আমি দৃষ্টান্ত রাখতে চেয়েছিলাম

এখনও লর্ডসে বিদায়ী ম্যাচের ঘোর কাটেনি। ব্যস্ততার মধ্যেও নিজের বাড়িতে বসে 'জাগো বাংলা'কে দিলেন একান্ত সাক্ষাৎকার।

Must read

চিত্তরঞ্জন খাঁড়া: লর্ডসে ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়ে শহরে ফিরেছেন ঝুলন গোস্বামী। এখনও লর্ডসে বিদায়ী ম্যাচের ঘোর কাটেনি। ব্যস্ততার মধ্যেও নিজের বাড়িতে বসে ‘জাগো বাংলা’কে দিলেন একান্ত সাক্ষাৎকার।

প্রশ্ন: প্রাক্তন হওয়ার পর ৭২ ঘণ্টা কেটে গেল। অবসর পরবর্তী জীবনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া শুরু করেছেন?
ঝুলন: আমি যে প্রাক্তন হয়েছি। এখনও ব্যাপারটা মনের মধ্যে গেঁথে যায়নি। তিন দিন কাটলেও এখনও একটা ঘোরের মধ্যে আছি। আরও কয়েকটা দিন পর বুঝতে পারব।

আরও পড়ুন-বাংলার পুজোয় কড়া নিরাপত্তা দিতে নবান্নে ২৪ ঘণ্টার কন্ট্রোলরুম

প্রশ্ন: এখন তো সব বেড়াজাল থেকে মুক্ত। যেখানে খুশি যেতে পারেন, যা খুশি তাই খেতে পারেন!
ঝুলন: একদম তাই। আর সকালে উঠেই ট্রেনিংয়ের জন্য মাঠে ছুটতে হবে না। খাওয়া দাওয়াতে আর নিষেধাজ্ঞা নেই। এবার বিশ্বকাপ খেলে ফেরার পর দু’এক দিন লুচির লোভ সামলাতে পারিনি। এখন তো লুচি, ফুচকা, বিরিয়ানি কোনও কিছুতেই বিধিনিষেধ নেই।

প্রশ্ন: পাঁচ বছর আগে লর্ডসেই ২০১৭ বিশ্বকাপ ফাইনালে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল। সেই লর্ডস বিদায়ী ম্যাচে আপনাকে অনেক কিছু কিন্তু ফিরিয়ে দিল। তাই না?

ঝুলন: অবশ্যই লর্ডসে শেষ ম্যাচ খেলার স্মৃতি কখনও ভুলতে পারব না। প্রত্যেকটা মুহূর্ত উপভোগ করেছি। চেষ্টা করেছিলাম, শেষ ম্যাচেও নিজের সেরাটা দেওয়ার। তবে বিশ্বকাপ আর দ্বিপাক্ষিক সিরিজের মধ্যে তুলনা হয় না। বিশ্বকাপ না পাওয়ার আক্ষেপ থেকেই যাবে। অলিম্পিক পদকের সঙ্গে বাকি পদকের তুলনা হয় নাকি!

প্রশ্ন: শেষ ম্যাচে আবেগ এতটা নিয়ন্ত্রণে রাখলেন কীভাবে? আপনার চোখ দিয়ে তো এক ফোঁটা জল পড়ল না?

ঝুলন: চেষ্টা করেছি আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে। কারণ, আমি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লে দলের বাকিদের খেলায় প্রভাব পড়ত। আমাদের ৩-০ তে সিরিজ জয়ের সুযোগ ছিল। সেটা মাথায় রাখতে হয়েছিল। তবে চোখের কোণে জল এসেছিল। হয়তো সবাই বুঝতে পারেনি।

আরও পড়ুন-জল জীবন মিশনে সম্মানিত পশ্চিমবঙ্গ, কেন্দ্রকে ধন্যবাদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের

প্রশ্ন: চাকদহ থেকে লর্ডস—দীর্ঘ ২০ বছরের যাত্রাপথ। ভোরের লোকাল ট্রেনে শিয়ালদহ স্টেশন, বিবেকানন্দ পার্ক। প্রতিদিনের জীবনযুদ্ধ কি আপনার এই সাফল্যের অনুপ্রেরণা ছিল?

