ঘুরে আসুন ভারকালা

কেরলে আছে বেশকিছু বেড়ানোর জায়গা। তার মধ্যে অন্যতম ভারকালা। আছে সমুদ্র, আছে পাহাড়। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে কয়েকটি মন্দির, দুর্গ। হাওয়া বদল করতে চাইলে দু-চারদিন ঘুরে আসতে পারেন। লিখলেন অংশুমান চক্রবর্তী

Must read

বাঙালিদের পছন্দের বেড়ানোর জায়গা কেরল। সমুদ্র তীরবর্তী এই রাজ্যে মন ভাল করার মতো জায়গা কম নেই। তার মধ্যে অন্যতম ভারকালা (Varkala- Kerala)। তিরুবনন্তপুরম থেকে ৫৪ কিমি দূরে অবস্থিত। জানা যায়, সংঘ রাজবংশের সময় বাণিজ্যের জন্য ভারকালা গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রীয় অঞ্চল ছিল। প্রাচীন গ্রিক পাণ্ডুলিপি অনুসারে জায়গাটি পরিচিত ছিল বালিতা নামে। ভারকালায় আছে মনোরম সমুদ্র সৈকত। অনেকের মতে বর্তমান সময়ে এটি দেশের সেরা রোম্যান্টিক সমুদ্র সৈকতের মধ্যে একটি। বহু নবদম্পতি আসেন মধুচন্দ্রিমায়। রংবেরঙের দোকান, হোটেল, রেস্তোরাঁ, কটেজ দিয়ে ঘেরা। দূর থেকে চোখে পড়ে বালিয়াড়ি আর সমুদ্রতট। ধ্বনি এখানে প্রতিধ্বনিত হয়। পায়ের উপর আছড়ে পড়ে আরব সাগরের ঢেউ। যদিও স্নানের পরিবেশ তেমনভাবে নেই। সমুদ্রের উপর দেখা যায় সূর্যকিরণের ছটা। ধু ধু বালুকাতট এর বৈশিষ্ট্য। অত্যন্ত শান্ত-নির্জন পরিবেশ। মানুষের ভিড়, কোলাহল নেই বললেই চলে। সন্ধেবেলায় বেড়ে যায় আকর্ষণ। আরও মোহময়ী হয়ে ওঠে সমুদ্র সৈকত। দোকান আর গেস্টহাউসগুলোর আলো জ্বলে ওঠে। মৃদুমন্দ ঠান্ডা হাওয়া বইতে থাকে। এই পটভূমিতে প্রিয়জনকে সঙ্গে নিয়ে কোনও রেস্তোরাঁ বা ধাবায় বসে ডিনার করতে দারুণ লাগে। প্রতিদিনের কর্মব্যস্ত জীবন থেকে সাময়িক বিরতি চাইলে ভারকালায় কয়েকদিন কাটিয়ে আসতে পারেন। পাবেন মনের আরাম। দূর হবে মানসিক অবসাদ। ভারকলা এবং এর আশপাশে আছে বেশকিছু বেড়ানোর জায়গা। কী কী?

ভারকালা (Varkala- Kerala) সমুদ্র সৈকত : আরব সাগরের তীরে অবস্থিত। পাপানাসাম বিচ নামেও পরিচিত। এটি কেরলের সবচেয়ে বিখ্যাত সৈকতগুলির মধ্যে একটি। যেখানে কাটানো যায় একটি শান্তিপূর্ণ দিন। তীরে বসে সমুদ্রের নির্মলতা উপভোগ করা যায়।

শিবগিরি মঠ : বিখ্যাত সমাজ সংস্কারক দার্শনিক শ্রীনারায়ণা গুরু প্রতিষ্ঠিত শিবগিরি মঠটি ভারকালায় অবস্থিত। দেবী সরস্বতীর প্রতি উৎসর্গীকৃত। পর্যটকরা অবশ্যই অবশ্যই মঠটি ঘুরে দেখবেন। কারণ এটি ভারকালার সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ জায়গাগুলির মধ্যে একটি।

জনার্দনস্বামী মন্দির : সৈকতের উপরে ঝুঁকে থাকা পাহাড়ের উপরে অবস্থিত ২০০০ বছরের প্রাচীন পবিত্র জনার্দনস্বামী মন্দির। মন্দিরটি ভারকালা মন্দির নামেও পরিচিত। ভগবান জনার্দন পূজিত হন। যিনি ভগবান বিষ্ণুর অন্যতম রূপ।

আনচুথেঙ্গু দুর্গ : দুর্গটি ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তৈরি করেছিল। আটিঙ্গালের রানির সহায়তায়। ইংল্যান্ড থেকে ভেসে আসা জাহাজগুলির জন্য প্রথম সংকেত স্টেশন হিসাবে দুর্গটি কাজ করত।

