শিক্ষাঙ্গনে আজ আধুনিকতার ছোঁয়া

মুখ্যমন্ত্রী আর শিক্ষামন্ত্রী, এই দু’জনের জন্যই এই রাজ্যের শিক্ষা পরিকাঠামো উন্নয়নে এত গতি। আজ অন্তিম পর্বে লিখছেন শিক্ষক বিজন সরকার

Must read

অনলাইনে কাজের সুবিধার্থে বাংলার শিক্ষা পোর্টাল চালু হয় ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। আইওএসএমএস (IOSMS) পোর্টালের মাধ্যমে শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীদের বেতন অনলাইনে দেওয়া হয়। অনলাইন ব্যবস্থার মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের স্কলারশিপে আবেদন ও প্রদানের ব্যবস্থা করেছে সরকার— Scholarship.wbsed.gov.in ওয়েবসাইটের মাধ্যমে। অনলাইনের মাধ্যমে কোর্ট কেস মনিটরিং ব্যবস্থা চালু হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দাবি ছিল ট্রান্সফার। উৎসশ্রী পোর্টালের মাধ্যমে অনলাইন ব্যবস্থায় ট্রান্সফার পেয়ে উপকৃত হয়েছেন বহু শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মী। ২০২১-২২ পর্যন্ত উৎসশ্রী পোর্টালের মাধ্যমে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১১৬৬৭ জন, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১৯৮৪৫ জন, প্রধান শিক্ষক ৬৬৭ জন এবং অশিক্ষক কর্মচারী ২৪৩৪ জন ট্রান্সফারের সুবিধা পেয়েছেন। শিক্ষাবিভাগে কাজের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার স্কচ সিলভার অ্যাওয়ার্ড পায় ২০২২ সালে।

আরও পড়ুন-বুথের পরিকাঠামো গড়ে তুলতে বরাদ্দ ১১ কোটি ৬৫ লক্ষ টাকা

২০১১-২২ সাল পর্যন্ত ট্রান্সফারের পাশাপাশি বহু শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চেয়েছেন শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু থাকুক কিন্তু বিরোধী দলের প্ররোচনায় এবং মুষ্টিমেয় আইনজীবী অর্থের লোভে চাকরি প্রার্থীর নিয়োগ প্রক্রিয়া আটকে দেওয়ার শত চেষ্টা করেছে। বিরোধী দলগুলি রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে চাকরি প্রার্থীদের রাজনীতির চক্রব্যুহে ফেলা থেকে বিরত থাকল না। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১ লক্ষ ৬৯৭ জন প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে। ৪৯,১৯৯ জন মাধ্যমিক শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে ৩,১২৬ জন। ২০১১-১২ সালে ৮০০ বিদ্যালয়ে আইসিটি (ICT) ছিল বর্তমানে তা বেড়ে হয়েছে ৯,৯২৩টি বিদ্যালয়ে চালু হয়েছে। এর ফলে প্রান্তিক গ্রামের বাচ্চারাও কম্পিউটার শিখতে পারছে। শিক্ষকদের গুণগত মানবৃদ্ধির জন্য ২ লক্ষ ২২ হাজার ৭৪৯ জন শিক্ষকের চাকরিরত অবস্থায় ট্রেনিং করানো হয়। প্রতিটি বিদ্যালয়ে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

