শুধু এপার বাংলায় নয়, শরৎ এসেছে ওপার বাংলাতেও। বলছি প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশের (Durga Puja- Bangladesh) কথা। নীল আকাশে পেঁজা তুলোর মেঘ, ঘাসের বুকে শিউলির মেলা, নদীর ধারে কাশ— দুই বাংলার শরতের ছবি মোটামুটি একইরকম। হবে নাই বা কেন? মধ্যিখানে কাঁটাতারের বেড়া ওঠার আগে একটাই তো দেশ ছিল।
আমরা পশ্চিমবঙ্গের মানুষ। বাংলায় কথা বলি, লিখি। বাংলাদেশের মানুষরাও তাই। বাংলা ভাষার জন্য ওঁরা রক্ত দিয়েছেন। ওঁদের জন্যই একুশে ফেব্রুয়ারি। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। মুক্তিযুদ্ধে আমরা ছিলাম ওঁদের পাশে। সেই ইতিহাস সকলের জানা।
কথায় আছে, সারা পৃথিবীতে যেখানে বাঙালি, সেখানেই দুর্গাপুজো। বাংলাদেশও আছে সেই তালিকায়। সেটাই তো স্বাভাবিক। কারণ দেশটা তো বাঙালি প্রধান।
কয়েকদিন আগেই ঘুরে এলাম বাংলাদেশ। মূলত রাজধানী শহর ঢাকা থেকে। দেখে এলাম দুর্গাপুজো প্রস্তুতি। খোঁজখবর নিয়ে জানলাম, প্রায় ৩২ হাজারের বেশি দুর্গাপুজো হয় বাংলাদেশে। সংখ্যাটা বছর বছর বাড়ছে। ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় দুর্গাপুজো হয় জাঁকজমকপূর্ণভাবে। হিন্দুদের পাশাপাশি অন্য ধর্মের মানুষরাও শারদোৎসবে অংশ নেন।
বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় দুর্গাপুজো (Durga Puja- Bangladesh) আয়োজিত হয় ঢাকা শহরের চকবাজারে অবস্থিত শ্রীশ্রী ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে। এই পুজো হয়ে আসছে বহু বছর ধরে। ঘুরে দেখলাম মন্দিরটি। এখানে পূজিতা হন অষ্টধাতুর দেবী দশভুজা। মূর্তিটি অপূর্ব সুন্দর। অসুরদলনী দুর্গা। সঙ্গে লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ। দিলাম পুজো। কথা বললাম মন্দিরের পুরোহিত নিখিল চক্রবর্তীর সঙ্গে। তিনি জানালেন, ‘‘ঢাকেশ্বরী মন্দির বাংলাদেশের জাতীয় মন্দির হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। প্রায় ৯০০ বছরের পুরনো। জানা যায়, রাজা বল্লাল সেন মা দুর্গার স্বপ্নাদেশ পেয়ে এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। জঙ্গলের মধ্যে তিনি দেবী মূর্তি পান। যেদিন মন্দির প্রতিষ্ঠা হয়, সেদিন ৫০০ ঢাক বেজেছিল। কথিত আছে, ঢাকের আওয়াজ যতদূর গিয়েছিল, সেই অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছিল ঢাকা শহর। সম্ভবত সেই থেকেই ঢাকেশ্বরী নামকরণ। একটা সময় ঢাকেশ্বরী মন্দিরের মাকে কিছুদিনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিল কলকাতার শোভাবাজার অঞ্চলে। পরে আবার এই মন্দিরে হয় মায়ের প্রতিষ্ঠা। নিত্যপুজো হয়। মন্দিরে ভক্ত সমাগম হয় সারা বছর ধরেই। বাংলাদেশ, ভারত তো বটেই, অন্যান্য দেশ থেকেও বহু মানুষ এই মন্দিরে মায়ের দর্শনে আসেন। শারদীয়া দুর্গাপুজো উপলক্ষে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে বিশেষ পুজো আয়োজিত হয়। প্রতিষ্ঠিত দেবী মূর্তি ছাড়াও মন্দির চত্বরে স্থায়ী মণ্ডপে মৃন্ময়ী দুর্গামূর্তি এনে দেবীর আরাধনা করা হয়। দশমীর পরেও সেই মূর্তি মণ্ডপে থাকে। সারা বছর। পরের বছর পুজোর আগে পুরনো মূর্তি বিসর্জন দিয়ে নতুন মূর্তি মণ্ডপে প্রতিষ্ঠা এবং পুজো করা হয়। পুজো উপলক্ষে আয়োজিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। মহানগর সর্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটি ও বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ মূলত এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ঢাকেশ্বরী মন্দিরের পাশাপাশি ঢাকা শহরে কয়েকশো দুর্গাপুজো আয়োজিত হয়। পুজোর সময় ভারত সহ অন্যান্য দেশের বহু পর্যটক ঢাকা শহরে আসেন।”
