রহ ছিল প্রবল। পড়াশোনা করেছেন বহু কষ্ট করেই। হাল ছাড়েননি। মেধা ছিল তীব্র। এগিয়েছেন সেইটুকু সম্বল করেই।
তিরুনেলভেলি গভর্নমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড কমিউনিকেশনে ইঞ্জিনিয়ারিং করেন এবং তারপর রাঁচির বিড়লা ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।
১৯৮৭ সালে যোগ দেন সতীশ ধাওয়ান স্পেস সেন্টারে। পরে তিনি ইউ আর রাও স্যাটেলাইট দলে যোগ দেন। আন্তঃগ্রহের উপগ্রহ প্রোগ্রামে একজন বিশেষজ্ঞ হিসাবে কাজ করেন। তিনি সূর্য মিশনের প্রোজেক্ট ডিরেক্টর। এ-ছাড়াও তিনি ভারতের রিমোট সেন্সিং স্যাটেলাইট রিসোর্সস্যাট-২এ-এর অ্যাসিসটান্ট প্রোজেক্ট ডিরেক্টরও ছিলেন। আপাতত সারা দেশের চোখ তাঁর দিকে। তাঁর চোখ সূর্যের দিকে।

অন্নপূর্ণি সুব্রহ্মণ্যম
ইসরো-র সূর্য মিশনে বড় অবদান রয়েছে মহিলা বিজ্ঞানী অন্নপূর্ণি সুব্রহ্মণ্যমের। তিনি ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ অ্যাস্ট্রোফিজিক্সের ডিরেক্টর। একই ইনস্টিটিউট সূর্য অধ্যয়নের জন্য আদিত্য এল-১ মিশনের প্রধান পেলোড ডিজাইন করেছেন। সুব্রহ্মণ্যম কেরলের পালাক্কাদ জেলার একটি গ্রামের বাসিন্দা। ছোটবেলা থেকেই দারুণ মেধাবী। তাঁর পরিবার সংগীতচর্চার জন্য বিশেষ পরিচিত। যদিও তিনি পদার্থবিদ্যায় পিএইচডি করেছেন আইআইএ থেকে।
ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স-এ গবেষণা করেছেন ১৯৯০-১৯৯৬ সাল। এর পর তিনি ১৯৯৮ সালে পোস্ট ডিরেক্টর হিসাবে নিযুক্ত হন এই প্রতিষ্ঠানে। বর্তমানে বিজ্ঞানী হিসাবে কাজ করে চলেছেন। তিনি ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়ন-এর সদস্যা।
আদিত্য এল-১ মিশনের ভিইএলসি-র নকশা তাঁর নেতৃত্বেই তৈরি হয়েছে। এটি একটি করোনাগ্রাফ। যা সূর্যগ্রহণের সময়ও সূর্যকে দেখতে থাকবে। এই মিশনের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো আমরা সূর্যের অভ্যন্তরে উঁকি দিতে সক্ষম হব।

Latest article