প্রতিবেদন : রাত জেগে ঠাকুর দেখার ছাড়পত্র মিলেছে। কিন্তু এ বছরও মণ্ডপে ঢুকে ঠাকুর দেখার সুযোগ হল না রাজ্যের মানুষের। গত বছরের পর এবারেও মণ্ডপের বাইরে থেকে প্রতিমা দর্শন করেই মন ভরাতে হবে দর্শনার্থীদের। দুর্গাপুজো থেকে কালীপুজো মায় জগদ্ধাত্রী পুজোতেও নিয়ম বহাল থাকবে। রাজ্য সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে শুক্রবার এই নির্দেশ জারি করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দালের নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চ গতবার ১৯ ও ২১ অক্টোবর যে নির্দেশ জারি করেছিলেন তা এবছরও বহাল রাখা হল। এদিন এ ব্যাপারে সায় জানিয়েছে রাজ্য সরকার। রাজ্যের তরফে অ্যাডভোকেট জেনারেল এদিন আদালতে জানান, আদালত মণ্ডপে নো-এন্ট্রি রাখার নির্দেশ দিলে রাজ্য সরকার তাতে কোনওরকম আপত্তি করবে না। ফলে মনে করা হচ্ছে এবারেও পুজো মণ্ডপ থাকছে দর্শকশূন্য। গত বছর ১৯ এবং ২১ অক্টোবর করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে পুজো মণ্ডপগুলিকে ‘নো এন্ট্রি জোন’ বলে ঘোষণা করেছিল কলকাতা হাইকোর্ট। একইসঙ্গে একগুচ্ছ বিধিনিষেধও আরোপিত করা হয়েছিল। চলতি বছরেও সেই একই বিধিনিষেধ জারি থাকবে। অর্থাৎ ছোট পুজো মণ্ডপগুলিতে উপস্থিত থাকতে পারবেন সর্বাধিক ১৫ জন পুজো উদ্যোক্তা এবং বড় পুজোর ক্ষেত্রে উপস্থিত থাকতে পারবেন সর্বাধিক ২৫ জন পুজো উদ্যোক্তা। যাঁরা মণ্ডপে প্রবেশ করবেন তাঁদের তালিকা আগে থেকে ঠিক করে রাখতে হবে এবং উদ্যোক্তাদের সেই তালিকা দেখাতে হবে। নিয়মিত এই নামগুলি বদল করা যাবে না। প্রতিটি পুজো মণ্ডপের বাইরে ব্যারিকেড করতে হবে।
আরও পড়ুন : সচিত্র ভোটার পরিচয়পত্র, পৌঁছে যাবে বাড়িতেই
ছোট পুজো মণ্ডপগুলির ক্ষেত্রে পাঁচ মিটারের দূরত্বে করতে হবে ব্যারিকেড, বড় পুজোগুলির ক্ষেত্রে সেই দূরত্ব হবে ১০ মিটার। করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে মণ্ডপে প্রবেশ করতে পারবেন না কোনও দর্শনার্থীরাই। ভার্চুয়ালি পুজো দেখার ক্ষেত্রে জোর দেওয়া হবে। তবে মনে করা হচ্ছে এই রায় এবারে খুব একটা ধাক্কা দেবে না পুজো উদ্যোক্তাদের। কেননা এমন রায় ও বিধিনিষেধ যে এবারেও আরোপিত হতে পারে সেটা আগেভাগেই আঁচ করতে পেরেছিলেন পুজো উদ্যোক্তারা। তাই এবারে সবাই এমনভাবে মণ্ডপ করেছেন বা করছেন যাতে করে বাইরে থেকেই দর্শনার্থীরা মণ্ডপ ও প্রতিমা দর্শন করতে পারেন। সেই মতো করেই অনেকেই এবারে তাঁদের চিরাচরিত পুজো মণ্ডপের মুখ ঘুরিয়ে তৈরি করছেন বা প্রতিমার মুখ ঘুরিয়ে দিচ্ছেন। বিশেষ করে কলকাতার বুকে এই প্রবণতা বেশ ভালই। আশপাশের জেলাগুলিতে তো বটেই, রাজ্যের অনান্য অনেক এলাকাতেই এবারে প্রথম থেকেই প্রায় সব উদ্যোক্তারাই এই বিধিনিষেধ যে এবারেও আরোপিত হতে পারে, সেটা মাথায় রেখেই মণ্ডপ নির্মাণে মন দিয়েছেন। তাই আগামী দিনে আদালতের নির্দেশ নেমে এলেও তা পুজোপ্রেমী মানুষকে ঘরবন্দি রাখতে পারবে বলে অনেকেই মনে করছেন না। কোভিডের তৃতীয় ঢেউয়ের কথা মাথায় রেখেই এবারেও কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছিল। সেই মামলারই শুনানি শুরু হয়েছে শুক্রবার থেকে। সেখানেই আদালত রাজ্য সরকারের অবস্থান জানতে চেয়েছিল। পুজোর সময়ে তাঁরা কীভাবে ভিড় সামাল দেবেন, মণ্ডপ কীভাবে কোভিড মুক্ত রাখবেন সেই বিষয়ে রাজ্যের অভিমত জানতে চান বিচারপতি। সেখানেই রাজ্য সরকারের তরফে অ্যাডভোকেট জেনারেল জানান, আদালত মণ্ডপে নো-এন্ট্রি রাখার নির্দেশ দিলে রাজ্য সরকার তাতে কোনওরকম আপত্তি করবে না।