রাধে রাধে: শ্রীরাধার ক্রমবিকাশ

কৃষ্ণপ্রাণাধিকা শ্রীরাধা। তিনি বৃন্দাবনচন্দ্র কালাচাঁদের শক্তি, প্রেমময়ী, প্রেমিকা। আবার তিনিই সর্বসম্পদদায়িনী, শক্তিস্বরূপিণ। এক-এক কাব্যে রাধা চরিত্র এক-এক ভাবে বর্ণিত, বিবর্তনের ধারায় বিকশিত। আজ রাধাষ্টমী। শ্রীরাধিকার জন্মতিথি। রাধাষ্টমী ব্রত পালনে নাকি সহস্র একাদশী ব্রত পালনেরও অধিক ফল লাভ হয়। লিখছেন পূর্বা সেনগুপ্ত

Must read

প্রেমের দেবী রাধা। কত প্রাচীনকাল থেকে রাধা চরিত্র নানা পুরাণ, মহাকাব্যে ও সংস্কৃত সাহিত্যে চিত্রিত হয়ে এসেছে। এক-এক কাব্যে রাধা চরিত্র এক-একভাবে নির্মিত হয়েছে। এর কারণ, যত দিন অতিবাহিত হয়েছে, রাধা চরিত্র বিবর্তনের ধারায় ততই বিকশিত হয়েছে। এই চরিত্র কোনও নির্দিষ্ট সময়ে সৃষ্টি হয়ে সেখানেই থেমে থাকেনি। যত যুগ গিয়েছে এই চরিত্র বিকশিত হয়েছে নব-নব ভঙ্গে, নতুন নতুন ভাবনায়। প্রখ্যাত পণ্ডিত শশিভূষণ দাশগুপ্ত তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘শ্রীরাধার ক্রমবিকাশ’-এ দেখিয়েছেন, এই রাধা চরিত্র যেন সহস্রদল কমলের মতো। এই কমলের দলগুলি ধীরে ধীরে উন্মোচিত হয়েছে। সৃষ্টি করেছে এক অমৃতবাহী নারী চরিত্র। তিনি হলেন শ্রীকৃষ্ণের প্রাণাধিকা শ্রীরাধা।
রাধা কে? তিনি কৃষ্ণ জীবনের অপরিহার্য অঙ্গ। তিনি বৃন্দাবনচন্দ্র কালাচাঁদের শক্তি, তিনি প্রেমময়ী, প্রেমিকা। বৃন্দাবন ছেড়ে মথুরার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন কৃষ্ণ-বলরাম। একান্তে দাঁড়িয়ে আছেন রাধা। অক্রুর জিজ্ঞেস করছেন, ‘ইনি কে কানা?’ কৃষ্ণ উত্তর দিলেন, ‘ইনি রাধা। সকলে আমার কাছে আসে, আর আমি ওঁর কাছে ছুটে যাই।’ কৃষ্ণের জীবনে
রাধার মাহাত্ম্য এমনই। তাই পদকার তাঁর বিখ্যাত পদে কৃষ্ণকে উদ্দেশ করে বলছেন,
‘রাই, হতে তুমি নও কো বড়
বাঁকা বংশীধারী।
লোকের বিপদ হলে ডাকে
মধুসূদন বলে।
আর তোমার বিপদ হলে
বাঁশীতে ডাক, রাই কিশোরী।’
রাধার জন্মকথা বিভিন্ন পুরাণে বর্ণিত আছে। যাদব বংশের বৃষভানু রাজা বর্ষানা নামে এক অঞ্চলের রাজা ছিলেন। তাঁর স্ত্রী কীর্তিদা। বৃষভানু আর কীর্তিদার কন্যা হলেন রাধা। তিনি কৃষ্ণের থেকে নয় মাসের বড় ছিলেন। কিন্তু কৃষ্ণ জন্মের পর ছোট্ট কৃষ্ণকে না দেখা পর্যন্ত তিনি চোখ খোলেননি। যশোদা কোলে কৃষ্ণকে দর্শন করেই তিনি ধরিত্রীর সব কিছু দেখেছেন। তবে রাধার জন্ম ও বয়স নিয়ে এক-এক পুরাণে এক-এক রকম তথ্য প্রদান করা হয়েছে। আবার পৌরাণিক সাহিত্যে বৃষভানু কন্যার অলৌকিক আবির্ভাবকেও স্বীকার করা হয়েছে। বলা হয়েছে রাধা অযোনিসম্ভবা। তিনি কারও গর্ভজাত সন্তান নন। একদিন বৃষভানুরাজ যমুনায় এক বিশালাকার পদ্ম ভেসে যেতে দেখেন। সেই পদ্মের ভিতর তিনি শিশু রাধাকে লাভ করেন।
