ড্রিম গার্ল টু

এক ঝলকে মনে হবে অধিক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট। আসলে তা নয়। মূল সমস্যা অধিক আত্মবিশ্বাস। ‘ড্রিম গার্ল’-এর দুরন্ত সাফল্য এবং আয়ুষ্মান খুরানার ব্যতিক্রমী অভিনয় যার উৎস। অভিনয় এখানেও দুর্দান্ত করেছেন আয়ুষ্মান। কিন্তু ‘ড্রিম গার্ল টু’ সিক্যুয়েল হিসেবে ছাপিয়ে যেতে পারল না। ফাঁকিটুকু ধরতে পারে দর্শক। জানাচ্ছেন প্রীতিকণা পালরায়

Must read

২০১৯-এ বড়পর্দা মাতিয়েছিল পরিচালক রাজ শাণ্ডিল্যের ‘ড্রিম গার্ল’। ছবির গল্প, আয়ুষ্মানের অভিনয় মন ভরিয়েছিল দর্শকের। সেকথা মনে রেখেই ‘ড্রিমগার্ল টু’-এর ভাবনা। আর সমস্যা সেখানেই। কারণ প্রথম ছবিতে যেটুকু খামতি ছিল সে-খামতি ঢেকে দিয়েছিল বিষয়-বৈচিত্র্য। সঙ্গে অবশ্যই আয়ুষ্মান খুরানা। আয়ুষ্মানের জনপ্রিয়তার কারণই ছিল তাঁর নির্বাচিত ছবি, অভিনীত প্রতিটি চরিত্র অন্যের থেকে আলাদা। ‘ড্রিম গার্ল’ ক্লিক করে গিয়েছিল। কিন্তু ‘ক্লিক’ বারবার করে না। পাবলিক সব জানে, সব বোঝে! তাই ২০২৩-এ প্রায় সেম কাস্ট রেখে ‘স্পিরিচ্যুয়াল’ সিক্যুয়েল বানিয়েও মাত করতে পারলেন না রাজ শাণ্ডিল্য। আগের ছবির ইউএসপি ছিল গল্প। এখানে সেই গল্পই কম, হই-হট্টগোল বেশি। তাই শুধুমাত্র আগের ছবির সাফল্যকে হাতিয়ার করে আর আয়ুষ্মানকে প্রতি ফ্রেমে রেখে এগোতে গিয়ে ছবির কাহিনি-চিত্রনাট্যের দিকে মনোযোগী হননি পরিচালক বা কাহিনিকার নরেশ কাথুরিয়া। এসব বাদ দিয়ে শুধুই আয়ুষ্মান খুরানার অভিনয়ের ভক্ত যারা তাঁরা ‘ড্রিম গার্ল টু’ (Dream Girl 2) দেখতেই পারেন। আয়ুষ্মান স্রেফ মাতিয়ে দিয়েছেন।

আগের ছবির চরিত্ররা কিছু আছেন, অনেকে বদলে গেছেন আবার কিছু নতুন চরিত্রও এসেছেন এই ছবিতে। আয়ুষ্মান নিজের ভূমিকাতেই আছেন। এবং করমবীর ওরফে ‘পূজা’ দুই ভূমিকাতেই তিনি তুখোড় অভিনয়ে মুগ্ধ করেছেন। বাবার সঙ্গে মথুরায় থাকে করমবীর আর নানা পুজোয় নাচা-গানা করে রোজগার করে। আর পাঁচটা টায়ে-টুয়ে চলা পরিবারে যা-যা সমস্যা থাকে বাবা-ছেলের সংসারেও তাই-তাই আছে আর তা নিয়ে হেভি মজাদার টক্করও আছে। বাবা জগজিৎ (অন্নু কাপুর) ছাড়াও করমবীরের দুই সঙ্গী, এক প্রাণের বন্ধু স্মাইলি (মনজোত সিং) এবং প্রেমিকা পরি (অনন্যা পাণ্ডে)। পরি বড়লোক উকিলের মেয়ে। মেয়ের গরিব প্রেমিককে না-পসন্দ পরির বাবার। কিন্তু মেয়ের মন রাখতে শর্ত দেন করমবীরকে, ছ’মাসের মধ্যে ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স পঁচিশ লক্ষ ছুঁলে তবেই মেয়ের সঙ্গে বিয়ের কথা ভাববেন। করমবীর মরিয়া হয়। কম সময়ে বড় দাঁও হাঁকানো যায় কীসে ভাবতে গিয়েই আগের অভিজ্ঞতার কথা মাথায় আসে। এবং ঠিক করে নিজের ভূমিকাতে নয় পূজা সেজে নাচ করবে। টাকা আসবে তাতেই। ভাবনামতো কাজ এবং তা করতে গিয়েই নানা জটিলতা। এমনিতেই কমেডি ছবি বানানো সবচেয়ে কঠিন। ভাঁড়ামো না ছুঁয়ে দু-আড়াই ঘণ্টা ধরে নিখুঁত হাস্যরসের ভারসাম্য রেখে চলা মোটেই সহজ নয়। এখানেও সেই পরিবেশনাতেই খানিক খেই হারিয়েছে।