আরও পড়ুন-রাজ্যসভায় দুই মনোনয়ন পেশ

বর্তমানে স্কুলে বহু কাজেই ভরসা একমাত্র ইন্টারনেট। স্কুলে ছাত্রছাত্রী ভর্তি, স্কুল লিভিং সার্টিফিকেট, মিড-ডে-মিল, শিক্ষাশ্রী, কন্যাশ্রী, মেধাশ্রী, বাংলার শিক্ষা পোর্টালে ফর্মেটিভ ও সামেটিভ পরীক্ষার নম্বর তোলা, রেজাল্ট, জেলা পরিদর্শক অফিস ও শিক্ষা দপ্তরের মেলে নির্দেশিকা ও ভার্চুয়াল বৈঠক-সহ বিভিন্ন কাজে বিদ্যালয়ে ইন্টারনেট সংযোগ ও ওয়াইফাই অপরিহার্য হয়ে উঠেছিল। এই অবস্থায় বিশেষ করে গ্রামের স্কুলগুলোতে নেটওয়ার্কের সমস্যা থাকায় কাজ বিঘ্নিত হত। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিভাবকত্বে এবং শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর নির্দেশে রাজ্য শিক্ষা দপ্তর এই মর্মে প্রায় সাড়ে চোদ্দো হাজার বিদ্যালয়ে হাইস্পিড ইন্টারনেট পরিষেবা দেওয়ার কথা চিন্তা করেছে এবং এই মর্মে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। জুনিয়র হাই, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক প্রায় সাড়ে চোদ্দো হাজার স্কুলে ১০০ এমবিপিএস স্পিডের ফ্রী ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়ার বরাত পেয়েছে ওয়েবেল (সরকারের অধীন ওয়েবেল টেকনোলজি লিমিটেড)। ওয়েবেলকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আগামী ২ মাসের মধ্যেই কাজ শেষ করতে হবে। বিনামূল্যে ৩৯ মাস অর্থাৎ ৩ বছর ৩ মাস এই ফ্রি ইন্টারনেট পরিষেবা থাকবে।

আরও পড়ুন-সন্দেশখালি নিয়ে দিনভর গুন্ডামি করল রাম-বাম

মধ্যশিক্ষা পর্ষদ ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সমস্ত বিষয়ে অনলাইনের মাধ্যমে কাজ হচ্ছে। আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI), ডেটা সায়েন্স এই দুটি নতুন বিষয় উচ্চমাধ্যমিকস্তরে চালু করা হয়েছে। প্রভিডেন্ট ফান্ডের সমস্ত কাজও অনলাইন ব্যবস্থার মাধ্যমে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। মাসপয়লা বেতন ব্যবস্থা চালু হয়েছে। এখন আর শিক্ষকদের তীর্থের কাকের মতো বেতনের জন্য অপেক্ষা করতে হয় না। ২০১৬ সালের উচ্চপ্রাথমিক স্তরে যে টেট পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছিল, সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের নিয়োগ প্রক্রিয়ার কাউন্সেলিং শুরু হয়েছে। ২০২২ সালে প্রাইমারি টেট পরীক্ষা হয়েছে এবং ডিসেম্বরে আরেকটি টেট পরীক্ষার প্রস্তুতি চলছে এবং খুব শিগগিরই প্রতিবছর এই পরীক্ষা এবং নিয়োগ প্রক্রিয়া শিক্ষাদপ্তর চালু করার লক্ষ্যে কাজ শুরু হবে।

আরও পড়ুন-মোদির জয়গান না করলেই এবার কেন্দ্রীয় অনুদান বন্ধ, ক্ষুব্ধ ব্রাত্য

মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের ক্ষেত্রে অনলাইন রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক— সবক্ষেত্রেই স্টুডেন্ট পোর্টাল চালু হয়েছে। ডুপ্লিকেট মার্কশিট, তথ্য সংশোধন প্রভৃতি ব্যবস্থা চালু হয়েছে। বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন ব্যবস্থা চালু হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী অধ্যাপক ব্রাত্য বসুর হাত ধরে পদোন্নতির জন্য তৈরি হয়েছে কমিটি। এর ফলাফল আগামীতে দেখতে পাওয়া যাবে। পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষাব্যবস্থায় একজন শিক্ষাবিদ শিক্ষামন্ত্রী, একজন মমতাময়ী মা দক্ষ প্রশাসক। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দূরদৃষ্টি এবং শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর আধুনিকমনস্কতা এই দুইয়ের যুগলবন্দি শিক্ষাব্যবস্থাকে ক্রমশই উন্নতির শিখরে পৌঁছে দিচ্ছেন।

Latest article