বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায়: চারুচন্দ্র কলেজের সেই ঘরটার কথা আজও খুব খুব বেশি বেশি করে মনে পড়ে। সেখানেই প্রথম তৃণমূল ছাত্র পরিষদের বীজ পোঁতা হল। ওই ঘরটার মিটিংয়ে যোগ দিয়েছিলেন সারা রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত ছাত্র নেতারা। ছাত্র নেতা মানে ছাত্র পরিষদের সেইসব নেতারা, যাঁদের সঙ্গে আমার নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। সেদিনের মিটিংয়ে ঠিক হল আমরা অগ্নিকন্যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুগামীরা তাঁকে সামনে রেখেই লড়াই চালাব সন্ত্রাস আর অপশাসনের বিরুদ্ধে। সেদিন যে বীজ পুঁতেছিলাম আমরা আজ সেটাই মহীরূহ। ভারতের বৃহত্তম ছাত্র সংগঠনগুলির অন্যতম তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। আমি আর অরূপ বিশ্বাস সেই সংগঠনের প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক।
আরও পড়ুন- “দেশ বাঁচাবে মমতা” রাজ্যজুড়ে পালিত হল তৃণমূল ছাত্র পরিষদ প্রতিষ্ঠা দিবস
তার পর তৃণমূল ছাত্র পরিষদ যখন প্রথম পৃথক অস্তিত্ব জানান দিল, আমি তখন তার সভাপতির দায়িত্বে। নেত্রীর নির্দেশে। তাঁরই আদর্শে। মধ্যে কয়েক বছরের বিরতি। তারপর ২০০১ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত টানা আমি তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি।
আমাদের তখন ‘পায়ের তলায় মূর্ছে তুফান, ঊর্ধ্বে বিমান ঝড় বাদল’। তখন তো গাড়ির ব্যবস্থা ছিল না। ট্রামে বাসে ট্রেনে রিকশায় চেপে রাজ্যের কোনায় কোনায় কলেজের গেটে গেটে পৌঁছে গিয়েছি। ছাত্রছাত্রীরা এগিয়ে এসেছে। গড়ে উঠেছে সংগঠন। পথটা আদৌ সুগম ছিল না। প্রতি পদে হিংসা, প্রত্যেক জায়গায় সন্ত্রাস। অসংখ্য বার সন্ত্রাসের শিকার হয়েছি। তবুও আমরা অকুতোভয়। সেইসব বাধার মুখে পড়েও থমকে যাইনি আমরা। ভয়ে কুঁকড়ে যাইনি।
নেতাজি সুভাষচন্দ্র লিখেছেন, ছাত্রযুব আন্দোলনের উদ্দেশ্য ‘নূতনের সন্ধান আনা; নূতন সমাজ, নূতন রাষ্ট্র, নূতন অর্থনীতির প্রবর্তন করা; মানুষের মধ্যে নূতন ও উচ্চতর আদর্শ উদ্বুদ্ধ করিয়া তাহাকে মনুষ্যত্বের উচ্চতর সোপানে লইয়া যাওয়া’। তিনি আরও বলেছেন, ‘চরিত্র এবং পৌরুষের বিকাশের জন্য (ছাত্রদের) রাজনীতিতে অংশগ্রহণ প্রয়োজন’। তাই আজও, ক্ষমতার লোভে নয়, দিন বদলের স্বপ্ন বুকে নিয়েই, উন্নততর চরিত্রের প্রণোদনাতেই তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কর্মীরা রাজনৈতিক কর্মযজ্ঞে যোগদান করে। প্রাপ্তির আশা নয়, ত্যাগ আর তিতিক্ষাই তাদের সংগ্রামের বীজমন্ত্র।