ন্যায্য পাওনার দাবিতে লড়তে এবার পথেই হবে নামতে

রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জন্যই বঞ্চনা। তাই প্রতিবাদই প্রতিরোধের একমাত্র পথ। গরিবের রক্ত শুষে খাওয়ার মোদি-শাহদের নোংরা রাজনীতি রুখতে পথে এবার নামতেই হবে। লিখেছেন শিক্ষক এস এম শামসুদ্দিন

Must read

১০০ দিনের কাজের টাকা বন্ধের প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানাতে রাজ্যের সমস্ত ব্লকে তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া যাওয়ার পথে আসানসোলে তিনি সংবাদ মাধ্যমে দলের একনিষ্ঠ কর্মীদের এই আহ্বান জানিয়েছেন।

আরও পড়ুন-আগাছা

গত ৯ মাস থেকে রাজ্যের অদক্ষ শ্রমিকরা জব কার্ডে কাজ করেও টাকা পাচ্ছে না। দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী দিনমজুররা কাজ করেও টাকা পাচ্ছেন না । ফলে অসহায় অবস্থায় তাঁদের দিন কাটছে। রাজ্যের পঞ্চায়েত দপ্তর থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে এই বকেয়া টাকা পরিশোধ করতে লেখা হলেও কেন্দ্রীয় সরকার এ বিষয়ে কিছু ব্যবস্থা নিচ্ছে না। বাধ্য হয়ে মুখ্যমন্ত্রী এই বঞ্চনার প্রতিবাদে আগামী ৫ ও ৬ তারিখ রবি-সোমবার রাজ্যের মানুষকে আন্দোলন ও বিক্ষোভ জানাতে আহ্বান জানিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর কথায় কেন্দ্রীয় সরকার আমাদের দয়া বা করুণা করছে না। আমাদের রাজ্য থেকে ওরা ট্যাক্স নিয়ে যায়, ব্যবসা-কর নিয়ে যায় অথচ রাজ্যের দিনমজুর অসহায় মানুষদের বঞ্চিত করছে। এটা ওদের পরিকল্পিত বঞ্চনা।

আরও পড়ুন-যুদ্ধের মাশুল গুনছে প্রকৃতি স্টপ দ্য ওয়ার

গত ৯ মাসে কেন্দ্রের কাছে রাজ্যের পাওনা ৭ হাজার ২৯ কোটি ৪৭ লক্ষ টাকা। অদক্ষ শ্রমিকদের পাওনা ৩ হাজার ২৮৩ কোটি টাকা। আর কাজের সামগ্রী ও উপাদান বাবদ বাকি ৩ লক্ষ ৭৪২ কোটি ৫৪ লক্ষ টাকা।
রাজ্যের পঞ্চায়েত দপ্তরের মন্ত্রী পুলক রায় সাংবাদিকদের জানিয়েছেন রাজ্যে রাজ্যে ১ কোটি ৪৩ লক্ষ মানুষের জব কার্ড আছে। এর মধ্যে ১ কোটি ৪ লক্ষ মানুষ কাজ করে, বাকি ৩৯ লক্ষ মানুষের কার্ড থাকলেও কাজ করে না। নিয়মানুসারে কাজ করার ১৫ দিনের মধ্যে কাজের টাকা প্রত্যেকটা জব কার্ড ধারীদের প্রত্যেকের অ্যাকাউন্টে সরাসরি ঢুকে যায়। অথচ গত ৯ মাসে রাজ্যের অসহায় দরিদ্র মানুষ কাজ করেও টাকা না হা পিত্তেস করছে। এমনিতেই দরিদ্র অসহায় মানুষের দুর্যমূল্যের সাথে প্রতিনিয়ত যুদ্ধে করে বেঁচে বড়তে থাকা। আর যাঁদের নির্দিষ্ট কোনও আয় নেই সে দিনমজুর পরিবারের পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকা কি কঠিন তা উপলব্ধি করলে বোঝা যায়। কেন্দ্রীয় সরকার আইন করে নিজেরাই আইন ভাঙছে বলে কেন্দ্র সরকারকে দোষারোপ করেছেন রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী পুলক রায়।