দ্বাপর যুগে, শ্রীকৃষ্ণ যখন কংসবধ করে ধর্ম প্রতিষ্ঠার জন্য অবতরণ করেন, তখন বৃন্দাবনে গোপরাজ নন্দের গৃহে তাঁর শৈশব অতিবাহিত হয়। এই গোপ ও গোপীদের মধ্যে তিনি বড় হয়ে ওঠেন। নিজে ক্ষত্রিয় হয়েও এই গোপ সখা ও সখীদের সঙ্গে তাঁর লীলা আজও আধ্যাত্মিক চেতনাকে সমৃদ্ধ করেছে। রাধার সঙ্গে আছেন অষ্টসখী। এঁদের মধ্যে ললিতা আর বিশাখা প্রধান। পৌরাণিক কাহিনি অনুসরণে পাই, বৃষভানু-নন্দিনী রাধার সঙ্গে আয়ান ঘোষের বিবাহ হয়। রাধার শাশুড়ি ও ননদিনী হলেন জটিলা আর কুটিলা। এঁরা তাঁদের নামের মতোই জটিল ও কুটিল। আর আয়ান ঘোষ স্বামী হলেও পুরুষত্বহীন। তাই অমল ধবল চরিত্রের রাধারানি কেবলই কৃষ্ণের। পরস্ত্রী রাধার সঙ্গে কৃষ্ণের এই প্রেমকে পরকীয়া প্রেমের দৃষ্টান্ত রূপে দেখা হলেও এই মতের ব্যতিক্রমও আছে।
ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে রাধার উৎপত্তি বিষয়ে যে কাহিনির বর্ণনা করা হয়েছে সেই কাহিনি হল, সৃষ্টির আদিতে শ্রীকৃষ্ণ প্রথমে রাসমণ্ডল তৈরি করেছিলেন। সেই অনুপম রাসমণ্ডল দেখে দেবতাগণ মুগ্ধ। কিন্তু কী হবে এই রাসমণ্ডল দিয়ে? এই প্রশ্ন যখন সকলের মনের মধ্যে তখন শ্রীকৃষ্ণের বামপার্শ্ব থেকে এক কন্যা আবির্ভূত হলেন। সৃষ্টিমাত্রই তিনি দ্রুত চললেন পুষ্প চয়নে। ফুল তুলে সেই ফুল দিয়ে তিনি কৃষ্ণপদ পুজো করলেন। রাসমণ্ডল থেকে সৃষ্টি হওয়া মাত্রই তিনি কৃষ্ণের দিকে ধাবিত হয়েছিলেন বলে তাঁর নাম হল ‘রাধা’। অর্থাৎ ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে রাধা বৃষভানু-নন্দিনী নন। আয়ান-পত্নীও নন। তিনি স্বয়ং কৃষ্ণের অঙ্গ থেকে সৃষ্ট তাঁর শক্তি। এই পুরাণে রাধা সম্বন্ধে বলা হয়েছে, তিনি হলেন শ্রীকৃষ্ণের প্রাণের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। তিনি কৃষ্ণের প্রাণ থেকে সৃষ্টি হয়েছেন বলে তিনি কৃষ্ণের প্রাণের থেকেও প্রিয়তমা। রাধার রূপবর্ণনা করে বলা হয়েছে। জন্মমাত্রই তিনি ষোড়শবর্ষীয়া। নবযৌবন সংযুক্তা, অতি উজ্জ্বল রঙের বস্ত্র পরিহিতা, ঈষৎহাস্যবদনা এবং মনোহারিণী। অতিশয় কোমলাঙ্গী দেবী পৃথিবীর যাবতীয় সৌন্দর্য হরণ করে সৌন্দর্যময়ী হয়েছেন।
