ভরায় হিয়া রামপুরিয়া

অভয়ারণ্যের মাঝে পাহাড়ি এক গ্রাম রামপুরিয়া। সুন্দর এবং শান্ত। চিরসবুজ অঞ্চলটি এককথায় দূষণমুক্ত। চা-বাগানের পাশাপাশি দেখতে পাওয়া যায় ঝর্না, ফলস, নানারকম বনৌষধী গাছ, ফুল, পশু-পাখি। কয়েকদিনের জন্য ঘুরে আসতে পারেন। লিখলেন অংশুমান চক্রবর্তী

Must read

চিরসবুজ এক পাহাড়ি গ্রাম রামপুরিয়া (Rampuria)। নাম শুনে মনে হতে পারে উত্তরপ্রদেশের কোনও অঞ্চল। ভুল। রামপুরিয়ার অবস্থান এই বাংলায়, উত্তরবঙ্গে। দার্জিলিং জেলায়। দার্জিলিং শহর থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে। সেঞ্চাল অভয়ারণ্যের মাঝে। সুমদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা প্রায় ৫,৭০০ ফুট। এই অভয়ারণ্য ভারতের পুরনো অভয়ারণ্যের মধ্যে একটি। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এককথায় অসাধারণ।
দূষণের বিষাক্ত থাবা পড়েনি কুয়াশামাখা এই বনাঞ্চলে। নেই গাড়ি-ঘোড়ার অতিরিক্ত আওয়াজ, মানুষের অকারণ ভিড়। এককথায় নির্মল পরিবেশ। মুখরিত হয়ে থাকে পাখিদের কলকাকলিতে।
ম্যাগপাই, বাবল, থ্রাশ প্রভৃতি নানা প্রজাতির হিমালয়ান পাখির দেখা মেলে এই পাহাড়ি গ্রামে। বাইনোকুলার নিয়ে আপনমনে ঘুরে বেড়ান পাখিপ্রেমীরা। আসেন ফুলপ্রেমীরাও। কারণ এখানে ফোটে রডোডেনড্রন, ম্যাগনোলিয়া প্রভৃতি নানা জাতের ফুল। আছে ফার্ন, ওক, বাম্বো প্রভৃতি গাছ।

আরও পড়ুন-ম্যানেজমেন্টের জন্য নতুন বিশ্ববিদ্যালয় এবার উত্তরবঙ্গে

বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে রয়েছে চা-বাগান। তার মধ্যে অন্যতম রংলি রংলিওট চা-বাগান। ঘুরে দেখা যায়। একটি কুঁড়ি দুটি পাতা তোলার কাজে ডুবে থাকেন হাসি মুখের শ্রমিকরা। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে। স্থানীয়দের তৈরি বাগানে জৈবিক উপায়ে হয়ে থাকে নানারকম শাকসবজির চাষ। দেখে মন ভাল হয়ে যায়।
গভীর সেঞ্চাল অভয়ারণ্যের ভিতরে আনন্দের সঙ্গে ট্রেকিং করা যায়। তার জন্য ২০০-৩০০ টাকা দিয়ে একজন গাইড ভাড়া নেওয়া যেতে পারে। অভয়ারণ্যের ভেতরে দেখতে পাবেন সুন্দরী ঝর্না, আকর্ষণীয় কাঞ্চন ফলস, নানারকম বনৌষধী গাছ। ঘুরে বেড়ায় বিভিন্ন পশু। যেমন, বার্কিং ডিয়ার, ওয়াইল্ড বোয়ার, হিমালয়ান ব্ল্যাক বিয়ার, ইন্ডিয়ান লেপার্ড, জঙ্গল বিড়াল, রিসাস বানর, আসাম ম্যাকাক, হিমালয়ান ফ্লাইং স্কুইরেল প্রভৃতি। বেড়ানোর সময় তাদের থেকে বজায় রাখতে হবে দূরত্ব।
কবিগুরুর স্মৃতি-বিজড়িত মংপু রামপুরিয়া (Rampuria) থেকে মাত্র ৭ কিমি দূরে। মংপুতে দেখে নিতে পারেন সিঙ্কনা প্লান্টেশন এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মিউজিয়াম।

