ম্যায় ভি শেরদিল হুঁ

শের হওয়া সহজ কিন্তু 'শেরদিল' হয়ে বাঘের সামনে দাঁড়িয়ে মৃত্যুকে আহ্বান করা ভীষণ কঠিন। সেই কঠিন কাজটাই অনায়াসে করে ফেলতে চলেছেন 'শেরদিল' নির্ভীক গঙ্গারাম ওরফে অভিনেতা পঙ্কজ ত্রিপাঠী। আর তাঁকে 'শেরদিল' হয়ে উঠতে সাহায্য করেছেন পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়। সদ্য মুক্তি পেল তাঁর পরিচালিত হিন্দি ছবি 'শেরদিল দ্য পিলভিট সাগা'-র ট্রেলার। ট্রেলারেই রয়েছে চমক যা ছবিমুক্তির পর প্রেক্ষাগৃহে দর্শক টানবেই, বলার অপেক্ষা রাখে না। লিখছেন শর্মিষ্ঠা ঘোষ চক্রবর্তী

Must read

‘‘তু শের হ্যায় তো ম্যায় ভি শেরদিল হুঁ’’! বাঘের উদ্দেশ্যে সরপঞ্চ গঙ্গারামের হুঙ্কার। জঙ্গলের রাজার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে এমন নির্ভীক শব্দ কেউ উচ্চারণ করতে পেরেছে কি না জানা নেই কিন্তু সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের হিন্দি ছবি ‘শেরদিল’ (Sherdil) দ্য পিলভিট সাগা-র ২ মিনিট ২৩ সেকেন্ডের ট্রেলারে অভিনেতা পঙ্কজ ত্রিপাঠীর এই সংলাপ সাড়া ফেলে দিয়েছে। ইতিমধ্যেই ছবিটি নিয়ে আগ্রহ তুঙ্গে। যাঁর বড় কারণ হল সৃজিত আর পঙ্কজের এই যুগলবন্দি।
গত শুক্রবার ট্রেলার মুক্তি পেল পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের হিন্দি ছবি ‘শেরদিল’ দ্য পিলভিট সাগা-র। ওই একইদিনে মুক্তি পেয়েছে সৃজিতের এক্স=প্রেম ছবিটিও। একসঙ্গে একইদিনে দর্শক মহলকে সৃজিতের জোড়া উপহার। এই ছবির প্রধান আকর্ষণ অভিনেতা পঙ্কজ ত্রিপাঠী। সৃজিতের স্বপ্নের প্রোজেক্ট ‘শেরদিল’ ছবিটি একটি সত্য ঘটনাকে অবলম্বন করে নির্মিত। ২০১৭ সালে পিলভিটের একটি ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছিল পরিচালককে। ঘটনাটা পড়ে, শুনে সেই সময়ই তিনি স্থির করেছিলেন এমন একটা বিষয়কে তিনি বড়পর্দায় উপস্থাপন করবেন। অবশেষে খুব শীঘ্রই মুক্তি পেতে চলেছে ‘শেরদিল দ্য পিলভিট সাগা’। ট্রেলার জুড়ে পঙ্কজ আর অপরূপা প্রকৃতি। সবুজ আর সবুজের আলিঙ্গন।