এইভাবে শ্রীরাধিকা কৃষ্ণের প্রাণ থেকে সৃষ্টি হয়ে কৃষ্ণকে পুজো ও সম্ভাষণ করে কৃষ্ণের শ্রীমুখ নিরীক্ষণ করতে করতে রত্নসিংহাসনে উপবেশন করলেন। সকলে আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করলেন এই সময়ে রাধার লোমকূপ থেকে তাঁরই মতো বেশভূষা সম্পন্ন লক্ষ গোপিনীর সৃষ্টি হল। এই গোলোকের গোপিনীদের সংখ্যা লক্ষ-কোটি। রাধা-অঙ্গ থেকে গোপীদের সৃষ্টি হতে দেখে কৃষ্ণদেহ থেকেও সৃষ্টি হল অসংখ্য গোপগণ। শুধু তাই নয়, কৃষ্ণের লোমকূপ থেকে অসংখ্য শ্যামকায় কামধেনু সৃষ্টি হল। এরা এক-একজন সিংহের মতো বলশালী। কৃষ্ণ সেই ধেনুর মধ্যে সব থেকে বলশালী একটি ধেনু শিবকে উপহার দিলেন। তারপর তাঁর নাক থেকে অসংখ্য সুন্দর হাঁসের দল নির্গত হল। তার মধ্যে সব থেকে সুন্দর হাঁস ব্রহ্মাকে উপহার দিলেন। ব্রহ্মা তা বাহন রূপে গ্রহণ করলেন।
ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণের ব্রহ্মখণ্ডে শ্রীরাধার সৃষ্টি সম্বন্ধে যে কাহিনি পাই তা আরও বিস্তৃত হয়েছে এই পুরাণের প্রকৃতিখণ্ডে এসে। এখানে রাজা সুযজ্ঞের উত্তরে সুতপা মুনি রাধা সম্বন্ধে একটু ভিন্ন কথা বলছেন। তিনি বলছেন, শ্রীকৃষ্ণ আদি সৃষ্টি কালে বৃন্দাবনে প্রকৃতিরূপী রাধার গর্ভসঞ্চারের কারণ হয়েছিলেন। মূল প্রকৃতির বাম অংশ থেকে শ্রীরাধার জন্ম হয়। শ্রীরাধা (Radhashtami) এক কল্প গর্ভধারণ করে রাসমণ্ডলে একটি বিরাট ডিম্ব প্রসব করেন। সেই ডিম দেখে রাধার দুঃখে চোখে জল এল। তিনি অনেকক্ষণ মনের দুঃখে কাঁদলেন। তারপর সেই বিরাট ডিমকে ছুঁড়ে ফেলে দিলেন গোলোকধামে। তাঁকে কাঁদতে দেখে কৃষ্ণ অনেক প্রবোধ দিলেন। কিন্তু রাধার দুঃখ দূর হল না। সেই সময় গোলোকে সেই ডিম থেকে মহাবিষ্ণুর জন্ম হল। এই কাহিনি বর্ণনা করে ঋষি সুতপা বললেন, শ্রীবিষ্ণুর উদ্ভবের কারণও হল রাধা। তাই বিষ্ণুভক্তি লাভ করতে হলে রাধানাম জপ করতে হয়। তিনিই হরিভক্তি প্রদায়িনী। তিনি শ্রীকৃষ্ণের প্রেমময়ী প্রাণাধিকা। সর্বসম্পদ দায়িনী শক্তিস্বরূপিণী রাধিকার উপাসনা কর। সুতপা ঋষির আদেশে সুযজ্ঞ রাজা পুষ্কর তীর্থে গিয়ে রাধা নামে গভীর তপস্যায় মগ্ন হলেন। তিনি সহস্রবছর রাধানাম জপ করে শ্রীরাধিকার দেখা পেলেন এবং তাঁর জীবনের সমস্ত কালিমা থেকে মুক্ত হলেন।
ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে আমরা যে রাধা চরিত্রকে দেখি তা হল মহাশক্তির প্রকাশমাত্র। সেই রাধার মধ্যে প্রেমের থেকে শক্তির ছটা বেশি। তিনি সেই বিরহিণী রাধা নন। যিনি তাঁর থেকে বয়সে ছোট এক গোপবালকের সঙ্গে প্রেমবিলাসে মত্ত। কিন্তু শুধু ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে নয়, আমরা কৃষ্ণজীবন লীলার অন্যতম উৎস শ্রীমদ্ভাগবতেও সেই প্রেমময়ী আয়ান-ঘরনি রাধাকে পাই না। ভাগবত পুরাণের রাসলীলা অধ্যায়ের মধ্যে পাই, রাসলীলার দিন সকল গোপিকাগণ প্রত্যেকেই কৃষ্ণকে নিজের মতো করে লাভ করেছিলেন। সেই রাসলীলা পর্যায়ে একজন ভাগ্যবতী গোপীর কথা জানা যায় যিনি নিষ্কামভাবে একমুখী প্রেমে মগ্ন ছিলেন। একমাত্র তাঁরই কৃষ্ণকে একাকী পেয়েও অহঙ্কার জন্মায়নি। তাই কৃষ্ণ তাঁকে নিয়ে গোপমণ্ডল ত্যাগ করে পৃথকভাবে রাস করেছিলেন। সেই গোপী সম্বন্ধে বলতে গিয়ে পুরাণকার ‘অনয়া রাধিত’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। সেই শব্দবদ্ধ থেকে ‘রাধা’ নামের উৎপত্তি।
পুরাণে রাধা চরিত্র বর্ণনে যতই ভিন্নতা থাকুক না কেন লোকমনে রাধা ও কৃষ্ণের যুগলপিরিতি সদা জাগরূক। রাধার সঙ্গে কৃষ্ণের প্রেম তা স্বকীয়া বা পরকীয়া— এই তর্কে না গিয়ে যদি তাঁদের নিয়ে বর্ণিত ছোট ছোট কাহিনিগুলির দিকে দৃষ্টি দিই তবে দেখব সাহিত্যে, গীতে, প্রতিদিনের চর্চায় এদের ব্যবহার এখনও প্রতুল। এখনও আমাদের সাহিত্যে, সঙ্গীতে রাধাকৃষ্ণ জড়িয়ে আছেন, যার মূল অনেক গভীরে।
রাধা-কৃষ্ণের মূল লীলাস্থল বৃন্দাবন। সেখানে অগ্নিবস্ত্র-পরিহিতা তেজসম্পন্না রাধা নেই। এখানে তিনি নীলাম্বরী। গভীর দুর্যোগপূর্ণ রাত্রির মধ্যেই তিনি অভিসারে চলেছেন।
জটিলা-কুটিলার চোখ এড়িয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে আসা তো সহজ ব্যাপার নয়! তবুও কালার বাঁশির সুর কান স্পর্শ করলেই ঘরে টেকা দায়। এখনও বৃন্দাবনের নিধুবনে নূপুরের ধ্বনি শুনতে পাওয়া যায়। লোকবিশ্বাস এখনও— এই বনে কৃষ্ণ রাধা ও অন্যান্য গোপীদের (Radhashtami) নিয়ে নৃত্য করেন। এই বনে ছোট ছোট তুলসীবৃক্ষ আসলে গোপীসঙ্গে রাধা। সন্ধ্যা হলেই তাঁরা নিজরূপ ধারণ করেন। তাই সন্ধ্যা নেমে এলে নিধুবনের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। কেউ যদি সেই বনে রাত কাটায় তবে পরের দিন তাকে মৃত্যু গ্রাস করে। এমনই নিধুবনের মাহাত্ম্য।
কৃষ্ণের গোপীদের বস্ত্রহরণ, তাঁর রাধা-সঙ্গে দোল খেলা। সেই ‘মোর কুটির’— যেখানে কৃষ্ণ ময়ুরের বেশ ধারণ করে রাধার মানভঞ্জনের জন্য নৃত্য করেছিলেন। যেখানে তাঁরা পরস্পর পরস্পরের বস্ত্র পরিধান করে আনন্দিত হয়েছিলেন। পুরাণে পাই, একদিন রাধার পরকীয়া হাতেনাতে ধরে ফেলার জন্য জটিলা-কুটিলা আয়ানকে পাঠিয়েছিলেন৷ আয়ান ঘোষ অকুস্থলে পৌঁছে অবাক! তিনি দেখলেন রাধা একান্তে দেবী কালীর আরাধনা করছেন। আয়ানের আগমনসংবাদে কৃষ্ণ ধরলেন কালীরূপ।