কাছেপিঠে আছে আরও কিছু বেড়ানোর জায়গা। কী কী, একটু চোখ বুলিয়ে নিন।
তাকদা : উত্তরবঙ্গের অন্যতম বেড়ানোর জায়গা তাকদা রামপুরিয়া থেকে মাত্র ৮ কিমি দূরে। ঘুরে দেখে নিতে পারেন অর্কিড সেন্টার, ব্রিটিশদের তৈরি বাংলো ইত্যাদি।
টাইগার হিল : রামপুরিয়া থেকে টাইগার হিল খুব একটা দূরে নয়। চাইলে ঘুরে আসতেই পারেন। টাইগার হিল থেকে দেখে নিতে পারেন কাঞ্চনজঙ্ঘার মনোমুগ্ধকর দৃশ্য।
লামাহাট্টা : সময় নিয়ে ঘুরে দেখতে পারেন রামপুরিয়ার অদূরে লামাহাটা গ্রামটি। আকর্ষণের কেন্দ্রে আছে ইকো-পার্ক। কুয়াশা এবং মেঘমুক্ত থাকলে এখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পাওয়া যায়।
তিঞ্চুলে : সবুজে মোড়া এক গ্রাম তিঞ্চুলে। সুন্দর এবং শান্ত। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এককথায় অসাধারণ। অবস্থান রামপুরিয়ার কাছেই।
ঘুম : সময় বের করে ঘুরে আসতে পারেন ঘুম। আছে মনাস্ট্রি। রামপুরিয়া থেকে খুব একটা দূরে নয়। প্রকৃতি এখানে রূপের পশরা সাজিয়ে বসেছে।

কীভাবে যাবেন?
মহানগর থেকে ট্রেনে অথবা বিমানে পৌঁছে যান শিলিগুড়ি, নিউ জলপাইগুড়ি। দু-জায়গা থেকে সরাসরি গাড়ি ভাড়া করে রামপুরিয়া যেতে পারেন। আনুমানিক খরচ ৩০০০-৩৫০০ টাকা। পৌঁছতে সময় লাগবে মোটামুটি ৩ ঘণ্টা। যাওয়া যায় শেয়ার গাড়িতে চেপেও। প্রথমে দার্জিলিংগামী গাড়িতে উঠে জোড়বাংলো, সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে নিতে পারেন রামপুরিয়ার জন্য। এ ছাড়াও জোড়বাংলো থেকে সিক্সথ মাইল বাজার এসে সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে নিতে পারেন রামপুরিয়া পর্যন্ত।

কোথায় থাকবেন?
রামপুরিয়ায় আছে কয়েকটি হোমস্টে। স্থানীয় বাসিন্দারা বাড়িতেই হোমস্টে চালু করেছেন। পাহাড়ি এই গ্রামে থাকতে হলে এইসব হোমস্টেগুলি অন্যতম ভরসা। থাকার সুব্যবস্থা আছে। রুমগুলি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। খোলা জানালা দিয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। হোমস্টেতে থাকতে গেলে আগে থেকে রুম বুক করে নেওয়াই ভাল। পর্যটকদের সুবিধার জন্য দুটি হোমস্টের মোবাইল নম্বর দেওয়া হল :
রামপুরিয়া হোমস্টে ৯৮৩৬৫-৯৯৮৮৯, আদর্শ হোমস্টে রামপুরিয়া ৮১১৬২-৩৭৬৩৯।
থাকা-খাওয়া নিয়ে প্রতিদিন মাথাপিছু আনুমানিক ১২০০ টাকার মতো খরচ পড়ে। আগেই বিস্তারিতভাবে কথা বলে নেবেন।
রামপুরিয়া (Rampuria) বেড়ানোর আদর্শ সময় মার্চ থেকে মে এবং অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর। কী ভাবছেন? কয়েকদিনের জন্য ঘুরে আসবেন? তাহলে চটপট ব্যাগ গুছিয়ে নিন।

Latest article