আরও পড়ুন-এই সময়ের তিনটি পত্রিকা

রাজ্যের বি জে পি সাংসদেরা একশো দিনের কাজে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ করে অবিলম্বে এই রাজ্যে কাজ বন্ধের আবেদন করেছে। কিন্তু টোটাল পার্সন ওয়ার্কড (TOTAL PERSONS WORKED)-এর দেওয়া হিসাব বলছে একশো দিনের কাজে পশ্চিমবঙ্গ অন্যান্য রাজ্য থেকে এগিয়ে শুধু নয় শীর্ষে। এদের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুসারে ২০২১-’২২ বর্ষে এ রাজ্যের মোট কর্মদিবস ছিল ১.১ কোটি।
NATIONAL RURAL EMPLOYMENT ACT 2005 অনুসারে মানবদিবস তৈরিতে পশ্চিমবঙ্গ ভারতে দ্বিতীয়। আর কর্মশক্তি সৃষ্টিতে এ রাজ্য প্রথম স্থান দখল করেছে। ৩১ মার্চের পর কেন্দ্রীয় সরকারের রিপোর্টেই উল্লেখ রয়েছে পশ্চিমবঙ্গে ৩৬ কোটি ৪২ লক্ষ ৪৮ হাজার ৫৯৬ মানবদিবস তৈরি হয়েছে।

আরও পড়ুন-যুবভারতী ভরানোর ডাক দিলেন সুনীল

কেন্দ্রীয় সরকার একাধিক রিপোর্টে যখন এমন রিপোর্ট উল্লেখ করেছে আবার তারাই দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ৯ মাস একশো দিনের টাকা বন্ধ রেখে অসহায় দরিদ্র দিনমজুরদের পেটে লাথি মারছে, অধিকার ও ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করছে। পঞ্চায়েত দপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুসারে হাওড়া জেলায় একশো দিনের কর্মীদের বাকি ১০০ কোটি, জলপাইগুড়ি জেলার ৮৫ কোটি ও বাঁকুড়া জেলার ৩৪ কোটি টাকা বাকি।
শুধু নয় এই নয় কর্মসংস্থান নিশ্চিয়তা প্রকল্পে কেন্দ্র রাজ্যের বরাদ্দ থেকেও বঞ্চিত করছে বলে অভিযোগ। পশ্চিমবঙ্গে এই খাতে পাওনা ৫০০০ হাজার কোটি টাকা। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রের এই বঞ্চনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন। রাজ্যের পাওনা টাকা দেওয়ার দাবি জানালেও মোদি সরকার সে-বিষয়ে কর্ণপাত করছে না তদুপরি গ্রামাঞ্চলে ১০০ দিনের কাজে বরাদ্দ টাকা কমিয়েছে যা হতবাক করার মতো ঘটনা বলে উল্লেখ করেছেন ইন্ডিয়া রেটিংস সংস্থা। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামণ আগামী অর্থবর্ষে ৭৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন এই খাতে। যেটা পূর্বের অর্থবর্ষে তুলনায় কম।

আরও পড়ুন-রাজ্যসভায় বিজেপির হয়ে মাঠে মায়াবতী

এই ধারাবাহিক বঞ্চনা ও অধিকার থেকে পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ দিনমজুর পরিবারদের বঞ্চনার প্রতিবাদে প্রতিবাদ জানানো ছাড়া উপায় কী! ক্ষুদ্র রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের স্বার্থে বা বিরুদ্ধ মনোভাবাপন্ন গোষ্ঠী বা দলকে চাপে রেখে দাস বানাতে গিয়ে অসহায় দরিদ্র নিরন্ন মানুষদের বাঁচার ন্যূনতম অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। এই ধরনের কৌশল ভারতবর্ষের মতো এই মহান দেশে যেখানে ভাষা সংস্কৃতি পোশাক খাদ্যের ভিন্নতার মধ্যে ঐক্যের মহান মিলনভূমিকে কলুষিত করার অপপ্রয়াস। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও সোচ্চার হওয়া একান্ত আবশ্যক। একজন দেশহিতৈষী প্রাণ ও অগ্রপথিক, দিশারী হিসাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক আপসহীন সংগ্রামী ভাবমূর্তি আজ ভারতব্যাপী প্রতিষ্ঠিত। কেন্দ্রের এই বঞ্চনার মানসিকতা যে আগামী দিনে দেশের ঐক্য, অখণ্ডতা ভেঙে পড়ার সম্ভাবনার পদক্ষেপের অংশ সেটা সমস্ত ভারতবাসীকে বুঝতে হবে এবং কেন্দ্রীয় বঞ্চনার প্রতিবাদে শামিল হতে হবে। তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আহ্বানে শামিল হতে হবে সমস্ত দ্বিধা-দ্বন্দ্ব কাটিয়ে। কেন্দ্রীয় সরকারের অন্যায় বঞ্চনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী আন্দোলনে শামিল হওয়া ছাড়া আর কোনও পথ নেই।

Latest article