বাস্তবের গল্প স্বপ্নের ছবি
উত্তরপ্রদেশের বেরিলির পিলভিটে বাঘের আক্রমণে মারা যান সাতজন বৃদ্ধ। গোটা ঘটনাটির তদন্ত হওয়ার পর একটি দুঃখজনক এবং চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে আসে। তা হল, সরকারি নিয়মে ব্যাঘ্র প্রকল্পে বাঘের আক্রমণে কেউ মারা গেলে সেই ব্যক্তির পরিবার সরকারের তরফে বেশ মোটা টাকা আর্থিক ক্ষতিপূরণ পাবে। জানা গেল সেই লোভেই নাকি গ্রামবাসীরা তাঁদের পরিবারের বৃদ্ধ- প্রবীণ সদস্যকে রেখে আসতন পিলভিট ব্যাঘ্রপ্রকল্পে। এরপর বাঘের আক্রমণে মৃত ব্যক্তির দেহ ফিরিয়ে নিয়ে আসা হত এবং প্রশাসনকে সেই দেহ দেখিয়ে গ্রামের মানুষ আদায় করতেন আর্থিক ক্ষতিপূরণ। যদিও, তদন্তের সময় পিলভিটের মানুষ তা অস্বীকার করেন। তাঁদের বক্তব্য ছিল, দরিদ্র পরিবারের প্রবীণ মানুষরা স্বেচ্ছায় চাইতেন বাঘের মুখের খাদ্য হতে যাতে মৃত্যুর পর তাঁর পরিবার টাকা পান এবং দারিদ্র ঘোচে। নির্মমতার কষ্টের এ কোন চিত্রপট! এমনই এক অনবদ্য প্রেক্ষাপটে এই ছবির অবতারণা। এই ঘটনা জানার পর থেকেই এই রকম প্লট নিয়ে ছবি করার স্বপ্ন দেখেছিলেন পরিচালক। উত্তরপ্রদেশের ইন্দো-নেপাল সীমান্তের জঙ্গলমহলের দরিদ্র মানুষের জীবনসংগ্রামের চিত্রায়ণ হল ‘শেরদিল’ (Sherdil) দ্য পিলভিট সাগা। পরিচালক তাঁর এই ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্রে এনেছেন পঙ্কজ ত্রিপাঠী ওরফে গঙ্গারামকে। দুনীর্তির বিরূদ্ধে সোচ্চার এই গঙ্গারাম একাধারে লড়েছেন প্রশাসনের সঙ্গে আবার লোকালয়ে ঢুকে ক্ষতি করা হিংস্র বন্যজন্তুর সঙ্গে সম্মুখ সমরেও দাঁড়িয়েছেন। একটা সময় সরকারি সাহায্যের আশায় এবং জীবনের অর্থাভাব মেটাতে নিজেই বাঘের কবলে পড়ে মৃত্যুবরণ করতে চেয়েছেন। রওনা দিয়েছেন গভীর জঙ্গলে। সেই কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে তাঁর পরিচয় হয় চোরাশিকারি জিমের সঙ্গে। এগোয় ঘটনার ঘনঘটা।

নায়কোচিত
গল্পের নায়ক বাস্তবেও সেরার সেরা। মির্জাপুর, কাগজ, লুডো খ্যাত পঙ্কজ ত্রিপাঠী (Pankaj Tripathi) নিঃসন্দেহে বহুচর্চিত এবং প্রশংসিত অভিনেতা। শেরদিল-এর (Sherdil) শের তিনিই। তাও নিজেকে একেবারেই তারকা মনে করেন না তিনি। ‘শেরদিল’ এর প্রমোশনে এই শহরে এসে পরিচালক এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধু সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে ভিক্টোরিয়া চত্বরে ফুচকাও খেয়েছেন। ভিক্টোরিয়ার সামনে প্রকাশ্যে তাঁদের দেখে ভক্তদের ভিড় জমে যায়। মধ্য কলকাতার একটি হোটেলে ছিল সাংবাদিক বৈঠক। অভিনেতা সেখানেই বললেন বাংলার প্রতি, এখানকার মানুষের প্রতি তাঁর অমোঘ টানের কথা। কারণ এই বাংলার মেয়েই যে তাঁর ঘরণী। ভালবাসেন পোস্ত খেতে। বাংলাটাও কমবেশি বলে ফেলেন। শুধু খেতে নয়, রেঁধে খাওয়াতেও পছন্দ করেন। আর সরষে বাটা তাঁর প্রিয় উপকরণ। নিজেকে মনে করেন আমজনতার নায়ক। গ্রামের মানুষ পঙ্কজের গ্রামজীবনের প্রতি ভালবাসার টান আজও একইরকম। পরিচালক সম্পর্কে বেশ উচ্ছ্বসিত তিনি। এমন একটি ছবি নির্বাচনের কারণ জানতে চাইলে সাংবাদিকদের বলেন, ছবির বিষয়টি তাঁর খুব পছন্দের। গল্পের মোড়কে এই ছবি বাস্তব সমস্যার বার্তাবাহী। তিনি মনে করেন, শুধু বিনোদন নয়, সমাজে সচেতনতা গড়ে তোলার একটা বড় মাধ্যম হল সিনেমা। অরণ্যের প্রতি ভাল লাগাই পরিচালকের সঙ্গে তাঁর যোগসূত্র। এও বলেন, জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রতিভাবান পরিচালকের সঙ্গে কাজ করতে পেরে তিনি খুব খুশি।