প্রস্রবণ : ভারকালা (Varkala- Kerala) বিচের কাছেই রয়েছে একটি প্রস্রবণ। খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ। এই প্রস্রবণের জলে ওষধি পদার্থ রয়েছে। পৃথিবীর বহু মানুষ এই প্রস্রবণকে পবিত্র মনে করে। এখানে স্নান করা এবং জলপান করাকেও পবিত্র মনে করা হয়। এই বিশ্বাস আছে যে এখানে স্নান করলে পাপক্ষালন হয়।

ভারকালা অ্যাকোয়ারিয়াম : একটি আশ্চর্যজনক অ্যাকোয়ারিয়াম। যেখানে ভেসে বেড়ায় বিভিন্ন ধরনের মাছ। তবে অ্যাকোয়ারিয়ামে জেলিফিশের অসংখ্য প্রজাতি রয়েছে। যাঁরা সামুদ্রিক জীবন ভালবাসেন তাঁদের জন্য এটি একটি দুঃসাহসিক অভিজ্ঞতা হতে পারে।

পন্নুমথুথু : পুন্নুমথুথু ভারাকালার একটি দ্বীপ। গোল্ডেন দ্বীপ নামে পরিচিত। এর অবস্থান অ্যাঞ্জেনগো হ্রদে। এই দ্বীপে আছে শতাব্দীপ্রাচীন একটি হিন্দু মন্দির। এখানে ধুমধামের সঙ্গে পালিত হয় মহা শিবরাত্রি। হয় ভক্ত সমাগম।

বালিমণ্ডপম : ভারাকালার একটি উল্লেখযোগ্য পর্যটনকেন্দ্র। মূলত একটি তীর্থস্থান। আছে মন্দির। জুলাই-অগাস্ট মাসে অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ পুজো। সমবেত হন বহু মানুষ।

এদভা পলককভু ভগবতী মন্দির : ভারাকালা শহরের ৬ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। পূজিতা হন ভদ্রকালী দেবী। বাৎসরিক পুজো এবং উৎসব স্থায়ী হয় ১০ দিন ধরে। আয়োজিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

কীভাবে যাবেন?
আকাশপথে নিকটতম বিমানবন্দর হল ত্রিবান্দ্রম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। যা অবস্থিত তিরুবনন্তপুরমে। চিল্লাক্কুর-ভাল্লাকাদাভু রোড হয়ে ভারকালা থেকে বিমানবন্দরটি ৪১ কিলোমিটার দূরে। তিরুবনন্তপুরমও একটি বাণিজ্যিক কেন্দ্র। বিমানবন্দরটির সামনে থেকে তিরুবনন্তপুরমের বিভিন্ন অংশে যাওয়ার জন্য স্থানীয় পরিবহণ ব্যবস্থা যেমন ট্যাক্সি, ক্যাব এবং বাস ইত্যাদি পাওয়া যায়। ভারতের প্রধান শহর যেমন দিল্লি, মুম্বই, কলকাতা এবং বেঙ্গালুরুর সঙ্গে আকাশপথে ভালভাবে সংযুক্ত। ভারকালা রেলওয়ে স্টেশন ভারকালা শহরের নিকটতম রেলওয়ে স্টেশন। এটি তিরুবনন্তপুরম জেলার অন্যতম প্রধান রেলওয়ে স্টেশন। অন্তর্গত তিরুবনন্তপুরম রেলওয়ে বিভাগের অধীনে। রেলওয়ে স্টেশনটি বিনামূল্যে ওয়াই-ফাই সহ নানা সুবিধাযুক্ত এবং ভারতের প্রধান মেট্রো শহরগুলির সঙ্গে ভালভাবে সংযুক্ত। যেমন দিল্লি, বেঙ্গালুরু, মুম্বই, কলকাতা এবং চেন্নাই। দুর্দান্ত সড়ক সংযোগ রয়েছে ভারাকালা শহরটিতে। কেরল রাজ্য সড়ক পরিবহণ কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনায়। ঘন ঘন বাস পরিষেবা আছে। ভারকালা শহরটি মূলত নিয়মিত বাসের মাধ্যমে তিরুবনন্তপুরম এবং কোচিনের মতো শহরগুলির সঙ্গে সংযুক্ত।

কোথায় থাকবেন?
ভারকালায় আছে বেশকিছু গেস্ট হাউস এবং হোটেল। সেইসঙ্গে আছে ভিলা জাকারান্ডার মতো গেস্ট হাউস। এছাড়া আছে পুথূরম আয়ুর্বেদিক বিচ রিসর্ট, ভারকালা মেরিন প্যালেস, গ্রিন প্যালেসের মতো মনোরম থাকার জায়গা। খরচ মোটামুটি নাগালের মধ্যে। আগে খোঁজখবর নিয়ে তবেই যাবেন।

আরও পড়ুন: মোদিজি! মানতেই হবে এ পরাজয় আপনারই

Latest article