প্রতিবেদন : স্কুল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে মেধাতালিকায় নাম থাকা অপেক্ষারত প্রার্থীদের চাকরি দিতে প্রস্তুত রাজ্য সরকার। নিয়োগের জন্য মোট ১৪ হাজার ৯৭৭ পদ তৈরি করা হয়েছে (ইতিমধ্যেই ৫২৬১ জনের পদ হয়েছে। আরও ৯ হাজার ৭১৬ পদ তৈরি হবে)। এই মর্মে মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টে এফিডেভিড জমা দিয়েছেন এসএসসি কর্তৃপক্ষ। এদিন সল্টলেকের বিকাশ ভবনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে একথা জানান শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। তাঁর কথায়, আদালতে মূলত দুটি প্রস্তাব সামনে রেখে নিয়োগের অনুমতি চেয়েছে এসএসসি।
আরও পড়ুন-ধর্ষণ ও দেহব্যবসায় নামিয়ে যাবজ্জীবন বিজেপি নেতার
১. যে নিয়োগগুলিতে বিতর্ক তৈরি হয়েছে এবং যাঁদের মেধাতালিকায় নাম রয়েছে এঁদের সকলকেই নিয়োগ করার প্রস্তাব রাজ্য সরকারের। ২. বিতর্কিতদের নিয়োগ সম্পূর্ণ বাতিল করে শূন্যপদগুলিতে মেধাতালিকার ক্রমানুযায়ী নিয়োগ করার প্রস্তাব রাজ্য সরকারের। দুই প্রস্তাবকে সামনে রেখে কোর্ট যে সমাধানসূত্রে অনুমতি দেবে, সেই প্রক্রিয়াতেই দ্রুত নিয়োগ শুরু করতে চায় এসএসসি। এদিন একইসঙ্গে ব্রাত্য বসু বলেন, রাজ্য সরকারের ওপর ভরসা রেখে আন্দোলনকারী চাকরিপ্রার্থীদের বলব, আপনারা আন্দোলন প্রত্যাহার করুন। বাড়ি ফিরে যান। উৎসবের দিনগুলি পরিবারের সঙ্গে সময় কাটান। তাঁর সংযোজন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একেবারেই চান না কারও চাকরি চলে যাক। প্রত্যেকেরই আত্মীয়-পরিজন রয়েছে। চাকরি চলে গেলে এই পরিবারগুলির ওপর বিপর্যয় নেমে আসবে। এরপরই শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এখন পুরোটাই নির্ভর করছে আদালতের রায়ের ওপর। আদালতের রায় দেখে আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।
আরও পড়ুন-সিঙ্গাপুরে ৪ দিন দুর্গাপুজো, সমুদ্রে বিসর্জন
আন্দোলনকারী চাকরিপ্রার্থীরা যেমন প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন, শিক্ষামন্ত্রীও এসএসসি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছেন, একইসঙ্গে তাঁরা আলোচনার জন্য চিঠি দিয়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। চাকরিপ্রার্থীদের তরফে একটি প্রতিনিধি দল অভিষেকের সঙ্গে দেখা করে সমস্যা ও নিয়োগ জটিলতা কাটাতে অনুরোধ করেন। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও উদ্যোগ নেন নিয়োগ সমস্যা সমাধানের। মুখ্যমন্ত্রী ও দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলেন, পরামর্শ নেন। ফলে একদিকে সরকারের তরফে অন্যদিকে দলীয় ভাবে সমস্যা মেটানোর আন্তরিক উদ্যোগ নেওয়ায় একটি সমাধানসূত্র বের করা গিয়েছে।
এসএসসির চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার বলেন, গ্রুপ-সির জন্য অতিরিক্ত ১৯৮১টি পদ তৈরি করতে হবে। গ্রুপ-ডির জন্য তৈরি করতে হবে অতিরিক্ত ৪৩৭৭টি পদ। এছাড়া নবম-দশম ১০৭৭ এবং একাদশ-দ্বাদশে ২৩২১টি পদ তৈরি করতে হবে। সব মিলিয়ে মোট ৯৭১৬টি অতিরিক্ত পদ তৈরি করতে হবে। আগেই নবম-দশম ও একাদশ-দ্বাদশ মিলিয়ে ৫২৬১টি পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। ফলে এককালীন মোট ১৪ হাজার ৫০০টি পদে নিয়োগের জন্য প্রস্তুত এসএসসি। ব্যতিক্রমী নিয়োগ রয়েছে নবম-দশমের ক্ষেত্রে ২২২ এবং একাদশ-দ্বাদশের ক্ষেত্রে ৩৯।
রাজ্য সরকার চায়, অপেক্ষমানদের তালিকায় থাকা প্রত্যেকেই চাকরি পাক, বক্তব্য ব্রাত্য বসুর।
আরও পড়ুন-আমি দৃষ্টান্ত রাখতে চেয়েছিলাম
মঙ্গলবার তৃণমূল ভবনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক ও মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আন্তরিক ভাবে চান, কর্মসংস্থান হোক। ন্যায্য দাবিদাররা চাকরি পান। ভুল হলে ভুল সংশোধন হবে। অন্যায় করলে শাস্তি পাবে। আইন আইনের পথে চলবে। এদিন বিজেপিকে তোপ দেগে কুণাল বলেন, এরা বড় বড় কথা বলে কোন মুখে। ত্রিপুরায় ১০ হাজার ৩২৩ জন শিক্ষক-শিক্ষিকার পাকা চাকরি খেয়েছে৷ এখন এরা যখন চাকরি ফেরতের দাবিতে আন্দোলন করছে তখন তাদের ওপর লাঠি-কাঁদানে গ্যাস-জল কামান চালাচ্ছে। কুণালের সংযোজন, মুখ্যমন্ত্রী নিজে এখানে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে নিয়োগের বিষয়টি দেখার নির্দেশ দিয়েছেন। সাংগঠনিক ভাবে আলাদা বৈঠক করেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বিষয়টি সরকারি হলেও দল উদ্যোগ নিয়েছে সমস্যা সমাধানের। আন্দোলনকারীদের সাহায্য করে তৃণমূল কংগ্রেস তার কর্তব্য পালন করেছে। ভুল শোধরানো- একদিকে শাস্তির ব্যবস্থা, অন্যদিকে কর্মসংস্থান— সবটাই করা হয়েছে।
আরও পড়ুন-ইতিহাস তৈরি করে সুপ্রিম কোর্টে শুরু হল লাইভ স্ট্রিমিং
দুই প্রস্তাব
১. যে নিয়োগগুলিতে বিতর্ক তৈরি হয়েছে এবং যাঁদের মেধাতালিকায় নাম রয়েছে এঁদের সকলকেই নিয়োগ করার প্রস্তাব রাজ্য সরকারের।
২. বিতর্কিতদের নিয়োগ বাতিল করে শূন্যপদগুলিতে মেধাতালিকার ক্রমানুযায়ী নিয়োগ করার প্রস্তাব রাজ্য সরকারের।
যোগ্যরা পাবেন প্রাপ্য : অভিষেক
প্রতিবেদন : এসএসসি নিয়ে দুই প্রস্তাব কোর্টে পেশ করার পরেই ট্যুইট করলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বললেন, আশা করি এবার সব যোগ্য
প্রার্থীরা তাঁদের প্রাপ্য পাবেন। তবে
ধন্যবাদ জানাই মুখ্যমন্ত্রীকে, যিনি এই জট কাটাতে সরকারের পক্ষে দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
১৪ হাজার চাকরি হবে। এখন কোর্টের দিকেই তাকিয়ে সকলে।