ঝুলন: অস্বীকার করার জায়গা নেই। পরিশ্রম, লড়াই করেছিলাম বলেই তো সামনের সব বাধা পেরিয়ে যেতে পেরেছি। সময়ের সঙ্গে চ্যালেঞ্জগুলো গ্রহণ করে এগিয়ে গিয়েছি। প্রত্যেকটা চ্যালেঞ্জ আলাদা ছিল। সে ভাবেই নিজেকে তৈরি করেছিলাম। সব থেকে বড় ব্যাপার, যা করেছি সেটা সততার সঙ্গে করেছি।

প্রশ্ন: ইডেনে মহিলা বিশ্বকাপ ফাইনালে বল গার্ল। সেই মেয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২০ বছর কাটিয়ে দিলেন। মেয়েদের ক্রিকেট নিয়ে সাধারণ মানুষের ধারণা বদলে দিতে পেরে কি গর্ব অনুভব করছেন?

ঝুলন: বদলে দিতে পেরেছি কি না জানি না। চেষ্টা করেছি সব সময়। নতুন প্রজন্মের মেয়েদের অনুপ্রাণিত করে মাঠে আনতে গেলে আমাদের ভাল খেলতে হবে, আমাদের দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে—এই চিন্তাভাবনাই মাথায় ছিল। সেটা কিছুটা করতে পেরেছি বলেই তৃপ্তিবোধ করছি।

আরও পড়ুন-তিন গোলে হার সুনীলদের

প্রশ্ন: কুড়ি বছরের সফরে সেরা মুহূর্ত কোনটা?

ঝুলন: প্রত্যেকটি মুহূর্তই সেরা। যেদিন অভিষেক হয়েছিল ভেবেছিলাম এটাই সেরা মুহূর্ত। তাই আলাদা করে কোনও একটা মুহূর্তকে সেরা বলতে পারব না। জীবনের প্রথম উইকেট যেমন সেরা, লর্ডসে শেষ উইকেটও একই রকম সেরা।

প্রশ্ন: পরবর্তী ঝুলন গোস্বামী কে হতে পারেন? রেণুকা সিং তো আপনার বিদায়ী ম্যাচ মাতিয়ে দিলেন?

ঝুলন: এভাবে বলা যায় না। অনেকেই আছে ভাল খেলছে। রেণুকা খুবই প্রতিভাবান। খুব ভাল বোলিং করছে। নিয়মিত উইকেট পাচ্ছে। ভবিষ্যতেও ভাল করবে আশা রাখি।

আরও পড়ুন-পুলিশের অ্যাপ

প্রশ্ন: দীপ্তি শর্মার মানকাডিং আউট নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে। কী বলবেন?
ঝুলন: জানি না কেন এত কথা হচ্ছে। দীপ্তি নিয়মের বাইরে গিয়ে তো কিছু করেনি। তাহলে এত বিতর্ক কেন হচ্ছে? (বিরক্তি নিয়ে প্রশ্ন)

প্রশ্ন: সব ফরম্যাট থেকে অবসর নিয়েছেন। তাহলে কি মেয়েদের প্রথম আইপিএল খেলবেন না?
ঝুলন: বিসিসিআই আগে আইপিএল নিয়ে বিস্তারিত পরিকল্পনা জানাক। এখনও অনেক দেরি আছে। তাছাড়া আমার হাতে সব কিছু নেই। দেখা যাক কী হয়।

প্রশ্ন: অবসরের পর কোন ভূমিকায় দেখা যেতে পারে আপনাকে? ক্রিকেট প্রশাসনে আসবেন নাকি কোচিং বা মেন্টরশিপই পছন্দ?
ঝুলন: সময় বলবে। এখনও এসব নিয়ে ভাবার সময় পাইনি।

প্রশ্ন: সিএবি ঘোষণা করেছে, ইডেন গার্ডেন্সে পঙ্কজ রায়, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়দের পাশে আপনার নামেও এবার একটা স্ট্যান্ড হবে।
ঝুলন: এটা তো বিরাট সম্মান। সিএবি-র প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। ওরা আমার পাশে থেকেছে সব সময়। বিসিসিআই, সিএবি-র সমর্থন, ভালবাসা ছাড়া এই দীর্ঘ সফর সম্পূর্ণ করা সম্ভব হত না।
প্রশ্ন: সামনে দুর্গাপুজো। কী পরিকল্পনা?
ঝুলন: পুজোর আগে শেষ ম্যাচ খেলে বাড়ি ফিরতে পেরে খুব ভাল লাগছে। মা’র শরীর ভাল নেই বলে এবারও চাকদাহ’র বাড়িতে পুজো হবে না। বন্ধুদের সঙ্গেই হইহুল্লোড় করে পুজোটা এবার কাটাব ঠিক করেছি।
প্রশ্ন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
ঝুলন: আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ। সবাইকে পুজোর শুভেচ্ছা।

Latest article