নারী সেজে পুরুষ-বশ-করা খুব ইউনিক কিছু আইডিয়া নয়। ইউনিক হতে পারত টাইট চিত্রনাট্যে। কিন্তু একবার করম এবং একবার পূজা সেজে নানা কাণ্ড-কারখানা আর হট্টগোলে তাল-গোল পাকিয়েছে চিত্রনাট্যের গতিপথ। এক-একটা সিকোয়েন্স দারুণ হাসির আর আয়ুষ্মানও পাল্লা দিয়ে চেষ্টা করে গেছেন কিন্তু একার চেষ্টায় সব জায়গায় উতরোতে পারেননি। আসলে প্রথম ছবিটির একটা ব্যক্তিগত জার্নির সঙ্গে সার্বিক আবেদন ছিল যা দর্শকের মন সহজে ছুঁয়েছিল। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে মানুষের জীবনের একাকীত্ব, কথা বলার সঙ্গীর অভাব, মনের কথা শেয়ার করার আকুলতা, এগুলোই হাস্যরসের মোড়কে ধরা হয়েছিল। কিন্তু ‘ড্রিমগার্ল টু’-তে তেমন কোনও বার্তা নেই। শুধু হাসানোর জন্য হাসাবার চেষ্টা একটা সময়ের পর একঘেয়ে। ফলে অন্নু কাপুর, পরেশ রাওয়াল, বিজয় রাজ, রাজপাল যাদব, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, সীমা পাহয়ার মতো অভিনেতা থাকলেও, তাঁদের ব্যক্তিগত দক্ষতা সার্বিক হয়ে ওঠেনি। আর অনন্যা পাণ্ডেরও এই ছবিতে বিশেষ কিছু করার ছিল না। তা ছাড়া তিনি অভিনয়টা কবে শিখে উঠতে পারবেন, সে-প্রশ্নও থেকে যায়।

আরও পড়ুন-ভারত না INDIA, তর্কের আতশবাজিতে আড়াল আসল কথা

ফের আসা যাক আয়ুষ্মানের কথাতেই। একজন অভিনেতার প্রতিটা অঙ্গই যে হাতিয়ার হতে পারে আয়ুষ্মান তা বারেবারে প্রমাণ করেছেন। ‘অন্ধাধুন’ ছবিতে অন্ধের চরিত্রে অভিনয়ের সময় তাঁর চোখের ব্যবহারে মুগ্ধ হয়েছিল দর্শক। ‘ড্রিম গার্ল’-এ নিজের কণ্ঠস্বরকে ব্যবহার করেছিলেন দুর্দান্ত দক্ষতায়। আর এবার নর্তকীর চরিত্রের জন্য নিজের পুরুষ শরীরকে, চাহনিকে— যেভাবে আবেদনে টই-টম্বুর করেছেন আয়ুষ্মান তাতে একজন অভিনেতা হিসেবে তাঁকে একশোয় একশো দিতে হয়। বক্স অফিসে যখন ‘গদর টু’-এর ঝড় চলছে, তার মধ্যেই মুক্তি পেয়েছে একতা কাপুর প্রযোজিত এই স্বল্প বাজেটের ছবি। আর শুধুমাত্র আয়ুষ্মান-ম্যাজিকেই পঞ্চাশ কোটির ক্লাবে ঢুকে পড়েছে স্লো বাট স্টেডি রান-এ। যে বাজেটে ছবিটি বানানো তাতে প্রযোজক এর মধ্যেই লাভের মুখ দেখে ফেলেছেন। আয়ুষ্মান নিজেও খুব খুশি, জানিয়েছেন, ‘আমার কেরিয়ারে সবচেয়ে বড় ওপেনিং দিয়েছে ড্রিমগার্ল টু (Dream Girl 2)। একজন বিনোদনকারী হিসেবে আমি খুশি এত মানুষকে হল-মুখী করতে পেরে। এর থেকে বড় উপহার আমার তরফে আর কিছুই নেই।’

Latest article