প্রতিবেদন : সংহতি দিবসে রাম-বামকে তুলোধোনা করল তৃণমূল কংগ্রেস। দেশের সাম্প্রদায়িক অস্থিরতার জন্য মূলত যে তারাই দায়ী, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল তৃণমূল নেতৃত্ব। নিজের ধর্ম নিজে পালন করো, কিন্তু সম্মান জানাও অন্য ধর্মকেও। মানুষকে ভালবাসো, অশ্রদ্ধা কোরো না। মঙ্গলবার এই বার্তাই ছড়িয়ে দেওয়া হল ময়দানে গান্ধীমূর্তির পাদদেশে তৃণমূল কংগ্রেসের সভামঞ্চ থেকে। তৃণমূলের সংখ্যালঘু সেলের ডাকে এদিন পালন করা হয় সংহতি দিবস। আপসহীন লড়াইয়ের ডাক দেওয়া হয় বিজেপি তথা গোটা সংঘ পরিবারের ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে।
আরও পড়ুন-রাজনৈতিক প্রতিহিংসা মেটাচ্ছে বিজেপি : নেত্রী
৩০ বছর আগে ১৯৯২ সালে এই ৬ ডিসেম্বরই গেরুয়া শিবিরের প্রত্যক্ষ মদতে ধর্মান্ধদের হাতে ধ্বংস হয়েছিল অযোধ্যার বিতর্কিত ধর্মীয় কাঠামো। এক কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিল ধর্মনিরপেক্ষতা এবং সম্প্রীতির পরিবেশ। লক্ষণীয়, এই ৬ ডিসেম্বরই ভারতের সংবিধানপ্রণেতা বাবাসাহেব ড. বি আর আম্বেদকরের প্রয়াণদিবস। এদিন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস তাঁর ভাষণে আগাগোড়াই ছিলেন বিজেপির বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণাত্মক। তাঁর কথায়, বিজেপির বিরুদ্ধে গর্জে উঠতে হবে সবাইকে। আগামী দিনে এই নামে আর কোনও দলের অস্তিত্বই থাকবে না। দলের সহসভাপতি তথা বিধানসভায় ডেপুটি চিফ হুইপ তাপস রায় বলেন, ৩০ বছর ধরে সংবিধানকে ধ্বংস করার চক্রান্ত চালাচ্ছে বিজেপি। ধ্বংস করছে শিক্ষা-সংস্কৃতিকে। এর বিরুদ্ধেই জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তীব্র লড়াই চলছে। দেশের সংহতি এবং সাংবিধানিক অধিকার রক্ষার শপথ নিতেই আয়োজন করা হয় এদিনের সভা।
আরও পড়ুন-রাজ্যের উদ্যোগে আজ থেকে ঝাড়গ্রামে সাঁওতালি বইমেলা
স্বল্প সময়ের প্রস্তুতিতে দলের নেতা-কর্মী-সমর্থক মিলিয়ে সভায় জনসমাবেশ ছিল লক্ষ্য করার মতো। বেলা ১১টা থেকেই আছড়ে পড়ে জনস্রোত। মঞ্চে দলীয় নেতৃত্বের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন মুসলিম, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, জৈন, শিখ ধর্মগুরুরা। বিভেদকামীদের বিরুদ্ধে তাঁরা সতর্ক করে দেন মানুষকে। দেশের ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শে আঘাত হানার জন্য বিজেপিকে কাঠগড়ায় তোলেন ৩ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, গোলাম রব্বানি, মলয় ঘটক, তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক মুখপাত্র কুণাল ঘোষ, সহসভাপতি তাপস রায়, জয়প্রকাশ মজুমদার, মেয়র পারিষদ বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায় এবং তৃণমূলের সংখ্যালঘু সেলের প্রধান এদিনের সভার আয়োজক হাজি নুরুল। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির তাৎপর্য ব্যাখ্যার পাশাপাশি বিরোধী দলনেতাকেও একহাত নেন কুণাল ঘোষ। তাঁর শ্লেষাত্মক মন্তব্য, এখন সনাতন হিন্দু সেজেছেন। সিবিআই-ইডির হাত থেকে বাঁচতে বিজেপিতে ভিড়ে গিয়ে চেনে বাঁধা কুকুরের মতো ঘেউ ঘেউ করছেন। আসলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভয় পাচ্ছেন শুভেন্দু। ভুগছেন অভিষেক ফোবিয়ায়।
আরও পড়ুন-দ্রাবিড়ের ক্লাসে শিখর-শ্রেয়স, মিরপুরে আজ সিরিজ রক্ষার লড়াই ভারতের
সিপিএমকে কড়া ভাষায় আক্রমণের পাশাপাশি বিজেপির ধর্মান্ধতার বিষ সম্পর্কে সতর্কবার্তা দেন কুণাল। তাঁর কথায়, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমাজকল্যাণ এবং উন্নয়নের সঙ্গে পাল্লা দিতে না পেরে বিভেদের বিষ ছড়াচ্ছে বিজেপি। তাদের ভ্রান্ত অর্থনীতির পরিণাম লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধি। মন্ত্রী মলয় ঘটকের কথায়, সংবিধান স্বীকৃত সকলের সমানাধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। যুব তৃণমূলের রাজ্য সভানেত্রী সায়নী ঘোষ সুসংহত ভারত গড়ার ডাক দিলেন সংহতি দিবসে। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য বিজেপির বিরুদ্ধে সাংবিধানিক অধিকারের অবমাননার অভিযোগ তোলেন। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক মদন মিত্র, নির্মল মাজি এবং বিধায়ক তথা মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার।