তিন জেলার তিন পত্রিকা

রাজ্যের প্রতিটি জেলা থেকে প্রকাশিত হয় বেশকিছু পত্রিকা। উৎসব উপলক্ষে প্রকাশিত তিনটি পত্রিকার বিশেষ সংখ্যার উপর আলোকপাত করলেন অংশুমান চক্রবর্তী

Must read

প্রোরেনাটা
সম্পাদক : গৌতমকুমার দে
৩৩ বছরের পত্রিকা। নিরবচ্ছিন্ন ভাবে প্রকাশিত হচ্ছে হাওড়া থেকে। এবারের পুজো সংখ্যাটি বিষয় বৈচিত্রে ভরপুর। শুরুতেই প্রচ্ছদ কাহিনি। লিখেছেন প্রদীপকুমার ঘোষ। শিরোনাম ‘ঈশ্বরের মাতৃভাব’। স্বল্প পরিসরে চমৎকার এক বিশ্লেষণধর্মী লেখা। দুটি বিশেষ রচনা উপহার দিয়েছেন রূপক চট্টরাজ, সুধীন বিশ্বাস। আছে দুটি প্রবন্ধ। প্রসেনজিৎ দাশগুপ্তর ‘দ্রাঘিমাংস উনআশি ডিগ্রি পূর্ব’ ও প্রবীর আচার্যর ‘ভারতীয় জ্যোর্তিবিজ্ঞান ও জ্যোতিষচর্চা’ খুবই মূল্যবান লেখা।

আরও পড়ুন-সূর্যষষ্ঠীব্রত ছট

আধুনিক রাসায়নিক যুদ্ধের জনক ডঃ ফ্রিটজ হ্যাবার এবং তাঁর স্ত্রী ডঃ ক্লারাকে নিয়ে অনবদ্য এক রচনা উপহার দিয়েছেন অমিতাভ পাল। শিরোনাম ‘প্রথম প্রতিবাদ’। রচনায় ধরা পড়েছে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মর্মান্তিক ছবি এবং এক আত্মবলিদানের করুণ ঘটনা।
আছে ভ্রমণগদ্য। ‘ঐতিহ্যময় বান্দা দেউল’ ঘুরে আসা যায় মধুছন্দা মিত্র ঘোষের দেখানো পথে। অলোক ভট্টাচার্য, চন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের রম্যরচনা ও দীপশেখর চক্রবর্তী, মৃন্ময় ভৌমিকের ব্যক্তিগত গদ্য পড়তে ভাল লাগে।
আছে মনকাড়া কয়েকটি ছোটগল্প। অশোকরঞ্জন চক্রবর্তী, শান্তনু সাহা, বরুণ চট্টোপাধ্যায়, সুকুমার রুজ, ধনঞ্জয় ঘোষাল প্রমুখের লেখা উল্লেখ করার মতো। ছোটদের জন্য গল্প লিখেছেন অনন্যা দাশ, সুমন্তকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়।

আরও পড়ুন-তদন্ত শেষ হবে কবে, প্রশ্ন আদালতের

এক ফর্মার কবিতায় অমিত মুখোপাধ্যায় অনবদ্য। অনুবাদ বিভাগে তিনটি মারাঠি কবিতার অনুবাদ করেছেন জ্যোতির্ময় দাশ। সুজিত সরকার পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন নোবেল প্রাপক লুইজ গ্লিকের কবিতার সঙ্গে। এ-ছাড়াও অনুবাদ করেছেন স্বপনকুমার ঘোষ, সঞ্জয় কুণ্ডু। গুচ্ছ কবিতায় অরূপ পান্তি এবং শংকর ঘোষ যথাযথ। পাশাপাশি মাহমুদ কামাল, গৌতম হাজরা, সাকিল আহমেদ, প্রতাপ সিংহ, স্বপন নন্দী, সুস্মেলী দত্ত, মোনালিসা রেহমান, জুলি লাহিড়ী, উদয়শঙ্কর বাগ, হাননান আহসান, কাজল চক্রবর্তী, অমিত কাশ্যপ, কেতকীপ্রসাদ রায় প্রমুখের কবিতা প্রশংসার দাবি রাখে। চমৎকার সংখ্যাটির দাম ১২৫ টাকা।

আরও পড়ুন-বাংলাদেশে ৭০০ নতুন পুজো হয়েছে: মন্ত্রী

শতানীক
সম্পাদক : নিত্যরঞ্জন দেবনাথ
সপ্তম বর্ষ দ্বিতীয় সংখ্যাটি প্রকাশিত হয়েছে শারদীয়া সংখ্যা হিসেবে। হুগলি জেলার এই পত্রিকাটি সমাদৃত হয়েছে সাহিত্য মহলে। পাতায় পাতায় নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার ছাপ। গদ্যে-পদ্যে ঠাসা।
রবীন্দ্রনাথ নিজেকে গাঙ্গেয় মনে করতেন। জীবন সায়াহ্নে চন্দননগরে একটি সাহিত্য সম্মেলনে উদ্বোধনী অভিভাষণে বলেছিলেন, ‘বস্তুত এই গঙ্গাতীরে, এই নগরের এক প্রান্তেই আমার কবিজীবনের উদ্বোধন।’ হুগলি জেলার সঙ্গে জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের নিবিড় যোগ ছিল। দ্বারকানাথের আমল থেকেই। হুগলির মাটি স্পর্শ করেছেন দেবেন্দ্রনাথও। সে এক দীর্ঘ ইতিহাস। এই বিষয়েই অনবদ্য প্রবন্ধ ‘হুগলি জেলায় ঠাকুরবাড়ি’ লিখেছেন অতনুকুমার বসু।

আরও পড়ুন-প্রেমিকের দেখা না পেয়ে বিষ খেয়ে আত্মঘাতী তিন কিশোরী

নজরুলের ‘বিদ্রোহী’ কবিতার শতবর্ষ চলছে। অনন্তদেব মুখোপাধ্যায় বিষয়টি আলোকপাত করেছেন প্রবন্ধে। সুকুমার রুজের লেখার বিষয় জাদু বাস্তবতা। নায়ক উত্তমকুমার সার্থক চরিত্রাভিনেতা হয়ে উঠেছিলেন পরিচালক অরবিন্দ মুখোপাধ্যায়ের হাত ধরে। অসামান্য এই পরিচালককে নিয়ে প্রয়োজনীয় গদ্য উপহার দিয়েছেন সুব্রত রায়। রামায়ণের গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র কৈকেয়ী। মূলত তাঁর জন্যেই বাঁক নিয়েছিল কাহিনি। ভরত-মাতাকে অক্ষরমালায় সাজিয়েছেন কাকলি দেবনাথ। লেখাটি অসাধারণ।
বড়গল্প, ছোটগল্প, অণুগল্প লিখেছেন এই সময়ের বিশিষ্ট সাহিত্যিকরা। বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয় পাপড়ি গঙ্গোপাধ্যায়, সুব্রত বসু, সুবীর মজুমদার, তৃষ্ণা বসাক, মৃত্যুঞ্জয় দেবনাথ, প্রগতি মাইতি, তনুজা চক্রবর্তী, অদিতি ঘোষ দস্তিদার, কালীপদ চক্রবর্তী, তীর্থঙ্কর সুমিতের নাম।
দীর্ঘ কবিতা লিখেছেন দীপক রায়। অশোক মুখোপাধ্যায় অনুবাদ করেছেন জয়েস ক্যারল ওটেস-এর কবিতা।

আরও পড়ুন-ন্যান্সিকেই খুনের পরিকল্পনা ছিল!

পাতায় পাতায় এই সময়ের বিশিষ্ট কবিদের উপস্থিতি। মুগ্ধতায় ভরিয়ে দিলেন দেবীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়, কালীকৃষ্ণ গুহ, শংকর চক্রবর্তী, শ্যামলকান্তি দাশ, সুজিত সরকার, সৈয়দ কওসর জামাল, অরুণকুমার চক্রবর্তী, অলক্তিকা চক্রবর্তী, তাপস রায়, ফটিক চৌধুরি, দুর্গাদাস মিদ্যা প্রমুখ।
এ-ছাড়াও আছে সাক্ষাৎকার, মুক্ত গদ্য, ভ্রমণ কাহিনি, পুস্তক আলোচনা, স্মরণ, ধারাবাহিক। জমজমাট সংখ্যা। দাম ১৫০ টাকা।
অঙ্কুরীশা
সম্পাদক : বিমল মণ্ডল
অল্পদিনেই সাহিত্যপ্রেমীদের নজর কেড়েছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পত্রিকাটি। এবারের শারদীয়া সংখ্যা প্রবন্ধ, গল্প ও কবিতায় সমৃদ্ধ। খ্যাতনামা লেখকদের পাশাপাশি আছেন নতুনরাও। প্রবন্ধের শুরুতে পবিত্র সরকার। তাঁর লেখার শিরোনাম ‘এ দিন যাবে, এ দিন যাবে?’ লেখার বিষয় বই। অনবদ্য এক রচনা। জ্যোতির্ময় দাশের আত্মজীবনীমূলক প্রবন্ধ ‘সাদামাটা এক সাহিত্যানুরাগীর অলিখিত কাহিনি’ এককথায় সময়ের দলিল। শ্যামল জানার ‘রবীন্দ্রনাথ ৬৭ বছর বয়সে কেন ছবি আঁকা শুরু করলেন?’ প্রবন্ধটি পাঠকমনে আগ্রহ জাগায়। কবি শম্ভুনাথ চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে চমৎকার প্রবন্ধ ‘ঝিংলা ও শম্ভুনাথ’ উপহার দিয়েছেন রামকিশোর ভট্টাচার্য। তাঁর মতে ‘শম্ভুনাথ একজন শব্দ-ভাস্কর’। তরুণ মুখোপাধ্যায়ের লেখার শিরোনাম ‘কবিতায় মাটি, মাটির কবিতা’। অসংখ্য কবিতার শরীরে মাটি লেগে রয়েছে। তার মধ্যে কিছু কবিতা আলোচিত হয়েছে। পাশাপাশি সন্দীপন বিশ্বাসের ‘দস্তয়েভস্কির জীবন, প্রেম ও সাহিত্য’, সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়ের ‘কবিতা : অনন্তের সন্ধানে মহাযাত্রী’, দীপক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘সময়, সময়ের ভাষ্য ও সত্তরের বাংলা কবিতা’ উল্লেখযোগ্য রচনা।

আরও পড়ুন-শীতের কাঁপুনি, সাহায্যের আর্তি কিয়েভের মেয়রের

আছে কয়েকটি গল্প। মন ছুঁয়ে যায় অমর মিত্র, নলিনী বেরা, তপন বন্দ্যোপাধ্যায়, বিমল লামা, প্রগতি মাইতির লেখা।
কবিতা বিভাগে ঘটেছে নবীন-প্রবীণের মেলবন্ধন। মুগ্ধ করেছেন সুধীর দত্ত, শ্যামলকান্তি দাশ, তাপস ওঝা, ঋত্বিক ঠাকুর, বীথি চট্টোপাধ্যায়, পার্থজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, সৌমিত বসু, তাজিমুর রহমান, অনীশ ঘোষ, আশিস মিশ্র, শুভঙ্কর দাস, সাতকর্ণী ঘোষ প্রমুখ। সব মিলিয়ে আন্তরিক আয়োজন। দাম ২০০ টাকা।

Latest article