একদিন কৃষ্ণকে রাধা জিজ্ঞাসা করলেন— ‘হে কালা তুমি যে আমায় এত ভালবাসো তবে আমাকে বিবাহ কর না কেন?’ কৃষ্ণ উত্তর দিলেন— ‘বিবাহ হল দুটি আত্মার সম্মিলন। কিন্তু তুমি আর আমি তো অভিন্ন! আমাদের বিবাহ হবে কী করে? তবু বৃন্দাবন শহরের বাইরে ভাণ্ডিরবনে কৃষ্ণ ও রাধা প্রজাপতি ব্রহ্মাকে সামনে রেখে বিবাহ করেছিলেন বলে গর্গ সংহিতাতে বলা হয়েছে। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণেও রাধা-কৃষ্ণ দিব্য দম্পতি।
প্রশ্ন হতে পারে, কংসবধের জন্য যখন কৃষ্ণ মথুরায় চলে গেলেন তখন রাধার কী হল? গর্গ সংহিতায় পাই, রাধা ও তাঁর অষ্টসখী গৃহত্যাগ করে কদলীবনের মধ্যে কৃষ্ণবিরহে কাতর হয়েছিলেন। কৃষ্ণ যখন মথুরার রাজা হয়ে উদ্ধবকে তাঁর মঙ্গলসংবাদ জানাতে বৃন্দাবনে প্রেরণ করে ছিলেন তখন তিনি বিরহী রাধার দর্শন পান। যে রাধা তাঁর কৃষ্ণে এতটাই মগ্ন ছিলেন যে কালো ভ্রমরকে কালা বলে মনে করেছেন এবং তাঁকে তিরস্কার করছেন। উদ্ধব দেখেন কৃষ্ণবিরহে রাধা কৃষ্ণময় হয়েছেন। রাধা ও উদ্ধবের মধ্যে কথোপকথনকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হয়েছে ‘উদ্ধব সংবাদ’ নামে শ্রেষ্ঠ গ্রন্থের। যা অধ্যাত্মপিপাসু প্রাণের কাছে অমৃতস্বরূপ।
প্রশ্ন হতে পারে, রাধা চরিত্রের মধ্যে এত ভিন্নতা কেন? এর উত্তরে বলা যায় পুরাণের রাধা যেভাবে চিত্রিত হয়েছেন তার মধ্যে বিরাট পার্থক্য এনেছেন মহাকবি জয়দেব। জয়দেব-বিরচিত গীত গোবিন্দ নীলাম্বরী বিরহী রাধার জন্ম দিয়েছে। এঁকেছে নানা কাহিনির মালা, যে কাহিনিগুলির মধ্যে জয়দেব আর তাঁর পত্নী পদ্মাবতীর প্রেমসম্পর্কের আভাস রয়ে গিয়েছে অনেকটাই। লোকজীবনে তাই যে রাধা আরাধিতা তিনি জয়দেব-সৃষ্ট রাধা। কিন্তু রাধার কাহিনি যেভাবেই সৃষ্ট ও বিস্তৃত হোক না কেন কৃষ্ণজীবনে তিনিই প্রধানা। তাই আজও বৃন্দাবনবাসী একে অপরকে দেখে সম্বোধন করে ওঠে ‘রাধে রাধে’ (Radhashtami)। ভক্তমনে আজও কৃষ্ণ বাঁশি বাজান, আজও রাধা-কৃষ্ণ মিলনের জন্য উন্মুখ হন। আজও যমুনা একতানে বয়ে চলেন, তাঁর জলরাশি গোপনে জানিয়ে দিয়ে যায় জয়দেবের সেই পদ— ‘ধীরসমীরে যমুনাতীরে বসতি বনে বনমালী!’

আরও পড়ুন- অসামান্যা অসীমা

Latest article