ঢাকেশ্বরী মন্দিরের খুব কাছেই রমনা কালীমন্দির। ঢাকা বাংলা অ্যাকাডেমির ঠিক বিপরীতে। কালীপুজোর পাশাপাশি রমনা কালীমন্দিরে সাড়ম্বরে শারদীয়া দুর্গাপুজো অনুষ্ঠিত হয়। ভক্ত সমাগম হয় উল্লেখ করার মতো। বিতরণ করা হয় প্রসাদ। দেখলাম, জোরকদমে চলছে পুজোর প্রস্তুতি। তৈরি হচ্ছে প্রতিমা। বাঁধা হচ্ছে মণ্ডপ। কয়েকদিনের মধ্যেই বেজে উঠবে ঢাক।
শহরের গুলশন অঞ্চলে আয়োজিত হয় বেশ কয়েকটি বড় বাজেটের দুর্গাপুজো। গুলশন-বনানী সর্বজনীন পূজা ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ঢাকার বনানী মাঠে মহালয়া উপলক্ষে আয়োজিত হয় জমজমাট অনুষ্ঠান। সূচনা হয় চণ্ডীপাঠের মধ্যে দিয়ে।
ঢাকার পাশাপাশি টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, বরিশাল, যশোর, পাবনা প্রভৃতি জায়গায় দুর্গাপুজো আয়োজিত হয় সাড়ম্বরে। মন্দির, কিছু সর্বজনীন পুজোর পাশাপাশি বিভিন্ন বনেদি বাড়িতে আরাধনা করা হয় দশভুজার। সবমিলিয়ে বাংলাদেশের দুর্গাপুজো দেখার মতো।
কী ভাবছেন? এবারের পুজো কাটাবেন বাংলাদেশে (Durga Puja- Bangladesh)? তাহলে তোড়জোড় শুরু করুন। পাসপোর্ট এবং ভিসা থাকলে কোনও চিন্তা নেই।
বিভিন্ন পুজোমণ্ডপ ঘোরার পাশাপাশি ঢাকা শহরে অবশ্যই ঘুরে দেখবেন ভাষা শহিদ স্মারক, কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধিস্থল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শিখা চিরন্তন, বঙ্গবন্ধুর বাসভবন, বঙ্গবন্ধু মিউজিয়াম, পদ্মাসেতু, লালন সেতু, বঙ্গবন্ধু সেতু ইত্যাদি দর্শনীয় স্থান। পদ্মা এবং যমুনার শোভা এককথায় অসাধারণ। বেড়ানোর জন্য নিতে পারেন সিএনজির সাহায্য।
বাড়ির জন্য শাড়ি কিনতে চান? যেতে পারেন টাঙ্গাইল। ঢাকা থেকে খুব দূরে নয়। আছে বাস। কবিতার শহর টাঙ্গাইল তাঁতের শাড়ির জন্য বিখ্যাত। ঘুরে দেখতে পারেন তাঁতিদের গ্রাম। মিল খুঁজে পাবেন এপারের ফুলিয়া, ধনিয়াখালির সঙ্গে। বেড়ানোর পাশাপাশি অবশ্যই নেবেন পদ্মার ইলিশ এবং টাঙ্গাইলের বিখ্যাত চমচমের স্বর্গীয় স্বাদ। তাহলে, হেসে হেসে ভেসে ভেসে, এবার পুজোয় বাংলাদেশে।
কীভাবে যাবেন?
কলকাতা রেল স্টেশন থেকে ছাড়ে মৈত্রী এক্সপ্রেস। ঢাকা পর্যন্ত। যেতে পারেন কলকাতা থেকে বাসে অথবা বিমানে। বনগাঁ পেট্রাপোল বর্ডার পেরিয়ে বেনাপোল সীমান্ত থেকে পাওয়া যায় বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাওয়ার বাস।
কোথায় থাকবেন?
ঢাকা সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন শহরে আছে অসংখ্য হোটেল, গেস্ট হাউস। আগে থেকে যোগাযোগ করে গেলেই ভাল হয়। সুবিধার জন্য ঘেঁটে দেখুন বিভিন্ন ওয়েবসাইট। বেড়ানোর জন্য সাহায্য নিতে পারেন হোটেল কর্তৃপক্ষের। তাঁরা অতিথিপরায়ণ। হাসিমুখে গাড়ির ব্যবস্থা করে দিতে পারেন।