আরও পড়ুন: মারাদোনার চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া শুরু

পরিচালনে
মাটির কাছাকাছি এক মানুষের জীবন সংগ্রামের গল্প শুনিয়েছেন পরিচালক এবং লেখক সৃজিত মুখোপাধ্যায়। বাস্তব আর কল্পনার বুননে পরিচালক লিখেছেন তাঁর স্বপ্নের গল্পটি। ছবিটির করার ভাবনা থেকে ৫ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে তাঁকে। চিত্রনাট্য নিজে লিখলেও সাহায্য পেয়েছেন পঙ্কজের কাছ থেকেও। বহু প্রতীক্ষিত এই ছবিটি নিয়ে আসতে পেরে খুশি পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়ও।

সাংবাদিক বৈঠকে
জানান, এই ছবিটা তাঁর কাছে খুবই স্পেশ্যাল। এর আগে এরকম প্লট নিয়ে কোনও ছবি হয়নি। গঙ্গারামের চরিত্রটা যেন পঙ্কজের জন্যই করা। ওঁর মতো করে কেউ এই চরিত্রটা ফুটিয়ে তুলতে পারত না। এত বড়মাপের অভিনেতা, যাঁর তুলনা হয় না। শুধু অভিনেতা নয়, মানুষ হিসেবেও মাটির কাছাকাছি। এই ছবি করতে গিয়ে তাঁদের গভীর বন্ধুত্ব হয়ে যায়। ছবির শুটিং করতে গিয়ে নানা ধরনের আলোচনা হত তাঁদের। এমন চরিত্রকে বাস্তব করে তোলা তাঁর পক্ষেই সম্ভব ছিল।

অন্যান্যরা
যাঁদের কথা না বললে ‘শেরদিল’ (Sherdil) সম্পূর্ণ হয় না তাঁরা হলেন অভিনেতা নীরজ কবি এবং সায়নী গুপ্ত। চোরাশিকারি জিমের ভূমিকায় রয়েছেন নীরজ এবং গঙ্গারামের স্ত্রীর চরিত্রে রয়েছেন সায়নী। যাঁদের অনবদ্য অভিনয় দেখতে পাবেন দর্শক। আর রয়েছে সদ্যপ্রয়াত সংগীতশিল্পী কে.কে-র স্মৃতি। এই ছবির জন্যই শেষগানটি রেকর্ড করেছেন কেকে। নিজের প্রথম গান রেকর্ডিং করেছিলেন গীতিকার গুলজারের ‘মাচিস’ ছবির জন্য এবং শেষ গানটিও গুলজারের সঙ্গেই ‘শেরদিল’ দ্য পিলভিট সাগায়। তাঁর গাওয়া ‘ধূপ পানি বেহনে দে’ গানটি লিখেছেন গুলজার এবং মিউজিক কম্পোজার শান্তনু মৈত্র। আগামী ২৪ জুন মুক্তি পাবে বহু প্রতিক্ষীত ‘শেরদিল দ্য পিলভিট সাগা’।

Latest article