ময়ূরের গ্রাম এবং আরও কিছু জায়গা

মোরাচি চিঞ্চোলি। যেমন সুন্দর নাম, তেমন সুন্দর গ্রাম। সারাক্ষণ সবুজ এই গ্রামে উড়ে বেড়ায় ঝাঁকে ঝাঁকে নীল ময়ূর। আহা, চোখের আরাম। মহারাষ্ট্রের পুনে শহরের খুব কাছেই। ঘুরে আসতে পারেন। ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মোরাচি চিঞ্চোলি দর্শনের সেরা সময়। পাশাপাশি পুনে শহরের কাছেপিঠে আছে আরও কিছু বেড়ানোর জায়গা। কয়েকটি জায়গার সন্ধান দিলেন অংশুমান চক্রবর্তী

Must read

মোরাচি চিঞ্চোলি
ময়ূরের গ্রাম মোরাচি চিঞ্চোলি (Morachi Chincholi)। কার্তিকের বাহন উড়ে বেড়ায় এক ডাল থেকে ওন্য ডালে। এক-আধটা নয়, ঝাঁকে ঝাঁকে। পুনে শহর থেকে মাত্র ৬০ কিলোমিটার দূরে।
মহারাষ্ট্রে শান্ত এই গ্রামের পরিচিতি পিকক ভিলেজ নামে। ৩৫০ একরের গ্রামটিতে ঘরের চালে, গাছের ডালে উড়ে বেড়ায় শুধুই নীল ময়ূর। এককথায় ময়ূরের সঙ্গে নিত্যবাস গ্রামের বাসিন্দাদের।
তাঁদের কথায়, প্রায় ২৫০০-এর বেশি ময়ূর ও ময়ূরী উড়ে বেড়ায় এলাকায়।
পেশোয়া রাজবংশের শাসনকালে হাজার হাজার তেঁতুলগাছ বসানো হয়েছিল, ময়ূরদের আকৃষ্ট করার জন্য। ময়ূরদের কথা ভেবে বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়েও যথেষ্ট যত্ন নেওয়া হয় তেঁতুলগাছগুলির। বাসিন্দারা ময়ূর ও ময়ূরীদেরও বিশেষ যত্ন নেন। রাখেন খেয়াল। আর এর ফলে ময়ূর ও ময়ূরীদের নিশ্চিন্ত আশ্রয় স্থান হয়ে উঠেছে গ্রামটি।
গ্রামের নামটাও রাখা হয়েছে ময়ূর আর তেঁতুল গাছ থেকেই। ‘মোর’ কথার অর্থ ময়ূর এবং মারাঠিতে চিঞ্চ শব্দের অর্থ তেঁতুল। দুই মিলিয়ে মোরাচি চিঞ্চোলি (Morachi Chincholi)। গ্রামটি পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকে। তবে শুধুমাত্র ময়ূর নয়, কৃষি পর্যটনও এই গ্রামের অন্যতম আকর্ষণ।

কখন যাবেন? শীতকাল, অর্থাৎ ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস হল মোরাচি চিঞ্চোলি দর্শনের সেরা সময়। ময়ূরের লীলক্ষেত্র হয়ে ওঠে সকালের কুয়াশায় মোড়া গ্রাম। হুরডা নামে ফসল তোলা হয় শীতকালে। হুরডা হল তাজা সবুজ জোয়ার। এই হুরডা দিয়ে তৈরি নানা টিফিন মাহারাষ্ট্রে অত্যন্ত জনপ্রিয়। মোরাচি চিঞ্চোলি (Morachi Chincholi) গ্রামে গেলে অবশ্যই টেস্ট করবেন। এর স্বাদ এককথায় অতুলনীয়। গ্রামে থাকার জন্য কিছু হোটেল এবং হোম-স্টে রয়েছে। বিশুদ্ধ প্রকৃতির স্বাদ পেতে হলে গ্রামের হোম-স্টেতে থাকাই যায়। ওখানে থাকলে গ্রামের বাসিন্দারাই পর্যটকদের ট্র্যাক্টরে চাপিয়ে ঘুরিয়ে দেখাবেন গ্রামের রাস্তাঘাট, শস্যক্ষেত্র, ভোরের সূর্যোদয়, শান্ত শীতল জীবন। যে জীবনে নেই কোনও প্রতিযোগিতা, ঈর্ষা। আছে শুধু আনন্দ। অফুরান আনন্দ। মাটির গন্ধ গায়ে মেখে কয়েকটা দিন অন্যরকম কাটতে পারে।

আশেপাশে কী কী ঘুরে দেখা যায়?

সিংহগড় দুর্গ
এক দিনের ভ্রমণের জন্য চমৎকার জায়গা। পুনে থেকে ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে। প্রায় ২০০০ বছরের পুরানো এই দুর্গটি। বহু ইতিহাসের সাক্ষী। অনেক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ দেখেছে। বর্তমানে অন্যতম দর্শনীয় স্থান। আশেপাশে ফাঁকা জায়গায় শীতের দিনে বহু মানুষ পিকনিক করতে আসেন।

আরও পড়ুন-রাসমেলাকে ট্যুরিজম ডেস্টিনেশন ম্যাপে আনার নির্দেশ, কেন্দ্রের চক্রান্তের বিস্ফোরক অভিযোগ নদিয়ার মঞ্চে

মুলশি বাঁধ
পুনে থেকে খুব দূরে নয়। এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ অতি মনোরম। চারপাশে সবুজ পাহাড়। গাছে গাছে শোভা ছড়ায় নানা রঙের ফুল। ডালে ডালে উড়ে বেড়ায় পাখি। এটাও পিকনিক স্পট হিসেবে জনপ্রিয়। ছবি তোলার আদর্শ জায়গা। মুলা নদীর উপর নির্মিত বাঁধটি কৃষকদের জল সরবরাহ এবং শক্তি উৎপন্ন করে।

শিবনেরি দুর্গ
পুনে থেকে ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে। দুর্গটি একটি পাহাড়ের উপর অবস্থিত। এটি মারাঠা সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ছত্রপতি শিবাজির জন্মস্থানও। সাতটি প্রবেশপথ-সহ দুর্গটি দুর্ভেদ্য এলাকাগুলির মধ্যে অন্যতম। সুরক্ষিত আছে শিবাজির স্মৃতিচিহ্ন। ঘুরে দেখা যায়।

জেজুরি
আওরঙ্গজেবের আমলে তৈরি কয়েকটি মন্দিরের মধ্যে একটি। ৭৫০ মিটার উঁচু পাহাড়ে অবস্থিত। খন্ডোবা-ভক্তদের জন্য একটি আদর্শ তীর্থস্থান। এই দেবতা নাকি ভক্তদের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করেন। তাই সারা বছর বহু মানুষের সমাগম হয়। মন্দিরে পৌঁছনো যথেষ্ট কষ্টসাধ্য। প্রায় ৩৮০ ধাপ সিঁড়ি পেরিয়ে উপরে উঠতে হয়। বয়স্ক মানুষ সঙ্গে থাকলে একটি ডুলি ভাড়া নিতে পারেন। তিনিই বহন করে মন্দিরে পৌঁছে দেবেন। নববিবাহিত দম্পতিদের প্রথমবার এই মন্দিরে পালন করতে হয় একটি বিশেষ রীতি। স্বামীকে অবশ্যই তাঁর স্ত্রীকে কমপক্ষে পাঁচটি সিঁড়ি বহন করতে হয়। অনেকেই তারও বেশি সংখ্যক ধাপ পেরোতে সক্ষম হন।

রাজগড় দুর্গ
ছত্রপতি শিবাজির রাজত্বকালে মারাঠা সাম্রাজ্যের রাজধানী হিসেবে প্রসিদ্ধ ছিল। ঐতিহাসিক এই দুর্গ বর্তমানে ইতিহাসপ্রেমীদের কাছে জনপ্রিয় পর্যটন স্থান। দুর্গে দেখার মতো বহু কিছু আছে। সময় নিয়ে ঘুরে দেখতে পারেন।

কীভাবে যাবেন?
হাওড়া থেকে ছাড়ে পুনে এসি দুরন্ত এক্সপ্রেস, আজাদ হিন্দ এক্সপ্রেস। সাঁতরাগাছি থেকে হামসফর এক্সপ্রেস। ট্রেনের পাশাপাশি প্লেনেও পুনে যাওয়া যায়। পুনে থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত এই স্পটগুলো। গাড়ি ভাড়া নিয়ে ঘুরতে পারেন।

কোথায় থাকবেন?
পুণে শহরে আছে অসংখ্য হোটেল, গেস্ট হাউস। সেখানে থাকতে পারেন। প্রয়োজনে আগে থেকেই বুকিং করে নেওয়া যায়। দেখে নিতে পারেন ওয়েবসাইট। কয়েকটি দর্শনীয় স্থানের কাছাকাছিও থাকার জায়গা আছে। চাইলে থাকতেই পারেন।

Latest article